আমার বাংলা ব্লগ" প্রতিযোগিতা - ১৪ || গ্রীস্মকালীন ফলের গল্প ~আম চুরি ~ [10% @𝖘𝖍𝖞-𝖋𝖔𝖝 🦊]

গৃষ্ম কালীন ফলের মজার গল্প এতগুলো আছে কোনটা রেখে কোনটা যে আপনাদের সাথে শেয়ার করব সেটাই বুঝে উঠতে পারছি না, তবে রিসেন্ট ঘটে যাওয়া একটি গল্প আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করি।

গত ২০১৯ সালের ঘটনা, আমার মামির বাবার (আমার নানু) বাসায় গিয়েছিলাম। নানুর বাসা দিনাজপুর দশমাইলের ঐদিক। সেখানে আমরা পাঁচ ভাই-বোন মিলে গিয়েছিলাম আমাদের গাড়িতে করে, আমি ড্রাইভ করছিলাম এবং আমার ছোট ভাইও ছিল। আমার মামাতো বোনরা ও ছিলো। মোটামুটি একদম গৃষ্মকালীন সময়ে গিয়েছিলাম তখন মোটামুটি সব গাছেই বিভিন্ন ধরনের ফল হয়েছে। আমাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল গ্রামের বাসায় গিয়ে গৃষ্মকালীন ফল খাওয়া এবং গৃষ্ম কালীন পরিবেশ উপভোগ করা।

শুরুতেই বলে রাখি এই ট্রিপের কিছু ছবি ছিল আমার কাছে। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে বেশ কিছু ছবি খুঁজে পাচ্ছি না। তাই আমাকে আলাদা ভাবে ব্যানার তৈরি করে ব্যবহার করতে হচ্ছে। যদি ছবিগুলো দেখানো যেত তাহলে আপনারা অনেক উপভোগ করতে পারতেন।

দশমাইল জায়গা থেকে কান্তজির মন্দির খুব বেশি দূরে নয়। আমাদের প্লানিং ছিল আমরা সেখানে দুদিন থাকবো এবং অন্যান্য বাসার আশেপাশে ঘুরে বেড়াবো। নানু বাসায় প্রচুর পরিমাণে ফলের গাছ রয়েছে, লিচু থেকে শুরু করে আম, কাঁঠাল প্রায় সব ধরনের গাছ রয়েছে। এই ফলগুলো আমরা খাব এবং বাসার উদ্দেশ্যে নিয়ে আসব এই ছিল আমাদের ছোটখাট প্লান। আমি ও আমার ছোট ভাই গাড়ির সামনে বসেছি এবং আমার তিন মামাতো বোন গাড়ির পিছনে বসেছে। আমি বাসা থেকে সকাল ৮ ঘটিকায় রওনা দেই দশ মাইলের উদ্দেশ্যে। ঘন্টা দুয়েক পরেই সেখানে আমরা পৌঁছে যাই। আমাদের প্ল্যান ছিল এই দুইদিন খুব বেশি ঘোরাঘুরি করব এবং যথাসম্ভব ইনজয় করবো । দুপুর বেলা খাওয়ার পরে আমাদের নানু বললো চলো তোমাদের কান্তজির মন্দির থেকে ঘুরিয়ে নিয়ে আসি। এই মন্দিরটি হলো একটি ঐতিহ্যবাহী মন্দির এবং দূর দূরান্ত থেকে এই মন্দির দেখার জন্য নানান ধরনের পর্যটক আসেন।

আমরা বিকেল বেলা গাড়ি নিয়ে কান্তজীর মন্দিরের উদ্দেশ্যে রওনা দেই, এখানে বলে রাখা ভাল সেখানে সবাই যায়নি। আমি গিয়েছিলাম আমার একটি মামাতো বোন গিয়েছিল এবং আমাদের সাথে নানু ছিল। এই তিনজনই আমরা গিয়েছিলাম প্রথমত সেখানে গিয়ে একটু ঘুরছিলাম হঠাৎ করে কোথা থেকে যেন একদম ঠান্ডা হাওয়া গায়ের মধ্যে লাগল, মনে হচ্ছিল আশেপাশে কোথাও ঝড় বৃষ্টি হচ্ছে। নানু বুঝতে পেরে সাথে সাথে বললো চলো এখানে বেশিক্ষণ থাকা যাবে না হয়তো কোথাও ঝড় হচ্ছে, তখন প্রায় সন্ধ্যা হয়ে আসছে।

শুধুমাত্র এতোটুকুই কথা বলার পরেও মন্দিরের ভেতর থেকে গাড়ি পর্যন্ত আমরা আসতে পারিনি, সেখানে মাত্র ২ মিনিট এর রাস্তা। এর মধ্যেই ঝর চলে আসলো। এতটা বৃষ্টি এবং এত বাতাস ছিল আমাদের সামনে কি ঘটছে সেটা আমরা দেখতে পারছি না। তখনও সন্ধ্যা হতে প্রায় তিরিশ মিনিটের মত সময় ছিল। তখন আমি গাড়িতে বসে আস্তে আস্তে করে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। বাসায় যখন পৌঁছাই আমরা তখনও মাগরিবের আযান দেয়নি এবং নানুর বাসার সামনে একটি আম বাগান রয়েছে কিন্তু আম গাছ গুলো একদম ছোট এবং রক্ষণাবেক্ষণ যে করে তিনি ও আজ পাহারা দিতে আসেনি। হয়তো ঝড়- বৃষ্টি কারণে সে বাসায় চলে গিয়েছে। মূল ঘটনা এখান থেকেই শুরু হয়।।

