কুঞ্জবিহারীর নিকুঞ্জ - পর্ব ০৪
copyright free image source pixabay
তৃতীয় পর্বের পর
চার
বাতাসপুর গ্রামের বিখ্যাত চোর হলো গে পাঁচু । আর বিখ্যাত মাছ শিকারী হলো পল্টু । দুই জনেই নিশাচর প্রাণী । রাত জেগে যে যার কাজ সারে । শোনা কথা, চোরেরা নাকি নিজের গাঁয়ে চুরি করে না, কিন্তু পাঁচুর কারবারই আলাদা । সে নিজের গাঁ ভিন্ন আর কোনো গাঁয়েই চুরি করে না । অতি সম্প্রতি সে অবশ্য দেবীপুর গাঁয়েও চুরি করা শুরু করেছে । কারণটা আর কিছুই না, দেবীপুর এখন তার শ্বশুরালয় । দেবীপুরের জামাই সে । এই তো মাত্র এক মাস আগে অঘ্রাণ মাসে সে বিয়ে করেছে দেবীপুরে । তাই দেবীপুরের পরে তার একটা অধিকার জন্মেছে । অবশ্য প্রথম চুরিটা সে করেছিলো নিজেরই শশুরমশায়ের বাড়িতেই ।
তাই নিয়ে পাঁচুর বউ বিশাল ঝামেলা পাকিয়েছিলো, বিশাল অশান্তি করেছিলো সংসারে । বড্ড মুখ করেছিলো পাঁচুকে, দুই বেলা রান্না বান্নাও করেনি কিছু । মুড়ি-মুড়কি খেয়ে দু'বেলা কাটিয়েছিলো দু'জনেই । পাঁচুর শশুরমশাই অবশ্য জামাইয়ের কীর্তি জানতে পেরে খুবই আহ্লাদিত বোধ করেছিলো । সেও পাকা চোর । পাঁচুর হাতের সূক্ষ কাজ দেখে গর্বে তার বুক ফুলে উঠেছিলো । চোরের বাড়িতে চোর চুরি করে না, কথাটি ডাহা মিথ্যে প্রমাণিত করেছিলো পাঁচু নিজের শশুরমশাইয়ের বাড়িতেই চুরি করে । চোরেদের মহলে তাই পাঁচুর একটা আলাদা নাম ডাক আছে ।
এবার আসি পল্টুর কথায় । পল্টু সদ্য মাধ্যমিক পাশ করেছে । তার বাপ শহরে চাকরি করেন । প্রত্যেক সপ্তাহের শনিবার বিকেলে বাড়ি আসেন আর এসেই পল্টুকে ধরে ঠ্যাঙান । এক সপ্তাহও মিস নেই । কারণ প্রায় প্রত্যেকদিন পল্টু গাঁয়ের এর বাড়ি তার বাড়ির পুকুরে রাতের বেলায় মাছ ধরে বেড়ায় । মৎস্য শিকারী সে, নামজাদা শিকারী । তবে সবই অন্যের পুকুরের মাছ শিকার । গাঁয়ে খাল-বিল, দীঘি কম নেই । পল্টু সে সব জায়গাতেও মাছ ধরে । তারপরেও অন্যের পুকুরের মাছ ধরা ছাড়তে পারেনি । এই জন্যেই মার্ খায় প্রতি সপ্তাহে নিয়মিত বাপের হাতে ।
আজকে হঠাৎই পল্টু আর পাঁচুর এক সাথে দেখা হয়ে গেলো ঝিলের ধারে । পল্টু আজকে ঝিলে গিয়েছে গজার মাছ শিকারে । বিশাল সাইজের একটা গজার মাছ কয়েকদিন ধরেই সে ওয়াচ করছে ঝিলের জলে ।আজকেই একটা হেস্ত নেস্ত করার ইচ্ছে আছে তার । আর পাঁচু বেরিয়েছে গাঙ্গুলি বাড়ির উদ্দেশ্যে । গাঙ্গুলি বাড়িতে আজকে নতুন জামাই এসেছে । জামাইয়ের ক্যামেরাটা দারুন পছন্দ হয়েছে পাঁচুর । বিকেল বেলায় জামাইবাবু গাঁ বেড়াতে বেরিয়েছিলেন । সঙ্গে ছিলো ওই ক্যামেরাখানা । দারুন জিনিস । বিলিতি মাল । দামও নিশ্চয়ই অনেকই হবে । ক্যামেরাখানা বাগাতে পারলে পাঁচুর বেশ কিছু রোজগার হবে । তাহলে এই শীতে একটা দামী শাল কিনতে পারবে সে । শ্বশুরবাড়ি যাবে শাল গায়ে । অনেক দিনের শখ তার ।
