তিন বন্ধুর মিলনমেলা সাথে পদ্মা সেতু দর্শন। ১০% প্রিয় লাজুক খ্যাঁক এর জন্য।
গত প্রায় এক মাসের বেশি হোলো ঢাকায় আছি। এর ভিতর তিন চার দিনের জন্য নিজের বাড়িতে গিয়েছিলাম। তারপর আবার ঢাকায় চলে আসতে হয়েছে। এত দীর্ঘদিন ধরে ঢাকায় থাকলেও কোন বন্ধুবান্ধবের সাথে দেখা হয়নি বিভিন্ন রকম ঝামেলার কারণে। আমার খুব ঘনিষ্ঠ বেশ কয়েকজন বন্ধুবান্ধব ঢাকাতেই থাকে। ঢাকায় আসলে সাধারণত তাদের সাথে দেখা হয়, আড্ডা হয়। এবার আর সেটা হয়নি। পরিস্থিতি এখন একটু স্বাভাবিক হওয়ার কারণে আমি চিন্তা করলাম বন্ধুদের সাথে দেখা করবো।
যাত্রা হলো শুরু
স্থান- লিংক
বন্ধুদের সাথে ফোনে যোগাযোগ করলাম। এর ভেতর আমার বড় বোন বলল গাড়িটা তো পড়েই আছে তুই তোর বন্ধুদের নিয়ে কোথা থেকে ঘুরে আয়। আমি চিন্তা করছিলাম কি করা যায়। কোথায় যাবো? তারপর আমি বললাম আচ্ছা দেখি ওদের সাথে কথা বলে। পরে বন্ধুর সঙ্গে আবার যোগাযোগ করলাম। ঠিক করলাম যে আমরা এক জায়গায় দেখা করব। তারপর সেখান থেকে কোথাও ঘুরতে যাবো।
স্থান- লিংক
আমার এক বন্ধু প্রস্তাব করলো আমরা মাওয়া যাই পদ্মা সেতু দেখতে। প্রস্তাবটা আমার প্রথমে খুব একটা পছন্দ হয়নি। কারণ আমি প্রাইভেটকারে হাইওয়েতে যেতে খুব একটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করিনা। তারপর শুনতে পেলাম যে আজ পরিবহন ধর্মঘট। সেজন্য চিন্তা করলাম যেহেতু পরিবহন ধর্মঘট সেজন্য রাস্তায় কোনো গাড়ি থাকবে না। তাহলে তো যাওয়া যায়। তারপর আমি আমার বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করে তাদের প্রস্তাবে রাজি হলাম। আমাদের সর্বমোট চার বন্ধুর যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এর ভিতরে একজন জরুরী কাজের জন্য ফরিদপুর চলে গেলো। তখন আমরা তাকে ছাড়াই পদ্মা সেতু দেখতে যাওয়ার পরিকল্পনা করলাম।
স্থান- লিংক
পূর্বনির্ধারিত পরিকল্পনা অনুযায়ী আমি বাসা থেকে সকাল এগারোটায় বের হলাম। গাড়িতে গ্যাস ছিল না বেশি। সে জন্য একটি ফিলিং স্টেশন থেকে গ্যাস ভরতে গেলাম। সেখানে একটা ছোটখাটো লাইনে থাকতে হলো আমাদেরকে। ফিলিং স্টেশনে সমস্যা থাকার কারণে গ্যাস ভরতে বেশ খানিকটা সময় নষ্ট হল। তারপর আমি সোজা চলে গেলাম মহাখালী। সেখানে এক বন্ধু আগে থেকেই অপেক্ষা করছিল। সেখান থেকে ওই বন্ধুকে নিয়ে গেলাম বাংলাদেশ বেতার ভবনের কাছে। সেখানে আরেক বন্ধু অপেক্ষা করছিলো। এই বন্ধু আমাদের সাথে যোগ দেয়ার পর আমরা ড্রাইভারকে বললাম সোজা মাওয়াঘাটে চলেন।
স্থান-লিংক
