আবোল-তাবোল জীবনের গল্প [ ডিম সমাচার ]
হ্যালো বন্ধুরা,
আশা করছি সবাই ভালো আছেন এবং ভালো থাকার প্রতিযোগিতায় নিজের অবস্থান কাংখিতভাবে ধরে রাখার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। সত্যি বলতে অনেক সময় চাইলেও আমরা ভালো থাকতে পারি না, কেন জানি আমরা হুজুগে হৈ চৈ করতে বেশী পছন্দ করি। যার কারনে ভালো থাকাটা অসম্ভব হয়ে যায়। এই একটা বিষয় সেই ছোট বেলা হতেই শুনে আসছি, তখন হয়তো অতো কিছু বুঝি নাই কিন্তু এখন বেশ বুঝতে পারছি। হুজুগে বাঙালী, মানে বাঙালীদের এক প্রকার খাটো করার চেষ্টা। আমরা কথায় কথায় দৃষ্টান্ত স্বরূপ এই কথাটি বলে থাকি। কিন্তু আদতে কথাটা সত্যি। আজকে এই বিষয়য়ে আবোল তাবোল জীবনের গল্প নিয়ে কিছু কথা না নিজের কিছু অনুভূতি প্রকাশ করার চেষ্টা করবো।
কারন আজকাল সব কথা বলা যায় না, অনেকটাই নিষিদ্ধ হয়ে যাচ্ছে কথা। তবে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করা যাবে কিন্তু সেটা নির্দিষ্ট সীমানার মাঝে থেকে। আসলে গণতন্ত্র আমাদের অনেক বিষয়ে নতুনভাবে শিখতে এবং ভাবতে শেখাচ্ছে, আর আমরা সেভাবে শিখে নিজেদের খাপ খাইয়ে নেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। বলছিলাম হুজুগে বাঙালী, মানে কোন একটা নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে হুট করে সবাই উজ্জিবীত হয়ে যাই। সেটার ভালো কিংবা মন্দ বিষয়টি তখন অনুজ্জ্বল থাকে কিংবা সেটা নিয়ে চিন্তা করার সুযোগ থাকে না। বরং দল বেদে সেটা নিয়ে হৈ চৈ করা শুরু করে দেই এবং একটা নির্দিষ্ট সময় পর সেটা নিয়ে আবার আফসুসও করে থাকি।
দেখুন অনাকাংখিতভাবে হুট করে ডিমের দাম আকাশে উঠে যায়, ৩৬/৩৮ টাকা হালি ডিম রকেটের গতিতে সেটা ৬০ টাকায় হয়ে যায়। কিন্তু এই হুট করে রকেটের গতি যে বাড়ালো? সেটা চিন্তা করে দেখুন? আমরাতো কথার কথা বলে সব দোষ ব্যবসায়ীদের উপর চাপিয়ে দেই। হ্যা, ব্যবসায়ীরা মুনাফা নিতেই চাবে, এটাতো তাদের অলিখিত ধর্ম তাই তাদের দৃষ্টিতে এখানে দোষের কিছুই নেই। কিন্তু আমরা, যারা হুট করে হুজুগে বাঙালীর বৈশিষ্ট্য নিয়ে আছি তাদের কোন দোষ নেই? ডিমের দাম কি এক লাগেই ৬০ টাকা হয়েছে? মোটেও না একটু একটু করে বৃদ্ধি পেয়েছে, এই একটু একটু বৃদ্ধিটা আমরা করেছি ব্যবসায়ীরা না। ব্যবসায়ীরা যে নির্দোষ সেটা কিন্তু আমি বলছি না অথবা ব্যবসায়ীদের রক্ষা করার চেষ্টাও করছি না। আমি বরং বিষয়টিকে স্বাভাবিক দৃষ্টিতে সকলের নিকট একটু খোলাসা করার চেষ্টা করছি মাত্র।
যেই সবাই শুনেছে ডিমের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে, তখনই একটা জোর আওয়াজ বাহিরে চাওড় হয়ে গেলো ডিমের দাম আরো বাড়তে পারে। ব্যস যা হওয়ার হয়ে গেছে, হুজুগে বাঙালী মানে আমরা দৌড় শুরু করে দিলাম দোকানে। পকেটে যত টাকা ছিলো সব টাকার ডিমে কিনে হাসিমাখা মুখ নিয়ে ফিরে আসলাম বাড়ীতে। ভাবটা এমন যেন দেশ জয় করে এসেছি, কারন ঐ যে ডিমের দাম আরো বাড়বে তাই বর্তমান দামেরই আমি বেশ কয়েক হালি ডিম কিনতে পেরেছি, আহ কি তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠেছে মুখে! এই রকম সবাই যখন ডিমের দোকানে দৌড় দেয়া শুরু করলো, ডিমের বিক্রি বেড়ে গেলো এবং স্থানীয় বাজারে যে মজুদ ছিলো সেটা হঠাৎ করেই শূণ্যতে নেমে গেলো।
