ত্বকেই ফুটবে সুখ–অসুখের বার্তা
চিকিৎসকেরা হাত দেখে বা নাড়ি টিপে বুঝে নিতে পারেন রোগীর সুস্থতা-অসুস্থতার অনেক ইঙ্গিত। পাঁচজন সাধারণ মানুষও যদি তেমনটা পারেন, তবে তা দারুণ হয়। আর যদি হাতের ত্বকেই ফুটে ওঠে এসব তথ্য, তবে তো তা আরও অসাধারণ।
তেমন কাজই করেছেন জাপানের এক দল বিজ্ঞানী। তাঁরা উদ্ভাবন করেছেন হাতে স্থাপনযোগ্য বার্তাবাহী বিশেষ ত্বক। অত্যন্ত পাতলা এই ত্বকে যেমন ভেসে উঠবে প্রিয়জনের পাঠানো বার্তা, একইভাবে তা স্বাস্থ্যের খোঁজ-খবরও রাখবে। আরও মজার বিষয় হলো, ত্বকটি স্থাপনের পর মনেই হবে না যে অতিরিক্ত কিছু লেগে আছে হাতে।
জাপানের দাই নিপ্পন প্রিন্টিংয়ের সঙ্গে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে ত্বকটি উদ্ভাবন করা হয়েছে। গবেষণার নেতৃত্বে ছিলেন টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তাকাও সোমেয়া। যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য অ্যাডভান্সমেন্ট অব সায়েন্সের বার্ষিক সম্মেলনে ত্বকটি দেখানো হবে।
সম্প্রসারণ ও সংকোচনযোগ্য এই ত্বক কাটা-ছড়ায় লাগানো ব্যান্ড এইডের মতো করেই হাতে স্থাপন করা যায়। এক মিলিমিটার প্রশস্ত ত্বকটিতে লেড ডিসপ্লে, হালকা ওজনের সেনসর আর তারহীন মডিউল রয়েছে। বার্তা আদান-প্রদান আর স্বাস্থ্যের খোঁজ-খবর এগুলোর মাধ্যমেই সম্পন্ন করে এটি।
অধ্যাপক তাকাও সোমেয়া বলেন, তাঁদের উদ্ভাবিত এই গৌণ ত্বক চিকিৎসায় ভালো কাজে আসবে। অনেক রোগীই নড়তে-চড়তে পারেন না। তাঁদের শারীরিক অবস্থার উন্নতি-অবনতির খবর এই যন্ত্রের মাধ্যমে রাখা সম্ভব। সার্বক্ষণিক কাছাকাছি না থেকেও চিকিৎসক ঠিকই রোগীর সব খোঁজ রাখতে পারবেন। প্রয়োজনে দ্রুত ছুটে আসতে পারবেন রোগীর কাছে। ঘরে বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষ থাকলে দূর থেকে তাঁর খোঁজ রাখা সম্ভব এই ত্বকের মাধ্যমে। এ ছাড়া ত্বকের ব্যবহারকারী প্রত্যন্ত এলাকায় থাকলে এর মাধ্যমে তিনি তাঁর চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন। রোগীর ওষুধ সেবনের কথাও স্মরণ করিয়ে দিতে পারবে এটি।
হাতের তালু বা উল্টো পিঠে এই ত্বক স্থাপন করা যায়। তাকাও সোমেয়া বলেন, ‘ধরুন, আপনি দূরে আছেন। দাদা-দাদি, নানা-নানির মতো বয়োজ্যেষ্ঠ কেউ ঘরে রয়েছেন। তাঁর হাতে থাকা গৌণ ত্বকটিতে যখন “আমি তোমাকে ভালোবাসি”-এর মতো বার্তা ভেসে উঠবে, তখন ওই বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তির মনে হবে, আপনি যেন তাঁর কাছেই আছেন। তাঁর স্বাস্থ্যেরও খোঁজ রাখা সম্ভব এর মাধ্যমে।’
তাকাও সোমেয়া বলেন, ডিভাইসটি সম্প্রসারণ করা যায়। কাজেই ত্বকের মতো জটিল অবকাঠামোর ওপর এটি সহজেই স্থাপন করা সম্ভব। এক সপ্তাহ ধরে এটি দেহে লাগানো থাকলেও ত্বকে কোনো প্রদাহের সৃষ্টি হবে না বলে জানান তিনি। শুধু তা-ই নয়, এই ত্বক এতটাই হালকা যে, স্থাপনের পর ব্যবহারকারী এর কথা ভুলেই যাবেন। এই বিজ্ঞানী আরও বলেন, প্রাতর্ভ্রমণের সময় পরা থাকলে হৃদ্স্পন্দনের গতি প্রদর্শন করবে এটি। কতখানি দৌড়ানো হলো, সেটাও জানিয়ে দেবে এই ত্বক। এ ছাড়া শ্রমজীবীদেরও কাজে আসবে যন্ত্রটি।