একজন শ্রমজীবী মানুষের জীবন||১০% বেনিফিশিয়ারি আমার প্রিয় shy-fox এর জন্য

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago

আসসালামুআলাইকুম



বন্ধুরা আপনারা সবাই কেমন আছেন ?আশা করছি সবাই যে যেখানে আছেন সুস্থ আছেন, নিরাপদে আছেন। আমিও আল্লাহর রহমতে মোটামুটি ভালো আছি।



আজ আমি আপনাদের সামনে কোন রেসিপি পোষ্ট কিংবা ডাই পোস্ট নিয়ে আসিনি। আজ আমি একজন শ্রমজীবী মানুষের গল্প নিয়ে এসেছি ।যার নাম হচ্ছে খলিল মিয়া। আমরা আমাদের চারপাশে অনেক শ্রমজীবী মানুষ দেখি। কিন্তু আমার দেখা শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে উনি হচ্ছেন অন্যতম একজন মানুষ। যিনি দিনের-পর-দিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে নিজের সংসার চালিয়ে যাচ্ছেন। এতোটুকু রেস্ট নেই যার। ঝড়-বৃষ্টি,রোদ সবকিছুকে উপেক্ষা করে তিনি দিনের পর দিন কাজ করে যান ।একদিনও বসে থাকেন না। তিনি আমাদের বাসায় মাঝে মাঝে কাজ করেন। বিশেষ করে বাড়ির ছাদ পরিষ্কার ও গাছের আগাছা পরিষ্কার ও বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কার করার জন্য উনাকে আমরা নিয়ে থাকি। ওনার সম্পর্কে কিছু কথা আজ আমি আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করব।



Polish_20220126_234933678.jpg



খলিল মিয়া কে আমি মামা বলে ডাকি।ওনার সঙ্গে কথা বলে জানতে পারলাম ওনার সংসারে তিন ছেলেমেয়ে, স্ত্রী এবং উনি মোট পাঁচ জনের সংসার। একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি তিনি নিজেই ।তার বড় ছেলে এবার কলেজে ভর্তি করেছেন ।এক মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। এমনকি তিনি তার বড় ভাইয়ের ছেলে কেউ নিজের ছেলের মতো করে মানুষ করছেন ।তাদের অবস্থা তার থেকে আরো একটু খারাপ বলে তিনি তার দায়ভার নিজে নিয়েছেন। কত বড় মনের মানুষ হলে এটা করতে পারে।

20210919_112448.jpg

আমাদের বাসায় কিছুদিন পরপরই উনাকে ডাকা হয়। বিশেষ করে ছাদের কাজের জন্য ।ছাদে বেশকিছু গাছ আছে সে গাছ গুলোর আগাছা পরিষ্কার করার জন্য এবং বাড়ির আশেপাশে পরিষ্কারের জন্য ।একদম নিজের মনে করে কাজ করেন ।তাকে কিছু দেখিয়ে একবার বলে দিলেই হয় সে সারাটা দিন নিজের মত করে কাজ করেন। আমাদের একবারও তাকে যেয়ে দেখতে হয় না তিনি কাজে ফাঁকি দিচ্ছেন কিনা বা কি করছেন। তিনি একটুও সময় বসে থাকেন না ।একদম সততার সঙ্গে নিজের বাড়ির কাজ মনে করে কাজ করেন।

20210919_110425.jpg

20210919_105540.jpg

দেখুন কিভাবে ছাদের কোনায় কোনায় পরিষ্কার করছে। আমি মাঝে মাঝে যেয়ে বলি এত কোনায় পরিষ্কার করতে হবে না। তবুও কার কথা কে শুনে। উনি ওনার নিজের মতো করে করে যাচ্ছেন। আমাদের এলাকায় অনেক ছোটবেলা থেকেই কাজ করে আসছেন। ওনার সততা ও কাজের জন্য এলাকায় ওনার ভারি কদর ।ওনাকে কাজের জন্য চাইলেই যে কোনদিন পাওয়া যায় না ।ওনাকে পেতে হলে কয়েকদিন আগে বলে রাখতে হয়। তারপরে উনি সময়-সুযোগ করে কাজে আসেন।

20210919_112504.jpg

তিনি এক দিনও বসে থাকার সময় পান না ।তার কারণ হচ্ছে এলাকায় একদিন এবাড়ি, আরেক দিন ওবাড়ি এভাবেই তার দিন চলে। বসে থাকার সময় নেই তার।

