কেরালা থেকে শিখে আসা রেসিপি আপ্পাম বানালাম। সাথে ডিমের ঝোল।

in আমার বাংলা ব্লগ10 months ago

প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,


সমস্ত ভারতবাসী এবং বাংলাদেশের বাঙালি সহযাত্রীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।


InShot_20250311_225322136.jpg



1000234046.png


1000234048.png




আশা করি আপনারা ঈশ্বরের কৃপায় সুস্থ আছেন, সব দিক থেকে ভালোও আছেন। আপনাদের সবার ভালো থাকা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।



গ্রীষ্মপ্রধান এবং নদীমাতৃক অঞ্চলগুলোতে ধান অর্থাৎ চালের উপরেই খাবার দাবার গুলো অনেক বেশি নির্ভরশীল। আসলে আমাদের প্রকৃতি মাতা এত বেশি পরিমাণে বুঝদার যে যেই অঞ্চলে যে ধরনের খাবার খেলে শরীর ভালো থাকবে বা যে অঞ্চলে যে খাবার শরীরের উপযোগী সেই সমস্ত জায়গায় সেই ধরনেরই শস্য চাষ হয়। আমাদের পশ্চিমবঙ্গে যেমন প্রধান খাদ্য হলো ধান বা ভাত তেমনি কেরালা উপকূলবর্তী অঞ্চল হলেও সেখানকার প্রধান শস্য হলো ধান। আর প্রায় সারা বছরই এখানে মোটামুটি গরম থাকার কারণে খাবারদাবার গুলো সবই চালকেন্দ্রিক। ভাত এরা ভালোই খায় তবে চাল দিয়ে বানানো নানান ধরনের খাবার এরা বেশি পরিমানে খেয়ে থাকে।

আগে একটা ব্লগে আপনাদের সাথে শেয়ার করেছিলাম কেরালা বেড়াতে গিয়ে ঠিক এই ধরনের নতুন খাবার খেয়েছিলাম। কিছু কিছু খাবার সেখানে বানানো শিখে এসেছিলাম। তারই একটি আজকে বাড়িতে বানালাম।

কেরালা অঞ্চলে সারা বছর শীত পড়ে না। শুধু তাই নয় বেশ ভালো রকম গরম থাকে। আমরা যে সময় গিয়েছিলাম বেশ ভালই গরম লেগেছিল অথচ সময়টা ছিল ডিসেম্বরের শেষের দিক। এই আবহাওয়ার কারণে এই সমস্ত অঞ্চলে টক জাতীয় খাবারের প্রচলন একটু বেশি রয়েছে কারণ যেকোনো টক জাতীয় খাবার শরীরকে ঠান্ডা করে। যেমন গরমের দিনে আমরা জল ঢালা ভাত বা পান্তা ভাত খেয়ে থাকি সেটাতো কেবলমাত্র শরীর ঠান্ডা রাখার জন্যই তাই না? আসলে বহু প্রাচীন সময় থেকে আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ধরনের খাবারের প্রচলন রয়েছে। কেরালা ও তার বাইরে পড়ে না।

মোটামুটি খাবারের ধরণ দেখলে আপনাদের পরিচিত মনে হবেই অবশ্যই কিন্তু বানানোর পদ্ধতি সামান্য আলাদা সেটা আমার ধারনা আঞ্চলিক আবহাওয়ার কারণে। তাহলে চলুন এবার দেখে নিই আমার এই রান্নাটা করতে কি কি লেগেছে।

রেসিপিতে যাওয়ার আগে বলিনি আমি এখানে শুধুমাত্র আপ্পামের রেসিপিটির বর্ণনা করব। ডিমের ঝোলটা আলাদা করে ফটোগ্রাফি করিনি, কারণ ডিমের ঝোল এর মত সহজ রান্না এবং পরিচিত রান্না আমি আর আলাদা করি কি দেখাবো!


