তুমি যে আমার আলো গল্প পর্ব:৭

in আমার বাংলা ব্লগlast month

হ্যালো বন্ধুরা,

আপনারা সবাই কেমন আছেন?আশা করি, আপনারা সবাই ভালো আছেন সুস্থ আছেন। আজ আমি আপনাদের মাঝে 'তুমি যে আমার আলো'গল্পের নতুন আরো একটি পর্ব উপস্থাপন করছি। আশা করি,আপনাদের সবার গল্পটি ভালো লাগবে তাই বিলম্ব না করে আমার পোস্ট লেখাটি শুরু করছি।


pexels-asad-photo-maldives-1024984.jpgসোর্স


লাবনী বাড়িতে যাওয়ার পর তার বাবা লাবনীকে ডাক দেয়।লাবনী সঙ্গে সঙ্গে তার বাবার কাছে যায়। তার বাবা কাছে এসে বসতে বলে আর বলে তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে। লাবনী একটু ঘাবড়ে যায় কারণ তার বাবা লাবনীর সাথে খুব কম কথাই বলে। সে ভাবতে থাকে বাবা কি সৌরভের কথা জেনে ফেলেছে। এসব কথা চিন্তা করতে করতে লাবনী বলে।

লাবনী:হ্যাঁ বাবা বলো।
বাবা: অনেকদিন হয়েছে তোমার সাথে আমার কথা হয় না। আগে বল তোমার পড়াশোনা কেমন চলছে?
লাবনী: হ্যাঁ বাবা ভালোই চলছে।
বাবা: সত্যি কি ভালো চলছে। না তুমি আমাকে মিথ্যা বলছো।
লাবনী:কেন বাবা আমি তোমাকে মিথ্যা কেন বলব।
বাবা: তুমি কি কাউকে ভালোবাসো?
লাবনী: না।
বাবা: তুমি আমাকে মিথ্যা কেন বলছো তুমি জানো আমি মিথ্যা কথা পছন্দ করি না।
লাবনী: আমি সত্যিই বলছি বাবা আমি কাউকে ভালোবাসি না।
বাবা: আচ্ছা ঠিক আছে তোমার কথা মেনে নিলাম। আমি শুনলাম তোমার নাকি কলেজে নতুন একটি বন্ধু হয়েছে। কলেজ ফাঁকি দিয়ে তুমি তার সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছ এটা কি সত্যি?
লাবনী: হ্যাঁ সৌরভ নামে একটি ছেলের সাথে আমার বন্ধুত্ব হয়েছে। কিছুদিন কলেজ ফাঁকি দিয়ে আমি তার সাথে সময় কাটিয়েছি।
বাবা: দেখো লাবনী তোমাকে ছোটবেলা থেকে খুব আদর যত্ন করে বড় করেছি। তোমার বিরুদ্ধে কোন কথা আমি কোনদিন বলিনি আর হয়তো বলবো ও না। আমি তোমাকে পড়াশোনা করার জন্য কলেজে পাঠিয়েছি। আর তুমি পড়াশোনা ফাঁকি দিয়ে তুমি একজনের সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছ। এটা কি ঠিক তুমি বলো।
লাবনী: বাবা আমি তোমাকে কোনদিন মিথ্যা কথা বলিনি আর আজও বলবো না। আসলে বাবা যে ছেলেটির সাথে আমি ঘুরে বেড়িয়েছি ছেলেটি খুবই গরীব। কলেজে সবাই তাকে অপমান করে সে এতটাই গরীব প্রতিদিন কলেজে একটি জামা পড়ে আসে। সবাই যখন তাকে অপমান করত আমার খুব খারাপ লাগতো।কারন সে ও তো মানুষ তারা তো ভালোভাবে বেঁচে থাকার অধিকার আছে। বাবা ও খুব ভালো মেধাবী কিন্তু অভাবের কারণে সে ভালোভাবে চলতে পারে না। বাবা তুমি জানো ছেলেটি পড়াশোনার প্রতি খুব মনোযোগ সে একটি গ্যারেজে কাজ করে আর তার ফাঁকে ফাঁকে পড়াশোনা করে।
বাবা: আমি তোমার কথা সবই বুঝতে পারছি কিন্তু আমাদের একটা সম্মান আছে। তুমি যে কাজগুলো করছো আসলে সে কাজটি করা হয়তো ঠিক। কিন্তু লাবনী তুমি যে তার সাথে সময় কাটাচ্ছো তুমি হয়তো তাকে ভালবাসনি বন্ধু হিসেবে দেখছো। কিন্তু এইসব ছোট লোকেরা সব সময় বড়লোক মেয়েদের ফাঁদে ফেলানোর চেষ্টা করে। তারা এত ভালো ব্যবহার করে তুমি বুঝতেই পারবে না।আর একদিন তোমাকে ফাঁদে ফেলিয়ে সে তোমাকে ঠকিয়ে তোমার টাকা পয়সা ধন সম্পদ সবকিছু লুট করে নিয়ে যাবে। এদের মন মানসিকতা সব সময় ছোট থাকে। তুমি ওর জন্য অনেক করেছো কিন্তু আর নয়। তাই আমি চাই কাল থেকে তুমি ওই ছেলেটির সাথে আর মেলামেশা করবে না। এখন যাও খাওয়া-দাওয়া করে ঘুমিয়ে পড়ো।


