আমার ছোট ভাইয়ের প্রথম সঞ্চয়ের আনন্দ ও শিক্ষার মুহূর্ত।।

🥰.. আসসালামুয়ালাইকুম ...🥰

প্রিয় হিন্দু ভাই-বোনদের জন্য আদাব ও ভালোবাসা 💗🙏। আমার প্রিয় আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির সকল বন্ধুদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও স্নেহ। আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করছি, মহান আল্লাহর রহমতে এবং একে অপরের ভালোবাসায় আপনারা সবাই ভালো ও সুস্থ আছেন। আলহামদুলিল্লাহ, আমিও বেশ ভালো আছি।আমি আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির একজন সদস্য,এই প্ল্যাটফর্মের সাথে আমার যাত্রা প্রায় এক বছর ধরে। সত্যি বলতে, এখানে আসতে পেরে আমার মনে হচ্ছে ! যেন নিজের আর একটি নতুন পরিবার খুঁজে পেয়েছি। প্রতিটি লেখা, প্রতিটি মন্তব্য, প্রতিটি বন্ধুত্ব আমাকে দিয়েছে আনন্দ, ভালোবাসা এক নতুন অধ্যায়ের স্বাদ।আজকে আমি আপনাদের সাথে “আমার ছোট ভাইয়ের প্রথম সঞ্চয়ের, আনন্দ ও শিক্ষার মুহূর্তের গল্প শেয়ার করবো ।আশাকরি আপনাদের প্রত্যেকের অনেক অনেক ভালো লাগবে। চলুন এবার শুরু করা যাক।

ছোটবেলায় আমাদের জীবনের এক মধুর স্মৃতি হলো নিজের হাতে টাকা জমানো। তখন টাকার মূল্য এতটা বড় ছিল না। কিন্তু সেই টুকরো টুকরো সঞ্চয়ে ছিল এক অপার আনন্দ। আজ আমার ছোট ভাইয়ের সেই পুরনো অভ্যাসটা আবার চোখের সামনে ফিরে এনেছে। তার নিজের জমানো ছোট ‘তালা ব্যাংক’ খুলে দেখার সময়।যেন আমাকে অনেক বছর আগের স্মৃতিতে ফিরিয়ে নিয়ে গেল।যখন আমিও এমনই করে মাটির ব্যাংকে টাকা জমাতাম, ভাঙার দিনের অপেক্ষায়।

লাল রঙের তালার মতো দেখতে ছোট্ট একটি ব্যাংক দাম মাত্র দশ টাকা। বাইরে থেকে দেখলে বোঝার উপায় নেই ভেতরে কত মূল্যবান জিনিস লুকিয়ে আছে। টাকা নয়, সেখানে জমে আছে ভালোবাসা, পরিশ্রম আর ধৈর্যের গল্প। আমি নিজেই ভাইকে এই ব্যাংকটি কিনে দিয়েছিলাম। সে যখনই বাইরে যেত বা আত্মীয়দের কাছে যেত। কেউ না কেউ খুশি হয়ে কিছু টাকা দিত তাকে কিছু জিনিস পত্র বা খাবার খেতে। কিন্তু সে প্রায়ই টাকাগুলো কোথাও রেখে ভুলে যেত বা কখনো খরচ করতে গিয়ে হারিয়ে ফেলত। একদিন আমি তাকে বললাম তুমি চাও তো এই টাকাগুলো জমিয়ে রাখো। একদিন খুলে দেখলে অবাক হবে কত টাকা হয়েছে। কথাটা শুনে সে খুব খুশি হয়ে গেল, আর আমাকেই বলল তার জন্য একটা ছোট্ট ব্যাংক এনে দিতে।

আমি প্রথমে চেয়েছিলাম মাটির ব্যাংক কিনব।যেমনটা আমরা ছোটবেলায় ব্যবহার করতাম। কিন্তু এখন মাটির ব্যাংক খুবই বিরল। মেলায় গেলে মাঝে মাঝে দেখা যায়। কিন্তু দোকানে তেমন পাওয়া যায় না। তাই তাকে এনে দিলাম একটি লাল রঙের তালার মতো প্লাস্টিক ব্যাংক। সে সেটি দেখে ভীষণ খুশি হলো এবং প্রতিদিন সামান্য সামান্য করে টাকা ঢোকাতে শুরু করল। বাবা-মা, মামা, নানি, চাচা, চাচি, কিংবা কোনো অতিথি যেই টাকাই দিক না কেন সে আনন্দের সঙ্গে তার ব্যাংকে জমিয়ে রাখত।দিন যায়, মাস যায়, বছরও গড়িয়ে যায়। তারপর গতকাল সে এসে আমাকে বলল ,আপু ব্যাংকটা খুলবো। টাকাগুলো আর ঢুকছে না। আমি দেখলাম ব্যাংকটা একেবারে ভরে গেছে। ছোট্ট হাত দিয়ে যখন সে ব্যাংক খুলে টাকাগুলো বের করতে লাগল। তার চোখে-মুখে যে আনন্দ , তা ভাষায় প্রকাশ করার নয়। বিছানার ওপর ঢেলে দিল নানা রঙের নতুন নতুন নোট । দুই থেকে শুরু করে পাঁচ, দশ, বিশ, পঞ্চাশ, এমনকি একশ দুইশত টাকারও কয়েকটা নোট ছিল সেখানে। সবগুলো গুনে রাখার পর সে গর্বের সঙ্গে হাসতে লাগল। যেন নিজের হাতে কোনো বড় সম্পদ অর্জন করেছে।

