রক্ত ছাড়া ডায়াবেটিস নির্ণয় ও একজন বাংলাদেশীর সাফল্য গাঁথা

in #technology7 years ago

রক্ত ছাড়া ডায়াবেটিস নির্ণয় ও একজন বাংলাদেশীর সাফল্য গাঁথা

আসুন দেখি আপনার নিজের জীবনের সাথে এই দৃশ্যটি কতটুকু মিলে যায় – পরিবারে একাধিক পঞ্চাশোর্ধ মানুষ। বয়সের সাথে সাথে তাদের দেহে নানান শারীরিক অসুস্থতা প্রকোপ ফেলতে শুরু করেছে। আর খুব সাধারণ ঘটনার মতোই যে মারাত্নক ব্যাধিটি সেই বয়স্কদের বেশীরভাগজনের মাঝেই লক্ষণীয় সেটি হচ্ছে- ‘ডায়াবেটিস’!

কখনও কি ভেবে দেখে দেখেছেন ডায়াবেটিস এ আক্রান্ত হয়ে কত রোগী মারা যাচ্ছে প্রতি বছর? পৃথিবীতে ডায়াবেটিস এ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বর্তমান এ ৩৮ কোটি এরও বেশি । হাসপাতাল এ ভর্তি থাকা , চিকিৎসা খরচ , ব্যয়কৃত সময় এসবের হিসেব মিলিয়ে ক্ষতির পরিমান ৬০০ বিলিয়ন ডলার এর বেশি । এত কিছুর পরও সংখ্যা টা শুধু বেড়েই যাচ্ছে। মানুষের জীবনযাত্রার পরিবর্তন হয়েছে – ফাস্টফুডের প্রতি আমাদের ঝোঁক দিনকে দিন বাড়ছে, সেইসাথে বাড়ছে খ্যাদ্যে ভেজাল এর পরিমান । ওদিকে যান্ত্রিকতার ভিড়ে সময় যে বড়ই মূল্যবান। ঠিক মত খাবার খাওয়ার সময়ও যেন পাওয়া যায় না। ৫ মিনিট এর হেঁটে চলার পথ ও হয়ত আমরা রিকশা বা গাড়ি নিয়ে যাচ্ছি , দুইতলাতে উঠার জন্য লিফট ব্যবহার করছি। শারীরিক পরিশ্রম এর অভাব আর অস্বাস্থ্যকর খাবার এর অভ্যাস এর কারনেই মূলতঃ সৃষ্ট এই রোগ , ধারনা করা হচ্ছে এর প্রকোপ বাড়বে বই কমবে না ।

ডায়াবেটিকের চিকিৎসা সময়ের সাথে সাথে এগিয়েছে । কিন্তু এর জন্য দরকার নিয়মিত রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ মাপা । ডায়াবেটিক সাধারণত ২ প্রকার। টাইপ -১ এর ক্ষেত্রে কমপক্ষে দৈনিক ৪ বার রক্ত পরীক্ষা করা লাগে , টাইপ -২ তে ২ বার। কিন্তু বর্তমানের সবচেয়ে সহজ রক্ত পরীক্ষা ব্যবস্থায়ও নুন্যতম ১ ফোঁটা রক্ত দিতে হয় । সূচ এর সামান্য আঘাত সহ্য করতে হয়। এখানেই বাধে যত বিপত্তি । রক্তের ব্যাপারে আমাদের অনেকের রয়েছে অনেক প্রকারের ভীতি।রক্ত দেখতেই আমরা অস্বস্তিবোধ করি , তাও আবার নিজের! এছাড়া পরীক্ষা করানোর জন্য খরচের প্রয়োজন ,যেটি বহন করার সামর্থ্যও আমাদের অনেকের থাকে না ।

প্রয়োজনীয়তাই উদ্ভাবনের জনক । সারা বিশ্ব জুড়ে এসব সমস্যা সমাধানের প্রচেষ্টা করে যাচ্ছেন অনেকে। এ ব্যাপারে ছোট বড় অনেক উদ্ভাবনও হয়েছে। সেইসবের বেশিরভাগই অনেক দামি কিংবা অনেক বড় যন্ত্রের সাহায্যে ভাল ফলাফল পাওয়া গেছে । কিন্তু তাদের কোন সমাধানই সবার হাতে হাতে, অন্তত প্রতিটি গ্রামে, কমিউনিটি ক্লিনিকে , কিংবা প্রতিটি হাসপাতালে সাধারণ মানুষের দুয়ারে পৌঁছে দিতে পারার মত উপযোগী নয়।

আশার কথা হচ্ছে, আমাদের দেশের ছেলে, বুয়েট থেকে ২০০০ সালে পাশ করা জুলফিকার আলম একজন এমনই একটি যন্ত্র তৈরির দারপ্রান্তে। জুলফিকার আলম বর্তমানে কানাডার একটি নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে (টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়) এর অধ্যাপক স্টুয়ার্ট আইচিসন (Professor Stewart Aitchison)অধীনে পোস্টডক হিসেবে আছেন । গবেষণার পর এখন রামান স্পেক্ট্রস্কপি (বর্ণালীবিক্ষণ) দিয়ে রক্তে গ্লুকোজ মাপার যন্ত্র তৈরি করছেন তারা।

