পালং শাকের ঘন্ট

in Incredible India8 days ago

নমস্কার বন্ধুরা। আশা করছি আপনারা সকলে সুস্থ আছেন। আজকে আমি আপনাদের সকলের সাথে শেয়ার করতে চলেছি একটি রেসিপি। এ রেসিপি একেবারেই সাদামাটা। বলতে গেলে আমাদের রোজকার জীবনে আমরা বাঙালিরা যেমন রান্না খেয়ে থাকি, ঠিক তার মধ্যেই একটি রেসিপি আজকের রেসিপি।

IMG-20241128-WA0006.jpg

নানান দেশের নানান রকম সংস্কৃতি, ভাষা যেমন দেশ ভেদে ভিন্ন হয়। ভিন্ন হয় সেরকম খাবার। আমাদের বাঙালিরা যেমন ভেতো। অর্থাৎ ভাত ছাড়া বাঙালি কিছু বোঝেনা। কিন্তু আবার পশ্চিমি দেশগুলিতে ভাতের চাহিদা বেশ কম। সেই রকম ভাবেই আমি খেয়াল করে দেখেছি বাঙালিরা বিভিন্ন ধরনের শাক সবজি দুর্দান্তভাবে রান্না করতে পারে। যদিও সারা দেশ ঘোরার সুযোগ আমার হয়নি ,এমনকি অতটাও কখনো বিদেশে যাইনি। তবে এখন অনলাইন এর যুগে আমরা মোটামুটি সবাই জানি যে ,কোন দেশে কেমন খাওয়া দাওয়া হয়।

যাইহোক আমার আজকের রান্না একেবারেই সরল ভাবে। আজকে আমি বানাতে চলেছি পালং শাকের ঘন্ট। শীতকাল মানে নানান ধরনের সবজি । শাকসবজি খাওয়া কতটা যে জরুরী ,তা ছোটবেলা থেকে আমরা সবাই প্রায় শুনে এসেছি। বিশেষ করে আমার বাড়িতে আমার মা ভীষণ পরিমানে শাকসবজি আমাদের ছোটবেলা থেকে খাইয়েছে। নানান রকম শাক নানান ভাবে রান্না করে, এমন ভাবে পরিবেশন করেছে ,যে কখনো শাক সবজির প্রতি বিতৃষ্ণা কখনও আসেনি। তাই আমি ব্যক্তিগতভাবে ভীষণ শাকসবজি খেতে ভালবাসি।

সেদিন মা পালং শাকের ঘন্ট রান্না করছিল। আর আমি যেহেতু এই ধরনের রান্না সেরকম পারি না অর্থাৎ প্রত্যেক দিনের জীবনে আমরা যে সমস্ত রান্না খেয়ে থাকি, প্রত্যেকদিন যে টাইপের রান্না হয়,আমি এখনো করে উঠতে পারি না। মানে আমাকে জানতে হবে অথবা youtube ঘাটতে হবে অথবা আমাকে জিজ্ঞেস করতে হবে। এ কারণে মাঝেমধ্যে এখন রান্না ঘরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মা কি রান্না করছে দেখি। আর মায়ের হাতের রান্না এমনই হয়, যে কোন রান্নাতেই একটা আলাদা ম্যাজিক পেয়ে যাই, যখন সেই রান্না টেস্ট করি।

নিম্ন থেকে নিম্নমানের রান্না কিছু না দিয়েও কোনো রকম মসলা ব্যবহার না করেও কত সুন্দর স্বাদ করে ফেলে আমার মা। আমার মায়ের হাতের তৈরি এই পালং শাকের ঘন্ট কিভাবে তৈরি করেছি। তাই আপনাদের সাথে শেয়ার করব। উপকরণ খুবই কম। হতে পারে এই রান্না আপনারাও বাড়িতে করে থাকবেন। তাও আমি আমার মতন করে আপনাদের সকলের মাঝে শেয়ার করছি।

প্রথম ধাপ

IMG-20241128-WA0009.jpg

শীতকালে যেহেতু বড়ি আমরা বেশিরভাগ জন ব্যবহার করি, তাই প্রথমে কিনে রাখা বড়ি আমি একটু গরম তেলে ভেজে নিচ্ছি। আগে দেখতাম আমার দিদা, মা, ঠাকুমা রোদে বড়ি শুকোতে দিত। ডাল বেতে বড়ি বানাত। এখন সংসারিক চাপে সেগুলো হয়ে ওঠেনা। তাই মুদির দোকান থেকেই বড়ি কিনতে হয় ।

দ্বিতীয় ধাপ

IMG-20241128-WA0010.jpg

যে তেলে বড়িটা ভেজে নিলাম ,সেই তেলেই দিয়ে দেব একটু ফোড়ন , জিরে আর তেজপাতা।

তৃতীয় ধাপ

কয়েক সেকেন্ড নাড়াচাড়া করার পর দিয়ে দিলাম পালং শাক। মা সকালবেলায় সমস্ত কাজ সেরে উঠে প্রথমে শাঁকগুলোকে কুটে নেয়। তবে এই শাক নিয়ে চারিদিকে যেটুকুনি শুনেছি ,তাতে আমিও বুঝতে পারি , শাক কোটা বিশাল বড় ঝামেলা। একটু একটু করে টুকটুক করে ওইভাবে শাঁখ বেছে বেছে নেওয়া সত্যিই ধৈর্যের ব্যাপার। ভালোভাবে কুটে নেওয়ার পর ভালোভাবে ধুয়েও নিতে হবে।

