তিস্তা ব্যারেজে ভাপা পিঠে খাওয়ার অনুভূতি। লাইফস্টাইল ব্লগ।
তিস্তা ব্যারেজে ভাপা পিঠে খাওয়ার অনুভূতি
🙏 সকলকে স্বাগত জানাই 🙏
বাংলার সংস্কৃতির সাথে যে খাবার জড়িয়ে আছে তা হল পিঠে৷ বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন রকমের পিঠে তৈরি হয়। আর আজ আমি গরম গরম ভাপা পিঠে খাওয়ার অনুভূতি আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করব। বিগত কয়েকদিন ঘুরতে গিয়েছিলাম উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গা। সেখানে ঘুরতে ঘুরতেই এসে পৌঁছালাম জলপাইগুড়ির তিস্তা ব্যারেজ অঞ্চলে। সেই অঞ্চলটির নাম গাজলডোবা। সেখানে পৌঁছে তিস্তা নদীর উপর বাঁধ এবং সেই এলাকার সৌন্দর্য দেখে আমি তো একেবারে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। তিস্তা সেখানে অনেক চওড়া। আর সেখানে দোকানিরা পসরা সাজিয়ে বসেছে বিভিন্ন খাবার-দাবারের। বিভিন্ন রকমের মাছ থেকে শুরু করে আইসক্রিম, আচার বা বিভিন্ন রকমের পিঠে সাজিয়ে সকল মানুষের মনোরঞ্জন করছে তারা। সবমিলিয়ে জায়গাটি ভীষণ সুন্দর ছিল।
আমরা সেই জায়গায় যখন গিয়েছিলাম তখন হালকা হালকা খিদে পেয়েছিল। তাই সামান্য কিছু খেয়ে পেট ভরানোর মতো খাবার বলতে চোখের সামনে পেয়ে গেলাম ভাপা পিঠে। একজন দোকানী বসে বসে ক্রমাগত ভাপা পিঠা বানিয়ে চলেছেন এবং একের পর এক ক্রেতাকে দিয়ে প্রশংসা কুড়োচ্ছেন। এই ভাপা পিঠেগুলি তিনি খুব স্বল্প সময়েই নির্মাণ করে ফেলছেন। সম্পূর্ণ বিষয়টি দেখে আমার খুব মজা লাগলো। আমরা কয়েকজন দাঁড়িয়ে গেলাম ভাপা পিঠা খাওয়ার লোভে। দেখলাম সেই ভদ্রলোক একটি বাটির মধ্যে চালের গুঁড়ো ভালো করে পুরে দিচ্ছেন এবং তার উপরে নারকেল ও গুড় দিয়ে তাকে আটকে দিচ্ছেন। তারপর সম্পূর্ণ বাটিটি একটি জালে বন্ধ করে হাঁড়ির উপরে উল্টা করে রেখে দিচ্ছেন। সেই হাঁড়ির উপরে ঢাকনায় একটি ছোট্ট ফুটো করা আছে। আর সেই ফুটো দিয়ে গরম হাওয়া বেরিয়ে সম্পূর্ণ পিঠেটি তৈরি করে দিচ্ছে। খাবার আগে সম্পূর্ণ পদ্ধতিটি আমি ভালো করে লক্ষ্য করলাম। প্রথমে খাব কিংবা খাব না ভাবছিলাম। কিন্তু পরে একটি ভাপা পিঠা হাতে নিয়ে টেস্ট করে দেখলাম। খেতে সত্যিই অসাধারণ ছিল এই ভাপা পিঠেটি।
গাজলডোবায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং তার সঙ্গে এমন গরম গরম ভাপা পিঠে সম্পূর্ণ সময়টিকে এক অন্য অনুভূতির মধ্যে নিয়ে চলে গেছিল। এই ভাপা পিঠাগুলি মাত্র ১০ টাকা করে দাম ছিল। আর ১০ টাকার পরিবর্তে এত সুন্দর একটি খাবার আমাদের একেবারে মন ভরিয়ে দিয়েছিল। খাওয়ার সাথে সাথে সেই দোকানি ভদ্রলোকের সঙ্গে কিছু কথা হলো। তিনি স্থানীয় অধিবাসী। প্রতিদিন হাঁড়ি এবং চালের গুঁড়ো সঙ্গে নিয়ে চলে আসেন এই তিস্তা ব্যারেজ অঞ্চলে ভাপা পিঠে তৈরি করে বিক্রি করবার জন্য। তারপর সমস্ত কেনাকাটি হয়ে গেলে সেখান থেকে উঠে তিনি সন্ধ্যাবেলা বাড়ি ফিরে যান। একেবারে ছোট্ট পরিসরে এত সুন্দর একটি খাবার দোকান তিনি একা হতে চালিয়ে চলেছেন বহুদিন ধরে। ভদ্রলোক নিজেই বললেন, একটা খেয়ে দেখুন না, খারাপ লাগবে না।
তাই সব কিছু মিলিয়ে তিস্তা ব্যারেজে ভাপা পিঠে খাওয়ার অনুভূতি আমার কাছে খুব স্মৃতিমেদুর। সাধারণত কলকাতার ইট কাঠ জঙ্গলে এমন ধরনের হাতে তৈরি ভাপা পিঠে খুঁজে পাওয়াই দায়। একমাত্র যদি কোথাও খাদ্য মেলা বা পৌষ সংক্রান্তির মেলা হয় তবে হয়তো পাওয়া গেলেও যেতে পারে। কিন্তু সচরাচর আমি কোথাও দেখতে পাই না। তাই হঠাৎ করে এই সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে নদীর ধারে দাঁড়িয়ে ভাপা পিঠা খাওয়ার অনুভূতি আমার কাছে বহুদিন মনে থেকে যাবে। তাই সম্পূর্ণ অনুভূতিটি আপনাদের সঙ্গে বিশদে শেয়ার করলাম। যদি আপনাদের এই মুহূর্তটি ভালো লেগে থাকে তবে নিশ্চয় মন্তব্য করে আমাকে অনুপ্রাণিত করবেন।
🙏 ধন্যবাদ 🙏
(১০% বেনিফিশিয়ারি প্রিয় লাজুক খ্যাঁককে)
--লেখক পরিচিতি--
কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Daily tasks-
https://x.com/KausikChak1234/status/1873392138538582119?t=g5905wEM0a0HzDUomKxVIw&s=19
আমাদের বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে একটি বিশালাকার তিস্তা ব্যারেজ রয়েছে। প্রথমে ভাবছিলাম হয়তো আপনি আমাদের বাংলাদেশের মধ্যে ঘুরতে এসেছিলেন।পরে দেখতে পারলাম এটা আপনাদের জলপাইগুড়ি। যাইহোক, আপনি তিস্তা ব্যারেজে গিয়ে ভাপা পিঠা খেয়েছেন, দেখে বেশ ভালো লাগলো। ভাপা পিঠা গুলো দেখে মনে হচ্ছে মজাদার ছিল।
তিস্তা বাংলাদেশে ঢোকবার পর আর একখানি ব্যারেজ আছে বলে শুনেছি ভাই। কিন্তু আমি ভারতের তিস্তা ব্যারেজে গিয়েছিলাম। আপনি এত সুন্দর করে মন্তব্য করলেন বলে ধন্যবাদ।