1000213522.png

IMG-20250311-WA0016.jpgIMG-20250311-WA0026.jpgInShot_20250311_224734074.jpg

ছবিতে যা দেখছেন একেবারেই ওই সামান্য উপকরণ লেগেছে রান্নাটা করতে।

  • প্রায় আড়াইশো গ্রাম চাল, চার থেকে পাঁচ ঘন্টা ভেজানো

  • মোটামুটি বড় মাপের নারকেলের অর্ধেক অংশ, কুরিয়ে নিয়েছি।

  • ভাত (সকালের রান্না করা) ছোট বাটির এক বাটি।

  • নুন পরিমাণ মতো এবং তেল একেবারেই অল্প।


চলুন দেখে নিই কিভাবে বানালাম।


1000213536.png


ধাপ-১

IMG-20250311-WA0025.jpg

প্রায় চার থেকে পাঁচ ঘন্টা ধরে ভিজিয়ে রাখা চালটি ভালো করে বেটে নিয়েছি।

ধাপ-২
IMG-20250311-WA0024.jpgIMG-20250311-WA0023.jpgIMG-20250311-WA0022.jpg
  • বেটে নেওয়ার পর সেখান থেকেই অল্প একটু চাল বাটা এই ধরুন এক কাপ, নিয়ে একটি ফ্রাইং প্যানে দিয়ে গ্যাসে বসিয়ে দিলাম।

  • সামান্য নাড়াচাড়া করার পর দেখা যাবে চাল বাটা টি আস্তে আস্তে শক্ত হয়ে আসছে এবং সুন্দর ডো তৈরি হয়েছে।

ধাপ-৩
IMG-20250311-WA0019.jpgIMG-20250311-WA0018.jpg
  • এবার ওই বাটা চালের বাটার ডো টি সামান্য ঠান্ডা করে নিয়ে মিক্সের বোলে দিয়ে দিয়েছি।

  • সাথে দিয়ে দিয়েছি এক বাটি ভাত।

  • এবার একসাথে বেটে নিচ্ছি।

ধাপ-৪
IMG-20250311-WA0018.jpgIMG-20250311-WA0017.jpgIMG-20250311-WA0021.jpgIMG-20250311-WA0020.jpg
  • বেশ ভালো করে বেটে নেওয়ার পর এটিকে আগের সেই চাল বাটার সাথে মিশিয়ে দিচ্ছি।

  • প্রথমে যখন মেশাতে গিয়েছি দেখুন ভালো করে অনেক লামস থেকে গেছে।

  • তাই অনেকটা সময় ধরে ভালো করে মিক্স করলাম যাতে করে কোন লাম্বস না থাকে।

  • এবার চাপা দিয়ে এই চাল বাটা কে রেখে দিলাম প্রায় আট থেকে নয় ঘন্টার জন্য।

  • এমন সময় চালটি ফারমেন্ট হয়ে যাবে বেশ ভালো করে।

ধাপ-৫
2ffd87df-339e-4e9f-acc1-5cc02e0552bf_20250311_224808_0000.jpgd82b45f3-90ae-431b-b09e-1ccde946ac12_20250311_224836_0000.jpg
  • দেখুন বেশ সুন্দর ফুলে গেছে চাল বাটা টি।

  • এই বাড়িতে আমি নারকেল কোরাটা মিশিয়ে দিচ্ছি ভালো করে। এবং সামান্য জল যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু দিচ্ছি।

  • আমি অর্ধেক চাল বাটা ব্যবহার করেছি। আর সেই মাপেই নুনও দিয়েছি।

  • এই জায়গায় বলে রাখি আপনারা চাইলে আগে থেকেই নারকেল কোরা মেশিয়ে দিতে পারেন। আমার মনে হয় তাতে করে ফারমেনটেশনটা আরো ভালো হবে।

ধাপ-৬
ac315955-b23e-44fd-8e56-d556de12d5d7_20250311_224938_0000.jpgd1bd8442-3d66-4e10-abc6-73e52a7c0703_20250311_225025_0000.jpg35eaee1b-1745-4bf3-bb66-ceac519d18b4_20250311_225111_0000.jpgInShot_20250311_225120848.jpg

