মানুষের জীবনে কখন যে কি হয়, কেউ জানে না।।
হ্যালো বন্ধুরা,
আপনারা সবাই কেমন আছেন, আশা করি সবাই অনেক ভাল আছেন। আমিও আলহামদুলিল্লাহ সর্ব অবস্থায় ভালো আছি। আজকে আমি আপনাদের সাথে নতুন একটি ব্লগ নিয়ে হাজির হয়েছি। আশা করি ব্লগটি পরে আপনাদের সবার মনে কিছুটা হলেও মায়া জন্ম নেবে। আমার এক উকিল আন্টি সম্পর্কে লিখছি। মানুষের জীবনে যে কত রকমের দুঃখ থাকতে পারে তা সে আন্টিকে না দেখলে বুঝাতে পারতাম না। দুঃখ তার পিছু ছাড়ছে না। চলুন আপনাদের মাঝে তার জীবনের ঘটে যাওয়া কিছু দুঃখের ঘটনা শেয়ার করি
আমি আজকে আপনাদের মাঝে যে আন্টির দুঃখের ঘটনা শেয়ার করতে যাচ্ছি তার নাম হচ্ছে মাহবুবা আক্তার। তিনি আমার আম্মুর উকিল বোন। উনার বাবা মানে আমার উকিল নানার ছয় মেয়ে ও এক ছেলে। আমার মামা বর্তমানে বিদেশে থাকেন। তিনি অনেক টাকা ঋণ করে বাহিরে যান। আমার এই উকিল আন্টিটা ছয় মেয়ের মধ্যে পঞ্চম। সব মেয়েগুলো দেখতে অনেক সুন্দর ও লম্বা লম্বা। তবে আমার এই আন্টিটি তেমন লম্বা ও নয় আবার তেমন সুন্দরও না। আবার দেখতে তেমন খারাপ ও নয়। তাদের পরিবারের বাকি পাঁচ বোনের চেয়ে সে একটু অন্যরকম। আমার আন্টিটা ছোটবেলা থেকেই পরিবারের সবার লাঞ্ছনা ও অবজ্ঞা পেয়ে বড় হয়েছে। তিনি পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছিলেন। আর বাকি সময় পরিবারের সবার কাজ করেছে। সেলাইয়ের কাজ করেছে। সব বোনদের বাড়ির মেহমান আসলে সেই রান্নাবান্না করে সবাইকে আপ্যায়ন করেছে। কোনো বোনদের বাচ্চা হলে তাদেরকে দেখাশোনা ও লালন-পালন করেছে। বর্তমানে আমার নানা তিন বছর ধরে প্যারালাইস হয়ে ঘরে শুয়ে থাকেন। যার ফলে নানাকেও এই আন্টিকেই দেখতে হয়। একদিকে নানা অসুস্থ অন্যদিকে অনেক সম্পদ থাকা সত্ত্বেও তাদের পরিবারে নানার অসুস্থতার কারণে এখন এক প্রকারের দুঃখ দেখা দেয়। এদিকে আন্টির ও বয়স বেড়ে যাচ্ছে। নানার অসুস্থতার কারণে অনেক টাকা ও সম্পদ বিক্রি করেন। নানাকে কোনরকম সুস্থ করে বাঁচিয়ে রেখেছেন।
আন্টির বয়স প্রায় ২৬ বছর হয়ে গেছে। ২০২২সালের জুলায় মাসে আন্টির বিয়ে হয়। আন্টিকে অনেক কিছু যৌতুক সহকারে বিয়ে দেয়া হয়। আর ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে তার একটি কন্যা সন্তান জন্ম হয়। তার কন্যা সন্তান হওয়ার পর তাকে শশুর বাড়িতেই রাখা হয়। এতগুলো বোন থাকা সত্ত্বেও কেউ তাকে হাসপাতাল থেকে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসেনি। কারণ নানা অসুস্থ, তার মধ্যে আন্টির ছোট একটি মেয়ে নিয়ে আসলে তাদের যদি কোন প্রবলেম হয়ে যায়। অথচ এই আন্টিটি সবার বিপদ আপদে সবাইকে সাহায্য সহযোগিতা করেছে। যেভাবে পেরেছে সেভাবেই তাদের সহযোগিতা করেছে। উনার কন্যা সন্তান হওয়ার পরেও কেউ তাকে তাদের বাড়িতে আনে নাই। আমি যতটুকু জানি প্রথম সন্তান সবসময়ই যার যার নিজের মায়ের বাড়িতে হয়। ও মায়ের বাড়িতেই কিছুটা বড় হয়। তবে আন্টির বেলায় এ বিষয়টা একটু ভিন্ন হয়েছে। এক তো সিজার করা মেয়ে তারপর আবার শশুর বাড়ি বুঝতেই তো পারছেন কত ঝামেলা ও টেনশন থাকে।
