জেনারেশন গ্যাপ|| সত্যিই কি গ্যাপ? নাকি অন্য কিছু?

প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,


সমস্ত ভারতবাসী এবং বাংলাদেশের বাঙালি সহযাত্রীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।


mens-2638726_1280.jpg

সোর্স






আশা করি আপনারা ঈশ্বরের কৃপায় সুস্থ আছেন, সব দিক থেকে ভালোও আছেন। আপনাদের সবার ভালো থাকা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।



দুই প্রজন্মের চিন্তাভাবনার ব্যবধানই হল জেনারেশন গ্যাপ। আচ্ছা সত্যিই কি ব্যবধান আছে? নাকি চিন্তাভাবনাটা একটু অন্য রকম মানে যুগোপযোগী? জানেন, আমার খুব মনে আছে এক বাবা ছেলের মধ্যে তর্ক হচ্ছে, বাবা বলছেন "আমার চুলগুলো কি এমনি এমনি পেকেছে? কোন অভিজ্ঞতা হয়নি?" ছেলে উত্তরে বলছে-" এমনি কেন পাকবে, বয়স বেড়েছে তাই পেকেছে, অভিজ্ঞতা হলেও পাকত না হলেও পাকত।"

কথাগুলো আপাতদৃষ্টিতে হাস্যকর মনে হলেও আসলেই হাস্যকর না৷ তো চলুন এই প্রজন্ম ব্যবধান নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে প্রথমেই অভিজ্ঞতা সম্পর্কে কথা বলি।

অভিজ্ঞতা

বাড়ির বড়রা যেহেতু বয়সে বড় তাই দীর্ঘ জীবনে তাদের নানান অভিজ্ঞতা রয়েছে৷ ছোট থেকেই যখন একটা শিশু বড় হয়, তার যারা অভিভাবক থাকে তারা প্রত্যেকেই স্বাভাবিক ভাবে পথ দেখায়। এবং সেটাই তাদের অভ্যেসে দাঁড়িয়ে যায়। সেই শিশু যখন বড় হয়, পরিণত হয়, তখনও পথ দেখানোর অভ্যেস ত্যাগ করতে পারে না। ফলে শিশুও অনেক খানি অসন্তুষ্ট হয়। এই সময়গুলোতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় চিন্তাভাবনার তফাৎ তৈরি হয়েছে। কারণ শিশুটি বড় হওয়ার পর যে পরিবেশ পরিস্থিতি পাচ্ছে সেইগুলি সম্পর্কে তার জ্ঞান ও দূরদর্শিতা সামান্য হলেও বেশি, আবার তার অভিভাবকরা অভিজ্ঞ চোখ দিয়ে অনেক ভুল ভ্রান্তি দেখতে পায়। তাহলে এই সমস্যা সমাধান কিভাবে করা যায়? অভিভাবকদের কি করা উচিত? একেবারে ছেড়ে দিয়ে চুপ করে যাওয়া? নাকি সন্তানদের উচিত আজীবন কাল অভিভাবকদের কথাতেই পথ চলা?

এই দুটোর কোনটা হলেই সাংসারিক বা সামাজিক সুখ স্বাচ্ছন্দ নষ্ট হবে। তাই আমার মনে হয় সবকিছুই একটা সমঝোতার মধ্যে চলা । যুগের পরিবর্তন অনেক ক্ষেত্রেই অভিভাবকরা বুঝতে পারেন না, সেক্ষেত্রে তাদের বুঝিয়ে বলা। পুরোপুরি এড়িয়ে গেলে একই পরিবারে থেকে সেই মানুষগুলিরই অসহায় বুধ বেড়ে যায় যারা একদিন এই সন্তানদের হাত ধরে বড় করেছিলেন। দীর্ঘ জীবনের নানান অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে পাকা চুলের অধিকারী অভিভাবকরা যে একেবারেই কিছু জানেন না সে ধারণা করাও ভুল। তাই উভয়েরই উভয়ের অভিজ্ঞতা এবং দূরদর্শীতাকে সম্মান জানিয়ে একসাথে থাকা।

