বর্তমান সময়ে কিছু অভ্যেস পরিবর্তন আবশ্যকীয়!(We are in great need of transforming certain habits.
এখন হাতে ফোন এসে যাবার পরেও কেউ কারোর খোঁজ নেবার সময় পায় না!
অথচ আগে যখন হাতের মুঠোয় ফোনের ব্যবসা সেই অর্থে পাকাপাকি ভাবে জায়গা করে নিতে পারেনি, তখন কিন্তু খোঁজ খবর নেওয়ার প্রবণতা এখনকার চাইতে অনেক বেশি নজরে পড়তো!
এই পরিবর্তন সকলেই খেয়াল করেছেন হয়তো, কারণ আমরা নিজেরাই এখন এই অভ্যেসের অন্তর্ভুক্ত!
ফাঁকা সময় ফোন করে আপনজনের খেয়াল নেবার চাইতে অন্য পন্থায় উপার্জন, তথা নানাবিধ অনলাইন খেলা এবং সাথে বিভিন্ন ধরনের ভিডিও দেখতে এখন সবাই বেশি পছন্দ করি।
ছোটদের দোষ দিয়ে কোনোই লাভ নেই, কারণ তারা কিছুটা এই অভ্যেস রপ্ত করেছে বড়দের থেকেই, সাথে কিছু মানুষ স্বেচ্ছায় এই অভ্যেসের অন্তর্ভুক্ত করেছেন নিজেদের সন্তানদের।
আজকে এই কথাগুলো লিখছি কারণ মানুষের এখন দৈনন্দিন জীবনের পরিবর্তন আমার বেশ দৃষ্টি আকর্ষণ করে!
(স্টেশন এর পাশে গণেশ পুজো) |
---|
বাড়ি ভাড়ার টাকা তুলতে হবে বলে সোমবার বিকেলে একটু বাজার পথে হাঁটতে হয়েছিল, কারণ বাজারের মধ্যে দিয়েই সাধারণত আমি এটিএম যাই, তাতে গাড়ি ঘোরার চাপ থাকে না, সাথে রাস্তাটি সহজেই পৌঁছে দেয় আমার নিজের গন্তব্যে।
সোমবার বাজারে গিয়ে দেখছি, সবাই ব্যস্ত, খাবারের দোকানে যে খাবার দিচ্ছে সে তাই নিয়ে আর যে কিনছে সে মোবাইল নিয়ে!
বিষয়টা হলো ওইটুকু সময় পর্যন্ত অনলাইন মিস করার উপায় নেই!
বিষয়গুলো আমি দেখি আর চিন্তা করি, ছেলেবেলায় মা শেখাতেন, রাস্তায় মাথা উঁচু করে হাটবে, রাস্তা পারাপারের সময় দু বার করে ডানদিক বাঁদিক তাকিয়ে যখন দেখবে কোনো গাড়ি নেই, তখন রাস্তা পার করবে।
এখন বেশিরভাগ দুর্ঘটনার কারণ এই মোবাইল, রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে মোবাইল দেখছে, কোনো হুশ নেই পাশ দিয়ে সাপ গেলো না ব্যাং!
পুরোনো শিক্ষাগুলো আজ মূল্যহীন, এখন যেটাই ভালোর জন্য বলা হোক না কেনো সেটা জ্ঞান ছাড়া কিছুই নয়!
(ঘটনাস্থল) |
---|
ওইদিন এরকম একটি ঘটনার সাক্ষী হয়েছি, একটি মেয়ে মোবাইলে কথা বলায় এতটাই মসগুল পিছনের গাড়ির চালক হর্ন দিচ্ছে সে শুনতেই পাচ্ছে না, আর পাবেই বা কি করে কানে হেডফোন, আর চোখ মোবাইলে ভিডিও কল চলছে!
এমন সময় একজন মাঝ বয়েসী লোক তাকে ধরে সরিয়ে দেওয়াতে তার সম্বিৎ ফেরে!
কান থেকে এক্ পাশের হেডফোন খুলে বেশ বিরক্ত হয় সেই মানুষটির উপরে!
