"তুমি যে আমার আলো গল্প পর্ব:৩"

in আমার বাংলা ব্লগ3 months ago

হ্যালো বন্ধুরা,

আপনারা সবাই কেমন আছেন?আশা করি, আপনারা সবাই ভালো আছেন সুস্থ আছেন। আজ আমি আপনাদের মাঝে 'তুমি যে আমার আলো'গল্পের তৃতীয় পর্বটি উপস্থাপন করছি। আশা করি,আপনাদের সবার গল্পটি ভালো লাগবে তাই বিলম্ব না করে আমার পোস্ট লেখাটি শুরু করছি।

pexels-pixabay-371285.jpg
সোর্স



সৌরভ পরের দিন কলেজে যায় আগের মতই কলেজে এসে সবার লাস্ট বেঞ্চে বসে। ক্লাসে আসার পর সৌরভ ঘুমিয়ে পড়ে আবার এদিকে ক্লাস শুরু হয়ে যায়। ক্লাস চলাকালীন সময়ে সৌরভ ঘুমিয়ে ছিলো এই বিষয়টি কিছু ছেলে তাকে টিচারের বকা খাওয়ানোর জন্য টিচারকে বলে দেয়। টিচার এ বিষয়টি দেখতে পায় উনি দেখে সৌরভ ক্লাস চলাকালীন ঘুমিয়ে আছে। টিচার সৌরভের কাছে যে ডাক দেয় কিন্তু সৌরভ এতটাই ক্লান্ত ছিলো যে টিচারের ডাক সে শুনতে পারেনি। অবশেষে টিচার সৌরভকে ধাক্কা দিয়ে তার ঘুম ভাঙ্গায় আর ঘুম থেকে উঠেই টিচারকে দেখতে পেয়ে সৌরভ চমকে যায়। আর এই বিষয়টি ক্লাসের সব ছেলেমেয়েরা খুব মজার ভাবে নেয় সবাই হাসাহাসি করতে থাকে। টিচার সৌরভকে বলে তুমি ক্লাসে এসে কেনো এমন ভাবে ঘুমাচ্ছো? ক্লাস যদি তোমার ভালো না লাগে তাহলে তুমি ক্লাস থেকে বের হয়ে যেতে পারো। ক্লাসে এসে ঘুমানো যাবে না তুমি বেরিয়ে যাও। আর তুমি কি স্নান করো না।জামা প্যান্ট পরিষ্কার করো না। তোমার শরীর থেকে এত দুর্গন্ধ কেনো? তুমি আমার ক্লাস থেকে বেরিয়ে যাও আর কাল থেকে পরিষ্কার জামা প্যান্ট পড়ে আসবে আর স্নান করে আসবে। তুমি কি শুনতে পেরেছো আমার কথা যাও এক্ষুনি বের হয়ে যাও।


সৌরভ কোন কথা না বলে চুপচাপ বেরিয়ে আসে আর ক্লাসের প্রত্যেকটা ছাত্রছাত্রী হাসাহাসি করতে থাকে। আসলে সৌরভ আগের দিন রাত্রে সারারাত কাজ করেছিলো তার জন্য ক্লাসে আসার পর সে ঘুমিয়ে পড়ে। ক্লাস থেকে যখন সৌরভ বেরিয়ে যায় সাথে সাথে লাবনী ও বের হয়ে যায়। লাবনী দেখতে পায় সৌরভ ক্যাম্পাসের একটি জায়গায় বসে আছে। লাবনী সৌরভের কাছে যে বসে আর তাকে বলে।