20210919_171820.jpg

20210919_112507.jpg

এবার বর্ষাকালের টানা বৃষ্টির কারণে বেশ কয়েক মাস পরিষ্কার করা হয়নি ।এজন্য ছাদে প্রচুর আগাছা জন্মে ছিল ।তাই বর্ষা শেষে সেগুলো পরিষ্কার করার জন্য ওনাকে ডাকা হয়েছিল। বেশ নিখুঁতভাবে সেগুলো পরিষ্কার করেছিলেন। তার একটা কথা শুনে আমি সেদিন অবাক হয়েছিলাম ।দুপুরে যখন তাকে আমি খাবার জন্য ডাকছিলাম ,তখন তিনি আমাকে উত্তর দিল- না আমার খেতে হবে না আমি সকালে একবারে বেশি করে দুপুরের খাবার খেয়ে এসেছি। আমি এভাবেই খেয়ে এসে কাজ করি। আমার দুপুরে খাবার লাগে না ।আমি কথাটা শুনে সেদিন সত্যি অবাক হয়েছিলাম এভাবে কি কখনও সম্ভব ?দুপুরের খাবার সকালে একবারে বেশি করে খেয়ে আসা?কতটা অসহায় মানুষটা। তবুও আমি সেদিন তাকে জোর করে দুপুরে ডাইনিং চেয়ারে বসে খাবার খেতে বলেছি। এক অন্যরকম খুশি তার চোখে আমি দেখেছি। প্রথমে বলেছিল আমি বাইরে ঠিক আছি ,বাইরে বসেই খাই।আমি বলেছি না আপনি ভেতরে খাবেন। এই অসহায় মানুষগুলোকে খুশি করতে খুব বেশি কিছু লাগে না সেদিন আমি বুঝতে পেরেছিলাম।

20210919_110337.jpg

20210919_110321.jpg

সব গুলো ছবির স্থান-লিংক

দিন শেষে এই ফুলের মত হাসি মাখা মুখ নিয়ে বাড়ি ফিরে যায় ।ফিরে যায় তাদের শান্তির নীড়ে। এটাই তাদের জীবন, এটাই খলিল মিয়ার জীবন।।

আজকের মতো এখানেই শেষ করছি। আগামীতে আবার দেখা হবে নতুন কোন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকুন ,সুস্থ থাকুন ।আমার ব্লগ টি পড়ার জন্য সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

ফটোগ্রাফার:@wahidasuma
ডিভাইস:স্যামসাং গ্যালাক্সি এ৪০

🔚ধন্যবাদ🔚

@wahidasuma

আমি ওয়াহিদা সুমা।আমি 🇧🇩বাংলাদেশি🇧🇩।বাংলা আমার মাতৃভাষা।আমি বাংলায় কথা বলতে ও লিখতে ভালোবাসি।ধন্যবাদ আমার বাংলা ব্লগকে এই সুযোগটি করে দেওয়ার জন্য।

Sort:  
 3 years ago 
আপু শ্রমজীবী মানুষদের নিয়ে এত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এসব মানুষদের জন্য অনেক ভালোবাসা রইল। কিছু কিছু সময় এসব মানুষদের জন্য অনেক কষ্ট হয়। তখন ভাবি আমি যদি কোনোভাবে এনাদের সাহায্য করতে পারতাম তাহলে নিজের কাছে খুবই ভালো লাগতো। আপনার জন্য অনেক শুভেচ্ছা রইল।
 3 years ago 

হ্যাঁ আপনি ঠিকই বলেছেন এসব মানুষের জন্য কিছু করতে পারলে নিজের কাছেই খুবই ভালো লাগে ।ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য ।আপনার জন্য শুভকামনা রইল। ভালো থাকবেন।

 3 years ago 

একজন শ্রমজীবী মানুষকে নিয়ে সুন্দর ছোট গল্প রচনা করেছেন।খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ মানেই রিয়েল হিরো।উনাদের মাঝে তেমন হিংসা বিদ্বেষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল।কাজপাগল মানুষগুলো সারাদিন রোদেপুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে পরিবারের জন্য যুদ্ধ করে যাচ্ছে।সন্মান,শ্রদ্ধা রইলো সকল শ্রমজীবী মানুষের জন্য।আপনাকেও ধন্যবাদ এমন সুন্দর একটি গল্প উপহার দেওয়ার জন্য, আমন্ত্রন রইলো।

 3 years ago 

আপনার মন্তব্যটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো ।আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এত সুন্দর মন্তব্যের জন্য ।এভাবে মন্তব্য করে পাশে থাকবেন আশা করছি। আপনার জন্য শুভকামনা রইল। ধন্যবাদ।

 3 years ago 

ভালবাসা ও শুভকামনা রইলো শ্রদ্ধেয়।

 3 years ago 

একজন শ্রমজীবী মানুষের কথা জেনে খুবই ভালো লাগলো। এরকম পরিশ্রমী মানুষ খুব কমই দেখা যায়। এরকম খেটে খাওয়া মানুষেরাই আমি মনে করি সত্তিকারের মানুষ হিসেবে পরিচিত। এনারা নিজের পরিশ্রম করে নিজের ঘর পরিবার এবং সবাইকে নিয়ে খুব ভালো ভাবে জীবন কাটায়। এনার জন্য আমার শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা রইলো।

 3 years ago 

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপু এত সুন্দর করে মন্তব্য করার জন্য ।আপনার জন্য শুভকামনা রইল ।ভালো থাকবেন ।ধন্যবাদ।