মহেশখালীতে ৪৩ জলদস্যুর আত্মসমর্পণ, স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান

in #pirates6 years ago


Source
কক্সবাজারের সাগরদ্বীপ মহেশখালী আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় মাঠে আজ শনিবার দুপুরে হাজির হয়েছিল প্রায় ১০ হাজার মানুষ। মহেশখালী ও কুতুবদিয়া এলাকার ৪৩ দস্যু আত্মসমর্পণ করবে, তা দেখতেই এই ভিড়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের হাতে তাঁরা তুলে দিলেন অস্ত্র, গোলাবারুদ।

তাঁদের সামনে দাঁড়িয়ে মহেশখালীর সোনাদিয়ার জলদস্যু ‘আঞ্জু বাহিনী’র প্রধান আঞ্জু মিয়া সিকদার বললেন, ‘সাগরে অনেক অপরাধ করেছি। অনেক মায়ের বুক খালি করেছি। এ জগৎ অন্ধকারের জগৎ।’

আজ ৯৪টি অস্ত্র ও গোলাবারুদ তুলে দিয়ে একে একে ৪৩ জন জলদস্যু আত্মসমর্পণ করেন। আঞ্জু মিয়ার মতো জলদস্যুরা অতীতের অপকর্ম ভুলে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপনের অঙ্গীকার করেন। পাশাপাশি এখনো যাঁরা সাগরে অপকর্ম করছেন, তাঁদেরও এই সুযোগ গ্রহণের আহ্বান জানান তাঁরা।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দস্যুদের হাত থেকে অস্ত্রগুলো গ্রহণ করেন। এ সময় সঙ্গে ছিলেন র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ।

সমুদ্রে মৎস্যজীবীদের মাছধরা নিরাপদ এবং এলাকার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি শান্ত রাখতে র‌্যাব-৭ জলদস্যুদের আত্মসমর্পণের এই কর্মসূচির আয়োজন করে। সকাল থেকে উপজেলার বিভিন্ন উপকূল থেকে নারী-পুরুষ দল বেঁধে সমাবেশস্থলে আসতে থাকে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশাল মাঠ ভরপুর হয়। লোকজনের নজর ছিল জলদস্যুদের দিকে। তারা দস্যুমুক্ত মহেশখালী চায়।

সকালে ঢাকা থেকে বিমানে কক্সবাজারে আসেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এরপর কক্সবাজার থেকে হেলিকপ্টারে তিনি যান মহেশখালীতে।

স্বাগত বক্তব্যে র‌্যাব-৭-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মিফতাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, এই সমাবেশে মহেশখালী ও কুতুবদিয়া উপকূলের ৬টি বাহিনীর ৪৩ জন জলদস্যু আত্মসমর্পণ করেন। তাঁরা জমা দিয়েছেন ৯৪টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৭ হাজার ৬৩৭টি গোলা । লে. কর্নেল মিফতাহ বলেন, ২০০৪ সাল থেকে র‌্যাব মহেশখালী-কুতুবদিয়াসহ কক্সবাজার অঞ্চলে ১৮৭টি অভিযান চালিয়ে ২০৮ জলদস্যু ও অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করেছে। এ সময় উদ্ধার করা হয় দেশি-বিদেশি ৬৮২টি অস্ত্র ও ৭ হাজার ৯৯০টি গুলি। এ সময় র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ১১ জন দস্যু ও সন্ত্রাসী নিহত হয়। এর ফলে জলদস্যু ও সন্ত্রাসীরা অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়েছে।

দুপুর ১২টায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে একটি এসএমজি তুলে দেন মহেশখালীর সোনাদিয়ার জলদস্যু ‘আঞ্জু বাহিনী’র প্রধান আঞ্জু মিয়া সিকদার। এরপর ২৪টি অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করেন এ বাহিনীর আরও ৯ সদস্য।

উপস্থিত জনসাধারণের উদ্দেশে দস্যুসম্রাট আঞ্জু মিয়া বলেন, ‘এখন অস্ত্রশস্ত্র জমা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে চাইছি।’ অন্য দস্যুদেরও তিনি এ পদাঙ্ক অনুসরণের আহ্বান জানান। মহেশখালী থানায় এই আঞ্জু মিয়ার বিরুদ্ধে হত্যা, অপহরণ, ডাকাতিসহ ১২টি মামলা রয়েছে।

মহেশখালী ও কুতুবদিয়া এলাকার ৪৩ দস্যুর জমা দেওয়া অস্ত্র। ছবি: প্রথম আলো
মহেশখালী ও কুতুবদিয়া এলাকার ৪৩ দস্যুর জমা দেওয়া অস্ত্র। ছবি: প্রথম আলো
অনুষ্ঠানে ১৫ মামলার আসামি কুতুবদিয়ার রমিজ বাহিনীর প্রধান রমিজ আহমদ জমা দেন ৮টি আগ্নেয়াস্ত্র। এ ছাড়া মহেশখালীর কালাবদা বাহিনীর প্রধান নুরুল আলম প্রকাশ কালাবদা ২৩টি, জালাল বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড (বাহিনীপ্রধান জালাল আহমদ কারাগারে) মো. ইসমাইল ২৯টি, আয়ুব বাহিনী ৯টি ও আলাউদ্দিন বাহিনী ১টি আগ্নেয়াস্ত্র জমা দেয়। আত্মসমর্পণ করা ৪৩ জলদস্যুর মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত দস্যু আছেন ১২ জন। অস্ত্রের মধ্যে আছে বেলজিয়ামের তৈরি ১টি এসএমজি, একটি ব্রিটিশ রিভলবার, ৩টি দেশি পিস্তল, ৫২টি একনলা বন্দুক (এসবিবিএল), ২টি দোনলা বন্দুক (ডিবিবিএল), ১৯টি ওয়ান শুটার গান, ১৫টি থ্রি কোয়ার্টারগান ও ২টি ২২ বোর রাইফেল।