আসলে আমার এটিএম যেখানে তার থেকে দশ পা এগিয়ে রেলগেট, এবং সেই গেট যখন ট্রেন আসবে বলে দুদিক থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়, তখন দুপাশেই গাড়ির ভিড় জমে যায়।
রেলগাড়ি চলে যাবার পর যে দৃশ্য আমি সবসময় দেখি সেটা দেখলে বোঝা যায় মানুষের কি ভীষণ তাড়া!
(একটি মোটরসাইকেলে তিনজন বসা নিয়মবহির্ভূত) |
---|
কে কাকে টপকে আগে যাবে তার রেষারেষি অবাক করার মতো!
আমরা মুখে অনেক কথা বললেও দৈনন্দিন জীবনে এমন অনেক কাজ করি যেগুলোর ফলস্বরূপ আমাদের ক্ষতি আমরাই ডেকে নিয়ে আসি।
লোকটি মেয়েটিকে বলছিল মামনি রাস্তায় চলতে চলতে এইরকম জায়গায় এইভাবে ফোনে কথা বলতে নেই, যেহেতু আশেপাশে অনেক মানুষের ভিড় ছিল তাই মেয়েটি মুখে কিছু না বললেও, তার অভিব্যক্তির মধ্যে কৃতজ্ঞতা ছিল না বিন্দুমাত্র বরঞ্চ বেশ বিরক্ত হচ্ছে কথাগুলো শুনে এমনটাই মনে হচ্ছিল।
সময় বদলাচ্ছে, আধুনিক হচ্ছে এতে কোনোই আপত্তি নেই, তবে শিক্ষাগুলোকে আধুনিকীকরণ করার আগে একবার বোধহয় ভাবতে হবে সকলকে!
বিষয়টির ছবি তুলতে পারিনি কারণ বিষয়টি আমাকেও বেশ স্তম্ভিত করেছিল।
ফেরার পথে ভাবছিলাম, আমার নিজের অভ্যেস ও কর্মসংস্থান পরিবর্তনের সাথে সাথে দৈনন্দিন বেশকিছু ভালো অভ্যেস হারিয়ে গেছে!
আগে অফিসে সময়মতো পৌঁছনোর তাগিদে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়া, সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে হাঁটতে যাওয়া, খাওয়া দাওয়া প্রায় সবটা ভালো অভ্যেস এখন বিপরীতমুখী!
(আমার দৈনন্দিন ওষুধ এর সামান্য নমুনা) |
---|
ফলস্বরূপ একরাশ ওষুধ জায়গা করে নিয়েছে আমার প্রাত্যহিক জীবনে!
তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আগামী মাস শুরু হবার প্রথম থেকেই নিজের পুরোনো অভ্যেস গুলোকে ফিরিয়ে আনবো!
শরতের সকাল উপভোগ করবো, পাশাপশি প্রয়োজন ছাড়া ফোন থেকে দূরত্ব বজায় রাখবো।
(আবার শিশির ভেজা ঘাস আর শিউলি ফুল কুড়োতে বেরোবো শরতের ভোরে, উপভোগ করবো নির্মল বাতাস আর শরৎ ঋতুকে) |
---|
খুব সত্যি কথা হলো, আমি মৃত্যুকে ভয় পাই না, ভয় পাই অসুস্থতাকে, কারণ অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকলে দেখার কেউ নেই।
আর ঠিক সেই কারণে, আমার পুরোনো আমিকে নতুন মাসের হাত ধরে ফেরানোর প্রয়াস করবো, জীবনকে মনে করিয়ে দেবো পুরোনো শিক্ষা এবং সঠিক দিনলিপি শরতের হাত ধরে।
Upvoted. Thank You for sending some of your rewards to @null. It will make Steem stronger.
