ফেলে আসা শৈশব, ❤️

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago (edited)

হ্যালো,

কেমন আছেন সবাই আশা করছি ভালো আছেন। আমিও ভালো আছি।
আজ আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করব ফেলে আসা শৈশবের কিছু কথা।করছি আপনাদের ভালো লাগবে।

IMG_20240520_092648.jpg

তো চলুন শুরু করা যাক

এখন রাত ১০বেজে ৪১মিনিট। আকাশ খারাপ দু ঘন্টা আগে থেকে।বৃষ্টির দরকার ভীষণ। যতোটা আকাশ খারাপ করে এসেছিলো ততটা বৃষ্টি হলো না তবে প্রচন্ড বজ্র হলো।এতোটাই বজ্রপাত হচ্ছে যে ঘরে থাকাই মুশকিল হয়ে যাচ্ছে মনে হচ্ছে এই বুঝি মাথার উপরে এসে পড়বে। বিকট শব্দ মেয়েকে নিয়ে শুয়ে শুয়ে শৈশবের কথা মনে পড়ে গেল।
শৈশবের এ সব বজ্র বৃষ্টিকে কিছুই মনে হত না। আমি গ্রামের মেয়ে গ্রামেরই ছোটবেলা থেকে বেড়ে ওঠা। প্রচন্ড গরমে বৃষ্টি নামলে সেই বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে স্নান
করার মজাই আলাদা।এখন ঘরে থাকতেই ভয় লাগে বজ্র বৃষ্টি হলে তখন কিন্তু কিছুই মনে হতো না সবাই মিলে মনের আনন্দে বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে স্নান করতাম।
বৃষ্টি আসলেই সব ছেলে মেয়েরা চলে আসতো আমাকে নিতে আমাদের পুকুরে আমাদের পুকুরেই স্নান করতো সবাই ভেজার পর। মিষ্টির ফোঁটা গুলো যখন জলে পড়তো অনেক গরম অনুভব হতো জল গুলো।আমি কখনো পুকুরে স্নান করতাম না সারা বছর কিন্তু বৃষ্টি আসলেই ভিজে ভিজে তারপর বৃষ্টিতে পুকুরে স্নান করার আনন্দ কে কখনোই মিস দিতাম না।এখন যেমন বৃষ্টি আসলেই ঘরে চলে আসি আর শৈশবে বৃষ্টি আসলেই বাইরে বেরিয়ে পড়তাম বৃষ্টিতে ভেজার জন্য।

বৃষ্টি হওয়ার পর বাড়ির উঠান গুলো অনেক পিচ্ছিল হয়ে যেত।পিচ্ছিল মাটিতে খেলতাম পড়ে যেতাম তবুও খেলতাম ওটাই যেন একটা আনন্দ।
যখন একটু বড় হলাম তখন আর বৃষ্টিতে ভিজতাম না।জানালার ধারে বসে বৃষ্টি উপভোগ করতাম ।ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা বৃষ্টিতে ভিজে মজা করতো আর আমি বসে বসে দেখতাম। আমি খুব একা থাকতে পছন্দ করতাম। পুকুরপাড়ে একা বসে কখনো পুকুরে মাছদের খেলা দেখতাম কখনো হাঁসদের ডুব সাঁতার দেখে মুগ্ধ হয়ে যেতাম। কখনো বা গাছের ডালে পাখি বসে থাকার রোমান্টিক দৃশ্য দেখতাম। কখনো বা ধানের জমির পাশ দিয়ে হেঁটে বেড়াতাম এক কথায় মানুষজনের সাথে নয় প্রকৃতির সাথে থাকতেই বেশি ভালবাসতাম।
আমার মনে আছে এরকম তপ্ত দুপুরে বৈশাখ জ্যৈষ্ঠ মাসে স্কুল থেকে এসে আমাদের বাড়িতে একটি টক আমের গাছ ছিল অনেক রসালো সেই গাছের আম শুধুই মাখা খাওয়া হতো। ভীষণ ভালো লাগতো এই গাছের আমের মাথা খেতে। এই আম পেরে শুকনো মরিচ ও লবণ হলুদ দিয়ে মেখে খেতাম সে কি ভালো লাগতো খেতো বলে বোঝানো যাবে না।
বাড়ি থেকে ছোট আম খেতে দিতেন না ছোট কাঁচা আম খেলে নাকি শরীরের সমস্যা হয় বাচ্চাদের এই কথা পিসি বলেছিল একদিন কঠিন ভাবে। এরপর কাঁচা আম খেতে ভীষণ ভয় পেতাম ভয় পেতাম বলতে পিসির সামনে একদমই খেতাম না কাঁচা আম।আমার খুব ভালো করে মনে আছে যে একদিন একটি আম খাচ্ছিলাম কাঁচা যদিও ছোট নয় তখন বড় হয়ে গেছে আম পাকা শুরু হয়ে গেছে। পিসিকে কলেজ থেকে আসতে দেখে হাত থেকে আম পুকুরে ফেলিয়ে দিয়েছিলাম যাতে দেখতে না পারে। এখন সে কথাটি মনে করলে নিজেকে অনেক বোকা মনে হয়।