অনেকদিন আগেই চিতই পিঠা বাড়ানোর জন্য এই ছোট্ট কড়াইটি কিনেছিলাম তবে তাহার কোন কাজেই লাগেনি। আজ আপ্পাম বানানোর জন্য এই কড়াটাই ব্যবহার করছি।

  • গেছে চাপিয়ে দিয়েছি সামান্য গরম হয়ে যাওয়ার পর একটু তেল ব্রাশ করে দিলাম। আপ্পাম বানানোর জন্য খুব একটা বেশি তেলের প্রয়োজন নেই একবার তেল ব্রাশ করলে প্রায় তিন-চারটি আপ্পাম হয়ে যায়। তবে একেকবার আপ্পাম তুলে নেয়ার পর কড়াইতে ভালো করে মুছে নিতে হয় ভেজা কাপড় দিয়ে।

  • কড়াই গরম হয়ে যাবার পর ব্যাটার দিয়ে ভালো করে চালিয়ে নিলাম চারপাশে।

  • কিছুক্ষণ এই ধরুন চার থেকে পাঁচ মিনিট কম আঁচে চাপা দিয়ে রাখলাম।

ধাপ-৬
f539d22d-9b80-4938-96d5-b7ceb98506a3_20250311_225151_0000.jpg8f685111-e01a-4d4a-bb35-53928dc72876_20250311_225216_0000.jpgInShot_20250311_225227513.jpg
  • তারপর আপ্পাম হয়ে গেলে নিজে থেকেই খানিকটা ছেড়ে আসবে।

  • ব্যাস তুলে নিলাম। এভাবেই সব কটা আপ্পাম বানিয়ে ফেললাম।

রান্নাটা আসলে খুবই সহজ শুধুমাত্র সময়ের খেলা। আর যেহেতু তেল খুবই সামান্য পরিমাণ ব্যবহার করা হয়েছে এবং পুরোটাই চালের উপর নির্ভর করে রান্না তাই এক কথায় বলা যায় এই রান্নাটি শরীরের কোন ক্ষতি করে না। বাহ এটি কোন রকম কোনোভাবেই ফাস্ট ফুড নয়। আজকে আপ্পাম আমি ডিমের ঝোল দিয়ে খেয়েছি আপনারা চাইলে মাংস কিংবা ঘুগনি ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন। তবে যে কোন একটু ঝাল ধরনের তরকারি হলেই খেতে ভালো লাগবে।

1000225073.png


InShot_20250311_225311170.jpg

InShot_20250311_225322136.jpg

InShot_20250311_225332949.jpg

আচ্ছা, আমার আজকের রেসিপি আপনাদের কেমন লাগলো অবশ্যই জানাবেন, আর কতখানি স্বাস্থ্যকর মনে হল সেটাও জানাতে ভুলবেন না। আবার আগামীকাল আসব নতুন কোন পোস্ট নিয়ে। ততক্ষণ আপনারা ভীষণ ভালো থাকুন আনন্দে থাকুন। আজ এ পর্যন্তই...

টাটা

1000205476.png


1000216462.png

পোস্টের ধরণরেসিপি পোস্ট
ছবিওয়ালানীলম সামন্ত
মাধ্যমস্যামসাং এফ৫৪
লোকেশনপুণে,মহারাষ্ট্র
ব্যবহৃত অ্যাপক্যানভা, অনুলিপি, ইনশট


1000216466.jpg


১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে


1000192865.png


~লেখক পরিচিতি~

1000162998.jpg

আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিত গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা



কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।

🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾


1000205458.png

7YHZyBadGPMHF2XKgfZXx3oMrJwWNvgxqAsBdVAuTc61TPYubb3EKwXArUs8px2rcXjNb6iVQVgemgChuhshQrWBRCW7LQZQZ3WfSCZu59...7RXnSdt1xtwewzwECPos59BvXhwRCEZbFGeJZANH797Myt2PwK4Nx9hoT5jHzQwn64qwq2RASbmzkybJoLTpXgHC8myST5TdPpyWz43WcYhCFYF43Mddhcf75.webp

