শৈশবের দিনগুলো যেন এক একটি রঙিন ছবির অ্যালবাম। তার মধ্যে বাবার সাথে পুকুর পাড়ে মাছ ধরার সেই আনন্দময় মুহূর্তগুলো আজও আমার মনে গভীরভাবে আঁকা আছে। গ্রামের সেই শান্ত পুকুর, চারপাশে সবুজ ঘাস আর তালগাছের ছায়া,সব মিলিয়ে এক অনাবিল সুখের জগৎ ছিল সেটা।

এক সকালে বাবা বললেন, চল, আজ পুকুরে মাছ ধরতে যাবি।কথাটা শুনেই মনটা আনন্দে লাফিয়ে উঠেছিল। হাতে ছোট একটা টিনের বালতি, বাবার হাতে বাঁশের বড়শি আর টোপ হিসেবে কেঁচো,এই সামান্য জিনিস নিয়েই আমরা রওনা দিলাম। পুকুর পাড়ে পৌঁছে বাবা আমাকে পাশে বসালেন। তিনি ধৈর্য ধরে দেখাতে লাগলেন কীভাবে বড়শিতে টোপ লাগাতে হয়, কীভাবে সুতো পানিতে ছুঁড়ে দিতে হয়। বাবার চোখে তখন এক ধরনের প্রশান্তি ছিল, যেন তিনি শুধু মাছ ধরছেন না, জীবনের সহজ পাঠও আমাকে শেখাচ্ছেন।

পুকুরের পানিতে বড়শি পড়তেই ছোট ছোট ঢেউ উঠল। আমি নিঃশ্বাস চেপে অপেক্ষা করতে লাগলাম। হঠাৎ সুতো নড়ে উঠতেই বাবা মুচকি হেসে বললেন, “এই তো, টান দে আস্তে।” আমার ছোট হাতে কাঁপুনি নিয়ে সুতো টানতেই একটা ছোট মাছ পানির উপর লাফিয়ে উঠল। সেই মুহূর্তের আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। বাবার মুখে তখন গর্বের হাসি, আর আমার মনে মনে ভাবনা,আমি যেন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কিছু জয় করে ফেলেছি।

মাছ ধরা শুধু আনন্দই দেয়নি, বাবার সাথে সেই নীরব সময়গুলো আমাকে অনেক কাছাকাছি এনে দিয়েছিল। তিনি গল্প করতেন তাঁর ছোটবেলার কথা, জীবনের সংগ্রামের কথা। আমি মন দিয়ে শুনতাম, আর পুকুরের জলে ভাসমান রোদের ঝিলিক দেখতাম। সময় কখন যে কেটে যেত, টেরই পেতাম না।আজ অনেক বছর পেরিয়ে গেছে। হয়তো আর আগের মতো পুকুর পাড়ে বসে মাছ ধরা হয় না। কিন্তু বাবার সাথে কাটানো সেই মুহূর্তগুলো আজও আমার মনে শক্ত করে বাঁধা। পুকুর পাড়ের সেই শান্ত বিকেল, বাবার স্নেহভরা কণ্ঠ আর প্রথম ধরা মাছের আনন্দ,সব মিলিয়ে তা আমার জীবনের এক অমূল্য স্মৃতি হয়ে রয়ে গেছে।