অসুস্থ বাবাকে ঢাকা বারডেম হসপিটালে ভর্তি করার অনুভূতি
আসসালামু আলাইকুম
হ্যালো বন্ধুরা,
আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি, সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে অনেক অনেক ভালো রয়েছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় অনেক ভালো রয়েছি। 'আমার বাংলা ব্লগ'এর সকল ভাইবোন বন্ধুদেরকে আমার পক্ষ থেকে সালাম এবং অভিনন্দন জানিয়ে শুরু করতে যাচ্ছি আজকের নতুন একটি পোস্ট। আজকের পোস্টে আমি শেয়ার করব, আব্বুকে ঢাকা বারডেম হাসপাতালে নিয়ে যেয়ে ভর্তি করানোর অনুভূতি। আশা করি এর মধ্য দিয়ে আপনারা বেশ কিছু জানার সুযোগ পাবেন এবং এই পোস্টটা আপনাদের অনেক উপকারে আসবে।
আজকে মার্চ মাসের ১৪ তারিখ। আজ থেকে এক মাস আগে, ফেব্রুয়ারি ১৩ তারিখে বিকেল মুহূর্তে; ঢাকা শাহবাগ বারডেম জেনারেল হসপিটালে পৌছালাম। এরপর শুরু হলো কোন ডাক্তারকে দেখাতে হবে। আমরা কুষ্টিয়া থেকে জেনে গিয়েছিলাম সমাজ কল্যাণ বিভাগের সাথে যোগাযোগ নিতে হবে। সমাজকল্যাণ বিভাগের সাথে যোগাযোগ না নিলে জেনারেল এ দেখালে প্রচুর পরিমাণ খরচ হবে। যে ব্যয় বহন করার কঠিন হয়ে পড়বে আমাদের। সমাজকল্যাণের সন্ধান করলাম কিন্তু জানতে পারলাম সমাজ কল্যাণ দুইটাই বন্ধ হয়ে যায়। সকাল ৯ টা থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত সমাজ কল্যাণ বিভাগ চালু থাকে। সেখানে ডায়াবেটিস রোগীদের ফ্রি ট্রিটমেন্ট দেওয়া হয়। এছাড়া ভরতি রাখলে খরচ কম রয়েছে। আপনাদের কোন ডায়াবেটিস পেশেন্ট যদি বারডেম হসপিটালে নিয়ে আসেন অবশ্যই সকাল করে আনবেন এবং সমাজকল্যাণ বিভাগে যোগাযোগ নিবেন। সমাজকল্যাণ বিভাগটা বারডেম হসপিটাল এর দ্বিতীয় তলায় সিঁড়ি দিয়ে উঠে বাম পাশে অর্থাৎ দক্ষিণ পাশে। দিনটা ছিল বৃহস্পতিবার দিন। আব্বার পায়ের অবস্থা ভালো নয়। আমি যতটা অনুমান করলাম ডাক্তার দেখলেই বলবে আঙ্গুল কেটে ফেলতে হবে। কারণ বা পায়ের বুড়ো আঙ্গুলের নখ চাড়া খসে পড়ে গেছে। কুষ্টিয়াতে ট্রিটমেন্ট করে ঠেকানো যায়নি। তাই সেখান থেকে ঢাকাতে প্রেরণ করা হয়েছে আমাদের। এরপর আমার সাথে ছোট মামা যুক্ত হয়ে দ্রুত চেষ্টা করলেন ডাক্তার খোজার। বৃহস্পতিবার ছুটি হয়ে গেলে শুক্রবারের ছুটি এরপর শনিবারের শবে বরাতের ছুটি। ডাক্তার পাওয়া যাবে রবিবারে। খুবই টেনশনের মুহূর্তে অবস্থান করছিলাম আমরা।
ছোটমামা কোনরকম ১০৩ এরপর ১০১ নম্বর অর্থাৎ নিচ তলায় ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করলেন। অনেক অপেক্ষা করার পর রাত 9 টার দিকে ডাক্তার দেখলেন। ডাক্তার মোহাম্মদ ইজারুল ইসলাম রতন বলেন এই পেশেন্টকে ভর্তি করাতে হবে। পা ঢেকে রেখে লাভ কি, আঙ্গুলের অবস্থা ভালো না দ্রুত কেটে ফেলতে হবে যেন রোগ উপরে না উঠে। আমাকে পাশে বসিয়ে বললেন বেশ কিছু ঔষধ আর ইনজেকশন লাগবে তার পায়ের পচন কন্ট্রোল করতে। আরো বললেন ইনজেকশন আড়াই হাজার টাকা করে পড়বে দিনে এ ছাড়া অন্যান্য ঔষধ রয়েছে। রবিবার পর্যন্ত চালাতে হবে। ছোট মামার সাথে পরামর্শ করে ভর্তি হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। এদিকে ডাক্তার দেখানোর ড্রেসিং এর ১১০০ টাকা জমা দিতে হলো। এরপর একটা টেস্টের জন্য ৬৫০ টাকা সহ একটি কাগজ দ্বিতীয় তলায় ২২২ নাম্বার কাউন্টারে জমা করলাম। তারপর ডাক্তারের কাছে আসলাম। সেখানে বলল ভর্তি হতে হলে ২০ হাজার টাকা জমা দিতে হবে। একটা স্লিপ লিখে দিল। আবারো টাকা জমা দিতে গেলাম, সেখানে ভর্তির জন্য 5000 টাকা জমা করলাম। এরপর জানিয়ে দেওয়া হলো ছয় তলায় কেবিন ও বেড রয়েছে সেখানে নিয়ে যেতে হবে। কেবিন নেওয়া আরো ব্যয়বহুল, প্রতি রাত সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা। তাই বেডে উঠলাম। কেবিল নিলে দিনে ১০-১২ হাজার করে খরচ হবে সবকিছু মিলিয়ে। তাই কোনরকম বেডে ভর্তি করতে পেরে একপ্রকার স্বস্তি পেলাম।