টেকনলজি/ প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা

আমরা যেই প্রযুক্তিগত ব্যবস্থার মধ্যে বড় হয়েছি, তার অনেক কিছুই এমন বাবা-মারা পাননি। আবার আমাদের সন্তানরা যা পাচ্ছে এই বয়সেই আমরা তা পাইনি। বর্তমানে মোবাইল এবং ইন্টারনেট অনেক বেশি হস্তগত হওয়ার কারণে, দুনিয়া যেন হাতের মুঠোয়। কোথায় কি হচ্ছে বা কোথাকার জীবনযাপন কেমন খাওয়া দাওয়া কেমন, এছাড়াও নানান সংস্কৃতি ও অপসংস্কৃতি(আমাদের সমাজ ব্যবস্থা অনুযায়ী) খুব তাড়াতাড়ি আমাদের মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে। মানুষ নকল প্রিয় জাতি হওয়ার কারণে তার সুবিধামতটুকুই নকল করে বাঁচে। অথচ আমাদের অভিভাবকরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারেন না। হয় পিছিয়ে পড়েন, নয় খানিক এগিয়ে থমকে যান। নইলে এই রেসেই নামের না।

একটা মজার ঘটনা বলি শুনুন, একবার আমার এক আত্মীয় বিদেশে বেড়াতে গিয়েছিল। ঘটনাচক্রে ওই দেশেরই এক বন্ধুর বাড়িতে ছিল কিছুদিন। তো ফিরে এসে সেই আত্মীয় স্ত্রী বাড়িতে গল্প বলছে, "ওই দেশের একটা ব্যবস্থা খুবই ভালো যে বাবা মায়েরা কেউ ছেলে বউয়ের সংসারে থাকে না৷ আর ওদের বিষয়ে নাকও গলায় না।" কথাটা শুনতে খুবই স্বাধীন মনে হয়। তাই না? জানেন কথাটা উনি ওনার শাশুড়ী মা কে বলেছিলেন৷ আর তিনি উত্তরে বৌমাকে বলেছেন "তুমি কি জানো ওই দেশে ছেলে বউমারা নিজেদের বাড়ি গাড়ি নিজেরা করে৷ খরচও নিজেরাই চালায়। বাবা মায়ের মুখাপেক্ষি হয় না"

টেকনোলজির ফলে অনেক কিছু নকল করা যত সহজ হয়, আমরা আসলে বুঝিনা আমরা কেউই পুরোটা নকল করি না। খানিকটা আমাদের সুবিধির মতো নকল করি। আর সেটাই জেনারেশন গ্যাপের জন্য অনেকখানি দায়ী।

অভিভাবকত্ব

জেনারেশন গ্যাপ নিয়ে আলোচনা করলে সব থেকে বড় শব্দ অভিভাবকত্ব - জানিয়ে আলোচনা করা অত্যন্ত জরুরি। আমরা বাবা-মা হিসেবে বা আমাদের বাবা মারা যাই করি না কেন, অভিভাবক হিসেবে আমাদের কাজই হল আমাদের সন্তানকে অভিভাবকহীন ভাবে বড় করে তোলা। অর্থাৎ সন্তানকে যদি সারা জীবন ছাতার তলায় রেখে দেওয়ার চিন্তা করি বা ভাবি যে আমার কথা শুনে চললেই সন্তানের ভালো হবে তাই সে সর্ব ক্ষেত্রে আমার কথাই শুনবে এটা কিন্তু সঠিক পন্থা না। তাকে অভিভাবকত্ব থেকে মুক্তি দিলে সে নিজেও স্বাবলম্বী হয়ে পথ চলতে শিখবে। স্বাবলম্বী হয়ে পথচলা অর্থাৎ বর্তমান যুগের সাথে যুগোপযোগী হয়ে চলা। এখন যেখানে একটি চা দোকানে চা খেয়ে গুগল পে করে টাকা দেওয়া যায়, সেখানে নিউজ পেপারের সাইবার ক্রাইম পড়ার অভিজ্ঞতা মাথায় নিয়ে যদি সন্তানকে বলি যে না তুমি গুগল পে ব্যবহার করো না তাহলে সেটা কতটা ঠিক নিজেদেরকেই বিচার করতে হবে। অর্থাৎ অভিভাবকদেরও একটি নির্দিষ্ট সীমা আছে। সেইটি চিনে নিলেই কেল্লাফতে।

