বাংলার বুকে ঘটে যাওয়া প্রথম পলিটিক্যাল খুনের ঘটনা। ঐতিহাসিক পোস্ট।

in আমার বাংলা ব্লগ5 days ago

বাংলার বুকে প্রথম পলিটিক্যাল মার্ডার

☘️☘️☘️☘️☘️☘️☘️


hand-4661763_1280.jpg
সোর্স

🙏🙏সকলকে স্বাগত জানাই🙏🙏

ইংরেজ আমলের প্রথম ফাঁসির দড়ি হাসিমুখে বরণ করেন কে? শহীদ গোপীনাথ সাহা অথবা শহীদ ক্ষুদিরাম বসু? একেবারেই না। নামটি যাঁর, ধারে-ভারে তিনি ছিলেন সেযুগের সম্ভ্রান্তদের মধ্যে একজন। শাসন হাতে তুলে নেবার পরেপরেই মিথ্যে অভিযোগে তাঁর ভয়ানক 'আইনি হত্যা'র মধ্যে দিয়েই কলকাতা তথা বাংলার মানুষের মনে একটা ত্রাসের পরিবেশ সৃষ্টি করতে পেরেছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। মহারাজা নন্দকুমার। জন্ম বীরভূমের ব্রাহ্মণ পরিবারে। দিল্লীর বাদশা শাহ আলমের থেকে ১৭৬৪ সালে 'মহারাজা' উপাধি পাওয়ার পর বৈষ্ণব গুরু রামঠাকুরের থেকে দীক্ষাগ্রহণ করেন।

চাকরিসূত্রে তিনি ছিলেন কোম্পানীর দেওয়ান। হুগলী, নদীয়া ও বর্ধমান অঞ্চলে দেওয়ানি সামলেছিলেন বহুদিন। তাও আবার স্বয়ং ওয়ারেন হেস্টিংসের বদলি হিসাবে। এই অপমান কখনোই ভুলতে পারেন নি হেস্টিংস সাহেব। এরপর থেকে কখনোই আর দুজনের সম্পর্কে শীতলতা ফিরে আসেনি কোনোভাবে। অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগের লড়াই অব্যাহত রেখেই দুই প্রভাবসম্পন্ন ব্যক্তির দ্বন্দ্ব কলকাতাবাসী প্রত্যক্ষ করেছে সেইযুগে। নবাব মীরজাফরের মৃত্যুর পর তাঁর নাবালক পুত্র মোবারক-উদ-দৌলার অবিভাবকত্বের আর্জিতে মুন্নি বেগমের থেকে অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগ ওঠে হেস্টিংসের বিরুদ্ধে। আর ঘটনাচক্রে অভিযোগটি আনেন মহারাজা নন্দকুমার। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এলিজা ইম্পে (যাঁর কবর আজও সাউথ পার্ক স্ট্রিট সিমেট্রিতে দেখা যায়) তাঁর বাল্যবন্ধু হওয়ায় সবটাই যায় নন্দকুমারের বিপরীতে। আর ফল হয় মিথ্যে জালিয়াতির অভিযোগে প্রকাশ্যে ফাঁসি।

hanging-rope-1295442_1280.webp
সোর্স

প্রসঙ্গত বলে রাখি, তখন কথায় কথায় ফাঁসি দেওয়ায় নতুন শাসক ছিল সিদ্ধহস্ত। জনসমক্ষে ফাঁসি প্রদর্শনের জন্য রাস্তায় গাছের নীচে তৈরি থাকতো ফাঁসির মঞ্চ। বর্তমানে রাজভবনের কাছে ফ্যান্সি লেন কলকাতার এক পরিচিত গলি। আজকের কলকাতাবাসী যতই এই নামটি অভিজাত ভঙ্গিতে উচ্চারণ করুন না কেন, আসলে এই নামের উৎস খুঁজতে গেলে চমকে উঠতে হয় বৈকি। সেই রাস্তাতেই নাকি ছিল এমন একটি ফাঁসির মঞ্চ। আর 'ফাঁসি'ই ইংরেজি অপভ্রংশে হল 'ফ্যান্সি'। যেখানে সামান্য ঘড়ি চুরির অপরাধে ফাঁসি দেওয়া হয় এক জনৈক দেশীয় কর্মচারীকে। যাই হোক, ওয়ারেন হেস্টিংসের সাথে বিবাদের ফলস্বরূপ একরকম বিনাদোষেই ফাঁসির মঞ্চে উঠতে হয় মহারাজা নন্দকুমারকে। বাংলার ইতিহাসে এ এক সাড়াজাগানো ঘটনা। আর এই ভয়ঙ্কর ঘটনার পর কলকাতার বাঙালী সমাজ ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে যায়। এমনকি বহু পরিবার কলকাতা ত্যাগ করে পাড়ি দেন বারাণসী। আজও তাঁদের পরিবার বারাণসী নিবাসী।


🙏 ধন্যবাদ 🙏


(১০% বেনিফিশিয়ারি প্রিয় লাজুক খ্যাঁককে)



1720541518267-removebg-preview.png

Onulipi_07_27_10_21_22.jpg


Yellow Modern Cryptocurrency Instagram Post_20240905_213048_0000.png

new.gif

1720541518267-removebg-preview.png


--লেখক পরিচিতি--

IMG_20240303_181107_644.jpg

কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।



কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।

Drawing_11.png

44902cc6212c4d5b.png

First_Memecoin_On_Steemit_Platform.png

hjh.png


Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 4 days ago 

আচ্ছা ফাঁসির মঞ্চ শব্দটা কোথা থেকে এসেছে সে কথা আগে জানতাম না। দারুন একটি ঐতিহাসিক ঘটনা তুলে আনলে আজ। অথচ দেখো মহারাজা নন্দলালের কথা ইতিহাসের পাতায় সেইভাবে পড়ানো হয় না। কজনই বা জানেন এই সমস্ত গল্প। তোমার নিতান্ত আগ্রহের কারণে মাটি খুঁড়ে ইতিহাসের সত্যতা তুলে আনো। কবিতার পাশাপাশি তোমার এই গুনটি হীরকোজ্জ্বল।

 3 days ago (edited)

খুব ভালো লাগলো তোর মন্তব্য। আমার ইতিহাস চর্চার পাশে তুই সব সময় থেকেছিস। আমার অনেক বই শুধু তোর অনুপ্রেরণায় হয়েছে। আবার খুব ভালো লাগলো। তবে নন্দলাল নয়, মহারাজা নন্দকুমার। যার নামে রাস্তা তোর বাড়ি থেকে আরেকটু এগুলেই পাওয়া যায়।