সত্যি বলতে ঝরের সময় আম কুড়ানোর মজাই আলাদা। বাসায় গিয়ে আমি দেখি আমার ছোট ভাই এবং মামাতো বোন রা আশেপাশে আম কুড়াচ্ছে। এসব দেখে আমিও নিজেকে আটকে রাখতে পারলাম না। বাসায় গিয়ে নানুর একটি লুঙ্গি পড়ে আমিও বেরিয়ে পড়লাম আম কুড়াবো কিন্তু ততক্ষণে যেগুলো আম কুড়াবার সেগুলো কুড়িয়ে ফেলেছে। নানীদের বাসা থেকে সামনে একটা আমের বাগান ছিল, যেটার কথা একটু আগে আপনাদের বললাম। আমি আর আমার ছোট ভাই মিলে সেই আমের বাগানে চুপ করে ঢুকে পরি। চারিদিকে এত ঝড় বৃষ্টি হচ্ছে বাগানের মধ্যে কেউ থাকলেও হয়তো বুঝতে পারবে না বাহির থেকে। প্রচুর পরিমাণে আম নিচে পরেছিল, সব আম কুড়িয়ে নিলাম প্রায় এক বস্তার মত হয়ে গিয়েছে। সেগুলো আমি এবং আমার ছোট ভাই নানু বাসায় নিয়ে আসলাম এবং আরও একটি বস্তা চুপ করে নিয়ে বাগানের মধ্যে ঢুকে পরলাম।

বাগানটা এত বড় ছিল সেখান থেকে যদি আপনি ১০-১২ বস্তা আম সরিয়ে ফেলেন তারপরেও কেউ বুঝতে পারবে না, সেখান থেকে কোন আম চুরি হয়েছে। এরপর যখন আমরা বস্তা নিয়ে ফিরলাম তখন নিচে কোন আম ছিল না তখন আমি গাছ থেকে আম পারতে শুরু করলাম। সত্যি বলতে এটা চুরি হয় কিন্তু সেই চুরির মধ্যেও অনেক মজা ছিল যদিও পরবর্তীতে বুঝতেই পারে নি যে, সেই বাগান থেকে আম চুরি হয়েছিল। আম গুলো ছিলো কাঁচামিঠালি অর্থাৎ এই আমগুলো খাচা খেলেও অনেক মিষ্টি লাগে এবং খেতেও অনেক সুস্বাদু। আমি আর আমার ছোট ভাই ইচ্ছেমতো আম পরতে থাকলাম এবং সেই বস্তায় ভরতে থাকলাম। প্রায় এক বস্তা আম চুরি করার পরে আমি এবং আমার ছোট ভাই সেখান থেকে বেরিয়ে পরলাম। সেদিন এতটাই মজা হয়েছিল যা বলার মত নয়। নানু-নানিকে নিয়েও গোসল করেছিলাম সেই ঝড়ের মধ্যে। সত্যি বলতে দিনগুলো অনেক মিস করি।

এই ছিল আমার একটি গৃষ্মকালীন ঘটনা যদিও আমরা আরো দুইদিন ছিলাম সেখানে আরও নানান ধরনের ঘটনা ঘটেছিল, সেগুলো না হয় অন্য একদিন শেয়ার করব।

|| Join the Discord Server for more Details ||

---

আমি আল সারজিল ইসলাম সিয়াম। আমি বাঙালি হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি। আমি বর্তমানে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বিএসসি-র ছাত্র। আমি স্বতন্ত্র স্বাধীনতা সমর্থন করি। আমি বই পড়তে এবং কবিতা লিখতে পছন্দ করি। আমি নিজের মতামত প্রকাশ করার এবং অন্যের মতামত মূল্যায়ন করার চেষ্টা করি। আমি অনেক ভ্রমণ পছন্দ করি। আমি আমার অতিরিক্ত সময় ভ্রমণ করি এবং নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হতে ভালোবাসি। নতুন মানুষের সংস্কৃতি এবং তাদের জীবন চলার যে ধরন সেটি পর্যবেক্ষণ করতে ভালোবাসি। আমি সব সময় নতুন কিছু জানার চেষ্টা করে যখনই কোনো কিছু নতুন কিছু দেখতে পাই সেটার উপরে আকর্ষণটি আমার বেশি থাকে।

---

---

বিষয়: "আমার বাংলা ব্লগ" প্রতিযোগিতা - ১৪ || গ্রীস্মকালীন ফলের গল্প ~আম চুরি ~

কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ জানাই এই কমিউনিটির সকল সদস্য কে, ধন্যবাদ.........