এ হেন দুই ক্ষণজন্মার হঠাৎ সাক্ষাৎ হয়ে গেলো ঝিলের পাড়ে । দু'জন দু'জনকে ভালোই চেনে, জানে । টুকটাক কিছু কথা বার্তা হলো উভয় নিশাচরের মধ্যে । শীতের রাত । হু হু করে পৌষের উত্তুরে হাওয়া কাঁপিয়ে দিচ্ছে চরাচর । চাঁদ অস্তমিত । গাঢ় অন্ধকারের চাঁদরে ঢাকা চারিদিক । হিম ঝরে পড়ছে গাছের পাতা বেয়ে, দূর্বা ঘাসের প্রান্ত দিয়ে, ঝিলের জলে । টুপ্ টুপ্ টুপ্। শীতের ছন্দ, হিমের ছন্দ । ছন্দময় শীতার্ত রাত । শীতঘুমে সবাই কাত । জেগে আছে শুধু দুই কীর্তিমান, দুই টাউট ।
কিছুক্ষন কথা বার্তা হওয়ার পরে যেই দু'জনে নিজ নিজ গন্তব্যের দিকে পা বাড়িয়েছে, ওমনি একটা অদ্ভুত ব্যাপার ঘটে গেলো । হঠাৎই মোটর বাইকের শব্দ পাওয়া গেলো । আর চোখের নিমেষে দুটি বাইক এসে ঝিলের ধারে সেই অশত্থের তলে এসে গেলো; যেখানটায় হরনাথ বাবু কুকুরটিকে গুলি বিদ্ধ অবস্থায় পেয়েছিলেন । ঘটনার আকস্মিকতায় ঘাবড়ে গিয়েছিলো দু'জনেই । ভেবেছিলো পুলিশ । তাই চটপট গা ঢাকা দিলো দু'জনেই । আর গা ঢাকা দেওয়ার সুবিধেও বিস্তর এখানে । প্রচুর বুনো ভাট, কালকাসুন্দা আর অ্যাশ-শ্যাওড়ার ঝোপ এখানে । গুটি সুটি মেরে একটা বুনো ঝোপের আড়ালে গা ঢাকা দিলো দু'জনে ।
প্রথম বাইক থেকে নামলো তিন জন মুশকো চেহারার লোক । আবছা অন্ধকারে চেহারা ঠিক ঠাওর করা গেলো না । এর পর দ্বিতীয় বাইক থেকে নামলো আরো দুই জন লোক । তাদের মধ্যে কেউ এক জন কি একটা আলো জ্বাললো । নিমেষের মধ্যে অশত্থতলা দিনের আলোর মতো উজ্জ্বল হয়ে উঠলো । সেই আলোয় এবার স্পষ্ট দেখা গেলো আগন্তুকদের প্রত্যেকের চেহারা । তিনটে ষণ্ডা গুন্ডা । দয়া মায়াহীন চেহারা । আর বাকি দুই জনের মধ্যে একজন একটু বুড়োটে, শান্ত সৌম্য চেহারা । চেহারার মধ্যে একটা দুঃখী অসহায় ভাব ফুটে উঠেছে । আরেকজনকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে সেই হলো লিডার । প্রায় ছ'ফিট লম্বা, মেদহীন ছিপছিপে চেহারা । খুবই ফর্সা । এক মাথা ঢেউ খেলানো কালো চুল । পরনে কালো রঙের স্যুট । আর চোখে মুখে এমন একটা নিষ্ঠুর ভাব রয়েছে যা দেখলে বুকের রক্ত ছলাৎ করে ওঠে । প্রথম কথা বললো সেই -
"ড: বাগচী আপনার যন্ত্রে লাস্ট সিগন্যাল পাওয়া গেছিলো এই লোকেশন থেকেই । ল্যাটিচিউড এন্ড লঙ্গিচিউড ম্যাচড হান্ড্রেড পার্সেন্ট । তাহলে সিড কোথায় ?"