এরপর থেকে লাবনী সৌরভের সাথে যোগাযোগ করা বন্ধ করে দেয়। সৌরভ কিছুদিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠে। সৌরভ সুস্থ হয়ে ওঠার পরে লাবনীকে ফোন দেয় কিন্তু লাবনীর ফোনটি অফ ছিল। সে কিছুই বুঝতে পারছিল না কারণ এমনটি কোনদিন হয়নি। তার কাছে লাবনীর কোন বন্ধুর নাম্বারও ছিল না তাই সে কিছুতেই জানতে পারছিল না লাবনীর কি হয়েছে। সৌরভ একদিন কলেজে আসে। সৌরভ কলেজে এসেই লাবনীর সাথে দেখা হয়। লাবনী তখন ক্লাস শেষ করে ক্যাম্পাসে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিল। সৌরভ কাছে এসেই লাবনীকে বলে।

সৌরভ: কি হয়েছে লাবনী তোমার? তোমার ফোন কেন বন্ধ? তুমি জানো কতবার তোমাকে আমি ফোন করেছি।আমার কাছে তো তোমার বন্ধুদের নাম্বারও নাই যে তাদের কাছে ফোন দিয়ে তোমার খবরটি জানতে পারবো।
লাবনী: আমার নাম্বার নষ্ট হয়ে গিয়েছে তার জন্য বন্ধ আছে।
সৌরভ: ও আচ্ছা। কিন্তু তুমি আমাকে হাসপাতালে কেন দেখতে এলে না?
লাবনী: সামনে পরীক্ষা পড়াশোনার চাপের কারণে তোমার সাথে দেখা করতে পারেনি।

সৌরভ: ও আচ্ছা ঠিক আছে।তোমার নতুন নাম্বারটি তো আমার কাছে নাই। নাম্বারটি দাও?
লাবনী: সৌরভ আমার মনে হয় আমাদের যোগাযোগটা একটু কম করা উচিত।
সৌরভ: কেন এই কথা বলছো?
লাবনী: কারণ সামনে তো পরীক্ষা আমাদের। তাই এখন যদি যোগাযোগটা কম করা হয় তাহলে আমাদের পড়াশোনার মনোযোগটা বাড়বে।
সৌরভ: আমি বুঝতে পারছি কিন্তু তার জন্য নাম্বার কেন দিতে পারবে না?
লাবনী: আমি চাই পরীক্ষার আগে আমরা যোগাযোগ করি। এতে তোমার ও পড়াশোনার প্রতি মনোযোগটা বাড়বে এবং আমার ও পড়াশোনার প্রতি মনোযোগটা বাড়বে। যার ফলে আমাদের পরীক্ষার ফলাফল ভালো হবে। পরীক্ষার পরে আমরা তো যোগাযোগ করতেই পারবো। তাই আমি চাই পরীক্ষার আগে তুমি আমার সাথে যোগাযোগ না করো।


