বিবর্তন ও একটি ভবিষ্যৎবাণী -পর্ব ০৪
Copyright Free Image Source : Pixabay
কাল আমি প্রশ্নটা করেছিলাম যে ডলফিনের এতটা বুদ্ধি থাকা সত্ত্বেও কেন সভ্যতা গড়তে পারলো না ? কেন কোটি বছরের বিবর্তনের পরেও তাদের বুদ্ধিমত্তার লেভেল মানুষের মতো এত দ্রুত বিকশিত হয়নি ? কেন লক্ষ কোটি প্রাণী প্রজাতির মধ্যে মানুষই একমাত্র প্রজাতি যারা সভ্যতা গড়তে পেরেছে এবং মস্তিস্ক পূর্ণ বিকশিত হয়েছে এবং দ্রুত হারে প্রজম্মের পর প্রজন্মে বুদ্ধিমত্তার লেভেল বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে ?
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো আজ । তো প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার আগে চলুন জেনে নেওয়া যাক ডলফিনের জীবন প্রণালী কেমন ? ডলফিন জলে বাস করা সত্ত্বেও আমাদের মতোই স্তন্যপায়ী প্রাণী । ডলফিনের প্রেগন্যান্সি পিরিয়ড প্রায় মানুষের সমান । মা ডলফিন ১১-১২ মাস গর্ভবতী থেকে বাচ্চা প্রসব করে । একবারে একটির বেশি বাচ্চা সাধারণত প্রসব করে না । বাচ্চার জন্মের সাথে সাথে মা ডলফিন তাকে পিঠের উপরে বসিয়ে জলের উপরের তুলে ধরে, না হলে সদ্যোজাত বাচ্চার জলে ডুবে মৃত্যু হবে । এরপরে বেশ কয়েক ঘন্টা ধরে চলে সাঁতারের তালিম ।
খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সদ্যোজাত বাচ্চা ডলফিন সাঁতার শিখে ফেলে । এরপরে মা ডলফিন জলের মধ্যেই বাচ্চাকে দুধ খাওয়ায় । আমাদের মতোই ডলফিনরা পরিবার গঠন করে এবং অনেকগুলো পরিবার নিয়ে একটি সমাজ গঠন করে । প্রত্যেকটি সমাজে একজন করে দলপতি থাকে । সেই দল চালায় এবং সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করে । একটা মজার তথ্য শেয়ার করি । ডলফিনের প্রেম মানুষদের থেকেও বেশি । ডলফিন দম্পতিরা সারা জীবনই একসাথে থাকে । ডলফিনদের মধ্যে স্বামী-স্ত্রীর বিচ্ছেদের ঘটনা প্রায় নেই বললেই চলে । সঙ্গী বা সঙ্গিনীর মৃত্যুতে ডলফিন এবং তিমিরা পরবর্তী জীবনটা নিঃসঙ্গ কাটিয়ে দেয় ,তবুও দ্বিতীয়বার আর পরিবার গঠন করে না ।
বাচ্চা ডলফিনগুলো বাবা মায়ের সাথেই থাকে যতদিন না মায়ের অনুমতি নিয়ে সঙ্গী/সঙ্গিনী নির্বাচন করে নিজেরা পরিবার গঠন করে । নিকট আত্মীয়দের মধ্যে থেকে এরা সঙ্গী/সঙ্গিনী নির্বাচন করে না । বাচ্চা ডলফিন গুলো প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে আলাদা ঘর বাঁধলেও বাবা-মায়ের সাথে তাদের চমৎকার একটা বন্ডিং থাকে সব সময় ।
সারা পৃথিবীতে একমাত্র মানুষের পরেই সুসংবদ্ধ ভাষা হলো ডলফিনের । এরা শব্দ করেই কথা বলে । ডলফিনের ভাষা বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা হতবাক হয়ে গিয়েছেন । অর্থহীন সংকেতময় ভাষা নয় এদের অন্যান্য ইতর প্রাণীর মতো । রীতিমতো বেশ কয়েকটি মৌলিক স্বর ও ব্যঞ্জনধ্বনির সমন্বয়ে গঠিত শব্দের সমষ্টির মাধ্যমে ডলফিনেরা পারস্পরিক যোগাযোগ রক্ষা করে থাকে ।
আরো মজার ব্যাপার হলো এরা আনন্দ পেলে মানুষের মতই উচ্চস্বরে হাসে, কষ্ট পেলে কাঁদে । সঙ্গীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে । মজা, খেলাধুলা সবই করে । কিন্তু, সব চাইতে আশ্চর্য্যের বিষয় হলো এরা গান গাইতে পারে । ডলফিনের গান অর্থহীন কোনো শব্দের দ্যোতনা নয় । রীতিমত তাতে কথা, সুর সবই আছে ।
শুধু একটা জিনিস তারা পারে না । ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখতে পারে না । কারণ, আসলে তারা মানুষের মতো পূর্ণ ঘুম দিতে পারে না । ঘুমের মধ্যে তারা তাদের অর্ধেক ব্রেন সজাগ রাখে । তা না হলে জলে ডুবে মরার সম্ভাবনা । এছাড়াও হিংস্র খুনে তিমি বা হাঙরের আক্রমণের আশংকা থাকে । তাই ঘুমের সময় ব্রেনের অর্ধেক পূর্ণ সজাগ রাখে ।
এতটা মানুষের মতো হলেও তাদের একটিভিটি খুবই সীমিত সংখ্যক । সভ্যতা গড়তে ব্যর্থ তারা । বুদ্ধিমত্তা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে তেমন একটা বৃদ্ধি পায় না । কিন্তু, কেন ?
