ঘড়ি! (Clock!)

আচ্ছা! উপরের ছবিটি দেখে আপনাদের মধ্যে কেউ আন্দাজ করতে পারবেন ছবিটি তোলার সময় ঘড়ির কাঁটায় ঠিক কোন সময় কে জানান দিচ্ছিল?
অনেকেই হয়তো আমার প্রশ্নটিকে অবান্তর ভাবতে পারেন, আবার ধরুন যারা লেখাটি পড়বেন তাদের মধ্যে কেউ কেউ ভাবতে পারেন আমরা পৃথিবীর ভিন্ন ভিন্ন প্রান্তে থাকি কাজেই এক্ জায়গায় থেকে কিংবা বলা ভালো ভিন্ন দেশে থেকে অন্য দেশের একেবারে সঠিক সময় নির্ধারণ সম্ভবপর নয়!
দ্বিতীয় বিষয়টি খানিক গ্রহণযোগ্যতা আছে বৈকি!

![]() | ![]() |
|---|

তবে, আজকে আমার এই প্রশ্নগুলো একেবারেই আমার নিজস্ব এমনটি কিন্তু নয়, বিষয়টি একটু বিশদে তুলে ধরছি, তাহলে হয়তো আমার প্রশ্নের পিছনের কারণটি অনেকের কাছেই সুস্পস্ট হবে।
দিন পাঁচেক আগের কথা আপনাদের মাঝে একটি লেখায় উল্লেখ করেছিলাম, মা কালী ঠাকুরের মন্দিরে পুজো দিতে যাবার অভিজ্ঞতার কথা, বিষয়টি এই মন্দির চত্বরে বসে থাকা একটি ছেলের প্রতিভার সাথে জড়িত!
আমার পূর্বের লেখায় উল্লেখিত সুবিশাল লাইনের কথা, এই লাইন ধরে যাতায়াতের পথে নজর কেড়েছিল এক্ অনন্য দৃষ্টান্ত!

একটি মলিন বস্ত্র পরিহিত ছেলে রাস্তার ধারে বসে, চকের সাহায্যে দৃষ্টিনন্দন ছবি এঁকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল যেখানে কেবলমাত্র মা কালীর ছবি ছিল এমনটি কিন্তু নয়, সঙ্গে ছিল স্বামী বিবেকানন্দের ছবি সহ তার বিশ্ব সমাদৃত সেই বানী
জীবে প্রেম করে যেজন, সেজন সেবিছে ঈশ্বর!
এবার এই বিষয়গুলো যেমন অনেকেরই জানা, তেমনি যে বিষয়টি আমাকে আকৃষ্ট করেছিল সেটি ছবির পাশাপশি মার্ক করে দিলাম আপনাদের বোঝার সুবিধার্থে!
কি সেই বিষয়? পাশের দোকানে দাড়িয়ে লক্ষ্য করছিলাম, ছেলেটি একটি বৃত্তাকার আকৃতির মাঝে একটি চক দার করিয়ে রেখেছিল, শুধু তাই নয়, খানিক বাদে বাদে পাশে সময় লিখছিল!
তখন মধ্যাহ্ন একজন কথায় কথায় বললো, এখন দুপুর বারোটা বাজে, ওমনি ছেলেটি পাশ থেকে বলে উঠলো, এখন বাজে দুপুর বারোটা বেজে দুই মিনিট!
যে মুহূর্তে কথাটি কানে আসলো চোখ ফিরিয়ে দেখলাম, একটি অন্য চক দিয়ে বৃত্তাকার আকৃতির পাশে সময় লিখে দিলো, যতক্ষণ ছিলাম, তাকে পুরোনো সময় মুছে নতুন সময় লিখতে দেখেছিলাম!

আমি প্রশ্ন করায় কি অসাধারণ উত্তর দিয়েছিল ছেলেটি, আমায় বলেছিল যখন ঘড়ি আবিষ্কার হয়নি তখন মানুষ সময়ের হিসেব কিভাবে রাখতো?
উত্তর অবশ্য সে নিজেই দিয়ে দিয়েছিল, আমাকে দেখিয়ে দিল চক এর বিপরীতে থাকা সূর্যের ছায়া দেখে, সে সময় বলে দিতে সক্ষম!
নিজেকে বেশ অজ্ঞ মনে হলো, আসলে সহজে যখন কোনো কাজ সমাধা হয়ে যায়, কিংবা আজকাল ঘড়ির পাশাপশি মোবাইলে সময় দেখা যায়, তখন প্রকৃতির সৃষ্টির অনবদ্য নজির চট করে মাথায় আসে না!
আজ পড়ন্ত বিকেলে সূর্য্য অস্ত যাবার সময় মনে হলো, জীবন থেকে আরেকটি দিন ফুরিয়ে গেল, আর সাথে সাথে মনে পড়ে গেল ছেলেটির কথা!

আজকের যুগের ছেলে হয়েও কি অসাধারণ ভাবে সূর্যের ছায়া দেখে সময় নির্ধারন পারদর্শী আর ঠিক এই বিষয়টি আমাকে আরো একবার মনে করিয়ে দিলো, শুরুটা কখনও ভুলতে নেই!
অত্যাধুনিক প্রযুক্তির আড়ালে প্রকৃতির সৃষ্টির ইতিহাস যেখানে প্রায় সকলেই ভুলতে বসেছি, সেখানে পৃথিবীর কোনো কোনায় কেউ আজও সৃষ্টির ইতিহাস মনে রেখেছে এই বিষয়টি ছেলেটিকে শুধু অনন্য প্রতিভার অধিকারী করেছে তাই নয়, সাথে ছেলেটি ভুলতে বসা সেই সকল আধুনিক সমাজের মুখে ঝামা ঘষে দিয়েছে বলা যায়!
আজকাল আমরা সকলেই যান্ত্রিক, ঘর থেকে বাইরে সকল কাজেই আমরা যন্ত্রের উপরে নির্ভরশীল, সেখানে রাস্তার এক্ কোনায় বসে নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর নজিরবিহীন!




