স্মৃতির পাতা থেকে জলপাই আলুর গল্প

in আমার বাংলা ব্লগlast month


আসসালামু আলাইকুম



হাই বন্ধুরা!

আমার গল্পের রাজ্যে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগতম। পূর্বসপ্তার ন্যায় আজকে উপস্থিত হয়ে গেলাম সুন্দর একটি গল্প নিয়ে। যে গল্পের মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন আমার জীবনে কোন একটা লুকিয়ে থাকা ঘটনা। একজনের জানা ঘটনা অন্য জনের মাঝে ব্যক্ত করার মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয় অজানা তথ্য। ঠিক তেমনি সুন্দর একটি গল্প নিয়ে উপস্থিত হয়েছি আজ। আশা করি স্মৃতিচারণ মূলক এই গল্প আপনাদের অনেক অনেক ভালো লাগবে। তাই চলুন আর দেরি না করে গল্পটা পড়ি এবং গল্প পড়ার আনন্দ উপভোগ করি।



IMG_20240124_151254_700.jpg

জলপাই আলুর গল্প:



তখন আমি অনেক ছোট। ক্লাস টু অথবা থ্রিতে পড়ি। আমরা দুই ভাই পাড়ার অন্যান্য মানুষদের সাথে ছাগলের ঘাস কাটার জন্য উপস্থিত হয়েছিলাম গমের মাঠে। শীতে গম বুনা হয়, অতঃপর পেকে যায়। আর সেই গমের মাঠে জমির আইলের উপর অনেক সুন্দর ঘাস হয়ে থাকে। এ সমস্ত ঘাসগুলো ছাগলে খুব ভালো খাই। আগে আমাদের মাঠগুলোতে অনেক গম হত। আর সে সমস্ত জায়গায় ছাগলের ঘাস কাটার জন্য অনেক মানুষ উপস্থিত হত। যাইহোক এমন একদিন আমরা গমের মাঠে উপস্থিত হলাম। আমার ছোট আব্বার বাড়িটা আমাদের পাড়ার একদম শেষ মাথায়, রাস্তার পাশে হলেও মাঠের নিকটে, তার বাড়ির আশেপাশে অনেক গমের জমি ছিল। আমার ছোট আব্বার বাড়ির বেড়ার পাশে অচেনা কিছু ফল দেখতে পারলাম অর্থাৎ জলপাইয়ের ফল। আমি হঠাৎ প্রথম এমন জিনিস দেখে এটা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করছিলাম। বুঝতে পারছেন ছোটরা নতুন কিছু দেখলে সেটা সম্পর্কে জানার আগ্রহ বেশি দেখায়। ঠিক আমি তেমনি আমাদের পাশে যারা বড় ছিল তাদের কাছে বারবার প্রশ্ন করছিলাম গাছে ঝুলছে ওগুলা কি। জলপাই আলু আমরা চিনে থাকি। মাটির নিচে হয়ে থাকে সাদা সুমিষ্ট আলু, যেগুলো আমরা শীতের মধ্যে বাজারে পেয়ে থাকি। ফটোতে দেখতে পাচ্ছেন এটা জলপাই আলুর ফল। আমাদের পাড়ার এক আঙ্কেল আমাদের সাথে সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তখন উনি আমাকে স্নেহের সাথে খুব সুন্দর করে বললেন বাবু এটা জলপাই আলুর ফল। এরপর আরো সুন্দর করে বুঝিয়ে বললেন কিভাবে রোপণ করতে হয়, গাছের নিচে জলপাই আলু হয় ইত্যাদি। কথাটা শুনে আমি খুব আশ্চর্য হলাম আর এই ফল পাওয়ার আশা করলাম।