সেই শান্ত সৌম্য চেহারার বুড়োটে লোকটা একটু এগিয়ে এসে পকেট থেকে একটা ছোট টিভি রিমোটের মতো যন্ত্র বের করে কয়েকটা সুইচ টিপলেন । তার পরে ডিসপ্লে স্ক্রিন-এ কিছু দেখলেন । এরপর হতাশ ভঙ্গিতে সেটাকে আবার সুইচড অফ করে পকেটে রেখে দিলেন । তারপরে বললেন -
"সিগন্যাল আর পাওয়া যাচ্ছে না । তার মানে এখান থেকে সিডকে কেউ নিয়ে গিয়েছে । এই যে ঘষটানোর কিছু স্পষ্ট চিন্হ রয়েছে এখানে । আর আপনাদের ছোঁড়া গুলিতে খুব সম্ভবত সিডের শরীরের মধ্যে বসানো ট্র্যাকার স্থায়ীভাবে ড্যামেজড হয়ে গেছে । এখন থেকে সিডকে খোঁজা অনেক কস্টকর হয়ে গেলো । আপনাদের তখনই বলেছিলাম গুলি করবেন না ।"
"আপনি নিজেই জানেন ড: বাগচী যে সিড হলো আমাদের একটা লস্ট প্রজেক্ট । যে উদ্দেশ্যে তাকে তৈরী করা হয়েছিলো সেটি ব্যর্থ হয়েছে । সিড আমার সব নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করছিলো না । তাই তাকে ধ্বংস করা আমাদের প্রাইম টার্গেট । আপনার মনের অবস্থা আমি বুঝতে পারছি ড: বাগচী । সিড আপনারই আবিষ্কার । তাকে ধ্বংস করতে কষ্ট হওয়াটাই স্বাভাবিক । কিন্তু, এ ছাড়া আমাদের দ্বিতীয় কোনো উপায় নেই ।"
এরপরে লিডার লোকটি তার সঙ্গীদের দিকে ফিরে তাকিয়ে বললো -
"গো অন । সব ঝোপ ঝাড় তন্ন তন্ন করে খুঁজে দেখো ।পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই লেজার গান ফায়ার করবে ।"
কথাটা কানে যাওয়া মাত্রই পাঁচু আর পল্টু নিঃশব্দে সরে পড়লো সেখান থেকে । আর থাকা মোটেও নিরাপদ নয় তাদের জন্য সে স্থান ।
দাদা আজকে আপনার গল্পটি পড়ে আমার খুবই ভালো লাগলো। আপনার গল্পটি সত্যিই অনেক রহস্যময়। এই গল্পটির পরবর্তী অংশ পড়ার জন্য আমার খুব ইচ্ছা করছে। আসলেই চুরির বিষয়টি আমার খুবই ভালো লেগেছে। সে নিজের গ্রাম ছাড়া অন্য গ্রামে গ্রামে চুরি করে না। সত্যিই খুবই রহস্যময়। পরবর্তী অংশ পড়ার জন্য অপেক্ষায় রইলাম।
দাদা আপনার গল্পটি আমার খুবই ভালো লেগেছে। আপনি খুবই সুন্দর ভাবে এই গল্পটি আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন। গল্পটিতে অনেক রহস্য লুকিয়ে আছে। পরের অংশটুকু পড়ার জন্য খুবই আগ্রহ জাগছে। আসলে মাছ ধরা আমার খুব শখ, পুকুরের মধ্যে রয়েছে মধ্যে রয়েছে অনেক আনন্দ।পরের অংশ পড়ার জন্য অপেক্ষায় রইলাম।
গল্প টি পড়ে অনেকে ভালো লাগলো দাদা আপনি গল্পের মধ্যে একটি শিক্ষনিয় বিষয় তুলে ধরেছেন।এ রকম গল্প আমাদের মাঝে সেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ দাদা।