আমার বড় পিসির তিন মেয়ে ছিলেন তারা সব সময় আমাদের বাড়িতে আসা-যাওয়া করতেন পাশেই বাড়ি। ওরা বেশিরভাগ সময়ই আমাদের বাড়িতে এসে থাকতো। পিসির ছোট মেয়ের সঙ্গে আমার আবার ভালোই ভাব হয়ে গিয়েছিল যদিও বয়সে আমার বড় কয়েক বছরের। আমার ওই পিশাত বোনের সঙ্গে গাছের ডালে উঠে বসে থাকতাম এবং গল্প করতাম।ওর সাথে মিশতে মিশতে আস্তে আস্তে একাকীত্ব মানে একা থাকার অভ্যাসটি কেটে গিয়েছিল । তখন থেকে মানুষজন ছাড়া তেমন তেমন ভাবে থাকা হতো না। পাশের বাড়ির এক মুসলিম মেয়ে ছিল সে সব সময় আমাদের বাড়িতে আসা-যাওয়া করতো।একসাথে বসে গল্প করতাম কখনো আম মাখা, যখন আম থাকতো না তখন তেঁতুল মাখা। কামরাঙ্গা মাখা। জলপাই মাখা, এসব খেতাম। ছোটবেলায় টকের মধ্যে আকর্ষণ খুব বেশি ছিল।এসব খাওয়ার সময় যখন আমার প্রাইভেট টিচার আসতো খুব মন খারাপ হয়ে যেত।
প্রাইভেট টিচার আমার কাকার বন্ধু ছিল ওনি পড়াতেন। চাটুকারিতা করতেন পড়া আদায় করে নেয়ার জন্য। নানান রকম গল্প শোনাতেন। বলতেন এই অংকটি করে লিখে দাও তাহলে একটা পোকার গল্প শোনাবো,ভুতের গল্প শোনাবো। গল্প শোনার অধীর আগ্রহে তাড়াতাড়ি পড়া রেডি করে দিতাম। এরপর গল্প শোনা তো সে গল্পগুলো এখন মনে হলে বুঝতে পারি যে ওগুলো তো গল্প নয় চাটুকারিতা ছিল পড়া আদায়ের জন্য।
আসলে শৈশবের গল্প শুরু করলে কখনো শেষ হবার নয়। আজকের মত এখানেই শেষ করছি আবারও দেখা হবে নতুন কোন কিছু শেয়ার করার মাধ্যমে সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন নিরাপদে থাকুন।