IMG_20240124_151112_708.jpg



আমি একদম ছোট থেকে কেন জানি গাছ লাগানো, সবজি লাগানোর প্রতি বেশি আসক্ত। আর তার সূচনা কাল কিন্তু এই জলপাই আলুর বীজ লাগানোর সময় থেকে। আঙ্কেলের কথা শোনার পর ছাগলের ঘাস কাটা শেষে আমার ভাই বেশ কিছু জলপাই আলুর বীজ সংরক্ষণ করলো। সেখানে অনেক ফল ছিল গাছে ঝুলছে। তার মধ্য থেকে এমন কয়েকটা ফল সে পেড়ে নিলো। আমার মনে আছে আমি কয় একটা ছুড়ানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু এই ফলের গায়ে, লতার গায়ে হুল ছিল। গাছের লতা হাতে ঠেকা মাত্র চুলকাতে শুরু করল। যাইহোক সেই ফল বাড়িতে আনা হয়েছিল। এরপর দীর্ঘ অপেক্ষা করে আমাদের বাড়ির পাঁচিল এর কোলে মাটির উপর বালি পাড়া মত ছিল। আমি আর আমার ভাই সেই জায়গায় এই জলপাই আলুর বীজ লাগিয়ে দিয়েছিলাম। এরপর যত্ন নিতে থাকলাম। বেশ গাছের চারা হতে থাকলো।


IMG_20240124_151316_286.jpg



এরপর সেই জায়গায় এমন ভাবে জলপাই আলুর গাছ বেঁধে গেল আমরা তো মহা আনন্দিত হতে থাকলাম দুই ভাই। আমাদের সব সময় মনে হতো যে আমরা বীজ লাগিয়েছি আর এমন গাছ হয়েছে। এরপর দীর্ঘদিন অপেক্ষা করে পরবর্তী শীতের সময় গাছ যখন মারা যাওয়ার মতো হলো, তখন পাড়ার অনেকেই আমাদের বাড়িতে আসা-যাওয়া করতো। তারা দেখে বলতো জলপাই আলু তোলা হয়েছে নিচ থেকে। এখন তুললে পারে আলু পাওয়া যাবে ইত্যাদি। তাই একদিন আমি আর ভাই একটা মাটি খোঁড়া খুন্তি হাতে, ওই জায়গার পাঁচটা গাছের মধ্যে একটি গাছের গোড়ার বালি খুঁড়তে থাকলাম। এরপর আমরা তো অবাক হলাম। যত বালি হেটাতে থাকি, ততোই জলপাই আলুর সাদা অংশ বের হতে থাকে। এভাবে বালি হেটাতে হেটাতে একটি গাছের গোড়া থেকে তিনটি জলপাই আলু পেয়েছিলাম। তিনটার ওজন কমসেকম দুই থেকে আড়াই কেজি। এমন আলু দেখে বাড়ির মানুষসহ পাড়ার যারা উপস্থিত ছিল তারাও আশ্চর্য হয়েছিল। সবাই একটা কথাই বলেছিল এখানে বালির মধ্যে লাগানো হয়েছে তাই মোটা হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। হয়তো সেই সময়ের এই বিষয়গুলো আমার গাছ লাগাতে অথবা শাকসবজি উৎপাদন করার উৎসাহ বা অনুপ্রেরণা। এরপর টিউবওয়েল এর পানিতে জলপাই আলু তিনটা ধুয়ে, পরিবারের সবার মাঝে কেটে দিয়েছিল বড় ভাই। সত্যি অনেক সুস্বাদু ছিল। আর এরপর থেকে এখনো চেষ্টা করি জলপাই আলু চাষ করতে। এখনো আমাদের পুকুরপাড়ে জলপাই আলু রয়েছে। প্রত্যেক বছর শীতে কম বেশি তুলে খাওয়া হয়।


IMG_20240124_151241_977.jpg


গল্পটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

received_434859771523295.gif

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
ফটোগ্রাফিজলপাই আলুর ফল
ফটোগ্রাফি ডিভাইসInfinix Hot 11s
লোকেশনজুগীরগোফা
বিষয়অতীত ঘটনা
ঠিকানাগাংনী-মেহেরপুর, বাংলাদেশ


পুনরায় ফিরে আসবো নতুন কোন গল্প নিয়ে। ততক্ষণ ভালো থাকুন সবাই, সবার জন্য শুভকামনা রইল। আল্লাহ হাফেজ।

