দীর্ঘদিন পর বাল্যবন্ধুর বাড়িতে
যখন সদ্য কলেজ অতিক্রম করেছিলাম, সেসময় গিয়েছিলাম প্রিন্সের বাড়িতে। তারপর থেকে আর কোনভাবেই ওর বাড়িতে যাওয়া কিংবা দেখা করার সুযোগ হয়েই ওঠেনি। হবেই বা কি করে বলুন, মেডিকেল প্রফেশন নিয়ে এমন ভাবে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম, যেন দম ফেলানোর ফুসরত পাচ্ছিলাম না।
কত গভীর সম্পর্কগুলো যে সেসময় হালকা হয়ে গিয়েছিল ব্যস্ততার তাগিদে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। জীবনটাকে বন্দী করে ফেলেছিলাম চার দেয়ালের ভিতরে, শুধু চেম্বার আর হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করতেই যেন অনেকটা বছর কাটিয়ে দিয়েছিলাম। এখন যেমন বাস্তব জীবনের কর্ম মোটামুটি সব ছেড়ে দিয়েছি, তাও যে খুব একটা সময় পাচ্ছি তেমনটা না। ব্যস্ততা লেগেই আছে, তবে কাজের ধরনটা শুধু বদলেছে।
গ্রামে থাকাকালীন সময়েই প্রিন্সের সাথে যোগাযোগ করে নিয়েছিলাম, বলতে গেলে অনেকটা ইচ্ছে করেই। কেননা মাঝে দীর্ঘ কয়েক বছর কেটে গিয়েছিল, তাই একপ্রকার ওর সঙ্গে দেখা করার জন্য ব্যাকুল হয়ে গিয়েছিলাম। ও অবশ্য আমাকে আশ্বস্ত করেছিল দেখা করার বিষয়ে।
যেহেতু পরিবারের একমাত্র পুত্র সন্তান ও, তাই বলা যায় পুরো পরিবারের সমস্ত দায়িত্ব ওর কাঁধে। তাছাড়াও ওর বাবা-মার বড্ড বয়স হয়ে গিয়েছে। আঙ্কেল তো স্ট্রোক করে বহু আগে থেকেই শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছে। তাই সবদিক বিবেচনা করে, ও আর চাকরির দিকে এগিয়ে যায়নি। বাড়িতেই চেষ্টা করছে কিছু করার জন্য। বলতে গেলে ও এখন পুরাদস্তর সংসারী হয়ে গিয়েছে।
ওরো একটা আমার মত বাবু হয়েছে, সেদিন যখন দুপুরবেলা ওদের বাড়িতে গিয়ে পৌঁছেছিলাম, তারপরে আমার বাবু বেশ খুশি হয়ে গিয়েছিল ওর বাবুকে কাছে পেয়ে। তাছাড়া ওদের বাড়িটা বেশ বড়, বাবু যেন স্বাধীন মনে এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করছিল আর খেলছিল নিজের মত করে।
আমি মূলত দীর্ঘদিন পরে বাল্যবন্ধুকে কাছে পেয়ে বেশ ভালই গল্প গুজবে মেতে উঠেছিলাম আর হীরা ওদিকে চেষ্টা করছিল ভাবীর সঙ্গে টুকটাক আলাপচারিতা করার জন্য। একটা জিনিস খেয়াল করলাম, মুহূর্তেই দেখি হীরা আর ভাবীর মাঝে সেই রকম ভাবের আদান-প্রদান হয়ে গেল। ওরা এমন ভাবে গল্প করছিল, যেন দুজন-দুজনের মাঝে বহুদিনের পুরনো পরিচয় ছিল।
ওদের বাড়িতে উপস্থিত হওয়ার পর থেকে , বেশ ভালো রকমের খাবার আয়োজন করেছিল ওরা । এমনিতেই দুপুর হয়ে গিয়েছিল, তার ভিতরে প্রচন্ড ক্ষুধার্ত ছিলাম আমি । আর চোখের সামনে এতসব লোভনীয় খাবার দেখে, নিজেকে সামলানো যেন কিছুটা কষ্টকর হয়ে গিয়েছিল। বড্ড তৃপ্তি সহকারে খেয়েছিলাম ভাবীর হাতের বানানো খাবার গুলো।
অতঃপর খাওয়া-দাওয়ার পর্ব শেষ করার পরে, চেষ্টা করেছিলাম ওদের বাড়ির সকলের খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য। বিশেষ করে ওর বাবার, ভদ্রলোকের শরীরটা অনেকটাই দুর্বল হয়ে গিয়েছে। এই বুড়ো বয়সে এসে, শারীরিক জটিলতা তাকে বেশ ভোগাচ্ছে। যদিও তার অবস্থা দেখে কষ্ট পেয়েছিলাম, তবে সান্ত্বনা দেওয়া ছাড়া তো আর কিছুই করার নেই।
অবশেষে বিদায় পর্ব, আসার সময় বন্ধুকে কাছে ডেকে অনুরোধ করে আসলাম, যদি সময় হয় তাহলে বউ-বাচ্চা নিয়ে একদিন ঘুরতে আসিস আমার বাড়িতে, আমি বড্ড কৃতজ্ঞ থাকবো।
ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
VOTE @bangla.witness as witness
OR
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
সময়ের সাথে সাথে বাল্যকালের বন্ধুগুলো সঙ্গে যোগাযোগ যেন বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সবার ক্ষেত্রেই এরকম হয়। দেখা যায় পরবর্তীতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন লোকজনের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে ওঠে কিন্তু বাল্যবন্ধুদের সঙ্গে অন্য রকম একটা টান থেকে যায়। বেশ ভালোই খাওয়া দেওয়ার আয়োজন করেছে দেখছি। তাছাড়া আম গাছ এ খুব সুন্দর আম ধরেছে। অনেকদিন পর সবাই মিলে বেশ ভালো সময় কাটিয়েছেন বোঝা যাচ্ছে। ভালো লাগলো দেখে।