সৌরভ বিষয়টি বুঝতে পারে আর সেখান থেকে সে চলে আসে। কিন্তু লাবনীর হঠাৎ করে এমন পরিবর্তন সে কিছুতেই মানতে পারছিল না। সে কিছুই বুঝতে পারছি না যে কেন লাবনী তার সাথে এমন ব্যবহার করছে। সৌরভ লাবনীকে এতটাই ভালবেসে ফেলেছিল যে লাবনীর কথা সে ফেলতে পারত না। সে শুধু নিজের মনটাকে এই বলে শান্তনা দিল যে লাবনী যেটা করছে সেটা তার ভালোর জন্যই হয়তো করছে। তাই সে যোগাযোগ না করে ভালোভাবে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করলো। কিন্তু সৌরভ জানতো না যে লাবনীর এই ব্যবহারের কারণ কি ছিল আর পরীক্ষার পর তার জন্য কি অপেক্ষা করছে।

আজ গল্পের পর্বটি এখানেই শেষ করছি। খুব শীঘ্রই 'তুমি যে আমার আলো'গল্পের আরো একটি নতুন পর্ব নিয়ে হাজির হব আপনাদের সবার মাঝে। সে পর্যন্ত আপনারা সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সৃষ্টিকর্তার কাছে এটাই প্রার্থনা করি।

Sort:  
 last month 

বেশিরভাগ রিলেশন গুলোতে এরকমটাই লক্ষ্য করা যায় ভাইয়া যে পরিবারের চাপের কারণে একটা মেয়ে তার ভালোবাসার মানুষটি কেও এড়িয়ে চলে। কিন্তু এদিকে প্রেমিক পুরুষ পাগলের মত মেয়েটাকে ভালোবেসে যায়। যাইহোক লাবনীর বাবা গরিবদের বিষয় যে বিষয়টি তুলে ধরেছেন আসলে সবার ক্ষেত্রেই ওরকম হয় না বা সবার মন মানসিকতা ওরকম হয় না। লাবনী হয়তোবা শুরুর দিকেই তাদের যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়াটা ঠিক করেছে তাদের ফ্যামিলি গত কারণে তার বাবার কথায়। কিন্তু আদৌ তো সেটা সৌরভ জানে না। পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম দেখা যাক তাদের ভালোবাসা কতদূর গড়ায়।

 last month 

আপনার সম্পূর্ণ গল্প পড়ে খুব ভালো লাগলো। কিন্তু আমার কাছে আপনার এই গল্পটি একটি ছায়াছবির কাহিনী মনে হচ্ছে। যা আমি দেখেছি আর মুভিটা খুব সুন্দর ছিল। এর আগের পর্বগুলো পড়া হয়নি তবে এই পর্ব পড়ে খুব ভালো লাগলো। ধন্যবাদ পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

 last month 

সৌরভ এবং লাবণী যেভাবে মিশেছে একে অপরের সাথে, এতে করে লাবণীর প্রতি সৌরভ দুর্বল হয়ে যাবে, এটাই স্বাভাবিক। হয়তোবা লাবণীও সৌরভকে মনের অজান্তে ভালোবাসতে শুরু করেছে, কিন্তু তার বাবার কথামতো সৌরভকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছে। তবে সৌরভের খুব খারাপ দিন অপেক্ষা করছে সামনে। যাইহোক পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম ভাই।

Coin Marketplace

STEEM 0.29
TRX 0.12
JST 0.034
BTC 62759.93
ETH 3112.27
USDT 1.00
SBD 3.87