"নিউমার্কেট এলাকার ব্যস্ততম জীবনচিত্র"
নিউমার্কেট এলাকা এমন একটি জায়গা যেখানে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ তাদের প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করতে আসেন। শিক্ষার্থীদের জন্য এখানে অসংখ্য বইয়ের দোকান, বাড়ির মালামালের জন্য অসংখ্য পণ্যের দোকান এবং খাবারের জন্য বিভিন্ন ধরণের রেস্টুরেন্ট রয়েছে। ফলে এই এলাকার রাস্তা সবসময়ই ব্যস্ত থাকে। সকাল, দুপুর, কিংবা রাত—প্রতিটি সময় এখানকার ট্রাফিক যেন থেমে থাকার জন্যই তৈরি।আমার প্রতিদিনের যাত্রা শুরু হয় খুব ভোরে। বাসা থেকে বের হয়ে যখন রাস্তায় আসি, তখন থেকেই মনে হয় যেন একটা যুদ্ধ শুরু হয়েছে। বাস, রিকশা, সিএনজি, প্রাইভেট কার—সবকিছু একসাথে ঠেলে ঠেলে সামনের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু কোনো লাভ হয় না। জ্যাম একেবারে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকে। মাঝে মাঝে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। বিশেষ করে অফিস টাইমে তো অবস্থা আরও ভয়াবহ।
জ্যামের কারণে শুধু সময়ই নষ্ট হয় না, মনেও বিরক্তি ধরে যায়। অনেক সময় জরুরি কাজে বের হয়ে গন্তব্যে সময়মতো পৌঁছাতে পারি না। এতে যেমন কাজের ক্ষতি হয়, তেমনি মানসিক চাপও বাড়ে। এমনকি শারীরিক অসুবিধাও দেখা দেয়। বাসের ভিড়ে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে পায়ে ব্যথা শুরু হয়। কখনও কখনও গরমে ঘেমে এমন অবস্থা হয় যে শ্বাস নিতেও কষ্ট হয়।এই দীর্ঘ জ্যামের মধ্যে বসে বসে আমি অনেকবার ভেবেছি, কেন এমন হয়? আমরা কি এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারি না? জবাবটা সহজ নয়। কারণ ঢাকা শহরের জনসংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে, কিন্তু রাস্তার সংখ্যা কিংবা পরিবহন ব্যবস্থা সেই অনুপাতে বাড়ছে না। এখানে পাবলিক ট্রান্সপোর্টের অবস্থা খুবই করুণ। সিটিং সার্ভিস নামের বাসগুলোও কখন যে লোকাল হয়ে যায়, বোঝাই যায় না। সিএনজিগুলো মিটারের থেকে দ্বিগুণ ভাড়া চায়, আর রিকশা তো মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে।
তবে সমস্যার সমাধান কিছুটা হলেও সম্ভব যদি সবাই সচেতন হয়। উন্নত পরিকল্পনার মাধ্যমে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট যানবাহন চলাচলের জন্য ব্যবস্থা করা যেতে পারে। পাশাপাশি পাবলিক ট্রান্সপোর্ট সেক্টরে আরও বিনিয়োগ করা দরকার। মেট্রোরেল এবং বিআরটি প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ হলে কিছুটা হলেও স্বস্তি পাওয়া যাবে।জ্যামের মধ্যেও কিছু মজার অভিজ্ঞতা হয়। কখনও কখনও।জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকলে দেখি ছোট ছোট বাচ্চারা রাস্তায় খেলা করছে। তাদের হাসি দেখে মন ভালো হয়ে যায়। আবার কোনো কোনো দিন দেখি রাস্তায় গান গাইতে গাইতে একজন ভিক্ষুক এগিয়ে আসছেন। তার কণ্ঠে এক অদ্ভুত সুর থাকে। এমন অভিজ্ঞতা আমার মনকে কিছুটা হলেও হালকা করে দেয়।
তবুও দিনের শেষে ফিরে দেখি, জ্যাম আমাদের জীবনের কতটা সময় নষ্ট করে দিচ্ছে। এই সময়গুলো আমরা যদি পরিবার বা বন্ধুদের সঙ্গে কাটাতে পারতাম, তবে জীবন আরও সুন্দর হয়ে উঠত। কিন্তু আমাদের জীবন তো আর রাস্তায় আটকে থাকতে পারে না। তাই জ্যামকে মেনে নিয়েই চলতে হবে।কিছুদিন আগে নীলক্ষেত থেকে ফেরার সময় আমি একটি বইয়ের দোকানে ঢুকে কিছু পুরনো বই কিনে নিলাম। সেই বইগুলো পড়তে পড়তে জ্যামের ক্লান্তি ভুলে থাকার চেষ্টা করেছিলাম। তবে বই পড়ার পাশাপাশি আমি মনে মনে স্বপ্ন দেখি একদিন এই ঢাকা শহর থেকে জ্যামের সমস্যা দূর হয়ে যাবে। মানুষ সময়মতো তাদের কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরতে পারবে।
এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য আমাদের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা দরকার। শুধু সরকার বা প্রশাসনের দিকে তাকিয়ে থাকলেই চলবে না। আমাদেরও সচেতন হতে হবে। রাস্তায় ট্রাফিক আইন মেনে চলা, অপ্রয়োজনীয়ভাবে রাস্তা দখল না করা—এ ধরনের ছোট ছোট কাজের মাধ্যমেই আমরা বড় পরিবর্তন আনতে পারি।
ঢাকার জ্যাম নিয়ে অভিযোগ করতে করতে কখন যে গন্তব্যে পৌঁছে যাই, বুঝতে পারি না। প্রতিদিন এই শহরের ব্যস্ততম রাস্তাগুলো পেরিয়ে আমি আমার কাজের জায়গায় পৌঁছাই। দিন শেষে ক্লান্ত শরীরে বাড়ি ফিরে দেখি, জীবন থেমে নেই। জ্যামের মধ্যেও জীবনের গল্প এগিয়ে চলছে।
প্রত্যেকটা ছবি তোলার লোকেশন এবং ডিভাইসের নামঃ
Device:Samsung A33 (5G)
আজ এখানেই শেষ করছি। অন্য কোন একদিন ভিন্ন ধরনের কনটেন্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব। ততক্ষন পর্যন্ত আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।
ফোনের বিবরণ
মোবাইল | Samsung A33 (5G) |
---|---|
ধরণ | "নিউমার্কেট এলাকার ব্যস্ততম জীবনচিত্র" |
ক্যমেরা মডেল | A33 (48+8+5+2) |
ক্যাপচার | @mohamad786 |
অবস্থান | ঢাকা - বাংলাদেশ |
X-Promotion
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
রাত পোহালে মানুষজন ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ে নিজ নিজ দায়িত্বে নিজ নিজ কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য। এই পোষ্টের মধ্যে ফুটে উঠেছে। যেন শত শত মানুষের উপস্থিতি। ক্যামেরার লেন্স ভালো তাই ফটোগ্রাফি গুলো বেশ দারুন ছিল।