কৈশরে রমজান মাসের অভিজ্ঞতা।

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


মানুষের জীবনের প্রতিটি ধাপের সাথে তার বিভিন্ন রকম অভিজ্ঞতা হয়। যেমন শৈশবে মানুষের জীবন থাকে একরকম। তেমনি আবার যখন সেই মানুষটি কৈশরে পদার্পণ করে তখন তার জীবনে অনেক পরিবর্তন আসে। কিশোর অবস্থায় রমজান মাসটা কি অবস্থায় কাটাতাম আজকে সে গল্পই আপনাদের কাছে করবো। শৈশব থেকে যখন কৈশরে পদার্পণ করেছি তখনই নিজেকে বড় ভাবতে লাগলাম। এখন সমস্যা হচ্ছে যখন শিশু ছিলাম তখন কেউ জিজ্ঞেস করত না যে রোজা আছি কিনা? কিন্তু যখনই কৈশোরে পদার্পণ করলাম তখনই পাড়া-প্রতিবেশী এবং আত্মীয়-স্বজনের ভেতর অনেকেই জিজ্ঞেস করতে শুরু করলো রমজান মাসে রোজা থাকি কিনা?

Polish_20230327_003957193.jpg

আমি কৈশোরে পদার্পণ করার পর দুটো একটা করে রোজা থাকতাম। কিন্তু আশেপাশে আমার বয়সে অনেকেই ছিল যারা সবগুলো রোজা করতো। যার ফলে তাদের ভেতর অনেকেই জিজ্ঞাসা করতো যে রোজা আছি কিনা? রোজা না থেকে যতটা অপরাধবোধ মনের ভেতর কাজ করতো। তার থেকে বেশি অপরাধবোধ কাজ করত তাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে। একটা সময় তো রীতিমতো তাদেরকে এড়িয়ে চলতে শুরু করলাম। প্রতিবার রমজান মাস যখন আসতো তখন প্রথমদিকের একটা দুটো রোজা থাকতাম। কিন্তু রমজানের প্রাথমিক রেশটা কেটে গেলে। তখন রোজা থাকার কথা বেমালুম ভুলে যেতাম।

রোজার মাসে ইস্কুল ছুটি থাকতো। যার ফলে সারাদিনই বন্ধু-বান্ধবদের সাথে খেলাধুলায় মেতে থাকতাম। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বলতে গেলে একটানা খেলাধুলা করতাম। শুধু দুপুরের সময় বাসায় ফিরে দুটো কোন রকম নাকে মুখে গুঁজে আবার বেরিয়ে পড়তাম। মাঝে মাঝে মায়ের বকুনি খেতে হতো বিশেষ করে রোজা না থাকার ব্যাপারে। রমজান মাস যখন প্রায় আসন্ন তখনই বন্ধু-বান্ধবদের সাথে মিলে ঈদে কি করব সেই পরিকল্পনা শুরু হয়ে যেতো। সেই পরিকল্পনার ভেতরে দুটো জিনিস সবচাইতে বেশি গুরুত্ব পেতো। তার একটি হচ্ছে কবে নতুন জামা কাপড় কিনবো? আর কি পরিমান পটকা বা বাজি কিনবো।

রোজার মাসের শুরু থেকেই এগুলো নিয়ে আমাদের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যেতো। পটকা কেনা নিয়ে তো রীতিমতো প্রতিযোগিতা শুরু হতো। একটা সময় গিয়ে কার স্টকে কি পরিমাণ পটকা আছে সেটা নিয়ে একজন আরেকজনের সাথে প্রতিযোগিতা শুরু করতো। আর রোজা না থাকলে কি হবে। প্রতিদিন ইফতারের সময় ঠিক বাড়ি পৌঁছে যেতাম।আমার ইফতার খাওয়া শুরু হতো ইফতারের সময়ের আগেই। মা যখন চুলাই গরম গরম ভাজতে থাকতো। তখন থেকেই একটা দুটো করে খাওয়া শুরু হতো। ছোটবেলা থেকেই আমার কাছে আমাদের প্রচলিত যে ইফতারের আইটেম গুলি আছে। সেগুলো খুবই প্রিয় ছিলো।