আমরা পদ্মা সেতু দেখতে যাব আর মাওয়া ঘাট থেকে টাটকা ইলিশ মাছ খাব। আমরা তিনজনে গল্পে মশগুল হয়ে গেলাম। অনেক দিন পর তিন বন্ধু একসাথে হয়েছি। চিন্তা করছিলাম আজকে যেহেতু পরিবহন ধর্মঘট রাস্তায় গাড়ি-ঘোড়া খুব একটা থাকবে না আমরা নির্বিঘ্নেই যেতে পারবো। কিন্তু কিছুক্ষণ পর বুঝতে পারলাম আমাদের ধারণা ভুল। বাস-ট্রাক ছাড়াও ঢাকার রাস্তায় অসংখ্য যানবাহন আছে। সেগুলোতেই রাস্তা আটকে আছে। যার ফলে আমাদের ঢাকা শহর থেকে বের হতে অনেকটা সময় লেগে গেল।
স্থান- লিংক
এর ভীতর জুম্মার নামাজের সময় হয়ে গেলো। আমি ড্রাইভারকে বললাম সামনে একটা মসজিদ দেখে গাড়ি থামাতে। সেখান থেকে নামাজ পড়ে নেবো। কিছুক্ষণের ভেতরে রাস্তার পাশে একটা মসজিদ পেয়েও গেলাম। সেখানে গাড়ি থামিয়ে আমরা তিন বন্ধু নামাজ পড়ে নিলাম। তারপর আবার রওনা দিলাম মাওয়া ঘাটের উদ্দেশ্যে। সেখান থেকে মাওয়া ঘাটের রাস্তাটা ছিল চমৎকার। এত সুন্দর রাস্তা আমাদের দেশে আর কোথাও আছে কিনা আমার সন্দেহ।
স্থান-লিংক
হঠাৎ খেয়াল করে দেখি গাড়ির স্পিড মিটারের কাটা ১০০ পার করেছে। আমি ড্রাইভার কে একটু সতর্ক করলাম যে এত জোরে গাড়ি চালানোর প্রয়োজন নেই। আমাদের কোন তাড়াহুড়া নেই। গাড়ি ৮০ কিলোমিটারের ভেতরে রাখতে বললাম। প্রশস্ত রাস্তায় কোনরকম বাঁধাবিঘ্ন ছাড়াই আমরা এগিয়ে চলছিলাম। গাড়ির জানালার গ্লাস নামিয়ে দিয়েছিলাম। ভেতরে হু হু করে বাতাস আসছিল। আমরা তিন জনে আড্ডা দিচ্ছিলাম। সময়টা খুব ভালোভাবে উপভোগ করছিলাম।
স্থান- লিংক
এভাবে আধাঘন্টা চলার পর আমরা মাওয়া ঘাটে পৌঁছে গেলাম। সেখানে পৌছে দেখি সারি সারি রেস্টুরেন্ট রাস্তার দুই পাশ দিয়ে। প্রত্যেকটা রেস্টুরেন্টের সামনে অসংখ্য গাড়ি। গাড়ি কোথায় পার্ক করবো তাই চিন্তা করছিলাম। পরে আমরা আরও একটু সামনে এগিয়ে গিয়ে একটি খোলা মাঠ পেলাম যেটি বাউন্ডারি দিয়ে ঘেরা। সেখানে আমরা গাড়ী পার্ক করলাম। কিন্তু আমরা যে উদ্দেশ্যে গিয়েছিলাম সে উদ্দেশ্য খুব একটা সফল হয়নি।
স্থান- লিংক
কারণ পদ্মা সেতু আন্ডার কনস্ট্রাকশন থাকার কারণে আমরা কাছ থেকে দেখতে পারিনি। চেকপোষ্টে আর্মির সদস্যরা পাহারা দিচ্ছিল। আমরা কাছে যেতেই তারা ইশারায় বললো চলে যেতে। এমনকি আমরা যখন ছবি তোলার চেষ্টা করছিলাম তারা সেখানেও বাধা দিল। আমরা একটু অবাক হলাম। যেহেতু এতদুর থেকে এসেছি পদ্মা সেতু দেখতে। তাই ঠিক করলাম যে না দেখে যাব না। পরে আশেপাশের লোকজনের কাছ থেকে শুনে প্রায় দেড় কিলোমিটার হেঁটে নদীর পাড়ে পৌঁছলাম।