TZjG7hXReeVoAvXt2X6pMxYAb3q65xMju8wryWxKrsghkLbdtHEKTgRBCYd7pi9pJd6nDf4ZPaJpEx3WAqvFVny2ozAtrhFXaDMnAMUAqtLhNESRQveVFZ7XHcED6WEQD48QkCkVTAvNg6.png

Sort:  
 last month 

জলটাই আলু নামটা প্রথমবার শুনলাম ভাইয়া। তবে আপনার গাছ লাগানোর অনূভুতি পড়ে খুব ভালো লাগলো।এই জলপাই আলুর ফল গুলো দেখতে কিছুটা কাঁচা তেঁতুল এর মতো।তবে জলপাই আলু দেখতে পেলে আরও ভালো লাগতো। ধন্যবাদ ভাইয়া স্মৃতির পাতা থেকে জলপাই আলুর গল্প শেয়ার করার জন্য।

 last month 

সেটা তো কমন একটি আলু। শীতের সময় বাজার থেকে কিনেছেন না সাদা আলু।

 last month 

জলপাই আলুর নাম শুনেই ইউটিউবে সার্চ করে বুঝতে পারলাম আমরা যাকে মিষ্টি আলু বা শাক আলু বলি তার কথা বলছেন।কিন্তু আপনার বর্ননা অনুযায়ী
তিনটার ওজন কমসেকম দুই থেকে আড়াই কেজি হলে তো মেটে আলু সেগুলি।কারন মিষ্টি আলু বা শাক আলুর এত ওজন হয় বলে জানা নেই।তাছাড়া ফলগুলো দেখতে কেমন শিমের মতো দেখতে।নতুন কিছু জানতে পারলাম, ধন্যবাদ ভাইয়া।

 last month 

না আপু মেটে আলু না এটাই

 last month 

এই জিনিসগুলো আগে অনেক দেখেছি কিন্তু এগুলোর নাম যে জলপাই আলু আর এগুলো খাওয়া যায় জানা ছিল না। আপনারা দুই ভাই মিলে বীজ লাগানোর ফলে বেশ ভালোই গাছ হয়েছিল মনে হচ্ছে। তা না হলে এত বড় জলপাই আলু কিভাবে হলো। যাই হোক বেশ বড় সাইজের তিনটি জলপাই আলু পরিবারের সবাই মিলে বেশ মজা করে খেয়েছিলেন মনে হচ্ছে। ভালো লাগলো দেখে।

 last month 

বলেন কি শীতের সময় তো এগুলা বাজারে বেশি পাওয়া যায়।

 last month 

অনেকদিনের একটি স্মৃতিময় গল্প দারুনভাবে উপস্থাপন করেছে। আসলে আমার আজও মনে আছে সে জলপাই আলু তোলার কথাগুলো। আসলে এত বড় জলপাই আলু দেখে সকলেই বিস্মিত হয়েছিল। যাহোক সেই ছোটবেলার দারুন একটি মুহূর্ত নতুন করে সকলের মাঝে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

 last month 

হ্যাঁ হঠাৎ করে মোবাইলে জলপাই আলুর বীজের ফটোগুলো দেখে মনে পড়েছিল সেই ঘটনা।

 last month 

ভাইয়া আপনি গাছ লাগাতে পছন্দ করেন আমরা সবাই জানি। এর আগেও শুনেছি আপনি পুকুর পাড়ে বিভিন্ন রকমের সবজি গাছ লাগিয়েছিলেন। জলপাই আলু যদিও কখনো খাওয়া হয়নি। তবে এই ফলগুলো পরিচিত মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে দেখেছিলাম। আপনার পোস্ট পড়ে ভালো লাগল ভাইয়া।

 last month 

এগুলা জলপাই আলুর বীজ।

Coin Marketplace

STEEM 0.27
TRX 0.11
JST 0.030
BTC 70572.77
ETH 3817.08
USDT 1.00
SBD 3.53