"আমাদের চাহিদার কোনো শেষ নেই, শুধু চাই আর চাই"

in আমার বাংলা ব্লগlast year

আসসালামু-আলাইকুম/আদাব।

হ্যালো বন্ধুরা, আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি আপনারা সবাই অনেক ভালো আছেন।হ্যাঁ, আমিও অনেক ভালো আছি। আমি @mohamad786 🇧🇩 বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের সিরাজগঞ্জ জেলায় বাস করি।

"আমাদের চাহিদার কোনো শেষ নেই, শুধু চাই আর চাই" – এই উক্তিটি আমাদের আধুনিক সমাজের একেবারে কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করছে। চাহিদা মানুষের মনের গভীরে এক অমিত শক্তি সৃষ্টি করে, যা কখনোই পূর্ণ হয় না। মানুষের মনের এই অবস্থা যুগের পর যুগ ধরে চলছে, এবং যতই সময় অতিক্রম করছে, চাহিদার পরিধি ততই বাড়ছে।আজকে এ সম্পর্কে আপনাদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করব।চলুন তাহলে শুরু করা যাক...

1000042406.jpg

সোর্স

প্রথমত, আমাদের চাহিদার মধ্যে শারীরিক এবং মানসিক দুটি দিক রয়েছে। শারীরিক চাহিদার মধ্যে রয়েছে খাবার, বস্ত্র, আশ্রয়, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ইত্যাদি। এ সকল চাহিদা পূর্ণ হলে একজন মানুষের জীবনযাত্রার প্রাথমিক স্তর সম্পন্ন হয়। কিন্তু আজকের সমাজে এসব চাহিদা শুধু মৌলিক চাহিদা হিসেবে গণ্য হয় না। মানুষ এখন চায়, উন্নত জীবনযাপন, বিলাসবহুল জীবন, সর্বোচ্চ প্রযুক্তি ব্যবহার, বৈদেশিক ভ্রমণ, অত্যাধুনিক গ্যাজেটস, দামি গাড়ি, এবং আরও অনেক কিছু। যে যেসব চাহিদা মেটাতে একসময় পুরো জীবন কেটে যেত, সেই চাহিদাগুলোও আজ আর সাধারণ মানুষে পূর্ণ করতে পারছে না। মানুষের চাহিদার অভ্যন্তরে প্রবাহিত নতুন দৃষ্টিভঙ্গি সমাজের অগ্রগতির জন্য এক নতুন পথ তৈরি করছে, কিন্তু সেই সাথে এই অতিরিক্ত চাহিদা এক ভয়াবহ দিকও তুলে ধরছে।

মানসিক চাহিদাও মানুষের মধ্যে অশেষ। অনেক সময় আমরা মনে করি যে, অন্যরা যদি আমাদের মত জীবনযাপন করতে পারে, তবে আমাদের জীবনও সঠিক পথে চলবে। এটি আমাদের মনের এক প্রবণতা, যেখানে আমরা অন্যদের চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে নিজের চাহিদাকে উপেক্ষা করি, আবার নিজের চাহিদা পূরণের জন্য সবার থেকে বেশি কিছু অর্জনের প্রবণতা দেখা যায়। ফলস্বরূপ, আজকাল মানুষ এক ধরনের মানসিক চাপের মধ্যে থাকতে বাধ্য হয়, যেখানে 'আমি কি চাই?' বা 'আমার জীবনের উদ্দেশ্য কী?' এই প্রশ্নগুলো গলার কাছে আসছে, কিন্তু সঠিক উত্তর মেলানো কঠিন হয়ে পড়ছে।