উত্তর খুঁজতে গেলে আগে জানতে হবে ব্রেনের বিকাশে কাঁচা মাছ মাংস সবজি কেন প্রধান অন্তরায় ? আমাদের ব্রেনের সেলগুলোর মধ্যে রয়েছে নিউরনের একটা সুবিশাল জটিল নেটওয়ার্ক । যে প্রাণীর মগজে নিউরণের এই জাল বড়ো তার বুদ্ধিমত্তা লেভেল ততটাই বেশি । মানুষের ব্রেনের গড় নিউরণ সংখ্যা যেখানে ৮৬ বিলিয়ন সেখানে মানুষের ডিএনএ-র ৯৯% মিল থাকা শিম্পাঞ্জির ব্রেনের গড় নিউরণ সংখ্যা মাত্র ২৮ বিলিয়ন ।
ব্রেনের বিকাশে কাঁচা খাদ্য সব চাইতে বড় অন্তরায় । কারণ, ব্রেনের বিকাশে প্রয়োজনীয় ক্যালোরি কাঁচা খাবার থেকে পাওয়া যায় না । আমাদের শারীরবৃত্তিয় কাজগুলো সুসম্পন্ন করার জন্য ব্রেনের প্রচুর এনার্জি দরকার হয়ে থাকে । যেটা কাঁচা খাবার থেকে পেতে গেলে যে পরিমাণ খাওয়া দরকার সেটা আমাদের পাকস্থলীর ক্ষমতার বাইরে । আর না হলে ২৪ ঘন্টার মধ্যে ঘুমের সময়টুকু বাদ দিয়ে শুধু খাবার খেয়ে যেতে হবে ।
এ তো গেলো শুধু ব্রেনের মাধ্যমে আমাদের শারীরবৃত্তিয় কাজগুলো সুসম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজনীয় এনার্জির কথা । কিন্তু, প্রয়োজনের তুলনায় বেশি এনার্জি পেলে আমাদের ব্রেনে নিউরণের সংখ্যা কল্পনাতীত বৃদ্ধি পায় । অর্থাৎ, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে নিউরণের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতেই থাকে । ফলশ্রুতিতে, আমাদের ব্রেনের বিবর্তন সাধিত হয়ে আরো বুদ্ধিমান করে গড়ে তোলে আমাদের ।
আজকের এপিসোড শেষ করার আগে বলি, এই পয়েন্টটা কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ । আমাদের প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে রয়েছে এখানেই । কাল বিস্তারিত আলোচনা করবো । আজ এ পর্যন্তই ।
[ক্রমশ ...]