টাটা

পোস্টবিবরণ
পোস্ট তৈরি@shapladatta
শ্রেণীজেনারেল রাইটিং
ডিভাইসOppoA95
লোকেশনবাংলাদেশ

photo_2021-06-30_13-14-56.jpg

IMG_20230826_182241.jpg

আমি হৈমন্তী দত্ত। আমার স্টিমিট আইডিরঃshapladatta. জাতীয়তাঃ বাংলাদেশী। শখঃবাগান করাও নিরবে গান শোনা,শপিং করা। ভালো লাগে নীল দিগন্তে কিংবা জোস্না স্নাত খোলা আকাশের নিচে বসে থাকতে।কেউ কটূক্তি করলে হাসি মুখে উড়িয়ে দেই গায়ে মাখি না।পিছু লোকে কিছু বলে এই কথাটি বিশ্বাস করি ও সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি।বিপদকে ও অসুস্থতার সাথে মোকাবেলা করার সাহস রাখি সহজে ভেঙ্গে পরি না। সবাইকে নিয়ে ভালো থাকার চেষ্টা করি আর মনে প্রাণে বিশ্বাস করি পর হিংসা আপন ক্ষয়। ধন্যবাদ ।

A5tMjLhTTnj4UJ3Q17DFR9PmiB5HnomwsPZ1BrfGqKbjddgXFQSs49C4STfzSVsuC3FFbePnB7C4GwVRpxUB36KEVxnuiA7vu67jQLLSEq12SJV1etMVkHVQBGVm1AfT2S916muAvY3e7MD1QYJxHDFjsxQDqXN3pTeN2wYBz7e62LRaU5P1fzAajXC55fSNAVZp1Z3Jsjpc4.gif



IMG_20240518_204802.jpg

Sort:  
 2 years ago 

ফেলে আসা শৈশবের অনেক স্মৃতির কথা আপনি আজকে পোষ্টের মাধ্যমে তুলে ধরলেন । আষাঢ় মাসে বৃষ্টির দিনে পাড়ার সমবয়সীরা একসঙ্গে হয়ে বৃষ্টিতে গোসল করা । কাদা মাটিতে খেলাধুলা করা তারপর পুকুরে নেমে গোসল সময় পুকুরের পানি গরম গরম অনুভব করতাম যেটা ভালো লাগতো । আনন্দময় মুহূর্তগুলো খুবই মিস করি। বর্তমান সময়ে পুকুরের পরিমাণ কম এবং পুকুরে গোসল করার সেই দিন হারিয়ে গিয়েছে।

 2 years ago 

ঠিক বলেছেন ভাইয়া পুকুরে গোসল করার দিন গুলো হারিয়ে গেছে। ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।

 2 years ago 

শৈশবের দিনগুলোর কথা এখন যতই মনে পড়ে ততই অনেক বেশি ভালো লাগে। শৈশবের দিনগুলো কত বেশি না সুন্দর ছিল। শৈশবের সেই সময় গুলো যদিও কখনো ফিরে পাবো না, তবে ইচ্ছে করে শুধু সেই সময়গুলোতে ফিরে যাই। শৈশবে বৃষ্টিতে ভেজার মধ্যে থাকতো আলাদা রকম একটা আনন্দ। আম্মু তো অনেক বেশি বকা দিত, কারণ বৃষ্টিতে ভিজলে জ্বর হবে কাশি হবে। কিন্তু কোন বাধাই মানতাম না তখন। আসলে বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে পুকুরে গোসল করার মধ্যে আলাদা আনন্দ ছিল। সবাই মিলে তখন গোসল করতে আসলেই ভালো লাগতো। আপনার লেখাগুলো পড়ে আমার নিজেরই শৈশবের কথা মনে পড়ে গিয়েছে।

 2 years ago 

ঠিক বলেছেন আপু শৈশবের কথাগুলো যত বেশি মনে পড়ে ততই ভালো লাগে।ধন্যবাদ অসংখ্য সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।