45GhBmKYa8LQ7FKvbbMYpD9Jk8xRAPYHXNPwBa5Q6aNRBWA3yjiNShPnzB1obfkiS4HtHfV38Cyw4oh4izhsFr532Nnivd34o6cHCkCiQi...e8d5wckHhMKGprxzmnAyKiugofeXwgrT9DesFuZXkJGTWVpxTpd3g2DDqSPcgULk8gjE81RGg2aCbRpjYfiMhvHsGHpx7ur8JupTsarimE5PNrv5W1CUU2XHcR.png

Vs68WyhR4ueWguiqU5CbbyMd2eBafmyPRcYVv3LiYRs71UXq9fEqpbeAVPzHYduBype2HWE8Nhc1iC2fZdQmNHVnyomUxfT2f8gJkFTGVsdAbziGqZsTcCpkVxmy38gEphtpBx25Td6PBXv3n7M3DUcaQJiZM6VZAvKYHR2uej34KbBr9d4q5vE1j24yyFXG9aS.webp

1000205505.png

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

1000413070.jpg

1000413069.jpg

 9 months ago 

আমার সাউথ ইন্ডিয়ার খাবার অনেক বেশি ভালো লাগে। আমি সাউথ ইন্ডিয়ার অনেক ধরনের খাবার বাড়িতে বানিয়ে খেয়েছি তবে এই আপ্পাম কখনো খাওয়া হয়নি। তবে আপনার রেসিপিটি দেখে মনে হচ্ছে নিশ্চয়ই অনেক সুস্বাদু হবে খেতে। এত সুন্দর একটা রেসিপি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

 9 months ago 

আপ্পাম কেরালার খুবই বিখ্যাত খাবার। গত ডিসেম্বরে কেরালা বেড়াতে গিয়ে খেয়েছিলাম এবং রান্নাটাও শিখে এসেছিলাম৷ ধন্যবাদ দাদা সুন্দর মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য।

 9 months ago 

বাইরের অজানা খাবারগুলি খেতে আমার কিন্তু বেশ ভালো লাগে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো তুই কখনো আমায় এই খাবারটা খাওয়াসনি। তবে যাই হোক বাঙালি ডিমের ঝোল এর সাথে কেরালিয়ান আপ্পাম কিন্তু দারুণ গেছে। দুইটি দুই জায়গার খাবার হলেও শুনে তো বেশ লোভনীয় লাগছে। মনে হচ্ছে বেশ জমে যাবে। তবে চাল দিয়ে যে কত রকমের খাবার বানানো যায় সেটাই ভাবছিলাম।

 9 months ago 

আমি এই খাবারটা তো আগে বানাতে জানতাম না৷ এই নতুন শিখেছি৷ এর পরের বার গেলে খাওয়াবো। কেমন? এটা চিকেন কসার সাথে দারুণ লাগবে বলে মনে হয়৷

 9 months ago 

নতুন নতুন খাবার খেতে বেশ ভালো লাগে।আর তা যদি হয় স্বাস্থ্যকর। আমার কাছে ইডলিও বেশ ভালো লেগেছে যখন ব্যাঙ্গালোরে খেয়েছিলাম।আপনার আপ্পাম রেসিপিটি অনেক আমাদের দেশের চিতই ও খোলাজালি পিঠার কম্বিনেশন। আমার মনে হয় এই আপ্পাম নলেন গুড় দিয়েও বেশ ভালো লাগবে। একটা বিষয় জানার ছিল মেখে যে প্রায় ৮ ঘন্টার জন্য ফার্মেন্টেড হওয়ার জন্য এই গরমে রেখে দিলেন নস্ট হবে না?

 9 months ago 

না আপু, নষ্ট তো হল না৷ এই ভাবে ইডলি ধোসা সবই ফারমেন্ট করা হয়৷ আর বাইরেই রাখতে হয়। নষ্ট হয় না৷ ভালোই লাগে খেতে৷