ভাজাপোড়া অভিজান
মানুষ মাত্রই স্বাস্থ্য সচেতন। চরম বেখেয়ালী মানুষ ও ঘুমানোর আগে ভাবে নাহ্! কাল থেকে একটু স্বাস্থকর জীবন যাপন করা লাগবে।সকাল বেলা উঠতে হবে,একটু হাটতে যেতে হবে। তারপর ঘুমানোর পর যখন সকাল হয়,তখন সকাল বেলার মিষ্টি ঘুম ভেঙ্গে আর ওঠা হয়না,হাটতেও যাওয়া হয়নি।
আমিও অবশ্য এই দলেই ছিলাম। কিন্তু আস্তে আস্তে সত্যই স্বাস্থ্য সচেতন হই। সকালে হাটতে যাই, বাইরের খাবার খাইনা। কারন এক তেল বার বার ব্যবহার করতে করতে এমন অবস্থা করে ফেলে যা খেলে কোলেস্টেরল বেড়ে যাবে।
কিন্তু সব সময় তো আর সব নিয়ম চলে না। গত বৃহস্পতিবার আমার বন্ধু শিমুল ঢাকা থেকে ১৫দিনের ছুটিতে এসেছে। এখন বন্ধু ছুটিতে আসলে দেখা তো করাই লাগবে।দেখা করলাম টিউশন শেষে।
গল্প স্বল্প করলাম অনেকক্ষণ, কিন্তু খালি মুখে কি আর গল্প জমে? শিমুল কে বললাম কি খাবি বল? ও বলল চল একটু ভাজা পোড়া খাওয়া যাক। আমি প্রথমেই প্রতিবাদ করলাম।বললাম আমি ভাজা পোড়া খাওয়া বাদ দিয়েছি, অন্য কিছু খেলে বল।ভাজা পোড়া যারা বোঝেন না তাদের বলি পেয়াজু,চপ,বেগুনী এগুলোকে ভাজপোড়া বলে আমার এলাকায়।
কিন্তু বন্ধু আমার ভাজাপোড়াই খাবে। আমিও নাছোড় বান্দা,ভাজা পোড়া মোটেই খাওয়াবো না।স্বাস্থ্য নিয়ে খানিক জ্ঞান দিলাম।বন্ধু একটি রোগা হওয়ায় ভাজা পোড়াকেই চার্জ করলাম ওর এই অবস্থার জন্য।তাই বললাম,আমি নিজেও খাবো না আর তোর ও খাওয়া উচিৎ নয়।
আমার জ্ঞানগর্ভ ভাষণে বিরক্ত হয়ে বন্ধু বলল,"যা তোর খাওয়াতে হবে না,আমিই তোকে খাওয়াচ্ছি।এবার পরে গেলাম উভয় সঙ্কটে।প্রবাদ আছে,"বাঙালি ফ্রি পেলে আলকাতরা খায়"।এদিকে আমি যদি সামান্য ভাজাপোড়া খেতে না পারি তাইলে মানুষ আমার বাঙালিআনা নিয়ে সন্দেহ করবে।আবার এমন জ্ঞানগর্ভ ভাষণের পর যদি ভাজা পোড়া খাই তবে তা সম্মানে আটকায়।
বেশ কিছুটা ভাবার পর সিদ্ধান্ত নিলাম,সম্মান গেলে যাক।কিন্তু নিজের বাঙালিয়ানার উপর কোন সন্দেহ আনতে দেওয়া যাবে না।আর বন্ধুর কাছে কিসের সম্মান,কিসের কি।সব বিসর্জন দিয়ে বললাম, "ঠিক আছে তুই যখন এত জোড় করতেছিস তখন ভাজাপোড়াই সই।
রাজনীতীবিদদের থেকেও আমাকে দ্রুত পল্টি নিতে দেখে বন্ধু প্রথমে বেশ খানিকটা অবাক হয়,তারপর রাজনীতীতে আমার ভবিষ্যত উজ্জ্বল এই মহামূল্যবান উপদেশ দিয়ে রওনা হলো।আমাদের এখানে গরুহাটি বলে একটি জায়গা আছে।এখানে রবি আর বৃহস্পতিবার বিকেলবেলা গরু বেচাকেনা হয়। আর সপ্তাহে সাতদিনই সন্ধ্যার পরে জমে ভাজাপোড়ার বিশাল হাট।ইন্ডিয়ার মমতা পিসির চপ শীল্পের বাংলাদেশী শাখা বলা যেতে পারে।