লাবনী: সৌরভ আমাকে কি তুমি বলবে তোমার কি সমস্যা?
সৌরভ কিছুই বলে না শুধু মাথা নিচু করে বসে থাকে।
লাবনী আবারও তার কাছে জিজ্ঞাসা করে।
লাবনী: সৌরভ তুমি মনে কর আমি তোমার বন্ধু আর বন্ধুকে সব কথা বলা যায়।
সৌরভ তারপরেও কোন কথা বলে না চুপচাপ বসে থাকে। লাবনী যখন তার কাছ থেকে চলে যাচ্ছিল তখন লাবনীকে বলে শুনতে চাও আমার কথা।
লাবনী: হ্যাঁ শুনতে চাই যদি তুমি বলো।
সৌরভ: আমি খুবই গরীব আমার মা বাবা মারা গেছে অনেক দিন হয়েছে। মা বাবা মারা যাওয়ার পর আমি খুব একা হয়ে পড়ি। আমার এক মামা আমার পাশে এসে দাঁড়ায় সে আমাকে একটি গাড়ির গ্যারেজে কাজের সুযোগ করে দেয়। কোনমতে আমার দিনটি কেটে যায়। আমার খুব ইচ্ছা আমি বাবার স্বপ্ন পূরণ করব কিন্তু কিভাবে করব জানিনা। ঈশ্বর আমাকে মেধা দিয়েছে কিন্তু সম্পদ আমাকে দেয়নি। তুমি হয়তো দেখেছো আমি প্রতিদিনই একই জামা প্যান্ট পড়ে আসি। আমার শরীর থেকে ঘামের গন্ধ ছড়ায় আমি বুঝতে পারি। কিন্তু আমার কাছে এত টাকা নেই যে ভালো একটা জামা প্যান্ট কিনব। আমার হয়তো আর পড়াশোনা করা হবে না। কারণ একদিকে পেট চালাতে হলে আমাকে কাজ করতে হবে আর স্বপ্নটাকে পূরণ করতে হলে আমাকে পড়তে হবে।

কথাগুলো বলতে বলতে সৌরভ নিজের চোখের জল ধরে রাখতে পারে না। তখন লাবনী তার চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে বলে।

লাবনী: তুমি আমার সাথে চলো আমি তোমাকে জামা প্যান্ট কিনে দেবো। তুমি ভেবো না আমি তোমাকে করুণা করছি। তুমি আমাকে বন্ধু ভাবতে পারো। আর বন্ধু তো বন্ধুর পাশে দাঁড়াতেই পারে।

সৌরভ: আমার কিছুই লাগবে না। আমি যেমনটা আছি তেমনি থাকতে চাই।আমি খুব ভালো আছি। হয়তোবা আমার টাকা নেই কিন্তু তারপরেও আমি খুব ভালো আছি। আর তুমি বলছো তুমি আমার বন্ধু। এটা কখনো হয় না কারণ তোমার অনেক টাকা পয়সা আছে তোমার ভাই বন্ধু সবাই তোমার মতন। তুমি যখন তোমার ভাই বন্ধুর কাছে আমাকে নিয়ে যাবে। বন্ধু হিসেবে পরিচয় দিবে তখন তারা তোমাকেই অপমান করবে। আমি চাইনা আমার জন্য তুমি অপমানিত হও তোমার বন্ধুদের কাছে।

লাবনী: আমার বিষয়টা আমাকেই বুঝতে দাও তোমাকে এত কিছু ভাবতে হবে না তুমি আমার সাথে চলো এখন।

সৌরভ: কোথায়?

লাবনী: এখন আমরা মার্কেটে যাব আর তোমার কিছু জামা প্যান্ট কিনব। আমি চাইনা আমার বন্ধুকে আজ থেকে কেউ অপমান করুক।


কিছুতেই সৌরভ লাবনীর সাথে যেতে চাচ্ছিল না। তখন লাবনী সৌরভের হাতটি ধরে জোর করে তার গাড়িতে ওঠায় এবং তারা শপিংমলে যে সৌরভের জন্য জামা প্যান্ট কিনে। নতুন জামা প্যান্ট পড়ে যখন সৌরভ লাবনীর সামনে এসেছিলো লাবনী অবাক চোখে তাকিয়ে ছিলো সৌরভের দিকে। সৌরভ লাবনীকে বলে কি হয়েছে তুমি আমার দিকে এমন করে কেন তাকিয়ে আছো? লাবনী উত্তরে বলে আমি যে সৌরভকে আগে দেখেছি আজ তাকে অন্যরকম লাগছে। তুমি একবার আয়নার দিকে নিজেকে দেখো দেখবে তুমিও নিজেকে চিনতে পারবে না। তোমাকে এত সুন্দর লাগে আর তুমি সেই সৌন্দর্য টাকে লুকিয়ে রেখেছো এতদিন। কিন্তু আর না এই সৌন্দর্য আর তুমি লুকিয়ে রাখতে পারবে না। কাল তুমি নতুন জামা প্যান্ট পড়ে কলেজে যাবে সবাইকে অবাক করিয়ে দেবে। সৌরভ লাবনীর হাতটি ধরে বলে।কেনো করছ তুমি আমার জন্য এমনটা এত টাকা খরচ করার কি দরকার। লাবনী বলে আবার ও একই কথা বলেছে আজ থেকে আমি তোমার বন্ধু আর বন্ধুর বিপদে বন্ধুই এগিয়ে আসবে। আমি চাইনা যে আমার বন্ধুকে কেউ অপমান করুক।

