দীর্ঘদিন পর ঢাকার পথে যাত্রা।
বেশ কয়েক মাস পর আজ আবার ঢাকার পথে রওনা দিলাম। ঢাকা শহর এমন একটি জায়গা যেখানে কোন কাজ ছাড়া আমি সহজে যেতে চাইনা। গেলেও সেখানে ২/৪ দিনের বেশি থাকতে ইচ্ছা করে না। ঢাকা শহরের খাওয়া দাওয়া বাদে আর কোনো কিছুই আমার ভালো লাগে না। প্রচন্ড ঘন জনবসতিপূর্ণ এই শহরে সবকিছুই প্রায় দূষিত। পানি থেকে শুরু করে বাতাস সবকিছু। তার পরেও আমাদেরকে বিভিন্ন প্রয়োজনে সেখানে ছুটে যেতে হয়।
এবার আমার ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশ্য আমার আম্মা দেশের বাইরে থেকে ফিরছে তাকে আনতে যাওয়া। জন্যই এবারের ঢাকা যাত্রা। কয়েকদিন আগে থেকেই চিন্তা করছিলাম কবে যাওয়া যায়। শেষ পর্যন্ত গতকালকে ঠিক করলাম আজই রওনা দিতে হবে। কারণ সময় আর বেশি নেই। তারপর আবার দিন দিন দেশের বন্যা পরিস্থিতির যেভাবে অবনতি হচ্ছে। তাতে করে আমাদের শহরের সাথে ঢাকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। সেজন্য আজ সকালে উঠে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
প্রথমে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম সাড়ে সাতটার বাসে আমি ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিবো। যদিও আগে থেকে টিকিট কাটিনি। বাসা থেকে বের হতে কিছুটা দেরি হয়ে গেলো। কিন্তু ভাগ্য সুপ্রসন্ন ছিলো। তাই কয়েক মিনিট দেরি হওয়ার পরও গিয়ে দেখি সাড়ে সাতটার সেই বাসটা তখনও দাঁড়িয়ে আছে। ঝটপট টিকিট কেটে বাসে উঠে বসলাম। এত সকালে ঢাকা রওনা দেয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে রাস্তাঘাট কিছুটা ফাঁকা থাকতেই যেন ঢাকার কাছাকাছি পৌঁছে যেতে পারি। যাইহোক আমি বাসে ওঠার কিছুক্ষণ পরেই বাস ছেড়ে দিলো।
গত রাত্রে আমার একেবারেই ঘুম হয়নি। যার ফলে বাস চলতে শুরু করার সাথেই আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। কিছুক্ষণ পর হঠাৎ করে ঘুম ভেঙে গেলো। ঘুম থেকে জেগে দেখি ফেরিঘাট থেকে অনেক দূরে আমাদের বাস দাঁড়িয়ে আছে। আর সামনে কয়েক কিলোমিটার ব্যাপী দীর্ঘ গাড়ির সাড়ি। দৃশ্যটি দেখে তো ভয় পেয়ে গেলাম। চিন্তা করছিলাম যদি এটা ফেরিতে গাড়ি ওঠার সাড়ি হয় তাহলে আজকে আর পৌঁছাতে পারবো না। কিন্তু কয়েক মিনিট পর দেখলাম আমাদের গাড়ির ড্রাইভার সেই ট্রাকের পাশ দিয়ে সোজা চলতে লাগলো। এভাবে বেশ কিছুক্ষন চলার পর সত্যি সত্যি একসময় আমরা একটি গাড়ির লাইনের পেছনে আটকে পড়লাম। তখন বুঝতে পারলাম ঘাটে জ্যাম আছে।
আমার দু চোখে তখন রাজ্যের ঘুম। কখনো ঘুমিয়ে পড়ছি আবার কখনো জেগে থাকছি। এভাবে করতে করতে প্রায় দেড় ঘন্টা পরে আমরা ফেরিতে উঠতে পারলাম। ফেরিতে উঠতেই আমার ঘুম কেটে গেলো। ফেরিতে ওঠার পর আমি সাধারণত যা করি তাই করলাম। সোজা চলে গেলাম ফেরির ছাদে। সেখানে গিয়ে মুগ্ধ বিস্ময়ে নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে লাগলাম। দেখলাম পদ্মা তার হারানো যৌবন ফিরে পেয়েছে। পদ্মার এই রূপ দেখতে শুধু যে ভালো লাগে তা নয়। কিছুটা ভয়ও লাগে। নদীর পানিতে তাকালে দেখতে পাচ্ছিলাম সেখানে ঘোলা পানিতে প্রচন্ড স্রোত।
স্রোত এতটাই তীব্র ছিল যে ফেরীর মতো একটি দানবীয় বাহন কেও অনেকটা ঘুরে যেতে হচ্ছিলো। ফেরির উপরে অংশে দাঁড়ালে চারপাশের সুন্দর একটা ভিউ পাওয়া যায়। বেশিরভাগ বাসের প্যাসেঞ্জার দেখলাম ফেরির উপরতলায় এসে বসে আছে। এখানে যেমন চমৎকার বাতাস তেমনি চারপাশের দৃশ্যও দেখতে অত্যন্ত মনোরম। আমি সেখান থেকে বেশ কিছু ছবি তুললাম। যাই হোক প্রায় ৪০ মিনিট মতো লাগলো আমাদের নদী পার হতে। নদী পার হওয়ার পর থেকে শুরু করে সাভার পর্যন্ত রাস্তা মোটামুটি ফাঁকা ছিলো। যদিও সাভারে এসে আবার কিছুটা জ্যাম দেখতে পেলাম। যদিও সেটা খুব বেশি ছিলোনা। শেষ পর্যন্ত বেলা প্রায় ১ টার দিকে গাবতলী পৌছলাম। সেখান থেকে আপুর বাসায় পৌঁছাতে প্রায় আড়াইটা বেজে গেলো। এভাবেই আজকের জার্নি শেষ হলো।


