কবিতা "আমার ক্যালেন্ডার এখন মৃত্যু উপত্যকা"
"আমার ক্যালেন্ডার এখন মৃত্যু উপত্যকা "
আঠারো বছর বয়স অব্দি আমার ক্যালেন্ডারের পাতাগুলি
শুধু সাদাই রয়ে যেতো,
লাল রঙের কোনো বৃত্তে সম্পূর্ণ হয়নি কোনো ডেট,
তারুণ্যের উচ্ছ্বাসে মনের ভেতরে কোথাও হয়নি কখনো ঠাঁই,
অতি সাধারণ ক্যালেন্ডারের মলিন পাতা যতো ।
শুধু দেখতাম মাঝে মাঝে আমার বাবাকে,
সন্ধ্যে হলেই পঞ্জিকা আর ক্যালেন্ডার নিয়ে তাঁর যতো ব্যস্ততা ।
কালির আঁচড়ে কোনো কোনো তারিখ জ্বলজ্বল করতো,
সাদা দেয়ালের বুকে ঝোলানো সাদা ক্যালেন্ডারের পাতা ।
ঊনিশ বছরে সদ্য তারুণ্য থেকে যৌবনে উত্তীর্ণ সেসময়,
বাঁধভাঙা যৌবনের উদ্দামতায় হঠাৎ ছন্দপতন !
প্রথমবার প্রিয়জন হারানোর ব্যাথায় শোকাতুর মন,
একটা চিহ্ন রাখার জন্য যখন আঁতিপাঁতি খুঁজছে,
সহসা দৃষ্টি গেলো সাদা দেয়ালের মাঝে ঝোলানো
অতি সাধারণ মলিন ক্যালেন্ডারের বিবর্ণ পাতায় ।
একটি বৃত্ত সম্পূর্ণ হলো, ক্যালেন্ডারের বুকে একটি চিহ্নের জন্ম,
আর হৃদয়ের গভীরে রক্তাক্ত এক ক্ষতচিহ্ন ।
তার পর কেটে গেলো সুদীর্ঘ পাঁচটি বছর,
ভাবিনি আবার কখনো কাঁপা হাতে চিহ্ন দেওয়ার সময় হবে,
চেয়েছিলাম ক্যালেন্ডারের পাতাগুলো দাগহীন রয়ে যাক ।
কিন্তু, রক্তের বাঁধন আবার ছিন্ন হয়েই গেলো,
বিনা মেঘে বজ্রপাতে নিমেষের তরে সব তছনছ !
ঊনিশ বছরের শোকের মাত্রা চব্বিশে বেড়ে পাহাড়সম হলো,
অশ্রুমলিন মুখে শোকের ছায়া বিস্তৃতি পেলো,
ক্যালেন্ডারের পাতায় আরো একটি লাল বৃত্ত !
এরপরে আর কখনো ভাবার সাহস হয়নি যে আবার কখনো বসতে হবে,
ক্যালেন্ডারের পাতায় কালো তারিখের চারিপাশে বৃত্ত আঁকতে ।
সুদীর্ঘ দশটি বছর পরে বিশ্বাস আমার আবার বিচূর্ণ হলো,
সব চাইতে প্রিয়জনের বিয়োগ ব্যাথায় ব্যাথাতুর এ হৃদয় !
এ হৃদয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হয়েছে, থামবে না কখনো আর,
কালো তারিখের চারিপাশে রক্তাক্ত বৃত্তে শুধু এঁকেই চলেছি ক্যালেন্ডার ।
একটি দু'টি করে তারিখ শুধু বেড়েই চলেছে জানি,
প্রিয় মানুষের মৃতদেহ জমে জমে আজ আমার ক্যালেন্ডার মৃত শ্মশানভূমি !