গুড্ডু - পঞ্চম পর্ব (শেষ পর্ব)

প্রিয় ব্লগার বন্ধুরা আসা করি আল্লাহর রহমতে ভালই আছেন, আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালই আছি।

গুড্ডু আমার দেশি জাতের পোষা বিড়ালের নাম। সকল বিড়ালের মত হলেও গুড্ডুর ভেতরে কিছু ইউনিক বিষয় ছিলো যার কারনে আমার স্মৃতিতে মায়ার জাল বুনে দিয়েছে।

আজ আপনাদের সাথে সেয়ার করবো গুড্ডু এর শেষ পর্ব
পূর্বের পর্ব গুলো যারা এখনো দেখেন নাই দেখে নিতে পারেনঃ
গুড্ডু - প্রথম পর্ব
গুড্ডু - দ্বিতীয় পর্ব
গুড্ডু - তৃতীয় পর্ব
গুড্ডু - চতুর্থ পর্ব

গুড্ডুকে আমার চেয়ে আমার স্ত্রী বেশি ভালোবাসতো। আমার স্ত্রী অর পরিচর্যার কোন কোমতি রাখতো না কিন্তু গুড্ডু আমাকে বেশি পছন্দ করতো বা ভালোবাসতো।

IMG_20211215_155520.jpg

ছোট ভাইয়ের খতনা অনুষ্ঠান হবে ঠিক তার দুই দিন আগেই যেতে হবে এরকম পরিকল্পনা করা হয়। এরই মাঝে বিপাকে পরে যাই আমি, আমার যাওয়া হবে কী হবে না।

যেদিন খতনার অনুষ্ঠান সেই দিন রোজার ঈদের পূর্বে শেষে অফ-ডে, আর এই শেষ অফ-ডেতে আমার পিছি বানানোর ডেট, একই দিনে দুইটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ। আমাকে ঈদের পূর্বে রিজাইন করে একেবারে বাড়ি ফিরতে হলে পিছি বানাতেই হবে। অন্য দিকে যদি গুড্ডু কে এই রাস্তায় সঙ্গ দিবে কে?
এর চেয়েও একটা বড় বিষয় বাড়ির বড় ছেলে হিসেবে বাড়ির আনুষ্ঠানিকতা পরিচালনা দায়িত্বটাও তো থাকে।

অনেক জল্পনা কল্পনা করে সর্বশেষে আমাকে বেছে নিতে হলো ঢাকায় যাওয়া এবং পিছি বানানো। অনেক দিন ধরেই ভালো দিনখনের অপেক্ষায় ছিলাম। এই ধৈর্য কে মহান আল্লাহ কবুল করে সুন্দর ভাবে দিন গুলো সাজিয়ে দিয়েছেন। প্রথম রোজা শুরু দুই তারিখে রোজা শেষ পরের মাসের ১ তারিখে এবং ঈদ দুই তারিখে। আমার পিছি বানানো হলেই রিজাইন লেটার পাঠিয়ে দিলেই ঈদের পূর্বেই চলে যেতে পারবো বাড়িতে। এটা চিন্তা করেই সিদ্ধান্ত নেই পিছি বানাতে যাবো এবং গুড্ডুর জন্য একটা বিড়াল ক্যারি করা ব্যাগ কিনে দেবো। যেভাবে চিন্তা সেইভাবেই কাজ।

৩০শে মার্চ ২০২২, বুধবার
আমার স্ত্রী, আমার শাশুড়ি এবং সাথে ছোট ফুফু শাশুড়ি গুড্ডুকে ক্যরি করার জন্য যাতে কোন সমস্যা না হয় সেই ব্যবস্থা করে পাঠিয়ে দেই টাংগাইল সখিপুর থেকে পাবনার উদ্দেশ্য।

সন্ধার দিকে খবর পাই সকলেই গুড্ডুকে নিয়ে সফল ভাবেই পৌঁছে গেছে।

১ এপ্রিল ২০২২, শুক্রবার
সোহাগ ভাইকে সঙ্গে নিয়ে সকাল ৭টার দিকে রওনাদেই সখিপুর থেকে ঢাকা নিউ মার্কেট এর উদ্দেশ্যে। যেহেতু শুক্রবার এর মানেই জ্যামের অন্ত নেই। তাই বিকল্প রাস্তা বেছে নিলাম, সখিপুর থেকে কালিয়াকৈর বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক রেল স্টেশনে যাই এবং সেখান থেকে ট্রেনে করে কমলাপুরের যাত্রা শরু করি।