পরিশিষ্ট
প্রতিদিন ১২৫ ট্রন করে জমানো এক সপ্তাহ ধরে - ৫ম দিন (125 TRX daily for 7 consecutive days :: DAY 05)
টার্গেট ০২ : ৮৭৫ ট্রন স্টেক করা
সময়সীমা : ২৪ জুলাই ২০২২ থেকে ৩০ জুলাই ২০২২ পর্যন্ত
তারিখ : ২৮ জুলাই ২০২২
টাস্ক ১২ : ১২৫ ট্রন ডিপোজিট করা আমার একটি পার্সোনাল TRON HD WALLET এ যার নাম Tintin_tron
আমার ট্রন ওয়ালেট : TTXKunVJb12nkBRwPBq2PZ9787ikEQDQTx
১২৫ TRX ডিপোজিট হওয়ার ট্রানসাকশান আইডি :
TX ID : dee8cfcf22ca3755c260bf7f623747a8afad0d48cf52463c0c5ad1e17d5af522
টাস্ক ১২ কমপ্লিটেড সাকসেসফুলি
Account QR Code
Wallet Address
TTXKunVJb12nkBRwPBq2PZ9787ikEQDQTx
god bless you
pls subscribe for me @rajoul
আমার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন @rajoul
দাদা ডলফিন সম্পর্কে তথ্যগুলো জানতে পেরে ভীষণ আশ্চর্য হলাম। মনে হচ্ছে ডলফিন পুরোপুরি একটি সামাজিক প্রাণী। মানুষের চাইতে কোন অংশে কম নয়। এদেরও যে এতটা বুদ্ধি মত্তার বিকাশ সাধিত হয়েছে জানা ছিল না। তবে কাঁচা মাছ মাংস বুদ্ধিমত্তা বিকাশে অন্তরায় শুনে কেমন যেন লাগলো। শুধুই খ্যাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন এর ফলে কি তাহলে বুদ্ধিমত্তার বিকাশ সাধিত হয়? অসংখ্য ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি সিরিজ লেখার জন্য
বাব্বা... ওদের মধ্যে এত শৃঙ্খলা বোধ। আজ অনেক ইনফরমেশন জানতে পারলাম যেগুলো আমি আগে জানতামই না। খুবই অবাক হয়েছি বিষয়গুলো জেনে।
অনেকদিন আগে একটা নিউজ দেখেছিলাম। তিমি তাঁর সঙ্গী কে হারিয়ে তীরে এসে সুইসাইড করেছে। আমি তখন বিশ্বাস করছিলাম না। আমি ভেবেছিলাম এটা হয়তো মিডিয়ার সাজানো গল্প। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সত্যি ওটাই হতে পারে।
প্রাণিজগতে অনেক প্রাণীই সুইসাইড করে । ঘোড়া, কুকুর, পাখি, তিমি ডলফিন । কিন্তু, সঙ্গী হারিয়ে একমাত্র তিমি-ডলফিনেরাই সুইসাইড করে ।
তিমি-ডলফিনদের মধ্যে ইমোশনটা অনেক বেশি।
হাই আমার বন্ধু! আমাদের সম্প্রদায় সাইটে প্রতিযোগিতা বিকাশ করে steemit. আমরা একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্প্রদায় আছে SteemitContest
যার সমর্থন প্রয়োজন আমরা প্রতিনিধিদের যারা আমাদের সম্প্রদায় বিকাশ সাহায্য করতে চান খুঁজছেন. আপনি সুযোগ আছে, আপনি আমাদের ভয়েস শক্তি অর্পণ করে সম্প্রদায় বিকাশ সাহায্য করতে পারেন. বিনিময়ে, আমরা আপনাকে দিনে একবার ভয়েস দিয়ে উত্সাহিত করব এবং কিউরেটরিয়াল ক্রিয়াকলাপ থেকে লাভের অংশ কেটে দেব
আপনার যদি আমাদের সাহায্য করার সুযোগ থাকে তবে আমরা কৃতজ্ঞ হব! আমাদের সংরক্ষিত অ্যাকাউন্ট @steemit.contest.
উন্নয়নে আপনার সাহায্যের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ!
দাদা আপনার আজকের পোষ্টের মাধ্যমে ডলফিন এর জীবন কাহিনী জানতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। একটা জিনিস খুবই অবাক লাগছে যে ডলফিন এর এতসব তথ্য কি করে বের হলো। তারা যে ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখে না তাও জানতে পেরেছে বিজ্ঞানীরা। খুবই অবাক করা বিষয় ।আর এরা তো পুরাই মানুষের মতই সামাজিক জীব মনে হচ্ছে।হাসে,কাঁদে,গান গায় সত্যিই খুবই মজার লাগলো নতুন নতুন সব তথ্য পেয়ে। ধন্যবাদ আপনাকে।
Nice post. Any tip for that how I get more votes as you get on this post?
মজার ব্যাপার হচ্ছে যদি ডলফিন ঠিকমতো ঘুমোতে পারতো এবং পরিমিত শর্করা ও আমিষ খাবার খেতো পারতো ,তাহলে হয়তো বাস্তব প্রেক্ষাপট একটু হলেও ভিন্ন হতে পারতো । তবে যতোই পরছি ততোই শিখছি ।
দাদা আজকে আপনার এই পোস্ট পড়ার মাধ্যমে অনেক কিছু জানতে পারলাম। যে তথ্য গুলো এতদিন অজানা ছিল। ডলফিন সম্পর্কে এত সুন্দর ভাবে আপনি বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন দেখে অনেক ভালো লাগলো। মানুষের মাঝেও বিচ্ছেদ হয় কিংবা নতুন সঙ্গী খুঁজে নেয়ার মানসিকতা থাকে। কিন্তু ডলফিন দ্বিতীয়বার পরিবার গঠন করে না। সব মিলিয়ে অনেক কিছুই জানতে পারলাম। সব অজানা তথ্যগুলো জেনে ভালো লাগলো দাদা।