এদিকে, বিজ্ঞাপন, মিডিয়া, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আমাদের মানসিকতা গড়ে তুলছে। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন পণ্য, ফ্যাশন, জীবনধারা ইত্যাদি প্রদর্শিত হচ্ছে, যা মানুষের মনে চাহিদার জন্ম দেয়। আমাদের প্রতিদিনের জীবনে প্রযুক্তির আধিপত্য এবং দ্রুত পরিবর্তন এই চাহিদাকে আরও বাড়িয়ে তোলে। এক সময় যে প্রযুক্তি অত্যন্ত মহামূল্য ছিল, তা আজকাল সাধারন মানুষের কাছে সহজলভ্য। তেমনি, মানুষের জীবনযাত্রার মানও পাল্টে যাচ্ছে। একসময় যা ছিল বিলাসিতা, এখন তা আধুনিক জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। ফলে, চাহিদার মধ্যে শেষ নেই।

তবে, প্রশ্ন উঠতে পারে, এই চাহিদার কোনো শেষ নেই কেন? উত্তর খুবই সহজ। মানুষের প্রকৃতি কখনোই সন্তুষ্ট হতে চায় না। মানুষ যতো কিছু অর্জন করে, ততোই তার আরও কিছু পাওয়ার ইচ্ছে তৈরি হয়। উদাহরণস্বরূপ, এক ব্যক্তির যদি একটি ভালো বাড়ি ও গাড়ি থাকে, তবে তার ইচ্ছে হতে পারে আরও বড় বাড়ি এবং নতুন মডেলের গাড়ি কেনার। যেহেতু চাহিদার পরিধি শেষ নেই, সেহেতু মানুষের মনও কখনো শান্তিতে থাকে না।

অন্যদিকে, এই চাহিদার কোনো সীমা না থাকার কারণে জীবনে অনেক সময় অস্থিরতা, হতাশা, এবং মানসিক চাপ সৃষ্টি হতে পারে। মানুষের মনে অজস্র ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও, কখনো সেই ইচ্ছাগুলো পূর্ণ হয় না, এবং এর ফলস্বরূপ হতাশা গ্রাস করে আমাদের। একসময় মানুষের মনে হবে, “এত কিছু কেন চাই? আমি কি সত্যিই শান্তি খুঁজছি, না আমি চিরকাল তাড়িত হচ্ছি শুধুমাত্র অর্জনের জন্য?”

আজকের সমাজে এই চাহিদার পরিপূরক হিসেবে যেসব সমস্যাগুলি তৈরি হচ্ছে, তা কিন্তু অস্বীকার করা যাবে না। প্রকৃতির ক্ষতি, সামাজিক বৈষম্য, অসুখী জীবনযাপন, মানসিক অবস্থা ইত্যাদি বিষয়গুলো এই অতিরিক্ত চাহিদার ফলস্বরূপ তৈরি হচ্ছে। যদি আমরা চাহিদা এবং প্রয়োজনের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারি, তবে আমাদের জীবনে একটি স্থিরতা আসতে পারে। কিন্তু, মানুষ যে চাহিদাকে পূর্ণতা দিতে চাইছে, তা কখনোই শেষ হওয়ার নয়।

আসলে,"আমাদের চাহিদার কোনো শেষ নেই, শুধু চাই আর চাই" – এই উক্তিটি আমাদের জীবনের এক কঠিন বাস্তবতা তুলে ধরে। তবে, আমাদের উচিত এই চাহিদাকে একটি সীমার মধ্যে রেখে, প্রকৃতি, সমাজ এবং মনস্তত্ত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া। তাহলে, আমরা হয়তো বুঝতে পারব যে, সন্তুষ্টি এবং সুখের পথ চাহিদার মধ্যে নয়, বরং সাধন, মানবিকতা এবং আত্মবিশ্বাসের মধ্যে নিহিত।