প্রিয় বন্ধু, আপনি ঠিক বলেছেন। একটি মটর সাইকেল ৩ জন বসা নিয়মের বাইরে। মোবাইল ব্যবহারে মানুষ আসক্ত হয়ে পরেছে। কার পাশ থেকে কে যাচ্ছে তার কোন খেয়াল রাখে না। আমি দেখেছি আপনার এটিএম যাওয়ার শটকাট রাস্তা নির্বাচন। যেটি বাজারের ভিতর দিয়ে। ধন্যবাদ বন্ধু। শুভকামনা রইল। 🥰
দুর্ঘটনা মানুষের জীবনে কখন আসে বলা বাহুল্য। বর্তমানে আধুনিকতা এমনভাবে ছড়িয়ে পড়েছে যা আপনার এই উল্লেখিত লেখা পড়লেই বোঝা যাচ্ছে এবং নিজেদের জীবনেও সেই বিষয়গুলো প্রতিনিয়ত করতেছে যেমনটি ভাবে সেই ভদ্র মেয়েটির সাথে এক মধ্যবয়সী লোকের কথোপকথনে ভদ্র মেয়েটির কোন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ পায়নি। প্রত্যেকের বাবা-মা তার সন্তানের ভালোর জন্য সেই কথাগুলো বলে রাস্তা পার হওয়ার সময় ডানে-বামে তাকিয়ে পার হওয়া; এই আধুনিকতার অতি ছোঁয়ায় আমরা সবই হারিয়ে ফেলেছি। মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধ ভালোবাসা সবকিছুই।
আমি অনেক খুশি হয়েছি, আমার অনেক ভালো লাগতেছে নিজের কাছেই আপনি সেই সময়গুলোতে ফিরে যেতে চাচ্ছেন যেই সময়গুলো এখন প্রত্যেকেই মিস করে তার জীবনে কেননা সবাই এখন আধুনিকতার অতিরিক্ত ছোঁয়ায় মিশিয়ে আছি।
আর যে কারণে আমাদের জীবনে রাত জেগে থাকা সহ অনেক মূল্যবান সময় গুলোকে অর্থ উপার্জনের উপর ন্যস্ত করেছি। নিজেও এই অসুস্থতার মধ্যে শামিল।
আপনার জন্য অনেক দোয়া রইল মন থেকে আল্লাহতালা আপনার সেই পুরনো দিনগুলোতে পৌঁছানোর তৌফিক দান করুন আমাদের সকলকেই, কেননা আমাদের সেই অতীত সময়গুলো সত্যিই চমৎকার ছিল বর্তমান এই আধুনিকতার ছোঁয়ায় সেই প্রিয় মানুষগুলোকে হারিয়ে ফেলতেছি, শুধু প্রিয় মানুষগুলো নয় বরং নিজের মনুষত্ববোধ সহ এক অসুস্থমত জীবন ডেকে আনতেছি আগামী দিনের জন্য।
দৈনন্দিন জীবনটা আমরা এমন ভাবেই পরিচালনা করে থাকি।
আসলে আমরা মানুষকে জ্ঞান দিতে গেলেও নিজেরা সেটা মানতে নারাজ।
মোবাইলে কথা বলা প্রসঙ্গে আমার একটা কথা মনে পড়ে গেলঃ-
ইনস্টিটিউট যাওয়ার সময়, একজন মুরুব্বি অটোর সামনে বসে সিগারেট টানছিল।
আমি বললাম, “আঙ্কেল বাতাসের বিপরীতে এবং গাড়ির সামনে বসে সিগারেট খাবেন না এতে পেছনে বসা যাত্রীদের কষ্ট হতে পারে”। তিনি সিগারেট ফেলে দিলেন, কিন্তু আমার দিকে একটু বিরক্তির দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন,“এখন তোমার বয়সী সকলেই সিগারেট খায়”।
তখন বুঝেছিলাম সমাজটা আসলে কিভাবে নষ্ট হচ্ছে।
ঠিক এমন বিষয়ে ফুটে উঠেছে আপনার লেখার মধ্যে। ট্রাফিক রুলস না মানা, মোবাইলে কথা বলতে বলতে রাস্তায় চলা, মোটরসাইকেলে তিনজন আরোহী চলাফেরা করা এই সবই বিপদ ডেকে নিয়ে আসতে পারে যেকোনো সময়।
ধন্যবাদ সুন্দর করে উপস্থাপন করার জন্য, এখান থেকে আমিও শিক্ষা নিলাম এবং ভবিষ্যতে এগুলো বিষয়ে সতর্ক থাকার চেষ্টা করব।