বাজল ছুটি ফুরোনোর ঘন্টা||
প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,
সমস্ত ভারতবাসী এবং বাংলাদেশের বাঙালি সহযাত্রীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
আশা করি আপনারা ঈশ্বরের কৃপায় সুস্থ আছেন, সব দিক থেকে ভালোও আছেন। আপনাদের সবার ভালো থাকা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।
এই তো দিন কয়েক আগেই যখন ছ'মাস পর প্রায় দু'হাজার কিলোমিটার দূর থেকে আজাদহিন্দের দীর্ঘ যাত্রার পর বাড়িতে এলাম, এবাড়ির মা সাজিয়ে খেতে দিয়েছিলেন, ভেবেছিলাম সেদিনই ব্লগ লিখি। কিন্তু বাড়ি এলে তো স্থির থাকা হয় না, তাই বসে যে অনুভূতির কথা লিখব তাও প্রায় অসম্ভব৷ এদিক ওদিক দৌড়োতে দৌড়োতে স্মৃতির ঝুলি ভরতেই দিন ফুরিয়ে গেল৷ এখন যাবার বেলায় গ্যালারিতে ছবি দেখছি বসে বসে৷
এবছর বড্ড কম সময় থাকলাম বলে সকলের আপত্তি, অভিমান৷ কিন্তু কিই বা করার? যখন জীবন যেমন তেমনই চলতে হয়৷ কোন কিছু কি আর আমাদের হাতে? বাড়ি থেকে দূরে থাকতে থাকতে আমি আজ সবাই কাছেই আত্মীয়ের মতো৷ এক একবার আসি এক একরকমের অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরি। সেখানে ভালোমন্দ দুইই আছে৷
প্রতিটা মানুষই তো ভালো মন্দ দুই নিয়েই তৈরি তাই সব সময় যে ভালো পাই তা নয়৷ তবুও মনে রাখার মধ্যে বা কাউকে বলার ক্ষেত্রে কেবল ভালো বা সুখটুকুই ছেঁকে নিই৷ বাকি মন্দের গল্প জীবনের নদীতে ভাসিয়ে দিই৷ এতে করে হয়তো লাভ কিছু হয় না তবে সম্পর্কের তিক্ততা কমে যায়৷
বাবাদের বাড়ি যেদিন গেলাম দাদা হাজার ব্যস্ততার মধ্যে এসেই রান্না করল। আমি যতবার কাছে গেলাম সাহায্য করতে দাদা বললে "তুই কেন করবি, যা বোস। গল্প কর"। আমি ভাবলাম এতোটাই আত্মীয় হয়ে গেলাম? পরের দিন দাদা পেটাই পরোটা আনল। দাদা জানে আমি নামেই শহুরে কিন্তু আমার পছন্দগুলো ছেলেবেলাতেই আটকে আছে৷ বাবা মা আজও ব্যস্ত। বাড়ির ছাদে সোলার বসানো হয়েছে। আমার আর চারতলা উঠতে ইচ্ছে করল না৷ তাও এর মাঝেই একদিন গেলাম দেখতে৷ দাদাকে বললাম, হট প্লেট বসিয়ে নিতে গ্যাস ওভেন বাদ দিয়ে৷ নিজের ঘর হলে অনেক কিছুই মনের মতন করা যায়৷
একদিন কলকাতা থেকে ফিরছি পাড়ার কাকিমাদের সাথে দেখা হল, সকলেই জিজ্ঞেস করলেন কবে এসেছি৷ পুরনোবাড়ি আজকাল আর একেবারেই যাওয়া হয় না৷ কেউ নেই৷ সব ঠাকুমা দাদুরা মারা গেছেন, বোনেদের বিয়ে হয়ে গেছে৷ আমি সবার বড় হলেও কম বয়স থেকে হোস্টেলে থাকার কারণে খুব একটা সখ্যতা কারোরই সাথে গড়ে ওঠেনি৷ যদি বোনেরা আমার থেকে অনেকটাই ছোট। কিন্তু জন্মভিটে বলতে ওই বাড়িটাই। ওখানেই আমার সমস্ত স্মৃতি৷
এই টুকু সময়ের মধ্যে কলকাতা গেলাম বেশ কয়েকবার৷ এই দৌড়োদৌড়ির মাঝেই দুম করে সময় শেষ৷ আমার এখনও কিছু গোছগাছ হয়নি। অথচ আজই রাতে ফেরার ট্রেন৷ সকালে রান্না করতে করতে ভাবছিলাম সময় কিভাবে চলে যায়৷ এই তো সেদিন এলাম।
বড় শখ করে একদিন মাটির উনুনে বসেছিলাম, প্রায় আড়াই তিন কেজি চালের চিতই পিঠে বানালাম। বসে বসে ডিসকর্ডে বলছিলাম। শহরে যাই পাই না কেন গ্রামের মতো এতো ভালো শাকসবজি থেকে নির্মল বাতাস কোনটাই পাই না৷ জীবন যেন দৌড়োয়৷ আর এখানে মানুষ কত ধীর৷
