|| শান্তিনিকেতন ভ্রমণ(প্রথম পর্ব) ||

in আমার বাংলা ব্লগ19 days ago

নমস্কার বন্ধুরা


আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি আপনারা সকলেই খুব ভাল আছেন। আমিও ভাল আছি। আপনাদের সকলের সুস্থতা কামনা করেই আমার আজকের ব্লগটি শুরু করতে চলেছি।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটা বিখ্যাত ছোটদের কবিতার কথা মনে আছে আপনাদের....?

আমাদের ছোটো নদী চলে বাঁকে বাঁকে
বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে।
পার হয়ে যায় গোরু, পার হয় গাড়ি,
দুই ধার উঁচু তার, ঢালু তার পাড়ি।

এই কবিতা যে নদীর ধারে বসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্বয়ং নিজে লিখেছিল, সেই নদীটা দেখে এসেছিলাম গত বছর নিজের চোখে। অর্থাৎ শান্তিনিকেতনের কোপাই নদীর তীরে এই জায়গাটা এতটা আকর্ষণীয় ছিল যেটা বলে বোঝানো যাবে না। লাল মাটির দেশ শান্তিনিকেতন এমন একটা জায়গা যেখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার জীবনের অনেকটা সময় কাটিয়েছেন এবং সেই জায়গাকে ঘিরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজে লিখেছেন অসংখ্য কবিতা। যেটা আমরা সকলেই কম বেশি জানি। এবার আসল কথায় আসা যাক। গত বছর আমার আসলে একটা ভর্তি পরীক্ষা ছিল বিশ্বভারতী ইউনিভার্সিটি তে। প্রধানত সেই উপলক্ষেই আমার শান্তিনিকেতন যাওয়া। যেহেতু এটি ছিল আমার প্রথম শান্তিনিকেতন ভ্রমণ, এজন্য অনেকটাই এক্সাইটেডমেন্ড কাজ করছিল ভিতরে। আমরা মোট দুই দিনের জন্য গেছিলাম অর্থাৎ একদিন ভর্তি পরীক্ষা দিতে কেটে যাবে এবং অন্য একদিন আমরা ঘুরাঘুরি করব এবং সেদিন রাতে আবার ট্রেন ধরে বাড়ি ফিরব।

InShot_20240514_192432706.jpg

যাইহোক প্রথম দিন তো পড়াশোনা, পরীক্ষা এসব দিতে দিতে কেটে গেল। এরপর দিন সকালে আমরা ঘুরতে বের হলাম শান্তিনিকেতন এর আনাচে কানাচে। তবে কোপাই নদীর তীরে বাউলদের গান এবং সন্ধ্যা নাগাদ কোপাই নদীর তীরে কাটানোর সময় আমাদের কাছে অনেকটাই স্মরণীয় হয়েছিল সেই সময়টাতে। আসলে কোপাই নদীটা প্রথম দেখাতে কারোরই ভালো লাগবে না। তবে যখন এই কথাটা মাথায় আসবে যে এই জায়গায় বসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কবিতা লিখেছিলেন তখন আপনাদের আবার ভালো লাগতে শুরু করবে, যেমনটা আমার হয়েছিল। তবে অন্যদিন না হয় সেই প্রসঙ্গে কথা বলবো। আজকে কথা বলব এই কোপায় নদীর তীরে বসা একটা মেলার বিষয়। তবে এটা কোন সিজনাল মেলা না এখানে সারা বছরই মেলা বসে। আর ভ্রমণ পিপাসু মানুষ এই জায়গা থেকে জিনিস কিনে নিয়ে যায়। বিশেষ করে যারা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভক্ত তারা বেশি এখান থেকে জিনিস কেনে।