আজ এখানেই শেষ করছি। অন্য কোন একদিন ভিন্ন ধরনের কনটেন্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব। ততক্ষন পর্যন্ত আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

standard_Discord_Zip.gif

আমার পরিচয়

1000024149.png

আমার নাম মোঃ ফয়সাল আহমেদ। আমি ঘোরাফেরা, লেখালেখি এবং ফটোগ্রাফি করতে ভালোবাসি। ভ্রমণের মাধ্যমে নতুন জায়গা ও সংস্কৃতি আবিষ্কার করতে আমার আনন্দ লাগে। বিভিন্ন মুহূর্ত ও দৃশ্যকে ক্যামেরার লেন্সে বন্দি করা আমার শখ। লেখালেখির মাধ্যমে আমি আমার ভাবনা, অভিজ্ঞতা ও অনুভূতিগুলো শেয়ার করতে ভালোবাসি। প্রকৃতির সৌন্দর্য, মানুষের জীবনধারা এবং ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আমার লেখার মূল অনুপ্রেরণা। আমি প্রতিটি মুহূর্তকে উপভোগ করার চেষ্টা করি এবং সেগুলোকে স্মৃতিতে ধরে রাখি। এসব অভিজ্ঞতা আমাকে নতুন করে জীবনকে দেখার অনুপ্রেরণা দেয়।

1000024154.png

1000024151.gif

Sort:  
 last year 

আসলে চাহিদা এমন একটা জিনিস যার কোনো শেষ নেই। আর এজন্য মানুষের একটার পর একটা চাহিদা লেগেই থাকে। মানুষের একটা চাহিদা পূরণ হওয়ার সাথে সাথে আরেকটা চাহিদা এসে হাজির হয়। আর সেই চাহিদাটা পূরণ করার জন্য সবাই চায়। খুব সুন্দর একটা বিষয় নিয়ে লিখেছেন আজকের এই পোস্ট।

 last year 
 last year 

1000042412.jpg

 last year 

আমাদের চাহিদার কোন শেষ নেই, তবে আমরা যদি আমাদের চাহিদা সীমিত করতে পারি তাহলে কিন্তু জীবনের প্রকৃত সাধ আমরা অনুভব করতে সক্ষম হবো। যাহোক অনেক সুন্দর লিখেছেন ভাই। আপনার লেখাগুলো পড়ে আমার খুবই ভালো লেগেছে এবং আপনার লেখাগুলোর সাথে আমি সহমত পোষণ করছি।

 last year 

আসলে আমরা মানুষ, আর আমাদের এই মানুষগুলোর চাহিদার কোনো শেষ নেই এটা ঠিক। প্রত্যেকটা মানুষ শুধু চাইতেই থাকে। একটা চাহিদা শেষ হওয়ার পর আরেকটা চাহিদা এসে হাজির হয়। আর এটাই বাস্তবিক সত্য। বাস্তবিক একটা বিষয় নিয়ে অনেক সুন্দর করে এই পোস্ট লিখেছেন।

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 last year 

ঠিক বলেছেন আপনি আমাদের শুধু চাই আর চাই।কোন কিছু পেয়ে গেলে তাতে সন্তুষ্ট হইনা আরো চাই আরো চাই এরকম এক অবস্থা আমাদের। ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর পোস্ট টি ভাগ করে নিয়েছেন জন্য।

 last year 

মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত আমাদের চাহিদার কোন কমতি থাকবে না। একটি চাহিদা পূরণ না হতেই মনের মধ্যে আরো নতুন নতুন চাহিদার জন্ম হয়।মাঝে মাঝে মনে হয় আমরা এই পৃথিবীতে শুধু মাত্র চাহিদা পূরণ করার জন্যই এসেছি। আসলে আমরা কখনোই অল্প কিছুর মধ্যে সন্তুষ্ট থাকতে পারি না।

 last year 

প্রত্যেক মানুষের চাহিদা অনেক। আর এই চাহিদা এত বেশি থাকে পুরনো করা যায় না মানুষের। তবে এটি ঠিক চাহিদার কোন শেষ নেই। আর এই চাহিদা প্রকৃতিও পূরণ করতে পারে না। আর চাহিদা মানুষ কে অস্থির করে তুলে। যে মানুষের চাহিদা কম ওই মানুষ সুখী হয়। আপনার পোস্টটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো। বাস্তবিক কথা নিয়ে পোস্টটি শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।