‘রমন বর্নালিবীক্ষণ’ প্রক্রিয়াটি সংক্ষেপে অনেকটা এমন – কোন ইলেকট্রন এর উপর আলো পড়লে তার শক্তির তীব্রতা বদলে যায় , এক স্তর থেকে আরেক স্তরে এই শক্তির স্থানান্তর ঘটে। ঠিক তেমনি কোন বস্তুর উপর আলো পড়লে সেখানেও ইলেকট্রনগুলো কিছুটা স্থান পরিবর্তন করে। ঘুর্নন , রুপান্তর, বিক্ষেপ ইত্যাদি ঘটনার কারনে প্রতিফলিত আলো এর তরঙ্গ দৈর্ঘ্যও বদলে যায়। পালটে যায় তার রঙ । এই ঘটনাটিই রমন বর্ণালিবীক্ষণ নামে পরিচিত । আর এটি সনাক্ত করার যন্ত্রটিই হচ্ছে রমন বর্ণালিবীক্ষণ যন্ত্র । এই যন্ত্রের সাহায্যে কোন প্রকার রক্তের সাহায্য ছাড়াই পরিমাপ করা যাবে আমাদের শরীরে গ্লুকোজের পরিমাণ! সব মানুষের আঙ্গুলের ছাপের মতই প্রতিটি অণু এর রমন নকশা আলাদা । কিন্তু বর্তমানে এধরণের কাজে ব্যবহৃত যন্ত্র গুলো সবই যেমন বড়, তেমনি দামি।

এই যন্ত্রটিকেই ছোট আকারের তৈরি করার পাশাপাশি, এর সাথে গ্লুকোজ মাপবার ব্যবস্থা যুক্ত করে যাবার প্রচেস্টা করছেন জুলফিকার । আশা করছেন আগামী ৫ বছরের মধ্যে এটি বাজারে চলে আসবে । মূল্যও থাকবে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে। অন্তত প্রতিটি ইউনিয়নে এরকম একটি করে যন্ত্র রাখা যাবে বলে ধারনা করা হচ্ছে ।

জুলফিকার আলম বারডেম কর্তৃপক্ষের এর সাথে যোগাযোগ করেছিলেন তাদেরকে এই গবেষণা কাজে যুক্ত করবার জন্য । প্রশাসনিক জটিলতার কারনে তা আর হয়ে উঠেনি । বর্তমান এটির প্রয়োগ নিয়ে বাংলাদেশে তার নিকটাত্মীয় এ কাজে সহায়তা করছেন । তিনি পুনরায় বারডেম এর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করবেন বলে বুয়েটেক প্রতিবেদককে জানিয়েছেন । কারন এই যুগান্তকারী কাজে, বাংলাদেশের নাম সংযুক্ত থাকুক , মনে প্রানে এটি কামনা করেন তিনি ।

Alam-MuhammadRODCollageLowRes-1.jpg
source
ড. আলম প্লাজমনিক তরঙ্গ নিয়ে কাজ করছেন
ছবি কৃতজ্ঞতা : সি এম সি মাইক্রোসিস্টেমস

এছাড়াও প্লাজমনিক তরঙ্গ নিয়ে জুলফিকারের গবেষণা বিজ্ঞানের জগতে বিপুল সাড়া ফেলে দিয়েছে । কোন ধাতুর উপরে আলো পড়লে ঋণাত্মক আধান বিশিষ্ট ইলেকট্রন এর তরঙ্গ তৈরি হয় । এই তরঙ্গ দিয়ে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গাতে তথ্য আদান-প্রদানের এর চেষ্টা করে যাচ্ছেন বিশ্বের নামকরা সব গবেষকেরা। আলম এর গবেষণা এবং সেটির এমন অসাধারণ ইতিবাচক ফলাফল এই প্রযুক্তি নিয়ে বিশ্ববাসীর মাঝে নতুন সম্ভবনার জন্ম দিয়েছে। দেশের মেধাবী সন্তান জুলফিকার এই সফলতার পাশাপাশি আমন্ত্রণ পেয়েছেন নানান প্রতিষ্ঠান থেকেও। বিশ্ববিখ্যাত মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার ক্যালটেক (ক্যালিফোর্নিয়া ইন্সটিটিউড অফ টেকনোলজি) গবেষণা কেন্দ্রে এ প্লাজমন তরঙ্গ নিয়ে গবেষণার জন্য অতিশীঘ্রই সেখানে যোগদান করতে যাচ্ছেন ।

পর্যাপ্ত গবেষণার সুযোগ থাকলে দেশে ফিরে আসার আশা ব্যক্ত করেন জুলফিকার । বুয়েট ছাড়াও বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এর শিক্ষার্থীদের সাম্প্রতিক সময়ের বিভিন্ন অর্জন এর প্রশংসাও করেন তিনি।

যাদের জীবনে অসাধারণ কিছু করার ইচ্ছা আছে, তাদেরকে যতটা সম্ভব প্রথম থেকেই বড় লক্ষ্য নিয়ে পড়াশোনার প্রতি মনযোগী হতে পরামর্শ দেন জুলফিকার আলম। বারবার স্মরণ করেন সাফল্যের পিছনে তার মা এবং স্ত্রী’র অনুপ্রেরণা কথা, সবসময় পাশে থাকার মানসিকতার অবদানের কথা।

আমাদের গর্ব

ডঃ এম. আলম গবেষণায় সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরুপ সিএমসি মাইক্রোসিস্টেমস এর সি.ই.ও এবং প্রেসিডেন্ট ডঃ আয়ান এল. ম্যাকওয়াল্টার এর কাছে থেকে ২০১৩ সালের ডগলাস আর. কোল্টন মেডেল পেয়েছেন।

Colton-Medal500.jpg
source

Sort:  

In the fight of Humans vs Bots, @megabot defended you with 11.29% upvote courtesy of @rifatkhant!

Support @Megabot by delegating SP to the bot and get a part of 98% of @Megabot's profit.

Direct delegation links : 10 SP || 50 SP || 100 SP || 500 SP || 1000 SP || Any other amount of SP

Join our discord group here.

Thank You !

You got a 1.67% upvote from @moneymatchgaming courtesy of @rifatkhant! Please consider upvoting this post to help support the MMG Competitive Gaming Community.