কোকাকোলা আবিষ্কারের গল্প।।২৩ ডিসেম্বর ২০২৫

blacks (86)adminCo-Founder& Operations Head 🇮🇳in আমার বাংলা ব্লগ • 11 hours ago

হ্যালো বন্ধুরা,

কোকাকোলা আবিষ্কারের গল্প আধুনিক বাণিজ্য, চিকিৎসা-ভাবনা এবং মার্কেটিং ইতিহাসের এক অসাধারণ অধ্যায়।এই জনপ্রিয় পানীয়টির জন্ম হয় উনিশ শতকের শেষভাগে যখন আমেরিকায় নানা ধরনের টনিক ও ঔষধি পানীয়ের প্রচলন ছিল।

_{Imagecreated by OpenAI}

১৮৮৬ সালে আমেরিকার জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের আটলান্টা শহরে এক ফার্মাসিস্ট জন স্টিথ পেম্বারটন (John Stith Pemberton) মাথাব্যথা, ক্লান্তি ও হজমের সমস্যার জন্য একটি টনিক তৈরির চেষ্টা করছিলেন।সে সময় তিনি নিজে গৃহযুদ্ধের ক্ষত থেকে মুক্তি পেতে ব্যথানাশক ওষুধে আসক্ত হয়ে পড়েছিলেন।সেই আসক্তি থেকে বেরোতে এবং মানুষের জন্য একটি “স্বাস্থ্যকর বিকল্প” বানাতে গিয়েই তিনি তৈরি করেন এক নতুন সিরাপ যার মূল উপাদান ছিল কোকা পাতা এবং কোলা বাদাম—এই দুই উপাদান থেকেই নাম আসে “কোকা-কোলা”।

প্রথমে এই পানীয়টি ছিল অ্যালকোহলযুক্ত, কিন্তু আমেরিকায় তখন Temperance Movement (মদবিরোধী আন্দোলন) জোরদার হচ্ছিল।তাই পেম্বারটন অ্যালকোহল বাদ দিয়ে সিরাপটি সোডা জলের সঙ্গে মিশিয়ে দেন।১৮৮৬ সালের ৮ মে,আটলান্টার জ্যাকব’স ফার্মেসিতে প্রথমবার কোকাকোলা বিক্রি হয়—এক গ্লাসের দাম ছিল মাত্র ৫ সেন্ট।তখন দিনে গড়ে মাত্র ৯ গ্লাস বিক্রি হতো,আর প্রথম বছরে লাভের বদলে ক্ষতিই হয়েছিল।

কোকাকোলার নামকরণ ও লোগোর নকশা করেন পেম্বারটনের হিসাবরক্ষক ফ্র্যাঙ্ক এম. রবিনসন (Frank M. Robinson)।তিনিই প্রথম স্পেন্সারিয়ান হ্যান্ডরাইটিংয়ে সেই বিখ্যাত বাঁকানো লোগো লেখেন যা আজও প্রায় অপরিবর্তিত।রবিনসনই বিশ্বাস করতেন—এই পানীয়ের ভবিষ্যৎ শুধু স্বাদে নয়,নাম আর ব্র্যান্ডিংয়েও লুকিয়ে আছে।

দুর্ভাগ্যজনকভাবে পেম্বারটন নিজে কোকাকোলার সাফল্য দেখে যেতে পারেননি।আর্থিক সংকটে পড়ে তিনি ধীরে ধীরে কোকাকোলার মালিকানা বিক্রি করে দেন।শেষ পর্যন্ত ১৮৯২ সালে ব্যবসায়ী আসা গ্রিগস ক্যান্ডলার (Asa Griggs Candler) কোকাকোলার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেন এবং প্রতিষ্ঠা করেন The Coca-Cola Company।ক্যান্ডলারের হাত ধরেই কোকাকোলা একটি স্থানীয় পানীয় থেকে জাতীয়,পরে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডে পরিণত হয়।

ক্যান্ডলার আগ্রাসী বিজ্ঞাপন কৌশল গ্রহণ করেন—ফ্রি কুপন, ক্যালেন্ডার, দেয়ালচিত্র, ঘড়ি, সাইনবোর্ডে কোকাকোলার নাম ছড়িয়ে দেন।এর ফলেই কোকাকোলা ধীরে ধীরে “ঔষধি টনিক” থেকে বদলে যায় একটি জনপ্রিয় সফট ড্রিঙ্কে।বিশ শতকে এসে বোতলজাত কোকাকোলা,সান্তা ক্লজের বিজ্ঞাপন, অলিম্পিক স্পনসরশিপ—সব মিলিয়ে এটি হয়ে ওঠে বিশ্বায়নের এক প্রতীক।

সবশেষে বলা যায়, কোকাকোলার আবিষ্কার কেবল একটি পানীয়ের জন্ম নয়; এটি এক ব্যর্থ ফার্মাসিস্টের চেষ্টা থেকে শুরু হয়ে বিজ্ঞান, ব্যবসা ও সংস্কৃতির মিলিত ইতিহাস।আজ কোকাকোলা শুধু একটি সফট ড্রিঙ্ক নয়—এটি আধুনিক ভোক্তা সভ্যতার এক শক্তিশালী প্রতীক যার শুরু হয়েছিল এক গ্লাস সোডা জলে মেশানো সাধারণ সিরাপ দিয়ে।

VOTE @bangla.witness as witness