ধৈর্য্য ও ত্যাগ

জানেন আমি ভাবি জেনারেশন গ্যাপ বলে কিছুই নেই, যা আমরা আঙ্গুল তুলে দেখাই তা কেবলমাত্র সময় তফাৎ। যেই তফাৎ এর কারনে আমাদের ধৈর্য কমে গেছে, ত্যাগ করতে ভুলে গেছি। অনেক বেশি নিজেদেরকে নিয়ে ব্যস্ত থাকি। আর আত্মকেন্দ্রিক হওয়ার ফলেই এই প্রজন্ম ব্যবধান ক্রমশ বেড়ে চলেছে। আসলে যা আগেও ক্ষতিকরছিল মানুষের জীবনের জন্য তা বর্তমানেও ক্ষতিকর। যেমন সংসারে কিছু স্বার্থপর কিছু বদ বা কিছু ক্ষতিকারক মানুষ থাকবেই৷ আগেও ছিল। এ ক্ষেত্রে গুরুজনদের দেওয়া শিক্ষার কোন তুলনা হয় না৷ খানিক ধৈর্য্য নতুন প্রজন্মকেও ধরে রাখতে হয়৷ আবার অভিভাবকদেরও অনেকসময় আলগা করে দিতে হয়। ঠকলে ঠকুক। তাও ছাড়তে হয়। চলতে গেলে হোঁচট খাবে এই তো স্বাভাবিক।

এইগুলো নিজেদের বুঝিয়ে নিলেই অনেকখানি যুগোপযোগী হয়ে ওঠা যায়৷ আর একটা কথা অবশ্যই মাথায় রাখা দরকার। এক মানুষ এক জন্মে সব শিখবে সব জানবে এমন না৷ তাই প্রত্যেকেরই নিজেকে গুরুত্ব দেওয়ার সাথে সাথে অন্যকে স্বীকৃতি দেওয়াও প্রয়োজন।

আপগ্রেডেশন বা উন্নয়ন একটি পদ্ধতি৷ বা ঘূর্ণাবর্তের চাকা বলা যায়। এখানে যে একবার নিজেকে ফেলতে পারে সে আর কোনদিনও পিছিয়ে পড়ে না। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে চিন্তাভাবনারও পরিবর্তন হয়। সেইটুকু কি খোলা মনে জায়গা দিলেই সমস্ত ব্যবধানে ফুল ফুটবে।

তাই গ্যাপ আসলে কিছুই না সবটাই সময় আর মনের খেলা বলেই আমার বিশ্বাস।

1000205476.png


1000216462.png

পোস্টের ধরণজেনারেল রাইটিং
কলমওয়ালানীলম সামন্ত
মাধ্যমস্যামসাং এফ৫৪
লোকেশনপুণে,মহারাষ্ট্র


1000216466.jpg


১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে


1000192865.png


~লেখক পরিচিতি~

1000162998.jpg

আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিতব্য গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা



কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।

🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾


1000205458.png

PUSS_-_4.jpg

file-zRxFXiC7QH38U7F8KN0bisD2_1.webp

1000205505.png

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 3 days ago 

দারুন সুন্দর ভাবে জেনারেশন গ্যাপ বিষয়টি ব্যাখ্যা করলি। এই জিনিসটা চিরকাল সমাজে চলে আসছে। এক জেনারেশন ভাবে পরের জেনারেশন হয়তো কিছু জানে না বা বোঝে না। কিন্তু বিষয়টা আসলে সেরকম কিছুই নয়। বিষয়টা সম্পূর্ণ প্রজন্মগত বিরোধ। তবে বর্তমান যুগে টেকনোলজি একটা বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুই জেনারেশন এর মধ্যে টেকনোলজিকাল ফারাক বর্তমানে অনেক বড় একটা গ্যাপ তৈরি করেছে।

 3 days ago 

এতো বড় পোস্টটা ধৈর্য ধরে পড়ে গুছিয়ে মন্তব্য করলে দেখে ভালো লাগলো । ভালো বলেছ। উৎসাহ পেলাম।

 3 days ago 
1000337281.jpg1000337280.jpg1000337279.jpg1000337274.jpg
1000337273.jpg1000337272.jpg1000337271.jpg1000337270.jpg