ছেলেটাকে বাঘে নিয়ে গেল (পর্ব-০১) || by @kazi-raihan

in আমার বাংলা ব্লগlast month

আসসালামু আলাইকুম


হ্যালো..!!
আমার প্রিয় বন্ধুরা,
আমি@kazi-raihan বাংলাদেশের নাগরিক।

আজ - ১৩ই চৈত্র | ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | বুধবার | বসন্ত-কাল |


আমি কাজী রায়হান,আমার ইউজার নাম @kazi-raihan।আমি বাংলাদেশ থেকে। আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন।মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি [আমার বাংলা ব্লগ] ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সদস্যগণ, সবাইকে অভিনন্দন।



1000057776.png

Canva দিয়ে তৈরি



সুন্দরবনের পার্শ্ববর্তী এলাকায় রহিম মিয়ার বসবাস। রহিম মিয়া পেশায় একজন জেলে। সে সুন্দরবনের আশপাশ এলাকায় মাছ ধরে জীবন যাপন করে কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে সুন্দরবনে মাছ ধরতে গেলে বিভিন্ন জায়গায় টাকা দিতে হয়। রহিম মিয়া অনেক দরিদ্র ছিল তাই বিভিন্ন জায়গায় টাকা দেওয়ার কারণে সে একজন লোক নিয়ে মাছ ধরতে গেলে তার আর অবশিষ্ট কিছুই থাকত না। এভাবে চলতে থাকার পরে সে সিদ্ধান্ত নিল তার বড় ছেলেকে নিয়ে মাছ ধরতে যাবে। নিজের ছেলেকে নিয়ে গেলে আর বাড়তি একজন মানুষের টাকা গুনতে হবে না সেটা তার সংসারে থেকে যাবে। একজন মানুষকে ভাড়া নিয়ে গেলে তাকে ৫০০ টাকা দিতে হয় আর তার ছেলেকে নিয়ে গেলে এ ৫০০ টাকা বাইরের কাউকে দিতে হবে না এই ভেবে তার বড় ছেলেকে মাছ ধরার নৌকায় নিয়ে যেত। মাছ ধরার নৌকায় কমপক্ষে দুইজন লোক লাগে। নৌকার মধ্যে একজনকে রান্নাবান্না সহ নৌকা চালানোর কাজ করতে হয় আর একজনকে মাছ ধরার কাজ করতে হয়।

তবে সুন্দরবনের মাঝে যদি জাল পেতে রাখা যায় সেক্ষেত্রে বেশ বড় সাইজের কাকড়া পরে আর সেগুলো বাজারে চড়া দামে বিক্রি করা যায়। রহিম মিয়া নদীতে বড়শি ফেলানোর পাশাপাশি ছেলের সাথে সুন্দরবনের ভিতরের ছোট খাল গুলোতে জাল ফেলে রাখত। যখনই ভাটা শুরু হতো আর পানি কমতে শুরু করত আর তখনই কাকড়া গুলো জালে আটকা পড়তো। এভাবে বেশ কয়েক দিন ভালোই কাঁকড়া ধরল আর সেটা বাজারে বিক্রি করেও ভালো টাকা পাচ্ছিল। কাকড়া ধরতে হলে সুন্দরবনের একটু গহীনে যেতে হয় তাই রহিম মিয়া আর তার ছেলে সুন্দরবনের গহীনে গিয়ে জাল দিয়ে কাঁকড়া ধরা শুরু করল। কয়েকটি নৌকা নিয়ে জোয়ারের সময় রহিম মিয়া সহ বেশ কয়েকজন মিলে কাঁকড়া ধরার জন্য সুন্দরবনের গহীনের খালের মধ্যে জাল বিছানো শুরু করল। রহিম মিয়ার ছেলে জাল বিছাতে বিছাতে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো। হঠাৎ করেই চিৎকার শব্দ শুনে সবাই ভয় পেয়ে গেল। কেউ ভাবছিল বাঘে ধরেছে আবার কেউ ভাবছিল কুমিরে ধরেছে। চিৎকার শুনে সবাই এগিয়ে গেল তবে সবাই কিছুটা ভয় পাচ্ছিল কিন্তু রহিম মিয়া একটুও ভয় পাচ্ছিল না কারণ তার ছেলে চিৎকার করছে।



1000057790.jpg

Source



চিৎকার শুনে সামনে যেতে যেতে সবাই দেখতে পেল রহিম মিয়ার ছেলেকে বাঘে ধরেছে। সবার চিৎকার শুনে বাঘ আরো ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করল। সবাই যখন কাছে গেল তখন বাঘ বড় হা করে দাঁত বের করে তাকিয়ে ছিল আর তার মুখ থেকে লালা বেয়ে পড়ছিল। বাঘের বুকের নিচে রহিম মিয়ার ছেলের নিঠুর দেহ পড়ে আছে। বাঘের এরকম ভয়ঙ্কর রূপ দেখে কেউ সামনে যেতে সাহস পাচ্ছে না আবার সবার চিৎকার শুনে বাঘ কিছুটা ভয় পাচ্ছে তাই বড় বড় দাঁত বের করে হা করে সবাইকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু রহিম মিয়ার ছেলে তাই রহিম মিয়ার দরদ বেশি সে একটি লাঠি নিয়ে চিৎকার করে বাঘের কাছে এগিয়ে যেতে লাগলো। বাঘ কিছুটা ভয় পেয়ে পিছিয়ে গেল, রহিম মিয়া আরও চিৎকার করছিল আর লাঠি দিয়ে জঙ্গলের উপরে আঘাত করছিল। বাঘ জঙ্গলের মধ্যে লুকিয়ে পড়ল আর রহিম মিয়া গিয়ে তার ছেলেকে কাঁধে করে নিয়ে চলে আসলো। অন্যদিকে তার সঙ্গীরা বিকট শব্দে চিৎকার করছিল আর জঙ্গলের বিভিন্ন অংশে লাঠি দিয়ে আঘাত করছিল যেন বাঘ ফিরে এসে আবার আক্রমণ না করে।



1000057791.jpg

Source



সবাই বলছিল বাঘের এরকম ভয়ঙ্কর রূপ আগে কখনো দেখিনি। কিন্তু রহিম মিয়ার এসব কোন কিছুতেই ভয় করছিল না কারণ তার ছেলেকে বাঘে ধরেছে। তার ছেলের রক্তাক্ত শরীর নিয়ে নৌকায় চলে আসলো আর নৌকা সুন্দরবন এলাকা থেকে বেরিয়ে লোকালয়ের দিকে রওনা হল। তখনও তার ছেলের নিঃশ্বাস চলছিল কিন্তু রক্তে সারা শরীর ভিজে গিয়েছে রহিম মিয়া তার ছেলের ঘাড়ের অংশে গামছা দিয়ে শক্ত করে বেঁধে দিল যেন রক্ত ঝড়া বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু বাঘের তীক্ষ্ণ দাঁত গভীরে প্রবেশ করেছে যার কারণে সহজে রক্ত বন্ধ হচ্ছে না। রহিম মিয়া বুঝতে পারছিল তার ছেলের শরীর ধীরে ধীরে নিষতেজ হয়ে যাচ্ছে। ছেলেটি রহিম মিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে কিন্তু কিছু বলতে পারছে না। রহিম মিয়া মনে করল তার ছেলের গলা শুকিয়ে গিয়েছে তাই কিছুটা পানি দিল তারপরও তার ছেলের কোন সাড়া পেল না শুধু বড় বড় চোখ করে আকাশ পানে চেয়ে আছে। রহিম মিয়া বুঝতে পারছিল তার ছেলের অনেক কষ্ট হচ্ছে কিন্তু সে কিছুই করতে পারছে না। নৌকার মাঝিকে আরো দ্রুত নৌকা বইতে বলল। রহিম মিয়া চাইছিল কিছুটা দ্রুত গিয়ে কোস্টগার্ডের নৌকার সম্মুখীন হলে সেখান থেকে দ্রুততার ছেলেকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারবে। সেখানকার যে কমান্ডার ছিল তিনি রহিম মিয়ার খুবই পরিচিত।

নৌকা এক পর্যায়ে কোস্টগার্ড এরিয়ায় চলে আসলো। দূর থেকেই রহিম মিয়া চিৎকার করে কোস্টগার্ডের সদস্যদের কে কিছু একটা বোঝানোর চেষ্টা করল। কমান্ডার স্যার রহিম মিয়ার চিৎকার দেখেই ধারণা করল হয়তো তাদের মধ্যে কাউকে বাঘে ধরেছে। রহিম মিয়া কোস্টগার্ড সদস্যদের কে ফার্স্ট এইড বক্স রেডি করতে বলল। নৌকা কাছে আসার সঙ্গে সঙ্গেই দেখতে পেল একটা ছেলে রক্তাক্ত অবস্থায় নৌকার উপর শুয়ে আছে। বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে আর তার নিঠুর দেহ নৌকার উপরে পড়ে আছে। তাড়াতাড়ি করে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে কোস্টগার্ডের নৌকায় করে দ্রুত চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হলো। কোস্টগার্ড এরিয়া থেকে হাসপাতালে নিতে প্রায় দুই ঘন্টা সময় লাগবে ততক্ষণে ছেলেটা বেঁচে থাকলে হয়। দীর্ঘ দুই ঘন্টা পরে নৌকা ঘাটে পৌঁছায় তত সময় চারিদিকে অন্ধকার হয়ে সন্ধ্যা নেমে পড়েছে। ঘাট থেকে একটি ভ্যানে করে ছেলেটিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো।
(চলবে....)



🔚সমাপ্তি🔚


এই ছিল আমার আজকের আয়োজনে।
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
ভালো থাকবেন সবাই , আল্লাহ হাফেজ👋।

সবাই ভালোবাসা নিবেন 💚🌹
ইতি,
@kazi-raihan



আমার পরিচয়


IMG-20211015-WA0027.jpg

আমি কাজী রায়হান। আমি একজন ছাত্র। আমি বাংলাদেশে বাস করি। আমি কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে লেখাপড়া করছি। আমি ফটোগ্রাফি করতে, গল্প লিখতে ও বাইক নিয়ে ঘুরতে খুবই ভালোবাসি। মনের অনুভূতির ডাকে সাড়া দিয়ে কবিতা লিখতে পছন্দ করি। সেই সাথে যে কোনো নতুন বিষয় সম্পর্কে জানতে পছন্দ করি। আমি ভালোবাসি স্টিমিট প্লাটফর্মে কাজ করতে।



break .png

Banner.png

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 last month 

আপনার গল্পটা পড়ে আমার কাছে অনেক ভয় লাগলো। আসলে ভাইয়া রহিম মিয়া বলা চলে অনেক সাহসী মানুষ। তা না হলে নিজের ছেলের এমন অবস্থা দেখে হয়তো সে অজ্ঞান হয়ে যেত।যাইহোক অবশেষে ছেলেকে হসপিটাল পর্যন্ত পৌঁছাতে পেরেছে জেনে অনেক ভালো লাগলো। দেখা যাক পরবর্তী পর্বে কি হয়?

 27 days ago 

হ্যাঁ পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় থাকুন ধন্যবাদ।

 last month 

আপনার গল্পটিতে পড়ে সত্যিই অনেক ভয় লেগে গেল। গভীর জঙ্গলে গিয়ে মাছধরা বা কাঁকড়া দ্বারা খুব বিপদজনক। যদিও রহিম মিয়া ৫০০ টাকা বাঁচানোর জন্য তার ছেলেকে নিয়ে গেল তার সাথে মাছ ধরার জন্য। এবং রহিম মিয়া কল্পনা করে নাই তার ছেলের উপর এত বড় বিপদ আসবে। বাঘে তার ছেলেটিকে আক্রমণ করেছে। তবে ছেলে সন্তান বিপদে পড়লে বাবা নিজের বিপদের কথা চিন্তা না করে ঝাঁপিয়ে পড়ে ছেলেকে বাঁচানোর জন্য। রহিম মিয়াও তাই করেছে। দেখি ছেলেটিকে প্রথম চিকিৎসা দিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যেতে দুই ঘণ্টার টাইম লাগবে। এবং আপনার পরের পর্ব কি হয় সেই অপেক্ষায় রইলাম। আশা করি গল্পটি তাড়াতাড়ি আমাদের মাঝে শেয়ার করবেন ভাই।

 27 days ago 

আসলে রহিম মিয়ার ছেলে এজন্যই সে নিজের জীবন বাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল।

Coin Marketplace

STEEM 0.29
TRX 0.12
JST 0.033
BTC 62975.56
ETH 3112.53
USDT 1.00
SBD 3.87