এখন শীতের দিন সেখানে ভাজাপোড়ার সাথে বিস্তর পিঠার দোকান ও যুক্ত হয়েছে।তাই ভাজা পোড়া খেতে গেলে সেখানেই যেতে হবে।অচিরেই পৌছে গেলাম। আহ পোড়া তেলের গন্ধে চারদিক ম ম করছে। বন্ধু তো সাথে সাথেই ঝাপিয়ে পড়েছে পেয়াজুর উপর। তবে পল্টি যতই নেই,আমার কিন্তু মোটেই রুচি আসছিল না।
আমি স্টিমের জন্য ছবি তুলতে শুরু করলাম। আমার ছবি তোলা দেখে দোকানদার বলল," কাকা ভাল করে ছবি তুলে নিয়ে ফেসবুকে দিও,আর আমারো একটা ছবি দিও সাথে।কাকার কথা শুনে আমিও কাকার ছবি তুলে নিলাম।কাকা একটা ইচ্ছা করেছে,ভাইপো হয়ে যদি তা পূরণ না করি তবে কি ভাল দেখায়? তুলে নিলাম কাকার ছবি।
এরপর শিমুল একা খাচ্ছে,আমি খাচ্ছি না।বিষয়টা শিমুল মানতে পারল না,জোর জবরদস্তি করে আমার বাঙালিত্বের উপর সন্দেহ প্রকাশ করে জোর করে যখন হাল ছেড়ে দেব সে মুহুর্তে রাজি হয়ে গেলাম।এত ভাল টাইমিং স্বয়ং শচীন টেন্ডুলকার এর ও ছিল কিনা সন্দেহ।খালি একটা ঝাল পুলি পিঠা খেলাম।শিমুল অবশ্য বেশ খানিকক্ষণ চালিয়ে গেল।তারপর শিমুল বিল মিটিয়ে দিল,বিল আমিই দিব ভেবেছিলাম।কিন্তু বন্ধু মন খারাপ করবে ভেবে দেইনি।এরপর দুজন মিলে চলে আসলাম।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Twitter link
তেলে ভাজা খাবার গুলো খেতে সবাই কমবেশি পছন্দ করে। আর আপনি তো দেখছি খুব লোভনীয় সব খাবারের ছবিগুলো তুলে ধরেছেন। দেখেই তো খেতে ইচ্ছে করছে ভাইয়া। এই খাবারগুলো সবাই ভীষণ পছন্দ করে। আর খেতেও ভালো লাগে।
আপনার ভাজাপোড়া অভিজান পোস্ট পড়ে খুবই ভালো লাগলো।যেহেতু আপনি ভাজাপোড়া খাবেন আর সে ভাজাপোড়াই খাবে।আসলে আমার কাছেও কিন্তু ভাজাপোড়া খাবার গুলো বেশি ভালো লাগে। যদিও সেটা শরীরের জন্য ভালো না।যাইহোক পোস্ট টি পড়ে দারুণ লাগলো। ধন্যবাদ আপনাকে পোস্ট টি শেয়ার করার জন্য।
ধন্যবাদ ভাইয়া পোস্টটি পড়ে সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।
স্বাস্থ্য সচেতন হওয়া ভালো তবে মাঝে মাঝে এরকম ফ্রি-তে অফার পেলে অল্প স্বল্প খেলে খুব একটা ক্ষতি হয় না।😃বন্ধুর সাথে আড্ডা সাথে লোভনীয় খাবার সবমিলিয়ে অসাধারণ মুহূর্ত কাটিয়েছো তা দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
তা ঠিক বলেছেন কাকিমা।কিন্তু এখন কেন জানি বাড়ির খাবার ছাড়া খেতে ইচ্ছা করে না।ধন্যবাদ কাকিমা সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।