আজ এখানেই গল্পটি শেষ করছি। পরবর্তী পর্বটি খুব শীঘ্রই আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করব। সেই পর্যন্ত আপনারা সবাই ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন সৃষ্টিকর্তার কাছে এটাই প্রার্থনা করি।

Sort:  
 3 months ago 

আপনার গল্পের সাথে তো সিনেমার গল্প একদমই মিলে গিয়েছে। একই গল্প নিয়ে শ্রাবন্তীর ইন্ডিয়ান মুভি রয়েছে। যাই হোক আপনার গল্প পড়ে খুব ভালো লাগলো। আপনি খুব সুন্দর ভাবে গুছিয়ে লেখার চেষ্টা করেছেন। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম। ধন্যবাদ।

 3 months ago 

লাবনী সৌরভের এই দুঃসময় তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে এবং কি তাকে নতুন জামা কাপড় কিনে দিয়েছে। এটা দেখে সত্যি অনেক বেশি ভালো লেগেছে। নতুন জামা কাপড় পড়ার পর নিশ্চয়ই সৌরভকে দেখতে অনেক বেশি সুন্দর লাগছিল। তাই তো লাবনী অবাক হয়ে সৌরভের দিকে তাকিয়ে ছিল এক দৃষ্টিতে। এখন দেখা যাক নতুন জামা কাপড় পরে কলেজে গেলে অন্যদের ইনফেকশন কি হয়। আশা করছি সৌরভ নিজের বাবার স্বপ্নটা পূরণ করতে পারবে তার মেধা কে কাজে লাগিয়ে। এই গল্পটার পরবর্তী পর্ব পড়ার অপেক্ষায় থাকলাম আমি।

 3 months ago 

খুব সুন্দর একটি গল্প শেয়ার করেছেন তো আপনি। সৌরভ এবং লাবনীর খুব সুন্দর কিছু মুহূর্ত আপনি এখানে ফুটিয়ে তুলেছেন। সৌরভ এতটাই গরীব ছিল যে প্রতিদিন সে একই জামা প্যান্ট পরে আসত। ছোটবেলায় তার মা বাবা মারা যাওয়ার কারণে তার কোন ধরনের সম্পদ হয়নি এবং তার মামার কাছে সে গ্যারেজে চাকরি করে এবং সেখান থেকে তার খরচ চালায়৷ লাবনী যখন এই কথাটি শুনে এবং সাহায্য করার চেষ্টা করে তখন সে না বলতে থাকে৷ আরো বলতে থাকে সে তাকে নতুন জামা কাপড় কিনে দিবে৷ লাবনী সৌরভকে খুব সুন্দর একটি কথা বলেছিল যে, বন্ধু বন্ধুর পাশে দাঁড়াবে, তা আমার অনেক বেশি পরিমাণে ভালো লেগেছে৷ পরবর্তী পর্ব দেখার আশায় রইলাম৷

 3 months ago 

গল্পটি পড়ে সৌরভের জন্য বেশ খারাপ লাগলো। কারণ সৌরভকে টিচার অপমান করে ক্লাস থেকে বের করে দিয়েছে। আসলে সমাজে চলতে গেলে পরিপাটি হয়ে চলতে হয়। নয়তো অপমান করার মানুষের অভাব হয় না। কিন্তু সৌরভের যেহেতু বাবা-মা ছিলো না এবং সৌরভ খুব গরীব,এই ব্যাপারে সৌরভেরও কিছু করার নেই। তবে লাবণী নামের মেয়েটা সৌরভকে সবদিক দিয়েই সাপোর্ট দিচ্ছে, এটা বেশ ভালো লেগেছে। এই গল্পের কাহিনী কলকাতার অমানুষ মুভির সাথে মিলে যাচ্ছে। অমানুষ মুভিতে শ্রাবন্তী এবং সোহম অভিনয় করেছিল। যাইহোক পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

Coin Marketplace

STEEM 0.28
TRX 0.11
JST 0.030
BTC 67296.35
ETH 3777.99
USDT 1.00
SBD 3.57