অনেকদিন পর চতুর্থ পর্বটি পাবলিশ হলো। এই পর্ব পড়ার পর আগামী পর্ব পড়ার আগ্রহ আরো বেড়ে গেল। সীডের রহস্যটা খুবই জটিল সেটা আগামী পর্বগুলোতে আস্তে আস্তে খুলবে। অপেক্ষায় রইলাম।
এই দুইজনের ক্যারেক্টার ও বর্ণনাভঙ্গি খুবই ভালো লেগেছে আমার কাছে। চমৎকার লিখেন আপনি
খুবই ভালো লাগছে দাদা অনেকদিন পর আবার লেখা শুরু করলেন গল্পটা। আপনার গল্পের ভেতরে আলাদা একটা মজা আছে। সেটা হচ্ছে কিছু মজার শব্দ ব্যবহার।
গে পাঁচু এর শ্বশুরবাড়ি দেবিদার তাই ঐ গ্রামের প্রতি তার একটা দায়িত্ব আছে আর সেই দায়িত্ব থেকে নিজের শ্বশুরবাড়িতে চুরি। এটা দারুণ ছিল। এবং এতদিন জানতাম চোরে চোরে মাসতুতো ভাই। আজ আপনার গল্প থেকে জানলাম চোরে চোরে জামাই শ্বশুরও হয়।
প্রতি শনিবার পল্টুর বাপ শহর থেকে বাড়িতে এসে পল্টুকে ঠাঙায় কথাটা পড়ে অনেকক্ষণ হেসেছি😂😂।
এবং আমার মনে হচ্ছে ড.বাগচি সিডকে নিয়ে তার প্রজেক্টর কথা বললেন সেটা হয়তো সেই কুকুর যেটা কুঞ্জবাবু তার বাড়িতে নিয়ে গেছেন। যাইহোক দাদা দারুণ ছিল। পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষায় থাকলাম।।
অনেক সুন্দর একটি গল্প, পাঁচু আর পল্টু দুজনেই ভালো বিখ্যাত চুরি কাজের জন্য। একজন বাড়ি ঘরে চুরি আর অন্য জন পুকুরের মাছ৷
তবে কাহিনীটা একদম সত্যিকারের লাগলো। তবে শেষ মেস দেখা গেল চুরে চুরে ভাইরা ভাই।
দাদা অসাধারণ সুন্দর একটি গল্প ছিল। পড়ে অনেক মজা পেলাম।
অনেকদিন পর দাদা!!
আমি তো আগের কাহিনী প্রায় ভুলতে বসেছিলাম।
কি বলে যে থ্যাংকস দিবো জানিনা।এবার কিন্তু শেষ করবেন দাদা।
জাস্ট চমৎকার হচ্ছে এক কথায়।
গল্পটা পড়ে অনেক ভালো লাগলো। গল্পটার মধ্যে শিক্ষনীয় অনেক কিছু আছে। যা পড়ে সত্যি অনেক ভালো। ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
খুব সুন্দর অসাধারণ হয়েছে দাদা। পাচু আর পল্টু দুজনেই চুরির জন্য বিখ্যাত
দাদা গল্পের আজকের অংশটুকু পড়লাম। পড়েই শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের অদ্ভুতুড়ে সিরিজ এর কথা মনে পড়ল। ওই সিরিজের প্রায় সবগুলো বই আমার পড়া। আপনার লেখার সঙ্গেও অনেকটা ঐরকম মিল লক্ষ করলাম। এ ধরনের বই পড়তে আমার এখনো ভীষণ ভালো লাগে কিন্তু আপনার লেখায় একটাই সমস্যা। লেখাগুলো পর্ব আকারে আসবে। চাইলেও এখনই সব একসাথে পড়তে পারব না। যাইহোক অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম