বৈশাখী মেলায় ঘুরতে যাওয়া-১ম পর্ব

in আমার বাংলা ব্লগ12 days ago (edited)

আসসালামু আলাইকুম

কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই অনেক ভালো আছেন। আমিও কিন্তু ভালো আছি। আর এই পৃথিবীতে আমাদের সুস্থ এবং সুন্দর করে জীবন যাপন করতে হলে সকল হতাশা দুঃখ গ্লানি কষ্টগুলো দূরে ঠেলে দিয়ে মনটাকে ভালো রাখতে হবে। আর ভালো রাখার জন্য আমাদের মাঝে মাঝে সময় নিয়ে হারিয়ে যেতে হবে প্রকৃতির মাঝে । আমি ঘুরতে অনেক পছন্দ করি। আজ তাই আপনাদের মাঝে আমি একটি ভ্রমন পোস্ট নিয়ে এলাম।আশা করি আমার আজকের এই ভ্রমন পোস্টি আপনাদের সবার ভালো লাগবে।

image.png

আপনারা সবাই জানেন এবার ঈদ-উল-ফিতর ও পহেলা বৈশাখ একই সাথে উদযাপন হয়েছিল। ঈদের ৩দিন দীর্ঘ কয়েক বছর পর বাঙ্গালীদের আরও একটি উৎসব পহেলা বৈশাখ উদযাপন করা হয়। আর এই দিনটিকেও ঘিরে সবাই অনেক আনন্দ উল্লাস করে। কিন্তু করনা ও রমজানের মধ্যে এই উৎসবটি পড়ে ছিল বলে এই উৎসবটিকে বাঙ্গালীরা ভালো মতো পালন করতে পারিনি। তাই অনেক বছর পর ফিরে পেল আরও একটি উৎসব পহেলা বৈশাখ ।আমাদের বাঙ্গালী পরিবারগুলো এই উৎসবটা একটি ঈদের মতো পালন করে। আর তাই এবার ঈদের পর পহেলা বৈশাখ হওয়াতে সবার মনে ঈদের সাথে আরও একটি আনন্দ ফিরে পেল। আমার কিন্তু পহেলা বৈশাখে তেমন্ একটা কোথাও যাওয়া হয় না। বিশেষ করে রমনা পার্ক। কিন্তু এবার যেত হলো। তাও আবার আমাদের এপার্টমেন্টের উপর তলার এক আপু জোড় করায়। অবশ্য সেই আপুর মনে অনেক কষ্ট। যার কারনে প্রায় আমাদের বাসায় এসে কান্নাকাটি করে। ভাবলাম যাই একটু। আমার জন্য যদি কেউ একটু শান্তি পায় তাতে ক্ষতি কি।

image.png

ভোরে ফজর নামাজ পড়ে আমি রেডি হয়ে আছি। আপু তো আর আসে না। মনে মনে ভাবছি যে না আসলেই ভালো একটু ঘুমাবো। এমনেতেই শরীরটা ক্লান্ত ।কিন্তু কিছুক্ষন পর দেখি আপু সত্যি এসে হাজির। কি আর করার বের হয়ে গেলাম পহেলা বৈশাখের রমনা পার্কের উদ্দেশ্যে। ভাবলাম এখনি চলে যাই পরে আরও ভিড় বাড়বে। আর যেই প্রচন্ড গরম। তাই ভোরে ঠান্ডায় হাটাও হলো আর বৈশাখী মেলাও দেখা হলো।এক ঢিলে দু পাখি আর কি।

image.png

বাসা থেকে আল্লাহর নাম নিয়ে বের হলাম। তখন বাজে ঠিক ৫.৩০। দেখি আমাদের এলাকার সব রাস্তা খালি। মনে করেছি রোজা আর ঈদকে ঘিরে মানুষজন অনেক ক্লান্ত তাই এত নিরিবিলি। আবার এত ভোরে মানুষ জন সবাই ঘুমাচ্ছে। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল হেটে যাবার ।যদিও আমি হেটে এতটা চিনি না । আরও একবার খুব সকালে গিয়েছিলাম। কিছু দূর যেয়ে দেখলাম যে পহেলা বৈশাখের পোশাকে অনেকগুলো মানুষ যাচ্ছে। তাই একটু তাড়াতাড়ি হেটে তাদের ধরে ফেললাম। এককথায় বলতে পারেন দৌড় দিয়ে ধরেছি।

image.png

এবার কাছে গিয়ে একটু শান্তি যে তাদের সাথে হেটে হেটে চলে যাব। কিন্তু তাদের বুঝতে দিলাম না হিহিহি। দেখলাম এত ভোরে কি সুন্দর বৈশাখী সাজে সেজে সবাই বৈশাখি উদযপন করতে যাচ্ছে। দেখে ভালোই লাগলো আমিও হালকা সেজেছি। বৈশাখী বলে কথা। কিন্তু আমার পড়া ছিলনা কোন বৈশাখী ড্রেস। ছিল সর্ট আভায়া, প্যান্ট আর কেস । আর সাথের আপু তো ম্যাক্সি আর কেস পড়েই বের হয়েছে। তবে আপুর পড়া মেক্সিতে বেশাখী ভাব আছে।

image.png

বেইলী রোডের রাস্তা ছাড়িয়ে যখন গেলাম তখন দেখলাম যে রাস্তার এই পারের মানুষ সবাই রাস্তার ঐ পারে চলে গেছে। রাস্তাটি একদম নিরিবিলি লাগছে। খুব ভালো লাগছিল। আর তখন মন চাইছিল এই প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যেতে। তাই তখন একটি গান ধরলাম কোথাও আমার হারিতে যেতে নেই মানা।গাইতে ছিলাম আর মনের সুখে হাটতে ছিলাম। হঠাৎদেখলাম যে আমার সুখে কে যেন ডিস্টাপ করছে। দেখলাম যে আপু বলল আরে তাড়াতাড়ি চল নয়তো দেখবে যে সত্যি হারিয়ে গেছি । তাই আবার রাস্তা পার হয়ে মানুষ জনের মাঝে হারিয়ে গেলাম।

image.png

যখন বেইলী রোড দিয়ে বেড়িয়ে যাচ্চিলাম তখন দেখতে পেলাম যে দলে দলে সবাই সেজেগুজে বাহারি বৈশাখীর সাজে যাচ্ছে বৈশাখী মেলায় রমনা পার্কের উদ্দেশ্যে। দেখে মনে হচ্ছে না যে তখন সবাল ৬.০০ বাজে। আকাশের আবহাওয়া, উজ্বল সকাল আর মানুষজন এবং অপূর্ব বৈশাখী সাজ দেখে মনে হচ্ছিল যে সকাল ৯.০০ কি ১০.০০ বেজে গেছে। আর এত সুন্দর প্রকৃতির মাঝেও আমিও মনের আবেশ ছরিয়ে হাটা শুরু করলাম সবার সাথে। আর অনুভব করছিলাম শরীরটা যেন অনেক ভালো লাগছে দূর হয়ে যাচ্ছে শরীররের সকল ক্লান্তি

image.png

image.png

এবার গিয়ে পৌঁছালাম সেই চিরচেনা রমনাপার্কের গেটের কাছে। যদিও রমনা পার্কের অনেক গুলো গেট রয়েছে। তাই আমি গুলিয়ে ফেলি কোনটা কোন রাস্তার গেট । আর দেখতে পেলাম যে গেটগুলো ঘিরে ভালোই সিকিউরিটির ব্যবস্থা করেছে। আলাদা আলাদা গেট আর ভেতরে ব্যাগ চেক করে ঢুকাচ্ছে। আমার ব্যাগটি দেখানোর আগেই আমাকে ছেরে দিল। হয়তো বুঝতে পেরেছে যে আমি আমার প্রিয় বাংলা ব্লগ কমিউনিটির একজন সদস্য। এখানে আমার ব্লগগুলো শেয়ার করা হয়। মানে আমি একজন কন্টেন্ট কিউরেটর। তাই আমিও ধন্যবাদ জানিয়ে ভেতরে ঢুকে গেলাম মনের আনন্দ নিয়ে।

image.png

এ কি? এ দেখি সেই চির চেনা রমনাপার্কের অচেনা মুখ। এ যেন এক অন্যরকম রমনাপার্ক। পহেলা বৈশাখের উদযাপনে আর প্রতিটা মানুষের রঙ্গীন সাজে যেন সকালের পাখি আর বাতাস ও গাছগুলোও যেন গাইছে পহেলা বৈশাখের গান। দূর থেকেই শোনা যাচ্ছে সেই পহেলা বৈশাখের গান গাচ্ছে বটমূলে ছড়িয়ে থাকা হাজারো শিল্পী।

এসো হে বৈশাখ এসো এসো এসো হে বৈশাখ, এসো এসো তাপস নিঃশ্বাস বায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক যাক যাক এসো এসো...

আর আমিও এই অপূর্ব সুন্দর গানটি গাইতে গাইতে পার্কের আরও ভেতরে যেতে যেতে আমার আজকের ব্লগটি শেষ করলাম। আর এভাবেই শেষ করে নিলাম আমার আজকের পহেলা বৈশাখে হঠাৎ ঘুরতে যাওয়ার প্রথম পর্ব। কেমন লাগলো আমার আজকের এই পহেলা বৈশাখে হঠাৎ ঘুরতে যাওয়ার প্রথম পর্ব ভ্রমন পোস্টি? আশা রাখি আপনাদের সবার অনেক ভালো লেগেছে। আমার আজরের এই পোস্ট। সবার জীবনের মঙ্গল কামনা করে আর এই গরমে সকলের গ্লানি আর ক্লান্তিগুলো দূর হয়ে যাক এই কামনাই করে আমার আজকের ব্লগটি এখানেই শেষ করছি সবাই ভালো থাকবেন।

পোস্টের বিবরন
পোস্টের ধরনভ্রমন
ডিভাইসVIVO
মডেলVIVO-Y22S
স্থানরমনা, ঢাকা

পরিচিতি

আমি মাহফুজা আক্তার নীলা আমার ইউজার নাম @mahfuzanila আমার পছন্দ ঘোরাঘুরি ভ্রমন করা ,ছবি আঁকা, বিভি ন্ন ধরনের মজার মাজার গল্পের বই পড়তে, ফটোগ্রাফি,ডাই প্রজেক্ট বানাতেও দারুণ পছন্দ করি। আর বেশী পছন্দ করি মজার রেসিপি করতে,মন খারাপ থাকলে গান শুনতে ও গান গাইতে আর সবচেয়ে বেশী ঘুমাতে।

❤️ধন্যবাদ সকলকে❤️

Sort:  

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

 12 days ago 

বাহ্ ভালোই তো ঘুরে বেড়িয়েছেন। তাও আবার আমাকে ছাড়া। এটা কি ঠিক হলো? সকাল সকাল আমি যদি আপনার সাথে যাওয়ার একটু সুযোগ পেতাম তাহলে তো আমিও খালি রাস্তায় গান গাইতে পারতাম। বেশ সুন্দর করে আপনি আপনার ভ্রমন পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন।

 11 days ago 

আপনাকে ফোন দেয়া হয়েছিল। আপনি কাতর ঘুমে ঘুমাচ্ছিলেন। তাই ভাবলাম যে, থাক আমরা তো শুধু হাটার জন্য যাচ্ছি। তাই আপনার সুন্দর ঘুমটিকে আর ডিস্টার্ব করিনি। তবে যাওয়ার পর দেখি ভালোই লাগছে তাই আপনাকে খুব মিস করেছি। ধন্যবাদ আফসোস করে সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।

 11 days ago 

বৈশাখী মেলাতে ঘুরাঘরের মুহূর্ত আপনি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন দেখি। আপনার ধারণ করা এই সুন্দর সুন্দর চিত্রগুলো দেখে বেশ ভালো লাগলো। মনে হল যেন আমিও আপনাদের সাথে উপস্থিত ছিলাম এই মেলাতে। বেশ ভালো লাগলো বর্ণনার সাথে উপস্থাপন করেছেন দেখে। এই দিনটাই মানুষ সাজাগোজা সহ ঘোরাঘুরি করতে বেশি পছন্দ করে থাকে। যাইহোক পোস্ট পড়ার মধ্য দিয়ে অনেক কিছুই জানার সুযোগ হলো।

 11 days ago 

ভাইয়া আপনার মন্তব্য পেয়ে আমারও বেশ ভালো লাগলো। ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য।

 11 days ago 

এখন যদিও এরকম ভাবে পহেলা বৈশাখটা উদযাপন করা হয় না, তবে স্কুলে থাকাকালীন করা হতো। সবাই দেখছি ভোরবেলায় উঠে রোমানা পার্কে গিয়েছিল পহেলা বৈশাখ উদযাপন করার জন্য। আপনারা অনেক তাড়াতাড়ি বের হয়েছিলেন। সকাল সকাল যেহেতু গিয়েছিলেন, হেঁটে হেঁটে যেতে নিশ্চয়ই অনেক বেশি ভালো লেগেছিল। যেহেতু অনেক মানুষ ছিল তাই তো মনে হচ্ছিল নয়টা দশটা বেজে গিয়েছে। খুব সুন্দর একটা মুহূর্ত ভাগ করে নিলেন প্রথম পর্বের মাধ্যমে। ভেতরে ঢোকার পর কি কি করেছিলেন এটা জানার জন্য অপেক্ষায় থাকলাম।

 11 days ago 

হ্যাঁ আপু খুবি ভোর বেলা শুধু একটু দেখার জন্য গিয়েছিলাম আবার তারাতারি চলেও এসেছি তবে এত সকালে
বৈশাখে রমনার পরিবেশটা দেখে অন্যরকম লাগছিল। ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের মাধমে পাশে থাকার জন্য। দ্বিতীয় পর্বে অবশ্যই দেখবেন

 11 days ago 

আমি কখনোই পহেলা বৈশাখ উদযাপন করিনি। সবাই একসাথে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করার মধ্যে যে আনন্দটা রয়েছে একা করার মধ্যে সেটা নেই। এমনিতেই ভালো লাগেনা যার কারণে বেশি আগ্রহ থাকে না। কিন্তু সবাইকেই দেখি বৈশাখী শাড়ী অথবা জামা পড়ে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করে। আপনারা ভোরবেলায় পার্কের উদ্দেশ্যে বের হয়েছিলেন, আর যাওয়ার সময় ভালো মুহূর্ত কাটিয়েছেন দেখে ভালো লাগলো। আপনার অনুভূতিটা ভালো লেগেছে। পরবর্তী পর্ব আশা করছি তাড়াতাড়ি দেখবো।

 11 days ago 

ঠিক বলেছেন যে কোন প্রোগ্রাম সবাই একসাতে মিলে করলে ভালো লাগে। ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য। আশা করি এভাবে সবসময় পাশে পাবো।

 11 days ago 

হ্যাঁ আপু ঈদের সময় আমাদের বাঙালি ঐতিহ্যবাহী বৈশাখী মেলায় একসাথে হয়েছে। তাহলে পাশের বাসার আপুর সাথে একসাথে জুটবেঁধে বৈশাখী মেলায় উপলক্ষে রমনা পার্কে গেলেন। পহেলা বৈশাখ আসলে মানুষের ঐতিহ্যবাহী পরিবেশ দেখা যায়। যদিও আপনারা খুব ভোরবেলা গেলেন। আর আপনার পোস্ট পড়েই বুঝা যাচ্ছে খুব ভালোই সময় কাটিয়েছেন। এবং বৈশাখী মেলায় ঘুরতে গিয়ে প্রথম পর্ব আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন।

 11 days ago 

হ্যাঁ আপু কখনও যাওয়া হয়নি তাই এবার সকালে হাটার ছলে রমনাপার্কের বৈশাখীর পরিবেশটা দেখে এলাম। ধন্যবাদ আমার পোস্ট দেখে সুন্দর মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.30
TRX 0.12
JST 0.033
BTC 64143.01
ETH 3154.83
USDT 1.00
SBD 3.86