আন্টিকে যে ছেলের সাথে বিয়ে দেয়া হয়েছে। সেই ছেলেটি আগে বিদেশ থাকতো বর্তমানে বেকার। তাই শ্বশুর বাড়িতে আন্টির তেমন কদর নেই বললেই চলে। সারাক্ষণ শাশুড়ির হুকুম জারি শুনতে হয়। আন্টির মেয়েটির যখন চার মাস পুরনো হয়। তখন আন্টি অনেক কান্নাকাটি করে মা-বাবাকে অনুরোধ করে কিছুদিনের জন্য বেড়াতে আসেন। শশুর বাড়ি থেকে ও আন্টিকে তেমন আসতে দেয় না। কারণ আন্টির হাসবেন্ডের ইনকাম নেই। তাই শ্বশুরবাড়িতেই বেশি বেশি থাকতে হয়। আন্টি সাত দিনের মতো বাবার বাড়িতে থেকে আবারো শ্বশুর বাড়িতে চলে যায়। একদিকে স্বামীর ইনকাম নেই অন্যদিকে ছোট একটি বাবু। আবার বাবার বাড়িতেও টাকা-পয়সার সংকট। সব মিলিয়ে আন্টির যেন রাতে ঘুম হয় না। এরকম করতে করতে হঠাৎ আন্টির মাথার মধ্যে প্রবলেম হয়ে যায়। তিনি মেন্টালিটি ভাবে একটি চাপে পড়ে যায়। ফলে শ্বশুরবাড়ির মানুষ তাকে পাগল বলে সম্বোধন করে। এত গুলো চাপ নিয়ে একটি মানুষ পাগলের মত হয়ে গেছে। শ্বশুরবাড়ির মানুষজন আন্টিকে পাগল বলে বাবার বাসায় দিয়ে যায়। শ্বশুর বাড়ির মানুষ বলে পাগল মেয়েকে নাকি তারা বিয়ে দিয়েছে।
আমার আন্টিটি অনেক সহজ সরল আমি যখন এই ঘটনাটি শুনি আমার মনের ভেতরটা কান্নায় ভেঙে পড়ে। কারণ নিজের চোখে দেখেছি আন্টি কতটা কষ্ট করেছে। ভেবেছিলাম আন্টির বিয়ের পর আন্টি বুঝি অনেকটা সুখী হবেন। কিন্তু নিয়তির কারণে তার সাথে আজ কি হয়ে গেল। তিনি এখন কিছুটা উল্টাপাল্টা কথা বলেন। তিনি তার মেয়েকে বলে যে এটা নাকি তার ছোট বোনের মেয়ে। তাছাড়াও তিনি বর্তমানে আবারো কনসিভ করেছেন শুনেছি। এ অবস্থায় কতগুলো চাপ যে তার ওপর দিয়ে যাচ্ছে। আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। তার বাকি বোনদের অনেক ভালো অবস্থান হওয়া সত্ত্বেও তাকে ভালো একটি হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে না। আমার মনে হয় পরিমিত ঘুম ও টেনশন কমে গেলে আবারো সুস্থ হয়ে যাবে।
কয়েকদিন আগে আন্টির সাথে ফোনে কথা বলে দেখলাম যে, আন্টি অনেক কান্নাকাটি করতেছে। তার জীবনে যে এত দুঃখ আসবে ভাবতে পারিনি। এখন কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর তিনি তার শ্বশুর বাড়িতে যেতে চাচ্ছে। কিন্তু তার স্বামী ও তাকে কোন ফোন করে না বা তাকে সাপোর্ট করছে না। যার কারণে বর্তমানে বাড়িতেই রয়ে গেছেন। স্বামীর সাপোর্ট পেলে হয়তো আবারো শ্বশুর বাড়িতে আন্টি যেতে পারতেন।
বন্ধুরা আজ এই পর্যন্তই। সবাই ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন। আর আমার আন্টির জন্য মন থেকে দোয়া করবেন। যাতে করে তার দুঃখময় জীবনটা সুখের হয়ে যায়। সে যেনো আবারও তার স্বামীর সংসারে ফিরে যেতে পারে। তার বর্তমান মেয়ে বাবুটি যেন সুস্থ থাকে। আল্লাহ হাফেজ।
সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ,আল্লাহ হাফেজ।।
আমার পরিচিতি
আমি মোছাঃ মুসলিমা আক্তার নীলা। স্টিমিট প্লাটফর্মে আমি @titash নামে পরিচিত। আমার জন্মস্থান চট্রাগ্রাম বিভাগের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ভাদুঘর গ্রামে। আমি বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে বাংলা বিভাগ নিয়ে পড়াশোনা করতেছি। আমি বিবাহিত,আমার একটি কন্যা সন্তান আছে। আমি আমার হাসবেন্ডের সাথে ঢাকা বিভাগের অন্তর্গত নারায়নগঞ্জ জেলায় বসবাস করছি। আমি আমার হাসবেন্ডের মাধ্যমে স্টিমিট প্লাটফর্ম সম্পর্কে জানতে পারি। প্লাটফর্মটার বিষয়ে জেনে আমি এখানে কাজ করার আগ্রাহ প্রকাশ করি। তারপর ২০২৩ সালের ফ্রেব্রুয়ারী মাসে আমার বাংলা ব্লগের মাধ্যমে স্টিমিট প্লাটফর্মে যুক্ত হয়। আমি ভ্রমন করতে,মজার মজার রেসিপি করতে,বই পড়তে, নতুন নতুন বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে ও সৃজনশীল জিনিষ তৈরী করতে ভালোবাসি। আমি বাঙ্গালী জাতি হিসাবে ও আমার বাংলা ব্লগের সদস্য হতে পেরে নিজেকে নিয়ে গর্ববোধ করি।
Thank you, friend!