দস্যুদের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানকে মাইলফলক দাবি করে জেলা ফিশিংবোট মালিক সমিতির সভাপতি মুজিবুর রহমান বলেন, কক্সবাজারের ১০০ কিলোমিটার সমুদ্র উপকূলে ১৩-১৪টি জলদস্যু বাহিনী আছে। তাদের অত্যাচারে লাখো জেলেশ্রমিক ঠিকমতো মাছ ধরতে পারছেন না। দস্যুদের কিছু অংশ আগ্নেয়াস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করলেও অন্যদেরও সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনতে হবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘জলদস্যু ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে আছে। তাদের সব সময় বলে আসছি, তোমরা স্বাভাবিক জীবনে চলে আসো। এখনো বলছি, যারা এখনো আত্মসমর্পণ করোনি, তারা দ্রুত আত্মসমর্পণ করো। যদি স্বাভাবিক জীবনে না আসো, তাহলে তোমাদের অবস্থা হবে ভয়াবহ। কারণ মহেশখালী হবে আগামী দিনের সিঙ্গাপুর। এখানে কোনো সন্ত্রাসী বাহিনী থাকতে পারবে না। সব বাহিনীকে ধ্বংস করে উপকূল নিরাপদ করা হবে।’

মন্ত্রী বলেন, যারা এখন আত্মসমর্পণ করেছে, তাদের প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়া হবে। জেলা প্রশাসকের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, ‘যারা এখন আত্মসমর্পণ করেছে, তাদের খুন ও ধর্ষণ মামলা ছাড়া অন্য মামলাগুলোর বিষয়ে সহজভাবে দেখার ব্যবস্থা করবেন এবং আজ অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণের মামলাটিও সহজভাবে দেখতে হবে। কিন্তু তারা (দস্যু) যদি আবারও ফিরে যায়, তাহলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’

উপস্থিত জনসাধারণের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, এই মহেশখালীতে অবৈধ অস্ত্রের কারখানা আছে। এখানে জমা করা নকল অস্ত্রগুলো মহেশখালীর পাহাড়ে কারখানায় তৈরি। এসব কারখানার কারিগরদের আপনারা চেনেন। আর এই অস্ত্র তৈরি ও সন্ত্রাসীদের কারা আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়, তাদেরও চেনেন। কারিগর ও প্রশ্রয় দানকারীদের সম্পর্কে তথ্য দেন, মহেশখালীসহ কক্সবাজারের ২৩ লাখ মানুষকে শান্তিতে রাখতে জলদস্যু, বনদস্যু ও সন্ত্রাসীদের নির্মূল করা হবে।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করতে পেরেছি। সেখানে আর মাত্র একটি বাহিনী আছে। সেটিও ৩১ অক্টোবর আত্মসমর্পণ করবে। আমরা মহেশখালী-কুতুবদিয়া অঞ্চলকে জলদস্যুমুক্ত করতে চাই। কারণ উন্নয়নের মহাসড়কে সন্ত্রাস থাকতে পারে না।’

আত্মসমর্পণ করা জলদস্যুদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘তোমার কাছে অস্ত্র আছে তিনটা। কিন্তু জমা দেবে দুইটা, একটা লুকিয়ে রাখবে। র‌্যাবের সাথে এই বাটপারি করা যাবে না। আমরা জানি কার কাছে কয়টা অস্ত্র আছে। আর কেউ ভবিষ্যতে ওই ভুল পথে আবারও পা বাড়াতে চাইলে কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে।’

আজকের অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনের সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক, কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনের সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমল, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক, জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল মোস্তফা, কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান প্রমুখ।

Sort:  

Hi! I am a robot. I just upvoted you! I found similar content that readers might be interested in:
https://www.dreamtrips.com/trips

This user is on the @buildawhale blacklist for one or more of the following reasons:

  • Spam
  • Plagiarism
  • Scam or Fraud

Congratulations! This post has been upvoted from the communal account, @minnowsupport, by ideasteemit from the Minnow Support Project. It's a witness project run by aggroed, ausbitbank, teamsteem, someguy123, neoxian, followbtcnews, and netuoso. The goal is to help Steemit grow by supporting Minnows. Please find us at the Peace, Abundance, and Liberty Network (PALnet) Discord Channel. It's a completely public and open space to all members of the Steemit community who voluntarily choose to be there.

If you would like to delegate to the Minnow Support Project you can do so by clicking on the following links: 50SP, 100SP, 250SP, 500SP, 1000SP, 5000SP.
Be sure to leave at least 50SP undelegated on your account.