তারপর স্থানীয় বাজার হতে বিভাগীয় আড়তে তার প্রভাব পড়লো এবং মজুদের কিছু অংশ ধরে রাখার জন্য তারা ডিমের দাম বাড়িয়ে দিলো। কিন্তু কে শুনে কার কথা? ডিমের দাম আরো কিছুটা বেড়ে যাওয়ার কারনে যেটা হালকা চাওড় হয়েছিলো সেটা এখন আরো বেশী জোড়ালো হয়ে গেলো এবং এভাবে আরো কয়েক দফা ডিমের দাম বেড়ে গেলো। দেখুন একটা সহজ ও স্বাভাবিক হিসেব আমরা কেউ বুঝতে চাই না, সব কিছুর একটা স্বাভাবিক গতি রয়েছে, সেটা যখন ব্রেক হয়ে যায় তখন কোন কিছুই তার সীমার মাঝে থাকে না। ডিমের বাড়তি চাহিদার কারনে স্বাভাবিক গতিটা নষ্ট হয়ে যায় এবং খুব দ্রুত দ্বিগুন দামে বিক্রি হয়। আরে ভাই এক সপ্তাহ ডিম না খেলে কি হবে? ডিম না খেলেতো আমরা মরে যাবো না, কিংবা দেশ গোল্লায় চলে যাবে না? তাহলে কেন আমরা এই রকম করলাম? ঐ যে হুজুগে বাঙালী কথাটাকে স্বার্থকতা দেয়ার জন্য।
আজকে ডিমের দাম কমে গেছে, অনেকটাই কমেছে হয়তো সামনে আরো কমবে। দোকানদারদের ভাষ্য কি জানেন? তারা বলতেছে ডিমের বিক্রি কমে গেছে দাম কমে যাওয়ার কারনে। হ্যা, ভাই এটাই প্রকৃত সত্য। ডিমের দাম যখন বেশী ছিলো এবং বাড়তেছিলো তখন নাকি খুব বেশী পরিমানে ডিম বিক্রি হয়েছিলো। যারা সাধারণ সময়ে এক হালি ডিম কিনতো, তখন বেশী দামেও তারাও নাকি তিন হালি ডিম কিনেছিলো, দাম বেড়ে যাবে আরো এই ভয়ে। দেখুন তাহলে সমস্যাটা কোথায় আর আমরা চিন্তা করতেছি কি? প্রকৃত বিষয়টি নিয়ে আমরা কখনো চিন্তা করি না এবং সেটা বুঝারও চেষ্টা করি না।
কি ভাবছেন আপনি কোন দলে আছেন? হুজুগে বাঙালী নাকি সচেতন বাঙালী? জানিতো এখন ভুলেও আপনি স্বীকার করবেন না যে আপনিও কয়েক হালি ডিম কিনে বাড়ীতে মজুদ করে রেখেছেন। ভাই এখন গরমকাল ভুলে যাবেন না, জলদি ডিমগুলো খেয়ে নিন না হলে কিন্তু সব পঁচে নষ্ট হয়ে যাবে। জানেন তো গরমের সময় ডিম দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়, হা হা হা পরে না হলে আফসুস করবেন।
Image Taken from Pixabay 1 and 2
ধন্যবাদ সবাইকে।
@hafizullah
আমি মোঃ হাফিজ উল্লাহ, চাকুরীজীবী। বাংলাদেশী হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি। বাঙালী সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য লালন করি। ব্যক্তি স্বাধীনতাকে সমর্থন করি, তবে সর্বদা নিজেকে ব্যতিক্রমধর্মী হিসেবে উপস্থাপন করতে পছন্দ করি। পড়তে, শুনতে এবং লিখতে ভালোবাসি। নিজের মত প্রকাশের এবং অন্যের মতামতকে মূল্যায়নের চেষ্টা করি। ব্যক্তি হিসেবে অলস এবং ভ্রমন প্রিয়।
|| আমার বাংলা ব্লগ-শুরু করো বাংলা দিয়ে ||
ভাইয়া কথা গুলো একদম বাস্তব, আমরা অজান্তেই অনেক ভুল করে ফেলি যেটা ভুল করার পরেও জানতে পারিনা ভুল করেছি, তবে আপনার মতো করে যদি সবাই বিষয়টি ভাবতো তাহলে সব কিছুতে এই পরিস্থিতি আসতো না, আপনার ব্লগ থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা পেলাম, ভালোবাসা অবিরাম ভাইয়া।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