স্থান- লিংক
সেখান থেকে পদ্মা সেতু মোটামুটি দেখা যায়। যদিও বেশ খানিকটা দূরে। এভাবেই আমরা দুধের স্বাদ ঘোলে মিটাই। তারপর কিছুটা হতাশ হয়ে আমরা আবার ঢাকার দিকে ফিরে আসলাম। যদিও একটা ব্যাপার খুবই উপভোগ করেছি সেটা হচ্ছে মাওয়া ঘাটের টাটকা ইলিশ খাওয়া। সে গল্প অন্য আরেকদিন করব।
স্থান- লিংক
আজকের মতো এখানেই শেষ করছি। আশা করছি পোস্টটি আপনাদের ভালো লাগবে। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন।
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩
আমি রূপক। আমি একজন বাংলাদেশী। আমি বাঙালি। আমি বাংলায় মনের ভাব প্রকাশ করতে ভালোবাসি। আমি আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিকেও ভালোবাসি।
ভাইয়া আপনি অনেক ক্লান্তির মাঝেও যে একটু সময় পেয়েছেন ঘুরতে যাওয়ার জন্য এটা আসলে অনেকটা সৌভাগ্যের ব্যাপার। আর আপনার ভ্রমণটা ছিল বন্ধুদেরকে নিয়ে মাওয়া ঘাট। যদিও এতোটুকু রাস্তা যেতে আপনার অনেক বেগ পেতে হয়েছে, গাড়িতে গ্যাস নিতে গিয়ে, অবরোধ থাকাতেই রাস্তায় এমনিতে ছোট গাড়ির জন্য কোথাও যেতে খুবই কষ্ট হয় খুব জ্যাম থাকে। অবশেষে মাওয়া ঘাটে গেয়েছেন অনেক সুন্দর সুন্দর ফটোগ্রাফি করেছেন। আসলে ভাইয়া মাওয়া ঘাটের রাস্তাটা খুবই সুন্দর এবং কি খুবই ফাকা এবং প্রশস্ত অনেক জায়গা। সেখানে বাইক ড্রাইভের ম্যাক্সিমাম মানুষ জার্নিং করে ইলিশ খেতে যায়। দৃশ্য গুলো দেখলে এমনিতেই ভালো লাগে। পুলিশের বাধা দেওয়ার শর্তেও প্রায় এক দেড় কিলোমিটার হেঁটে দূর থেকে কয়েকটা ফটোগ্রাফি করেছেন। আপনি অনেক কষ্ট করে আমাদের সাথে পদ্মার ব্রিজের কয়েকটা ফটোগ্রাফি শেয়ার করেছেন। এবং কি অনেক সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে লিখেছেন। তবুও বলব এটা আপনার একটা খুব সুন্দর সময় ছিল এমনকি ভালো একটা সময় কাটিয়েছেন বন্ধুদের নিয়ে। শুভেচ্ছা রইলো ভাইয়া।
ধন্যবাদ আপনাকে।
কারো পৌষ মাস কারো সর্বনাশ পরিবহন ধর্মঘটের জন্য অনেকে আছে বিপদে আর আপনি গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন বাহ ভালো। তো এটাই সেই স্বপ্নের পদ্মা সেতু।কত শুনেছি টিভিতে দেখেছি সরাসরি কোনদিন দেখা হয় নাই।অনেক সুন্দর আশা করা যায় সেতু টার জন্য দক্ষিণ অঞ্চলের সাথে ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বদলে যাবে।উন্মোচন হবে এক নতুন দিগন্তের।অনেক সুন্দর ছিল ভাই পোস্টটা।
ধন্যবাদ আপনাকে ভাই।