 2 years ago 

শৈশবের স্মৃতি মানে ই তার মধ্যে লুকিয়ে থাকে অনাবিল আনন্দ এর কথা যা মনকে নাড়া দিয়ে সেখানে চলে যেতে চাই, কিন্তু বাস্তবে তো সেখানে যাওয়া আর সম্ভব নয়। তাই যখনই বা যতবার এসব স্মৃতির কথা মনে পড়ে তখনই মন হারিয়ে যাই, ছোটবেলায় সেই বৃষ্টিতে ভিজে কতই না খেলেছি , জীবনের এসব স্মৃতিগুলো খুব মিস করি। ধন্যবাদ আপু খুব সুন্দর একটি পোস্ট আপনি আজকে শেয়ার করেছেন।

 2 years ago 

ঠিক বলেছেন আপু শৈশবের স্মৃতি মানেই মনের মধ্যে লুকিয়ে থাকা অনাবিল আনন্দ।

 2 years ago 

শৈশবের স্মৃতি মনে হলে খুবই ভালো লাগে।এমন কিছু স্মৃতি আছে যা সবসময়ই আনন্দ দেয়।আগের দিনগুলোত সত্যিই কতোই না ভালো ছিলো এখন খুব মিস শৈশবের সেই দিনগুলোকে।ফেলা আসা শৈশবের গল্প পড়ে খুবই ভালো লাগলো।সুন্দর একটি গল্প শেয়ার করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

 2 years ago 

ঠিক বলেছেন আপনি শৈশবের স্মৃতি মনে হলেই খুব ভালো লাগে।ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য।

 2 years ago 

এই কথাটা একদমই ঠিক দিদি, ছোটবেলায় বজ্রপাত হলেও তেমন কিছু মনে হতো না, বাইরে খেলাধুলা করে বেড়াতাম। আর এখন ঘর থেকে বেরোতে ভয় করে। তবে আমিও ছোটবেলায় অনেক বৃষ্টিতে স্নান করেছি । আপনার শৈশবের সাথে আমার শৈশবেরও বেশ খানিকটা মিল রয়েছে। কারণ আমাদের একটা বড় আমের বাগান ছিল, সেখানে বসে কত যে আম মাখা খেয়েছি, তার কোনো হিসাব নেই। অনেক ভালো লাগলো দিদি, আপনার শৈশবের কাহিনী কিছুটা জানতে পেরে।

 2 years ago 

আমার সাথে আপনার শৈশব মিলে গেছে জেনে খুব ভালো লাগলো। ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।

 2 years ago 

আমাদের বয়সী সবার শৈশবই মোটামুটি একই ধরনের ছিল দিদি। এই জন্য আমাদের ফেলে আসা শৈশবের অনেক কিছুই অনেকের সাথে মিলে যায়।

 2 years ago 

ঠিক বলেছেন ধন্যবাদ মন্তব্য করার জন্য।

 2 years ago 

আমরা শৈশবে অনেক সুন্দর সুন্দর কিছু স্মৃতি ফেলে এসেছি। আর সেই স্মৃতিগুলো যখন আমাদের মনে হয় তখন খুবই ভালো লাগে। শৈশবের স্মৃতির মত কোন কিছুই হয় না।সত্যি দিনগুলা বেশ সুন্দর ছিল।আপনি শৈশবের স্মৃতি নিয়ে দারুণ কিছু কথা লিখেছেন আপু। খুবই মজা পেলাম আপনার শৈশবের স্মৃতিগুলো পড়ে। ধন্যবাদ আপু সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।

 2 years ago 

ঠিক বলেছেন আপু শৈশবে অনেক সুন্দর সুন্দর স্মৃতি ফেলে এসেছি আমরা।ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।

 2 years ago 

আপনার ব্লগে আমার ফেলে শৈশব গুলো যেন ফুটে উঠেছিল। সত্যি কতই না মধুর ছিল সেই দিনগুলো। বিশেষ করে বৃষ্টি হওয়ার পর উঠানগুলো পিচ্ছিল হওয়ার পর যখন মাটিতে খেলতাম পড়ে যেতাম তারপরও খেলা বাদ দিতাম না। তাছাড়া সবগুলো ঘটনায় আমার শৈশবের সঙ্গে মিলে যাচ্ছিল আপু। বেশ ভালো লাগলো আপনার শৈশবের স্মৃতিগুলো পড়ে।