পেশেন্ট অপারেশন করা পূর্বে বেশ কিছু টেস্ট থাকে এবং ডাক্তারদের তত্ত্বাবধান থাকে। তাই পেসেন্টকে ভর্তি করাটাই জরুরী। যাইহোক এরপর রাত এগারোটার সময় আমার হাতে একটা স্লিপ ধরিয়ে দেওয়া হলো বেশ কিছু ঔষধ ও ইনজেকশন নিয়ে আসার জন্য। সেখান থেকে একজন সিস্টার আমাকে বললেন ভাইয়া কষ্ট হলেও হসপিটালে নিচের ফার্মেসি থেকে ঔষধ না নিয়ে রাস্তা ক্রস করে ওইপার থেকে ওষুধ নেওয়ার চেষ্টা করেন তাহলে অরজিনাল ওষুধগুলো পেতে পারেন। শাহবাগে এই প্রথম আমার উপস্থিতি, স্থান চেনা নেই। কথাটা মাথায় রেখে নেমে পড়লাম নিচতলায় এবং লক্ষ্য করে দেখলাম সত্যিই একটা ঔষধ মিলছে না লেখার সাথে। আমি বললাম স্লিপে লেখা ওষুধের সাথে আপনাদের ঔষধ তো মিল হচ্ছে না। তারা আমাকে বললেন কোম্পানি আলাদা চিন্তা করবেন না, সিস্টারদের কাছে দিবেন সময় মত খাওয়ায়ে দিবে। আমি মুখের উপর বলে বসলাম, আমি বোকাচোদা নয়। এতগুলা ওষুধ একটাও মিল হচ্ছে না। আর আপনি যেটা বুঝাবেন সেটা আমি বুঝবো, স্লিপ ঘুরিয়ে নিলাম। রাস্তার ওপাশে এগিয়ে ফ্লাইওভারে ওঠার জন্য চেষ্টা করলাম কিন্তু দেখলাম সেটা ইতোমধ্যে তালা মেরে দিয়েছে। কেন জানি ফ্লাইওভারের গেট তখন বন্ধ। এদিকে রাত এগারোটা পার হয়ে গেছে হয়তো সেটাই কারণ। যেহেতু এখানে মেট্রোরেলের স্টেশন। তাই অনেক কষ্ট করে রাস্তা ক্রস করতে হলো আমাকে। দিনের চেয়ে রাতে যেন এখানে জ্যাম অনেক বেশি। তবুও ঔষধ আনতে হবে, ওদিকে সিস্টাররা রাত বারোটার পর দায়িত্ব ছেড়ে চলে যাবে।
রাস্তা ক্রস করে দেখলাম নিকটস্থ সকল ফার্মেসি বন্ধ হয়ে গেছে। দুই থেকে তিনটা ফার্মেসি খোলা রয়েছে। এরমধ্যে দুইটা ফার্মেসিতে অরজিনাল গুলো নেই। পরবর্তী ফার্মেসিতে আসলাম, সেখানে স্লিপ দেখে তারা বলল সব কিছু রয়েছে অরজিনাল গুলো রয়েছে। আবারো একপ্রকার স্বস্তি পেলাম কষ্টের মাঝে। তারা একের পর এক দিতে থাকলো। আমিও স্লিপের সাথে মিলিয়ে দেখতে থাকলাম। সবচেয়ে বড় বিষয় ছিল যে ইনজেকশন দেয়া হয়েছিল সেটার গায়ে লেখা রয়েছে সাড়ে ১৩০০ টাকা মূল্য। তারা সেই ইনজেকশন টার দাম ধরেছিল ৬৮০ টাকা। Merocon মূলত পচন রোধ করা ইঞ্জেকশন। দিনে তিনটা করে দিতে হবে। যাই হোক আমি সমস্ত ওষুধগুলো টাকা পরিশোধ করলাম। তাদের সুন্দর ব্যবহার গুলো আমাকে মুগ্ধ করলো। যতটা দেখে বুঝলাম তারা হিন্দু শ্রেণীর মানুষ। তবে তাদের ব্যবহারগুলো যেন মন ছুয়ে যাওয়ার মত। তাই তাদের কয়েকটা ফটো দোকানের কার্ড ফটো করলাম। এরপর সব কিছু নিয়ে আবারো রাস্তা ক্রস করার জন্য দ্রুত চলে আসলাম। ততক্ষণে রাত সাড়ে এগারোটা পার হয়ে গেছে।
| বিষয় | আব্বুর অসুস্থতা |
|---|---|
| ফটোগ্রাফি ডিভাইস | Infinix Hot 11s |
| ঢাকা শাহবাগ | লিংক |
| লোকেশন | গাংনী-মেহেরপুর |
| ব্লগার | @sumon09 |
| দেশ | বাংলাদেশ |
পোস্টটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
| পুনরায় কথা হবে পরবর্তী কোন পোস্টে, ততক্ষণ ভালো থাকুন সবাই। আল্লাহ হাফেজ। |
|---|




















14-03-25