সকাল ১০ এর মত বাজে, আমরা তখন ট্রেনের ভেতরে, আমার স্ত্রী আমাকে মেছেন্জারে ভিডিও কল দেয়, দাড়িয়ে ছিলাম তাই কল রিজেক্ট করে দিলাম। সাথে সাথেই দ্বিতীয় বার আবারো ফোন তখন কিছুটা টেনশন হয়, তাই এবার রিছিব করি।
রিছিব করতেই গুড্ডুর করুন চেহারা দৃশ্যমান হয়।
রাস্তার পাশে শেষ নিঃস্বাস ত্যাগ করে কতক্ষণ ধরে যে ঘুমিয়ে আছে তা অজানাই। ট্রেনের ভেতরে দাড়িয়ে থাকা অবস্থায় বুকটা চিনচিন করে উঠলো।
কিন্তু আবেগ প্রকাশ করতে পারলাম না।

ছোট ভাইটাও গুড্ডুকে অনেক ভালোবাসতো ওর ঐ অনুষ্ঠানের দিনেও গুড্ডুর জন্য কান্না করেছে।

298982616_632373581433479_3336941429418943679_n.jpg

ছবিঃ ১ এপ্রিল ২০২২, শুক্রবার
ডিভাইসঃ অপ্পো এ ১৫ এস

"একটা প্রানিই তো মরেছে" এই বাক্য দিয়ে নিজেকে স্থির করে রাখলাম।
গুড্ডুকে ওতার ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ স্মৃতিময় করে রেখে দিলাম আমার বাংলা ব্লগে……

আমার পরিচয়

PicsArt_12-12-08.02.49.jpg

আমি ,আল - মামুন

আমার বাড়ি পাবনা জেলায়

বাংলা আমার মাতৃভাষা, আমি আমার মাতৃভাষাকে ব্যবহার করতে ভালোবাসি, এ ভাষায় আমি আমার মনের ভাব প্রকাশ করে শান্তি লাভ করি। এই ভাষাতে ব্লগিং করার জন্য "আমার বাংলা ব্লগ" কমিউনিটিতে আমার পথ চলা শবে মাত্র শুরু। বর্তমানে আমি লেভেল-৪ এ ক্লাসরত আছি

@MyFriendMamun.png
আমার বাংলা ব্লগ, বাংলা ভাষার ঐতিহ্য

Sort:  

This needs a bear hug!🐻🤗 And a resteem! Done.👍

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
default.jpg

 2 years ago 

হায়রে জীবন, যেই গুড্ডুকে আমিও আপনার গল্পের মাধ্যমে অনেক ভালবেসে ফেলেছি। গুড্ডুকে নিয়ে শুয়ে থাকা, তার সাথে মজা করা সব বিষয়গুলো এখন আমার স্মৃতিতে ভাসতেছে। কিভাবে গুড্ডু তার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করল, সেটা অস্পষ্টই থেকে গেল। যাই হোক ভাষাহীন চিত্তে, অত্যন্ত ব্যথিত এবং ভারাক্রান্ত, সেই সাথে মানসিকভাবে শোকাহত হলাম। বিড়ালকে আমি খুবই ভালোবাসি, তাই কিছুতেই এই করুন দৃশ্য মেনে নিতে পারছি না। যাইহোক মামুন ভাই, প্রতিটি প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতেই হবে। এটাই চিরন্তন সত্য ও বাস্তবতা। ধন্যবাদ শেষ পর্বের অন্তিম কার্যক্রম এবং গল্পের শেষ পর্যন্ত ব্যথিত চিত্তে, আপনি পোস্টটি করতে পারছেন বলে।

মারা যাওয়ার বিষয়টা ১০০% কেও বলতে পারেনি, অনেকে ধারনা কনেছে গাড়ির সাথে ধাক্কা খেয়ে মারা গেছে,
কিন্তু বিড়াল গাড়ির ধাক্কাতে মারা যায় না, যদি গাড়ি উপর দিয়ে যেতো তাহলে ভিন্ন কথা। তেমন কোন চিন্হ ছিলো না.....

খুবই ভালো লাগলো আপনার মন্তব্য দেখে, আপনি মারা যাওয়ার বিষয়টা নোট করেছেন।
প্রিয় মেহেরবান ভাই অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

Coin Marketplace

STEEM 0.28
TRX 0.13
JST 0.032
BTC 60913.71
ETH 2919.21
USDT 1.00
SBD 3.71