ভাইয়া ডিমের দাম বৃদ্ধির সাথে সাথে আমার হাই প্রেসারও বেড়ে গেছে তাই ডিম খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি। আর বাড়িতে ডিম কিনে মে মজুত করব তার কোন পয়সা আমার পকেটে নেই। আর পকেটে যখন পয়সা হবে তখন আমি কিন্তু ডিম কিনব না একটা মুরগি কিনব যাতে ডিম দেয়। রোমান্টিক ভাইয়া এখন আপনার কাছে কেমন লাগছে, আমি কি একজন সচেতন বাঙ্গালী, না, 🤠 বাকিটা আপনি বলেন 🙏
যখন সবাই শুনেছে ডিমের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে তখনই সবাই প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি বেশি ডিম কিনে মজুদ করা শুরু করেছে। এতে করে ডিমের দাম আরও বেড়ে গেছে। এখন যখন ধীরে ধীরে ডিমের দাম কমতে শুরু করেছে তখন আগের মতো আর বিক্রি হচ্ছে না। কারণ মানুষ বুঝে গেছে হয়তো ডিমের দাম এভাবে স্বাভাবিক থাকবে। তবে আমরা বাঙালিরা যে হুজুকে বাঙালি এটা চিরন্তন সত্য কথা। যাইহোক ভাইয়া বাস্তব চিন্তাধারা থেকে অনেক সুন্দর একটি লিখনি তুলে ধরেছেন এজন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি ভাইয়া। সেই সাথে আপনার জন্য শুভকামনা ও ভালোবাসা রইলো। ❤️❤️❤️
সত্যি কথা বলতে কি,ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমি নিজে এক হালি করে ডিম কিনেছি😜😜।তাই কোন আফসুস নাই🤪🤪।
ঘুরে ফিরে আমরা কেউ ভালোনা ভাই। সব কিছুরই একটা লিমিট থাকে। কিন্তু আমরা বাঙ্গালীরা যেনো একটু বেশি বেশি করি। আপনার কথার সাথে এক মত। এই ডিম এর দাম বাড়ার সাথে ব্যবসায়ীদের দোষ থাকলেও বেশির ভাগ দোষ কিন্তু সাধারন জনগন যারা স্টক করে। আরো বেড়ে যাবে এটা ভেবে বেশি বেশি কিনতে যেয়ে দাম আরো বেড়ে যায় তখন ওনাদের জন্য। আমার মতে আড়ৎদার দের যেমন জরিমানা করা হয়। তেমনি স্টক করার জন্য বেশি বেশি যারা কিনে তাদের ও জরিমানা করা উচিৎ। আমরা সুযোগ দেই বলেই তো ব্যবসায়ী রা দাম বাড়ায়।
জি ভাইয়া ঠিক কথা বলেছেন আমরা আসলে হুজুগে বাঙ্গালী দলে এখনো আছি। আমরা শুধু ব্যবসায়ীদের সবসময় দোষ দিয়ে থাকি। কিন্তু আমরা কখনো উপলব্ধি করি না যে আমাদের সবচেয়ে বেশি দোষ। একটা সত্যি কথা বলি ভাইয়া ডিমের দাম প্রথমে বাড়ার সময় বাড়িতে বাবা কয়েক ডজন ডিম কিনে রাখছিল। পড়ে হঠাৎ করে দেখে অর্ধেক ডিম পোঁছে গেছে। পড়ে শোনার পর বললাম বাবা এখন কি লাভ হলো না লস হলো।তখন বাবা আর কিছু বললো না। এটা আসলে বাবার দোষ দিচ্ছি না কারণ আমরা তো হুজুগে বাঙ্গালী দলে আছি। ধন্যবাদ ভাইয়া আপনাকে সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
এক লাফে ৬০ টাকা হালি হয়ে গেল এ যেন সোনায় পাওয়া ডিম । ব্যাচেলরদের শেষ সম্ভল এই ডিম। তবে দাম বাড়ার দায়টা আসলে আমাদেরই। ঐ যে বললেন হুজুগে বাঙালি, ঠিক তাই। যেই না শুনেছেন ডিমের দাম তখনই সবাই এক কার্টুন ডিম কিনে ফ্রিজে রেখে দিয়েছে। অথচ এক সপ্তাহ বা এক মাস ডিম না খেলেও সমস্যা নেই।
হা হা 😄
আসলেই আমরা হুজুগে বাঙালী 😀
আমি ভাই ডিমের দাম বেশি বলে কদিন ডিম ঘরেই আনিনি 😕 বাসায় আগের কেনা যা ছিল তাই বাচ্চাদের খাইয়ে দিন পার করছি। যাক দাম কমলে হয়তো আবার কিছু আনবো। মানুষের স্বভাব বদলে একটু সচেতন হওয়া উচিত। আমার কথা হলো ডিম এক সপ্তাহ না খেলে কি এমন হবে?
Congratulations, your post has been upvoted by @dsc-r2cornell, which is the curating account for @R2cornell's Discord Community.