নৌকায় করে ভ্রমন করার গল্প
আসসালামুআলাইকুম/আদাব
বর্ষার আকাশ যেন সেই দিনটা আরও বেশি মায়াময় করে তুলেছিল। সকাল থেকেই আকাশে ঘন কালো মেঘের ভিড়, তার মাঝেই আমাদের বন্ধুরা ঠিক করলাম,আজ নৌকায় করে নদীতে ভ্রমণ হবেই। গ্রামের পাশের সেই শান্ত নদী বর্ষায় রূপ পাল্টে যেন আরও জীবন্ত হয়ে ওঠে। আমরা চার-পাঁচজন মিলে ছোট একটা নৌকা ভাড়া করলাম। নৌকাটা জলে নামতেই পানির ঢেউগুলো যেন আমাদের স্বাগত জানাল। নদীর দু’ধারে কাশবনের মাথায় বৃষ্টির ফোঁটা পড়ার শব্দ, দূরে ঘরের চালের ওপর বৃষ্টির টুপটাপ শব্দ,সব মিলিয়ে এক অদ্ভুত শান্তি।নৌকা এগোতে লাগল ধীরে ধীরে। আমরা গান গাইতে গাইতে হাসাহাসি করছিলাম। মাঝে মাঝে হালকা বাতাস এসে মুখে লাগছিল, তার সঙ্গে বর্ষার কুয়াশা মেশানো গন্ধ। ঠিক তখনই ঘটল অপ্রত্যাশিত একটা ঘটনা। আমার বন্ধু তুষার, যে সবসময় দুষ্টুমির পাগল, নৌকার সামনে দাঁড়িয়ে পানির দিকে তাকাচ্ছিল। সে একটু নড়তে যেতেই নৌকা দুলে উঠল। আমরা সাবধানে! বলার আগেই ধপাস শব্দ করে সে পানিতে পড়ে গেল।
মুহূর্তটা যেন থমকে গেল। প্রথমে আমরা কেউই বোঝে উঠতে পারছিলাম না কী ঘটল। তুষার জলের নিচে ডুবে গেল, আবার ভেসে উঠল, কিন্তু সাঁতার জানলেও সেই সময় তার মাথা ঠান্ডা ছিল না। নদীর পানি তখন বেশ উত্তাল, বর্ষার স্রোতও ছিল জোরে। আমরা চিৎকার করে উঠলাম, তুষার! ধরে থাক কিছু!নৌকার মাঝি দ্রুত বৈঠা চালাতে লাগল তার দিকে। আমরা সবাই আতঙ্কে জমে গিয়েছিলাম। তুষার হাত-পা ছুঁড়ে ছুঁড়ে ভেসে থাকার চেষ্টা করছিল। মাঝখানে এক মুহূর্তের জন্য মনে হলো,হয়তো আমরা তাকে আর ধরতে পারব না। বর্ষার নদীর স্রোত যেন তাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল।
আরো কয়েক সেকেন্ড পর নৌকা তার খুব কাছে পৌঁছে যায়। আমি আর রাহাত নৌকার ধারে ঝুঁকে হাত বাড়ালাম। তুষার মরিয়া হয়ে আমাদের হাতে ধরার চেষ্টা করল। একবার হাত ছুটে যায়। আমাদের বুক ধড়ফড় করে উঠল। দ্বিতীয়বার রাহাতের হাত শক্ত করে তার কব্জি ধরে ফেলল। ধরে থাক! ছাড়িস না!চিৎকার করে বললাম আমি। আমরা দুজন মিলে টেনে তাকে নৌকায় তুললাম।তুষার নৌকার তলায় বসে হাঁপাতে লাগল। তার পুরো শরীর ভিজে কাঁপছিল, আমরা তো আরও কাঁপছিলাম ভয়ে। কিছুক্ষণ পর তুষার হেসে বলল, আমার কিছু হবে না রে, তোরা এত চিন্তা করলি কেন?কিন্তু সেই হাসির মধ্যেও আমরা বুঝতে পারছিলাম,সে নিজেও খুব ভয় পেয়েছিল।
নৌকা আবার ধীরে ধীরে তীরে ফিরতে লাগল। আমাদের হাসি-আনন্দ যেন কোথায় হারিয়ে গেল। শুধু নীরবতা আর বৃষ্টির শব্দ। কিন্তু সেই নীরবতার মধ্যেও আমি অনুভব করছিলাম,বন্ধুত্বের আসল রূপটাই আমরা সেদিন দেখেছি। বিপদের মুহূর্তে সবাই একসাথে মিলে যে আতঙ্ক, দায়িত্ব আর ভালোবাসা অনুভব করেছিলাম,সেই স্মৃতি আজও বুকের ভেতর গরম হয়ে বেঁচে আছে।তীরে পৌঁছে আমরা সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। তুষারকে জড়িয়ে ধরলাম। সেদিনের ভয়, বৃষ্টি, নদীর স্রোত আর বন্ধুত্বের টান,সব মিলিয়ে সেই দিনটা আজও মনে করলে শরীর শিউরে ওঠে। বর্ষার নৌকাভ্রমণের সেই স্মৃতি,জীবনের অমূল্য একটি অভিজ্ঞতা হয়ে রয়ে গেছে।
ধন্যবাদ সকলকে✨💖
ফোনের বিবরণ
| ক্যামেরা | স্যামসাং গ্যালাক্সি |
|---|---|
| ধরণ | রাইটিং ✨ |
| মডেল | এম-৩১ |
| ক্যাপচার | @alif111 |
| অবস্থান | সিরাজগঞ্জ -রাজশাহী- বাংলাদেশ। |
আমার পরিচয়
আমার নাম মোঃআলিফ আহমেদ।আমি বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগে সিরাজগঞ্জ জেলায় বসবাস করি। আমি বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে নিজেকে গর্বিত মনে করি। আমি আমার জন্মভূমিকে খুবই ভালোবাসি। আমি সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের একজন ছাত্র। আমি ছোট বেলা থেকেই আর্ট করতে পছন্দ করি।তাই অংকন করতে আমার খুব ভালো লাগে।তাই আমি সময় পেলেই বিভিন্ন চিত্র অংকন করি।বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমন করতে ও ফটোগ্রাফি করতে আমার খুবি ভালো লাগে।🌼💖🌼
সবার প্রতি শুভেচ্ছা রইল এবং আমার পোস্টটি সমর্থনকারী সকল বন্ধুদের বিশেষ ধন্যবাদ।🌹🌻