এখনো সেগুলো আমার কাছে খুব পছন্দের। আমাদের বাসায় বেশিরভাগ সময় একই ধরনের ইফতার তৈরি করা হতো। ইফতারে যেগুলো সব সময় থাকতো সেগুলো হচ্ছে ছোলা ভুনা, পেঁয়াজু, বেগুনি, ডিমের চপ আর শরবত। তখন অবশ্য লেবুর শরবতই বেশি খাওয়া হতো। তখন এখনকার মতো পাউডার ড্রিংক এর এতটা প্রচলন ছিল না। আর সেই সাথে থাকতো কিছু ফলমূল। আমরা বাসার সবাই মোটামুটি এগুলোই খেতাম। তবে আমার বাবার প্লেটে দেখতাম কিছুটা ভিন্নতা। তিনি আবার দুধ, কলা, চিড়া দিয়ে খেতে পছন্দ করতেন। আমি আবার এই খাবারগুলো একেবারেই পছন্দ করতাম না। যদিও জানতাম এই খাবার গুলো খুবই স্বাস্থ্যকর। সারাদিন রোজা থাকার পর ভাজাপোড়া খাওয়ার থেকে এই খাবারটা খেলে শরীর স্বাস্থ্য দুটোই ভালো থাকতো।

কিন্তু তখন শরীর নিয়ে চিন্তা করার সময় কোথায়? মুখে যেটা স্বাদ লাগে সেটা খাওয়াতেই ব্যস্ত থাকতাম। আর আমার ইফতার খাওয়া ইফতারের আগে থেকে শুরু হয়ে ইফতারের অনেকটা পরে পর্যন্ত চলতে থাকতো। এমনকি সন্ধ্যার পরে এলাকার ভাজাপোড়ার দোকান থেকে আলুর চপ এবং পেঁয়াজু কিনে খেতাম। বাড়ির খাবার যতই খাই না কেন বাইরের খাবার না খেলে যেন পেট ভরতো না। রোজা করার ভেতর শুরুর দিকে দু-তিনটে রোজা করতাম। আর শেষের দিকে ২৭শে রমজানের রোজাটা রাখতাম। মনে হতো এই তিনটে রাখলেই বুঝি সব হয়ে গেল। কিন্তু এখন বুঝি কতটা বোকামি করেছি। কৌশরে যেকোনো উৎসব অনেক বেশি আনন্দের সাথে উদযাপন করেছি। এখন আর যেটা একেবারেই হয় না। এই কারণে আমার কাছে কৈশরের সময়টাই মনে হয় সবচাইতে ভালো সময়।

যদিও আমি একেবারে ছোটবেলাতেই বাড়ি থেকে বাইরে ছিলাম। বেশ কয়েক বছর পর যখন ক্লাস সেভেনে উঠেছিলাম তখন আবার নিজের এলাকায় ফিরে আসি। যে কয় বছর বাড়ির বাইরে ছিলাম তখন আমার জীবন ছিল এক রকমের। কিন্তু নিজের বাড়িতে ফেরার পরে এলাকার পুরাতন বন্ধুবান্ধবদের সাথে মজায় মেতে উঠেছিলাম। দীর্ঘদিন এলাকার বাইরে থাকার ফলে আমার কাছে কৈশোরের সময়টা আরো বেশি উপভোগ্য হয়ে উঠেছিলো। তবে সেই সময় গুলো এখন অনেক বেশি মিস করি। সব সময় মনে হয় যদি সেই সোনার দিনগুলি আবার ফিরে পেতাম। তাহলে কতই না ভালো হতো। এখন সেই সময়ের কথা চিন্তা করলে মনটা খারাপ হয়ে যায়। কারন সেই সময় এমন অনেক কাছের মানুষ ছিল যারা এখন পৃথিবী ছেড়ে চলে গিয়েছে। জানি তাদেরকে আর কখনোই পাওয়া যাবে না। যার ফলে তাদের সাথে কাটানো সেই চমৎকার মুহূর্তগুলো আর কখনোই ফিরে পাবো না। অবশ্য পরবর্তীতে মাথায় চিন্তা আসে এটাই তো জীবন। এভাবেই আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে।

আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।


ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইসহুয়াই নোভা 2i
ফটোগ্রাফার@rupok

logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

standard_Discord_Zip.gif


break .png

Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote


VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png



🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 2 years ago 

আপনার পোস্টটি যতই পড়ছি ততই যেন আমার ছোটবেলার কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। ঠিক বলেছেন ভাইয়া রোজা না রাখলে যতটা অপমান বোধ হতো তার চেয়ে বেশি অপমান বোধ হতো বন্ধু-বান্ধবের রোজা রেখেছে কিনা সে প্রশ্নের উত্তর দিতে। তবে আমার মনে আছে রোজা রাখার জন্য ছোটবেলায় খুব কান্না করতাম, আম্মু বলতো তুই একদিন দুই থেকে তিনটা রোজা রাখ ।প্রথম প্রথম খুশি মনে রাখতাম😎 পরে যখন বুঝ হয়েছে তখন তো শুধু কান্না করতাম। ক্লাস সেভেন পর্যন্ত যেহেতু আপনি আপনার গ্রামের বাহিরে ছিলেন ,সেহেতু আপনার কাছে আপনার কৈশোর টা বেশি উপভোগ্য হয়েছে। চপের কথা আর কি বলব যখন থেকে আম্মু ভাজা শুরু করত তখন থেকেই খেতে খেতে অর্ধেক শেষ করে ফেলতাম। ঠিক বলেছেন ভাইয়া মনে হচ্ছে আর একটা বার যদি ফিরে পেতাম সেই সোনালী দিন গুলো।

 2 years ago 

আর শেষের দিকে ২৭শে রমজানের রোজাটা রাখতাম। মনে হতো এই তিনটে রাখলেই বুঝি সব হয়ে গেল।

তাহলে মনে হয় সবার ছোটবেলার সাথেই এই বিষয়টি বেশ পরিচিত। আমরাও সবাই মিলে ঠিক একই কাজ করতাম । ২৭ রমজানের দিন রোজা থাকতাম আর ইফতারের পর থেকেই মসজিদে অবস্থান করতাম অপেক্ষায় থাকতাম কখন জিলাপি সহ বাতোশা দিবে।

 2 years ago 

আপনার পোস্ট আমার এক বন্ধুর কথা মনে পড়ে গেল।ও রোজা না রাখার জন্য আমাদের কাছে পর্যন্ত বকা খেয়েছে।কিন্তু ওর এক কথা,"আমি না খেয়ে থাকতে পারিনা"।অথচ ইফতার এর সময় অর্ধেকের বেশি ইফতার ওর পেটেই যেত। আগে দেখতাম চাঁদ রাত থেকে পটকা ফুটানো শুরু,কিন্তু এখন আর অত বেশি পটকা ফুটাতে কাউকে দেখি না। ধন্যবাদ ভাইয়া শৈশবের স্মৃতি গুলো শেয়ার করার জন্য।

 2 years ago 

আসলে ভাই আমি তো মনে করি ৷ জীবনটা তখনই ভালো ছিল যখন যানতাম না জীবন মানে কি ৷ যেমনটা বললেন সেই শৈশব জীবনের কথা ৷ আসলে যে বয়সে যেটা করা উচিত ঠিক সেটাই ৷ যে কোনো পুজো বা ঈদের আনন্দ গুলো শৈশব জীবনে বা কৈশোর জীবনেই বেষ্ট ৷
আপনি শৈশব কৈশোর জীবনে রোজার মুহূর্ত গুলো শেয়ার করেছেন যা অনেক ভালো লাগলো ৷

 2 years ago 

পোস্টটি পড়ছিলাম আর একটু একটু করে হাসছিলাম।আহা কি দারুন ছিল আপনার কৈশোর। তবে আগের মত এখন আর হয় না,সবাই এখন মোবাইল নিয়ে ব্যাস্ত এখন পটকা কেনার বদলে এমবি কিন।😅

প্রতিদিন ইফতারের সময় ঠিক বাড়ি পৌঁছে যেতাম।আমার ইফতার খাওয়া শুরু হতো ইফতারের সময়ের আগেই।

আর এইটা কিন্তু একদম ঠিক বলেছেন 😁✌️।