এই দৃশ্য দেখে আমার নিজের ছোটবেলার কথা মনে পড়ল। তখন মাটির ব্যাংকে টাকা ঢোকালে আর বের করা যেত না।ভাঙা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতো। ঈদ বা পয়লা বৈশাখের দিন ভেঙে যখন সেই টাকা বের করতাম, তখন মনে হতো পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ধন আমার হাতেই আছে। সেই ছোট্ট ছোট্ট স্বপ্নগুলোই ছিল জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান মুহূর্ত।আজকের শিশুরা প্রযুক্তি আর আরামের জগতে বড় হচ্ছে। কিন্তু তবুও এই সঞ্চয়ের অভ্যাসটি এখনো গুরুত্বপূর্ণ। এটি শেখায় ধৈর্য, পরিকল্পনা, এবং নিজের পরিশ্রমের মূল্য বুঝতে। আমার ভাইয়ের এই অভ্যাস দেখে বুঝলাম।ভালো শিক্ষা কখনো বৃথা যায় না। সামান্য উৎসাহই একজন শিশুকে দায়িত্বশীল ও সচেতন হতে সাহায্য করতে পারে।

সে যখন টাকাগুলো সাজাচ্ছিল, আমি দেখছিলাম তার চোখে এক ধরনের পরিপূর্ণতার আলো। সে জানে এই টাকাগুলো দিয়ে হয়তো কিছু প্রিয় জিনিস কিনতে পারবে। কিন্তু এর চেয়েও বড় যে আনন্দ তা হলো নিজের সঞ্চিত অর্থের প্রতি ভালোবাসা। আম্মু আমি তাকে টাকা গুলো গুছিয়ে দিতে সাহায্য করছি।ছবিগুলো দেখলে বোঝা যায়, কীভাবে সে ধৈর্যের সঙ্গে এক এক করে টাকাগুলো গুনছে সাজিয়ে রাখছে। প্রতিটি নোট যেন বলে দিচ্ছে একেকটি ছোট্ট গল্প আনন্দ প্রাপ্তি আর ভালোবাসার গল্প।

এই লাল তালা ব্যাংক শুধু কিছু টাকার বাক্স নয়, বরং এটি এক মূল্যবান শিক্ষা। যে ছোটবেলা থেকেই অল্পতে সঞ্চয় করতে শেখে। সে বড় হয়ে অনেক কিছু অর্জন করার ক্ষমতা রাখে। ছোট শিশুদের যদি অল্প বয়স থেকেই সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তোলা যায়।তবে তারা ভবিষ্যতে হবে আরও সচেতন, দায়িত্বশীল এবং আত্মনির্ভরশীল। তাই আমি মনে করি, প্রতিটি শিশুরই এমন একটি ব্যাংক থাকা উচিত।যা শুধু টাকা রাখার মাধ্যম নয়, বরং স্বপ্ন দেখা। ধৈর্য ধরার এবং নিজের সাফল্য গড়ে তোলার প্রথম পদক্ষেপ।

এই ছিল আজকের ব্লগ । আশা করি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে।কার কাছে কেমন লেগেছে তা অবশ্যই কমেন্টের মন্তব্য করে জানাবেন। কোন ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আজকের মত বিদায় নিচ্ছি, আবার নতুন কিছু নিয়ে হাজির হবো আপনাদের মাঝে।সেই পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন এবং সবার জন্য অনেক শুভকামনা রইল ।

আমার নাম মোছাঃ সামছুন্ নাহার সুইটি । আমি একজন বাংলাদেশী মুসলিম নাগরিক । আমি আমার মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলতে ভালোবাসি। আমার বাড়ি বাংলাদেশের রংপুর জেলার বদরগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। আমি অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ালেখা করি । আমি পড়ালেখা করার পাশাপাশি স্টিমিট প্লাটফর্মে কাজ করার জন্য যুক্ত হয়েছি । আমি গত ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে এই প্লাটফর্মের মধ্যে যুক্ত হই । এই প্লাটফর্মের মধ্যে যুক্ত হতে পেরে নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে করি ।আমি ভ্রমণ করতে অনেক বেশি পছন্দ করি।সেই সাথে নতুন নতুন ফটোগ্রাফি করতে ও ইউনিক রেসিপি এবং নতুন নতুন ইউনিক ডাই তৈরি করতে বেশ পছন্দ করি । আর স্টিমিট প্ল্যাটফর্মকে আঁকড়ে ধরে ভবিষ্যতে আরো এগিয়ে যেতে চাই, এটাই আমার লক্ষ্য।