IMG-20241128-WA0011.jpg

চতুর্থ ধাপ

যাই হোক ওই গরম তেলে পালং শাক দিয়ে দেওয়ার পর, দিতে হবে পরিমাণ মতো লবণ এবং হলুদ। তারপর একটু নাড়াচাড়া করে ঢাকা দিয়ে রেখে দিতে হবে সিদ্ধ হওয়ার জন্য।

IMG-20241128-WA0007.jpg

পঞ্চম ধাপ

মোটামুটি দশ মিনিট লাগবে পালং শাক সিদ্ধ হতে। ঢাকনা খুলে দেখতে পারবেন কতগুলো পালং শাক কয় টুকুনি হয়ে গেছে। আর সেই অবস্থাতে আপনারা যে কোন মসলা ব্যবহার করতে পারেন। এই জায়গায় ব্যবহার করেছি আদা এবং জিরে বাটা হাফ চামচ করে । আবার ভালোভাবে শাকের সাথে মিশিয়ে নিয়েছি।

IMG-20241128-WA0012.jpg

ষষ্ঠ ধাপ

এরপরে ৫-১০ মিনিট ওরকম ভাবেই নাড়াচাড়ার পর। দিয়ে দিতে হবে গরম মসলা। আমাদের বাড়িতে বেশিরভাগ মসলা বাটা মশলা ব্যবহার করা হয়। বাটা মসলার আলাদা রকমই স্বাদ। শিল নোরাতে ছোটবেলা থেকে দেখি মাকে সমস্ত মসলা বেটে নিতে। কখনোই মা মিক্সার গ্রাইন্ডার ব্যবহার করেনা। আর সত্যি বলতে এটা একদম সঠিক যে, শিলনোরাতে বাটা মসলার স্বাদ অন্যরকম।

IMG-20241128-WA0013.jpg

সপ্তম ধাপ

গরম মসলা দিয়ে দেওয়ার পর ভালোভাবে নাড়াচাড়া করে নিলে তৈরি হয়ে যাবে , পালং শাকের ঘন্ট। এই জায়গায় এসে আপনারা চাইলে হাফ চামচ মত চালের গুড়ো ব্যবহার করতে পারেন।। এতে ঘন্ট একটু মাখামাখা হয়।

IMG-20241128-WA0014.jpg


IMG-20241128-WA0015.jpg

তাহলে দেখুন কত সহজে আমাদের প্রত্যেক দিনের জীবনের একটি সাধারণ রান্না রেসিপি আমি আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম। পালং শাক আমার নিজেরও খুব পছন্দের। তাই মা কিভাবে রান্না করেছে সেটা আমি তুলে রাখলাম। ভবিষ্যতে আমারও রান্না করতে কাজে লাগবে।

Sort:  
 8 days ago 

যখন আমি প্রথম দেখি,আপনার এই পোস্টটি, আমি ভেবেছি এটা হয়তো বা শাক দিয়ে শুটকি দিয়ে রান্না করা হয়। এটাইকে ঘন্ট বলে। পরে আমি আপনার পোস্টটি সম্পন্ন পড়লাম আর বুঝতে পারলাম, এইটা রান্না করা হয় বড়ি দিয়ে। যাইহোক নতুন একটা রেসিপি সম্পর্কে আমি জানতে পারলাম। এই ভাবে শাকসবজি খেলে সত্যিই মুখে কখনো অরুচি হবে না। শাক সবজি সবার খাওয়া দরকার। এই শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ও বিভিন্ন রকমের উপাদান রয়েছে, যা মানব দেহের জন্য খুবই উপকার। আপনার পোস্ট পড়ে ভালো লাগলো। ভালো থাকবেন,সুস্থ থাকবেন।

 8 days ago 

এই রেসিপি শেয়ার করার ধরণটা এত সুন্দর আর গোছানো হয়েছে যে, পড়তে গিয়ে মনেই হলো না এটা পড়ছি বরং যেন রান্না করছি। পালং শাকের ঘন্ট রান্নার প্রতিটি ধাপ এত সহজভাবে তুলে ধরেছেন যে, এটা যে কেউ অনায়াসেই চেষ্টা করতে পারবে।

যদিও আমি এর আগে পালং শাকের ঘন্ট রান্না করিনি তবে আমি আপনার এত সুন্দর রেসিপিটি দেখে রান্না করার চেষ্টা করবো।

গরম তেলে পালং শাক দেয়ার সময়কার বর্ণনা, মসলার স্বাদ বাড়ানোর কৌশল, আর শিলনোরার মসলার আলাদা স্বাদের উল্লেখ সবকিছুই প্রমাণ করে যে, আপনি রান্নার প্রতি কতটা যত্নশীল এবং আপনার মায়ের কাছ থেকে কত সুন্দরভাবে শিখেছেন।

সত্যিই, শিলনোরা বাটার মসলার যে স্বাদ, সেটা অন্য কিছুতে পাওয়া যায় না।পালং শাকের ঘন্টের শেষে চালের গুড়োর ব্যবহারটা খুবই অভিনব এবং বাঙালি রান্নার ঐতিহ্যকে মনে করিয়ে দেয়। এটা শুধু রেসিপি নয়, আমাদের সাংস্কৃতিক শিকড়ের একটা অংশও।

যাইহোক আপনার রেসিপিটি অনেক ভালো লাগলো সবসময় ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।

Loading...