20220304_172319.jpg

20220304_172426.jpg

সুতির কাপড় থেকে শুরু করে মাটির তৈরি বিভিন্ন জিনিসপত্র এখানে খুবই স্বল্প মূল্যে পাওয়া যায়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নকশা দেওয়া সমস্ত টি শার্ট মাত্র ১৯৯ টাকা। তাছাড়া এখানে তাঁতের শাড়ি ছিল প্রচুর পরিমাণে যেগুলো অনেক কম দামে বিক্রি হচ্ছিল। আপনারা ফটোগ্রাফি গুলো দেখলে হয়তো কিছুটা বুঝতে পারবেন যে কি পরিমান কাপড়ের ভেরিয়েশন ছিল এখানে। তবে আমাদের উদ্দেশ্য কেনাকাটা ছিল না, আমাদের উদ্দেশ্য ছিল একটু ঘুরে দেখা। তারপরও আমরা টুকটাক কেনাকাটা করেছিলাম। বিশেষ করে এখানে যে চাদর গুলো পাওয়া যায় ওগুলো অরজিনাল খাদি কাপড়ের, যেটা হাতে দিয়েই বুঝতে পেরেছিলাম। তবে বাইরের থেকে এখানে দেখলাম দাম অনেকটাই কম। আর সব থেকে বড় ব্যাপার এখানকার মানুষের ব্যবহার যেটা অত্যন্ত সুন্দর লেগেছিল আমার কাছে। এখানকার মানুষগুলো আমাদের কলকাতার মানুষ থেকে কিছুটা ভিন্ন। কারণ যারা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভক্ত হয় তারা এমনিতেই একটু অন্যরকম হয়। পুরো জায়গাটা ঘুরাঘুরি করার পর একটা নির্দিষ্ট জায়গায় বসে বাউল সংগীত শুনতে অনেকটাই ভালো লাগছিল। যদিও আমি বাউল সংগীতের খুব বেশি একটা ভক্ত নই। তারপরও কেন জানিনা ভালো লাগছিল ছিল ওই সময়টাতে।
20220304_172631.jpg

20220304_172703.jpg

তবে সবশেষে মাটির তৈরি গহনাগুলোর উপর আমার নজর যায়। এত সুন্দর সুন্দর ডিজাইনের গহনা যেটা এত কম পাওয়া যাচ্ছিল আমি কল্পনাও করতে পারিনি। তবে যেহেতু গহনা গুলো একটু ভারি ছিল এই জন্য কেনা হয়নি। কারণ ভারী গহনা আমার পড়তে খুব বেশি একটা স্বাচ্ছন্দ বোধ মনে হয় না। যাই হোক আমরা বিকাল নাগাদ এখানে গিয়েছিলাম এবং পুরো সন্ধ্যা সেখানে কাটিয়ে সময়টাকে সুন্দর করে উপভোগ করে সেখান থেকে আমাদের কাঙ্ক্ষিত হোটেলে চলে এসেছিলাম। তবে আমরা যে শুধু এই জায়গাটা ঘুরে ছিলাম তা কিন্তু নয়। সৃজনী শিল্প গ্রাম নামে একটা জায়গা ছিল সেখানেও আমরা ঘুরতে গিয়েছিলাম। তারপরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের যে মিউজিয়াম সেখানেও ঘুরতে গিয়েছিলাম। সেসব না হয় অন্য কোন সময় আপনাদের সাথে শেয়ার করা যাবে। তবে সব মিলে একটা কথাই বলতে হয়, এই জায়গাটা ঘুরে আসলে একটা অন্যরকম অনুভূতি হয়েছিল। যেটা অনেকদিন যাবত আমার মনে দাগ কেটেছিল।

20220304_172644.jpg

20220304_172438.jpg

20220304_172306.jpg

20220304_172616.jpg


পোস্ট বিবরণভ্রমণ
ডিভাইসpoco m6 pro
ফটোগ্রাফার@pujaghosh

আজ আর নয়। আজ এই পর্যন্তই শেষ করছি। ভালো থাকবেন সকলে আর সুস্থ থাকবেন। দেখা হবে পরবর্তীতে আবারও নতুন কোনো পোস্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব।





🪔আমার পরিচয়🪔

InShot_20240217_224020693.jpg

আমি পূজা ঘোষ(রাজশ্রী)। বনগাঁতে বসবাস করি। আমি বনগাঁ দীনবন্ধু মহাবিদ্যালয় থেকে আমার গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করেছি, বিজ্ঞান বিভাগে ।পাশাপাশি কম্পিউটার এবং স্পোকেন ইংলিশের কোর্স করেছি। বর্তমানে আমি ফার্মাসিতে অধ্যায়নরত । ভবিষ্যতে এইগুলো নিয়ে ভালো কিছু করার আশায় এগোচ্ছি। কবিতা আবৃত্তি করতে আমি খুবই ভালোবাসি। ছোটো বয়েস থেকেই কবিতা আবৃত্তি শিখছি। এছাড়া ছবি আঁকতে,ঘুরতে যেতে,নতুন নতুন খাবার খেতে,গান শুনতে,ফোটোগ্রাফি করতে আর মানুষের সাথে মিশতে ভালোবাসি।