এটা একদম সত্য কথা আপু, সময়টা সেদিন আমার বেশ দারুণ কেটেছিল। মনে হয়েছিল, মুহূর্তেই যেন শৈশবে ফিরে গিয়েছি।
আপনার বন্ধুর বাবার সুস্থতা কামনা করছি প্রথমেই। আমরা এখন আসলেই বাল্যকালের অনেক বন্ধুকে হারিয়ে ফেলেছি কত বছর থেকে যে তাদের সাথে যোগাযোগ নেই সেটা বলা মুশকিল। কর্মের তাগিদে সবাই সবার নিজ স্থানে অবস্থানরত আছে। কিন্তু আজকে আপনার পোস্ট দেখে মনের মধ্যে সেই বাল্যকালের বন্ধুগুলোর সাথে ঘোরাঘুরি করার বেশ কিছু স্মৃতি মনে পড়ে গেল। মনটা যেন মলিন হয়ে গেল। ভাবছি এরকমভাবে বন্ধুদের সাথে একটু সময় বের করে দেখা করতে হবে। যাই হোক আপনি আপনার বাল্যকালের বন্ধুর সাথে তথা প্রিন্সের সাথে দেখা করতে পেরেছেন এবং তার অনুভূতি শেয়ার করেছেন আমাদের মাঝে এটা অনেক বেশি ভালো লাগলো ভাইয়া। ধন্যবাদ।
সময় পেলে বাল্য বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করে নিয়েন, বেশ ভালো রকম অনুভূতি সৃষ্টি হবে নিজের ভিতরে ভাই।
ছোটবেলার বন্ধুরা এভাবে বাস্তবতার কাছে হেরে গিয়ে বন্ধুত্ব থেকে আলাদা হয়ে যায় তবে তাদের সম্পর্ক কখনো ছিন্ন হয় না। এই পোস্টটি পড়ে এটাই ভালো হয়ে বুঝতে পারলাম, অনেক চমৎকার একটি সময় অতিবাহিত করেছেন ভাই, আপনার অসংখ্য ধন্যবাদ।
সম্পর্ক ছিন্ন হয় না এটা ঠিক, তবে দূরত্ব অনেক বেড়ে যায় ভাই। তবে এটা সত্য, সেদিন বেশ ভালো সময় কাটিয়েছিলাম।
দিন যতই যাচ্ছে তাতে যেন আমরা ব্যস্ততার চাপে পড়ে যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছি। আর তাইতো বন্ধুবান্ধব আত্মীয়-স্বজনের মধুর সম্পর্ক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছি। বন্ধুদের সাথে কাটানো সেই পুরনো স্মৃতিগুলো মনে পড়লে বুকের ভেতরে মোচড় দিয়ে ওঠে। যাইহোক ভাইয়া, দীর্ঘদিন পর বাল্যবন্ধুর বাড়িতে খুব সুন্দর সময় কাটিয়েছেন, এতে করে নতুন করে আবারো বন্ধুত্বের নিবিড় সম্পর্কের পুনরাবৃত্তি ঘটেছে দেখে খুবই ভালো লাগলো। বাল্যবন্ধুর সাথে কাটানো সময়টুকু আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি ভাইয়া।
দীর্ঘদিন পরে ওর সঙ্গে দেখা হয়ে, বেশ ভালোই কথোপকথন হয়েছিল, তবে আপনি যেটা বলেছেন সেটা একদম সত্য, বাস্তবতা সবকিছুকে বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে।
ছোটবেলার বন্ধুত্বটাই আসলে থাকে ভাই। আপনাদের দুজনের ভেতরে হয়তো অনেক টান ছিল এই জন্য এত বছর পরেও আপনাদের দেখা হয়েছে এবং একসাথে সুন্দর সময় কাটিয়েছেন, খাওয়া-দাওয়া করেছেন। যাইহোক পোস্ট পড়ে এটাই বুঝতে পারলাম যে, অনেক দিন পর দেখা হলেও আপনারা সকলেই খুব খুশি ছিলেন। এভাবেই আপনাদের বন্ধুত্ব টিকে থাকুক এই কামনা করি ।
এটা সত্য, আমি বেশ ভালই খুশি ছিলাম এবং সময়টাও বেশ ভালো কেটেছিল।
জীবন জীবিকার তাগিদে আমরা এতটাই ব্যস্ত থাকি যে, ছোটবেলার বন্ধুদের সাথেও দেখা করার সময় হয়ে উঠে না। কিন্তু একসময় ছোটবেলার বন্ধু বান্ধবদের সাথে কতো সময় কাটাতাম। যাইহোক দীর্ঘদিন পর বাল্যবন্ধুর বাড়িতে গিয়ে সবার সাথে বেশ ভালো সময় কাটিয়েছেন ভাই। বাড়িতে আম এবং খেজুর গাছ রয়েছে, এটা দেখে খুব ভালো লাগলো। যাইহোক এতো সুন্দর মুহূর্ত আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
সময়ের সাথে সাথে আসলে আমাদের অনেক বন্ধু-বান্ধব হারিয়ে যায়। তবে দাদা আপনি যে, এত ব্যস্ততার মাঝেও আপনার বাল্যকালের বন্ধু প্রিন্সের সাথে দেখা করতে ভুল করেননি, এটা তো খুবই ভালো কথা দাদা। যাইহোক, সেখানে গিয়ে এত কিছু খাওয়া-দাওয়া করেছেন, সেটা দেখেও খুব ভালো লাগছে।