ভাই পদ্না সেতু টিভিতে অনেক দেখেছি।কিন্তু সরাসরি এখনো দেখা হয়নি।আপনি একটা খুব সুন্দর সময় পার করছেন।বন্ধুদের সাথে অনেক মজা করেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে ভাইয়া এমন সুন্দর একটি মূহুর্ত আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য। শুভ কামনা রইল আপনার জন্য।
ধন্যবাদ আপনাকে।
এই সৌভাগ্যটি এখনো হলো না আমার। সবাই বলে মাওয়া ঘাটের ইলিশ নাকি অনেক মজা।এর মতো স্বাদ নাকি আর হয়না। তবে আফসোস কখনো ঢাকাই যাওয়া হয়নি। তবে একেবারে খুব কাছ থেকে দেখতে পারেননি বলে একটু খারাপ ও লাগলো। কারণ খুব কাছ থেকে আপনি দেখতে পারলে আমরাও দেখতে পারতাম এই আরকি।
আসলে খুবই হতাশ হয়েছি কাছ থেকে দেখতে না পেয়ে। তবে আশাকরি কালকে আপনাদের মাওয়া ঘাটের ইলিশ খাওয়াতে না পারলেও দেখাতে পারবো।
বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে খুবই ভালো লাগে, তাতেই পদ্মা সেতু কঠিন একটা মজা।
ধন্যবাদ ও শুভকামণা রইল আপনার জন্য সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।
ধন্যবাদ আপনাকে ভাই।
মাওয়া ঘাটের টাটকা ইলিশ খেতে খুবই মজা লাগে শুনেছি কিন্তু কখনও সেখানে যাওয়া হয়নি তাই ইলিশও খাওয়া হয়নি। তিন বন্ধু মিলে এতদূর ঘুরতে যেয়েও যে পদ্মা সেতু কাছ থেকে দেখতে পারেননি এটা ভেবে খুব খারাপ লাগলো। তবে আপনারা তিন বন্ধু মিলে গাড়িতে ঘুরাঘুরি করা, আড্ডা দেওয়াতে বেশ ভালই আনন্দ করেছেন।
হ্যাঁ ভালোই মজা হয়েছে।
অনেক ভালো লাগলো ভাই আপনার পুরো গল্পটা পড়তে পেরে, আমিও মাসখানেক আগে গিয়েছিলাম আসা যাওয়ার রাস্তার আশপাশের পরিবেশ গুলো খুবই সুন্দর, দেখতে খুবই ভালো লাগে, আমরা গিয়েছিলাম রাতের বেলা সেখান থেকে ইলিশ দিয়ে রাতের খাওয়া দাওয়া করলাম , তারপর বাড়ি ফিরলাম, সেদিনটা খুবই ভালো ছিল আশাকরি আপনার দিনটি অনেক ভাল কেটেছে আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
ধন্যবাদ আপনাকে আপু।
ইস্... আমি মিস করলাম। পদ্মা সেতু আমার এখনো দেখা হয়নি। ঢাকা থাকলে আমিও যেতে পারতাম।
ভাইয়া আপনারা এত কষ্ট করে গিয়েও পদ্মা সেতুর কাছে যেতেপারলেন না ভেবেই খারাপ লাগছে । তারপরও এত সুন্দর ছবি গুলো পোস্ট করার জন্য ধন্যবাদ ।
রূপক ভাই তিন বন্ধুর মিলন মেলা পদ্মা সেতুতে হয়েছে অনেক ভালো লাগতেছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অসাধারণ একটা ব্রিজ আমাদের উপহার দিতে চলতেছে যাই হোক অনেক সুন্দর লাগলো আপনার উপস্থাপনা এবং ছবিগুলো আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
ধন্যবাদ আপনাকে ভাই।