তবে এই মনখারাপ যে দীর্ঘস্থায়ী তা নয়। এখানে এসে ফিরে যাওয়াটাই আমার অভ্যেসে পরিনত হয়েছে৷ আবার আসব কলকাতা বইমেলার সময়৷ এর মাঝে নিজের লেখালিখির প্রতি অনেক যত্নশীল হতে হবে৷ দুটো পান্ডুলিপি যত্ন করে সাজাতে হবে৷ সব মিলিয়ে কাজ অনেক৷ যেহেতু এখানে থাকি না তাই দেশে এলে কোন কাজই ঠিক মতো হয় না৷ কতজনকে কথা দিয়েছিলাম ফোন করব দেদার ভুলে গেছি৷ আমি এরমই। সবই কেমন অবলীলায় ভুলে যাই৷ মনে করে সব গুছিয়ে করব এমন মন তো আমার কোনদিনই ছিল না৷
যাইহোক সময় হয়ে এলো এবার না গোছালেই নয়। কত জিনিস যে ফেলে যাই৷ ভাগ্যিস বাড়ি নইলে তো সবই হারিয়ে যেত৷ এর পরের কয়েকিটা ব্লগ ট্রেন থেকে করব। কমেন্ট চ্যাট সবই ট্রেন থেকে৷ আবারও আজাদহিন্দ৷ আবারও দীর্ঘপথ। আবারও ভীন রাজ্যে গিয়ে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় কেটে যাবে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর৷
এত কিছুর মধ্যেই জানেন গতবার বাড়ি এলাম যখন তারপরেই এখানে ব্লগ করতে শুরু করি৷ এখন আপনারাও সবাই পরিবার হয়ে উঠেছেন৷ আমার এক্সটেন্ডেড পরিবার। যেখানে দিনের অনেকটা সময় নির্দ্বিধায় কেটে যায়। যেখানে এলে একেবারেই একা মনে হয় না৷
এই তো জীবন বলুন, জীবনের গতি৷ এভাবেই বেঁচে নিচ্ছি। আপনাদের সাথে, চলমান পৃথিবীর সাথে, জীবনের আদি থেকে অন্ত...
পোস্টের ধরণ | লাইফস্টাইল ব্লগ |
---|---|
ছবিওয়ালা | নীলম সামন্ত |
মাধ্যম | স্যামসাং এফ৫৪ |
লোকেশন | পুণে,মহারাষ্ট্র |
ব্যবহৃত অ্যাপ | ক্যানভা, অনুলিপি, ইনশট |
১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে
~লেখক পরিচিতি~
আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশ ও ইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিতব্য গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।
@tipu curate
Upvoted 👌 (Mana: 0/8) Get profit votes with @tipU :)
জীবন মানেই ছুটে চলা। জীবনের তাগিদে মানুষ নিজ শহর ছেড়ে অন্য শহরে পাড়ি জমায়। যখন বাড়ি আসে তখন সে হয় যায় অতিথী। আপনার ক্ষেত্রেও তাই। তবে বেশ যত্ন করেছে আপনাকে আপনার দু'পরিবার। আজ আবার ফিরে যাবেন নিজের গন্তব্য। আবারও ফিরে আসবেন কোন এক সময়। সেই আশায় ফিরে যান অন্য রাজ্যে। বেশ ভালো লাগলো লিখাটি পড়ে।অনেক অনেক শুভ কামনা আপনার জন্য ।
আপনি লেখাগুলো বেশ মন দিয়ে পড়েন৷ বিষয়টা আমার ভীষণ ভালোলাগে। বেশিরভাগ বড় লেখা বা এইরম রাইটিং - আমি দেখেছি কেউই পড়তে চায় না৷ আপনি সেগুলো পড়েন তো বটেই আর গুছিয়ে মন্তব্যও করেন৷
ঠিকই বলেছেন, বাড়িতে না থাকাটাই তো জীবনের স্বাভাবিকত্ব৷ তাই সেটা ধরেই মানুষ চলে৷ ভালোবাসা নেবেন৷
আমরা যত বড় হয়ে যায় না কেন আমাদের ছোটবেলার অভ্যাস পছন্দ এগুলোর কিন্তু পরিবর্তন খুব একটা হয় না। আপনার তো এখন অভ্যাস হয়ে গিয়েছে এইজন্য খারাপ লাগে না। কিন্তু প্রথম দিকে নিশ্চয়ই বাড়ি থেকে যাওয়ার সময় অনেক খারাপ লাগত।
ভাই প্রথম যেদিন হোস্টেলে আমায় রেখে বাবা মা চলে এসছিল সেইদিন চোখের জল কিছুতেই থামাতে পারছিলাম না। যদিও হোস্টেলে থাকতে আমিই চেয়েছিলাম। তারপর থেকে বুঝে গেছি এটাই জীবন এভাবেই চলতে হবে৷ কত বন্ধুদের ছেড়ে এসছি। এখন এই মোহটানগুলো আমার মধ্যে খুব একটা নেই।