ছোটবেলার আনন্দময় স্মৃতি
আসসালামুআলাইকুম/আদাব
ছোটবেলার স্মৃতি মানুষকে সারাটা জীবন ধরে আলোর মতো পথ দেখায়। বিশেষ করে মামা বাড়ির আনন্দময় দিনগুলো,যেখানে ছিলো সীমাহীন হাসি, খেলাধুলা, আর নির্ভেজাল ভালোবাসা। আজও চোখ বন্ধ করলে সেই দিনগুলো যেন ঠিক সামনে ভেসে ওঠে। আমার মামা বাড়ি ছিলো যেন এক খেলার রাজ্য, আর সেই রাজ্যের সেরা সঙ্গী ছিল আমার মামাতো ভাই সুমন। আমরা দু’জন ছিলাম যেন অবিচ্ছেদ্য,সারাদিন দৌড়ঝাঁপ, নতুন কিছু খুঁজে বের করা আর দুষ্টুমিতে ভরপুর ছিল আমাদের মুহূর্তগুলো।মামা বাড়িতে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে যেন একটা আলাদা উত্তেজনা কাজ করত। উঠোনে ঢুকতেই সুমন বাইরে দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরত। তার চোখে মুখে এমন এক খুশি ঝলক থাকত যেন সে সারাদিন শুধু আমার অপেক্ষায় ছিল। এরপর শুরু হতো আমাদের পরিকল্পনা,আজ কোন গাছের নিচে খেলবো, কোন পুকুরঘাটে গিয়ে মাছ দেখবো, কিংবা কোন লুকোচুরি খেলা বেশি রোমাঞ্চকর হবে।
বাড়ির পেছনের বড় আমগাছটা ছিল আমাদের প্রিয় জায়গা। গাছের ডালে বসে আমরা কল্পনার রঙে রাঙিয়ে তুলতাম নিজেদের ছোট্ট পৃথিবী। কখনো জলদস্যু, কখনো অভিযাত্রী, আবার কখনো রাজা-বাদশাহ হয়ে খেলা করতাম। সুমনের বুদ্ধি আর আমার দুষ্টুমি মিলিয়ে আমাদের প্রতিটা খেলাই হয়ে উঠত যেন নতুন কেউ লেখা গল্প। বাতাসের শব্দ, পাতার খসখস, আর দূরের কাঁঠালগাছের নিচে ছুটে চলা মুরগিদের ডাক,সব মিলিয়ে আমাদের খেলাগুলো আরও জীবন্ত হয়ে উঠত।মাঝে মাঝে আমরা দু’জন চুপিচুপি বের হয়ে যেতাম পুকুরপাড়ে। জল কত শান্ত, আর তার ওপর ভাসমান পাতায় রোদের ঝিলিক,এই দৃশ্য আমাদের দু’জনের মনকেই যেন অদ্ভুত শান্তি দিত। সুমন আমাকে শিখিয়েছিল কীভাবে পানিতে ছোট মাছের ছুটোছুটি লক্ষ্য করতে হয়, কিংবা কিভাবে পাথর ছুঁড়ে পানিতে ধপ করে আওয়াজ তোলা যায়। এত ছোট ছোট জিনিসেও তখন কত হাসি আর আনন্দ লুকানো ছিল!
মামা বাড়ির রান্নাঘরও ছিল এক আলাদা আকর্ষণ। মামী যখন বিকালের নাশতা বানাতেন, আমরা দু’জন দরজার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতাম,যেন খাবার বানানো শেষ হতেই প্রথম প্লেটটা আমাদের হাতেই আসে। মামীও হেসে বলতেন, “তোমরা দু’জন না থাকলে বাড়িটাই যেন ফাঁকা লাগে।” সেই কথায় যেন আরও নিশ্চিন্ত হয়ে যেতাম,আমরা সত্যিই এই বাড়ির আনন্দের বড় অংশ।রাতে ছাদে দাঁড়িয়ে দূরের তারা গোনা,এটা ছিল আমাদের বিশেষ রুটিন। আকাশে কোনটা ধ্রুবতারা, কোনটা সবচেয়ে উজ্জ্বল, এসব নিয়ে সুমন অনেক গল্প বানাতো। আমি মুগ্ধ হয়ে সব শুনতাম। তারপর আমরা দু’জন শুয়ে পড়তাম, কিন্তু ঘুমের আগে অবশ্যই আজকের দিনের সেরা মজাটা আবার মনে করে হাসাহাসি করতাম।
এখন বড় হয়ে যখন সেই স্মৃতিগুলো ভাবি, মনে হয়,সত্যিকারের আনন্দ কত সহজ ছিল তখন! কোনো মোবাইল, কোনো ব্যস্ততা, কোনো হিসাব-নিকাশ ছিল না। শুধু সুমন আর আমি, আর আমাদের সেই নির্ভেজাল দিনগুলো।জীবনের পথে যতই দূরে চলে যাই না কেন, মামা বাড়ির সেই সোনালি সময়গুলো,সুমনের সঙ্গে সেই হাসির মুহূর্তগুলো,আজও হৃদয়ের গভীরে রয়ে গেছে এক উজ্জ্বল আলো হয়ে। ছোটবেলার স্মৃতি এভাবেই হয়তো আমাদের মনে করিয়ে দেয়, জীবনের সবচেয়ে সুন্দর আনন্দ লুকিয়ে থাকে খুব সাধারণ, খুব সরল মুহূর্তে,যেগুলো কখনো হারায় না, শুধু সময়ের সঙ্গে আরও মূল্যবান হয়ে ওঠে।
ধন্যবাদ সকলকে✨💖
ফোনের বিবরণ
| ক্যামেরা | স্যামসাং গ্যালাক্সি |
|---|---|
| ধরণ | গল্প ✨ |
| মডেল | এম-৩১ |
| ক্যাপচার | @alif111 |
| অবস্থান | সিরাজগঞ্জ -রাজশাহী- বাংলাদেশ। |





আমাদের শৈশব কালটা অনেক সুন্দর ছিলো।তখন আমাদের কোন চিন্তা-ভাবনা টেনশন কিছুই থাকতো না, তখন আমরা অনেক আনন্দ করতাম।যাইহোক ছোটবেলার স্মৃতিগুলো মনে পড়লে কেমন যেনো আনন্দ লাগে।ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।