@rupok
আজকের মতো এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনার সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন।
ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইস | হুয়াই নোভা 2i |
---|---|
ফটোগ্রাফার | @rupok |
স্থান | দৌলতদিয়া |

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |


আপনার ঢাকা যাওয়ার জার্নি পড়ে খুবই ভালো লাগলো। জি ভাইয়া ফেরি ঘাটে পার হওয়ার আগে অনেক জ্যাম থাকে। কিন্তু ফেরিঘাট পার হয়ে গেলে তখন আর এত জ্যাম থাকে না তখন পুরো রাস্তা ফাঁকা থাকে। বাস জার্নি তে আপনার মত আমার খুব ঘুম পায় ভাইয়া। আপনাকে ধন্যবাদ ভাইয়া আপনার সুন্দর মুহূর্তটা আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
ঠিকই বলেছেন। একবার ফেরিঘাট পার হয়ে গেলে তখন আর জ্যাম থাকে না।
সবার কথা শুনে এটাই মনে হয় যে। সত্যিই ঢাকার জীবনটা দুর্বিষহ।
আসলেই দুর্বিষহ। রাস্তাঘাটে বের হলেই মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।
খুব সুন্দর ফটোগ্রাফি, দেখে ভাল লেগেছে আর হ্যা আমারও ঘুম পায় গাড়িতে উঠলে,,
আমারও ছোটবেলা থেকেই বাসে ঘুমানোর অভ্যাস। বাস জার্নি করতে আমার কাছে কখনোই ভালো লাগেনা।
আপনার মত আমারও ঢাকা খুব পছন্দের একটি জায়গা। তবে আপনার এই জার্নিতে বিরক্তির চেয়ে আনন্দ টাই বোধহয় বেশি ছিলো। কারণ দীর্ঘদিন পর মা'কে সরাসরি দেখবেন।
ফেরির ছাদ থেকে নেয়া পদ্মানদীর ফটোগ্রাফি গুলো চমৎকার হয়েছে। আপনার ঢাকা যাওয়ার জার্নির বর্ণনা পড়ে খুব ভালো লাগলো।
একদম ঠিক বলেছেন। অনেক দিন পর মাকে দেখতে পাবো। এই জন্য কোন কিছুই আর খুব একটা খারাপ লাগেনি।
নদীতে ফেড়ি, নৌকার ফটোগ্রাফি গুলো খুব সুন্দর হয়েছে ভাইয়া। আপনি ঠিক বলেছেন, ঢাকায় অনেক ঘনবসতি, তার পরেও তো মানুষ গ্রাম ছেড়ে ঢাকা চলে আসে।
মানুষ বাধ্য হয়ে আসে জীবিকার তাগিদে।