🎯 সমাপ্ত🎯

Posted using SteemPro Mobile

Sort:  
 18 days ago 

পরীক্ষার পরের দিন আপনারা শান্তিনিকেতনে ভালোভাবে ঘুরাঘুরি করেছিলেন শুনে অনেক বেশি ভালো লাগলো দিদি। এরকম জায়গাগুলোতে ঘুরতে গেলে এমনিতেই খুব ভালো লাগে। বিভিন্ন রকম জামা কাপড় বিক্রি করার দোকান গুলো দেখে খুব ভালো লেগেছে। শান্তিনিকেতন ভ্রমণের প্রথম পর্বটা পড়ে ভালোই উপভোগ করেছি। এখন অপেক্ষায় থাকলাম আপনাদের ঘুরাঘুরি করার মুহূর্তের পরবর্তী পর্বগুলো পড়ার জন্য। ঘুরাঘুরির পাশাপাশি এই ফটোগ্রাফি গুলো সুন্দর ভাবে করে শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।

 16 days ago 

ঘোরাঘুরির পাশাপাশি তোলা ফটোগ্রাফি গুলো দেখে আপনার কাছে ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম আপু। ধন্যবাদ আপনাকে।

 18 days ago 

বছর দুয়েক আগে আমরা বন্ধুরা মিলেও শান্তিনিকেতন ঘুরতে গিয়েছিলাম দিদি। তারপরে আপনি যেখানে ঘুরতে গিয়েছিলেন অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার সেই কোপাই নদীর তীরে, ওখানে যে মেলাটা বসে ওটা আসলেই বেশ সুন্দর, আর কম দামে খুব ভালো ভালো জিনিস পাওয়া যায় ওইখানে। আপনি শান্তিনিকেতন ঘুরতে গিয়েছিলেন এবং টুকটাক জিনিস কিনেছিলেন, জেনে খুব ভালো লাগলো দিদি। আর ওইখানে টি-শার্ট গুলো বেশ কম দামে পাওয়া যায়, তাই আমি দুটো কিনে নিয়ে এসেছিলাম সেইবার গিয়ে। ধন্যবাদ দিদি, এত সুন্দর একটা পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।

 16 days ago 

আপনিও শান্তিনিকেতনে ঘুরতে গিয়ে বেশ সুন্দর উপভোগ করেছিলেন জায়গাটা দেখছি। আপনি দেখছি ওখানে গিয়ে দুটো টি-শার্ট ও কিনে নিয়ে এসেছিলেন। ধন্যবাদ আপনাকে পোস্টটি পড়ে সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য।

 18 days ago 

শান্তিনিকেতন জায়গাটা নিশ্চয়ই অনেক সুন্দর দিদি। যদিও জায়গাটার এখনো পর্যন্ত কোন ফটোগ্রাফি দেখি নাই কিন্তু কিছুটা অনুভব করতে পারতেছি। এখানে এত জামা কাপড়ের সমাহার দেখে তো ভালোই লেগেছে। দূরে কোথাও ঘুরতে গেলে এরকম জামা কাপড় গুলো কিনতে খুব ভালোই লাগে আমার কাছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মিউজিয়ামের ওখানেও ঘুরতে গিয়েছিলেন শুনে খুব ভালো লাগলো। আশা করছি আস্তে আস্তে সেই পর্বগুলো আমাদের মাঝে শীঘ্রই শেয়ার করবেন। অপেক্ষায় থাকলাম আপনার ঘুরাঘুরি করার পরবর্তী পোস্ট দেখার জন্য।

 16 days ago 

হ্যাঁ ভাই,শান্তিনিকেতন জায়গাটা আসলেই অনেক সুন্দর। হ্যাঁ ভাই পরবর্তী পর্বগুলো শীঘ্রই শেয়ার করব। ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.27
TRX 0.11
JST 0.031
BTC 67476.14
ETH 3776.09
USDT 1.00
SBD 3.52