আমার জীবনের এক বিশেষ মুহূর্ত হয়ে আছে বড়শি দিয়ে মাছ ধরা। সেই দিনের অনুভূতি আজও মনে পড়লে হৃদয় ভরে যায় আনন্দে, যেন প্রথম সাফল্যের স্বাদ এক নতুন আলোয় আমাকে জাগিয়ে তোলে। ছোটবেলা থেকেই দেখতাম, বড়রা পুকুরপাড়ে বসে মনোযোগ দিয়ে বড়শি পানিতে ছুড়ে দিতেন, আর ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতেন। তখন ভাবতাম, এতক্ষণ বসে থাকা কি সত্যিই আনন্দের? কিন্তু যেদিন আমি নিজ হাতে জীবনের প্রথম মাছটি ধরলাম, সেদিন বুঝলাম,মাছ ধরা শুধু একটি কাজ নয়, এটি এক ধরনের গভীর অনুভূতির যাত্রা।

সেদিন বিকেলটা ছিল শান্ত, নরম বাতাস হালকা করে গাছের পাতাগুলো নাড়িয়ে দিচ্ছিল। পুকুরের জল ছিল আয়নার মতো স্থির, যেন প্রকৃতি আমাকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত। মামার দেয়া বড়শিটা হাতে নিয়ে যখন আমি প্রথমবারের মতো ডোরার মাথায় খাবার গেঁথে পানিতে ফেললাম, তখন বুকের ভেতরে কেমন যেন উত্তেজনার ঢেউ উঠল। মনে হচ্ছিল, আজ কিছু একটা ঘটবেই! মামা পাশে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে বলছিলেন, “ধৈর্য ধরো, মাছ ধরতে হলে মন শান্ত রাখতে হয়। আসলে সেই ধৈর্যের মুহূর্তগুলোই মাছ ধরার আসল সৌন্দর্য।

কয়েক মিনিট পরেই বড়শির ডোরাটা টান টান হয়ে উঠল। প্রথমে ভেবেছিলাম, হয়তো বাতাসে নড়ে উঠেছে। কিন্তু যখন টানটা আরও ভারি হয়ে উঠল, তখন বুঝলাম,মাছ লেগেছে! উত্তেজনায় হাত কাঁপতে লাগল, যেন হৃদস্পন্দন বাড়ছে। মামা বললেন, “ধীরে টানো, জোরে টানলে ছুটে যাবে। সেই মুহূর্তে আমার মন একেবারে উত্তেজনায় ভরে উঠেছিল। হাতে বড়শি টেনে তুলতেই দেখি পানির রোদে চকচক করা একটা সুন্দর মাছ লাফাচ্ছে! বিশ্বাসই হচ্ছিল না,এই মাছটা আমি ধরেছি!

মাছটাকে হাতে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যে অনুভূতি হয়েছিল, তা ভাষায় প্রকাশ করা সত্যিই কঠিন। মনে হচ্ছিল, যেন আমি খুব বড় কিছু অর্জন করেছি। জীবনে প্রথম মাছ ধরা,এটা শুধু আনন্দ নয়, যেন নিজের ওপর এক ধরনের আত্মবিশ্বাস তৈরি করে দেয়। আমি মুগ্ধ হয়ে মাছটার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। তার শরীরে সূর্যের আলো পড়ে যেন রুপোলি ঝিলিক দিচ্ছিল। মনে হচ্ছিল, প্রকৃতি আমাকে তার একটি ছোট সুন্দর উপহার দিয়েছে।

মামা আমার মুখের আনন্দ দেখে হেসে বললেন, এই অনুভূতিটাই জীবনে সবসময় মনে রাখবে।সত্যিই, সেই অভিজ্ঞতা আমাকে শিখিয়েছে,সাফল্য ছোট হোক বা বড়, নিজের হাতে অর্জন করলে তার আনন্দ আলাদা। বড়শি দিয়ে পুকুরপাড়ে মাছ ধরার এই মুহূর্ত আমাকে প্রকৃতির কাছে আরও টেনে নিয়েছে। পাখির ডাক, পানির গন্ধ, বাতাসের ছোঁয়া,সবকিছু মিলিয়ে যেন এক স্বপ্নময় বিকেল।

সেদিনের অভিজ্ঞতা আজও মনে পড়লে আবার যেন সেই পুকুরপাড়ে চলে যাই। মনে হয়, আবার বড়শি হাতে নিয়ে বসে থাকি, আবার সেই উত্তেজনা অনুভব করি, আবার প্রথমবারের মতো মাছ ধরার আনন্দ ফিরে পাই। জীবনের সরল মুহূর্তগুলোই কখনো কখনো সবচেয়ে মূল্যবান,আর আমার প্রথম ধরা মাছটি সেই মূল্যবান স্মৃতির একটি সুন্দর অংশ হয়ে থাকবে সবসময়।