![image.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmd7of2TpLGqvckkrReWahnkxMWH6eMg5upXesfsujDCnW/image.png)
![image.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmWDnFh7Kcgj2gdPc5RgG9Cezc4Bapq8sQQJvrkxR8rx5z/image.png)
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
আসলে আপু আপনার আন্টির কথা শোনে সত্যি অনেক খারাপ লাগলো। আসলে যারা বেশি করে দিনশেষে তারাই অনেক কষ্ট পায়। তবে বোনেরা তো বোনকে একটু দেখবে।যাইহোক আপনার আন্টির জন্য দোয়া রইল যেন স্বামী সন্তান নিয়ে আবার সুখে থাকতে পারে। ধন্যবাদ আপু।
জ্বি আপু উনি সবার চেয়ে বেশি ভালো।উনার পরিবার উনাকে এখন সাপোর্ট করছে না। তাই বলে আমাদের এলাকার সবাই উনার পরিবারকে ধিক্কার দিয়েচ্ছে। অন্তত বোনেরা তো বোনকে একটু করবে। ধন্যবাদ আপু।
সত্যি বলতে মানুষের জীবনের প্রত্যেকেরই সমস্যা রয়েছে শুধু কারোরটা কম কারোটা বেশি। তবে আপনার উকিল আন্টির অর্থাৎ মাহবুবা আপুর গল্পটা শুনে সত্যি অনেক খারাপ লাগছিল। 🙂 মানুষের জীবনে এমন সমস্যা থাকতে পারে এ বিষয়ে সম্পর্কে আপনার পোস্ট না পড়লে হয়তো বা বুঝতে পারতাম না।
জি ভাইয়া মানুষের জীবনটা আসলেই সুখ কষ্ট দিয়ে ভরা। তবে অনেকের কষ্ট একটু বেশি অনেকের একটু কম। আন্টির কষ্টটা হয়তো সবার চেয়ে বেশি। ধন্যবাদ আপনাকে।
মানুষের জীবনে কখন কি হয় সেটা আমরা কেউ জানিনা।এটা ঠিক যারা বেশি করে তারাই পরে গিয়ে কষ্ট পান। আপনার আন্টির গল্পটি খারাপ লাগলো।মানুষের জীবন টাই অদ্ভুত সুতাই গাঁথা।ধন্যবাদ বাস্তবিক একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।
আপু একদম ঠিক কথা বলেছেন। মানুষের জীবনটা অদ্ভুত শুতই গাথা। যে যার জন্য করে সেই তাকে পরবর্তীতে ভুলে যাই। আপনাকেও ধন্যবাদ আপু।
আসলে মানুষের জীবনটা ভিন্ন রকমের। কখন কোন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে জীবন অতিবাহিত করে কেউ জানে না। আর এমন প্রায় ফটো না আমাদের চোখের সামনে লক্ষণীয়। খুব সুন্দর একটা বিষয় আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন যা থেকে অনেক কিছু জানার সুযোগ পেয়েছি।
মানুষের জীবনে কখন কি হয়, কেউই বলতে পারেনা। তাছাড়া আমিও এই ঘটনার সম্মুখীন হয়েছি আমার আন্টির মাধ্যমে। ধন্যবাদ আপু।
আপনার আন্টির সম্পর্কে পুরো পোস্টটি পড়ে খুব খারাপ লাগলো। আসলে যারা সবার বিপদ এগিয়ে যায় তারাই বিপদে পড়ে এবং তখন কাউকে পাশে পায় না। আপনার আন্টি মানসিকভাবে বিপদগ্রস্ত হয়ে গেছে। ওনার শ্বশুর বাড়িতে টর্চার বাবার বাড়িতে তার কোন স্থান নেই বললেই চলে আবার ছোট বাচ্চা আবার কনসিভ করেছে এজন্য ওনার মানসিক সমস্যা দেখা দিয়েছে। বলেছেন আপনি নিয়মিত ঘুম এবং রেস্ট করলে মানসিক টেনশন কমাতে পারলে উনি আবার আগের মতো স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারবেন।আসলেই ঠিক কখন কার কি হবে তা আমরা কেউ বলতে পারি না । ধন্যবাদ ভাইয়া কষ্টি ভাগ করে নেয়ার জন্য।
আমি এটাই মনে করি, ওনার মানসিক চাপ কিছু কমবে যদি স্বামীর কথায় শান্তি পায়। আর নিয়মিত ঘুমায়। ধন্যবাদ আপু। আন্টির জন্য দোয়া কইরেন।