সেই ফেলে আসা শৈশব!

in Incredible Indialast month

1000068011.jpg

কবে যেনো দেখতে দেখতে বড় হয়ে গেলাম! সম্বিৎ ফিরে পেতেই দেখলাম, আসে পাশের পরিবেশ, অনেক মানুষসহ, জলবায়ু পর্যন্ত কেমন যেনো বদলে গেছে!

বিকেলে খেলতে যাবার পথে পুরোনো কাঠের আলমারির সাথে লাগানো আয়নাটাতে নিজের দিকে নজর পড়তেই চমকে গেলাম!
একি! এটা কে? অবয়বের এমনি পরিবর্তন কবে হলো? আমি কি স্বপ্ন দেখছি? কবে এত বড় হয়ে গেলাম?

এই রকম একধিক প্রশ্নের উত্তর পেতে ঘরের আনাচে কানাচে মা কে তন্ন তন্ন করে খুঁজে না পেয়ে ভাবলাম, দিদির কাছেই জিজ্ঞাসা করা যাক!

উচ্চস্বরে ডাক দিলাম, কিন্তু কোথায় কেউ তো নেই! সব ঘরেই কেবলমাত্র আমি একলাই রয়েছি!

গেলো কোথায় সবাই? আর কবেই বা বাড়ি ছেড়ে এই বদ্ধ পরিসরে এসে উঠেছি? আলমারির ঘর ছেড়ে অন্য ঘরে থাকা আরাম কেদারায় বসে ভাবলাম, সময় তুমি কত নিষ্ঠুর!

যখন তোমাকে সবচাইতে মানুষ উপভোগ করে, তখন তুমি তাদেরকে নিজেদের মূল্য বুঝতে দাও না!
আর যখন তোমার মূল্য বুঝতে শুরু করে তখন এত দেরি হয়ে যায় যে, না থাকে তোমাকে উপভোগ করবার সময় আর না সেই পরিবেশ, পরিস্থিতি!

তখন শুধু দায়িত্বের পিছনে শ্বাস রোধ করে ছুটে বেড়ানো, আর দৈনন্দিন চাহিদা পূরণের যন্ত্র বৈ আর নিজেদের কিছুই মনে হয় না!

বাবার হাত ধরে মেলা ঘোরা ঘুরি, বিকেলের সেই আনন্দঘন মুহূর্ত খেলার সাথীদের সাথে, স্কুলের টিফিনে অদক্ষ হাতে আলু কাবলি তৈরির স্বাদ আজ ও মুখে লেগে রয়েছে, শুধু সেই বন্ধুগুলো আর খেলার সাথীরা নেই!

আজ শুধু আমি একলা আর এই আরাম কেদারা! সঙ্গে শ্বাস রোধ করা বদ্ধ পরিসর আর শূন্যতা!

সম্বিৎ ফিরতেই মনে পড়লো এই বার কালী পুজোয় ঠাকুর দেখার সময় মেলায় দেখেছিলাম, সেই ছোট্ট বেলার অ্যালুমিনিয়াম দিয়ে তৈরি করা খেলনা-বাটি!
লাল কাঠের গায়ে এক চিলতে টিনের টুকরো দিয়ে তৈরি সবজি কাটবার বটি!
কি মজা! কিন্তু বড় হয়ে গেলে ওসব আর কেনা যায় না!

1000068012.jpg

তখন শুধু এদের দেখে পুরোনো শৈশবের স্মৃতি বিজরিত মুহূর্ত মনে করা ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না!

এখন এসব আর জানিনা কতজন কেনে! এখন শিশুরা শৈশব থেকেই আসল ইলেকট্রনিক যন্ত্র, সেটা মোবাইল হোক কিংবা ভিডিও গেম জাতীয় জিনিষ পেতেই অভ্যস্ত।

একসাথে রান্নাবাটি খেলার মজা এরা কোনোদিন বুঝবে না, সেখানে শুধু নিজেদের পরিবারের ভাই বোনেরা নয়, বরং গোটা পাড়ার শৈশব একত্রিত হতো!

কেউ বাজার করতে গিয়ে বিভিন্ন পাতা, ফল, ফুল কিনে নিয়ে আসতো, আবার কেউ সেসব সেই ছোট্ট বটি দিয়ে কাটতে ব্যস্ত থাকতো!

আরেকদিকে, অ্যালুমিনিয়ামের বাসন ধুয়ে মেজে, বসে যেতো নকল উনুনে কিংবা নকল গ্যাসের উনান এর উপরে!

এই সময় খেলার সঙ্গীর কেউ রুটি কিংবা লুচি পাতা দিয়ে অফিসের খাবার রইটি করতো চাকি বেলনি দিয়ে, আবার কেউ শীল পাটায় মশলা বাটায় ব্যস্ত থাকতো।

1000068009.jpg

অর্থাৎ একটা যৌথ পরিবারে সকালে যখন পুরুষ বাজার করে এনে নিজের অফিসে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে, ঠিক সেই সময় ঘরের অন্দর মহলের মধ্যে অবস্থিত পাক শালার দৃশ্য নিপুণ ভাবে পর্যবেক্ষন করে, এক্ রকম বড়দের অনুকরণ করে এই খেলা একসাথে শৈশবে খেলতাম!

আচ্ছা, কিছু ভালো রান্না হলে সেটা কিন্তু প্রতিবেশীর বাড়িতে বিনা বাঁধায় পৌঁছে যেতো, কারণ তখন কোন বাড়ির ছোটো ছেলে মেয়ে কি খেতে ভালোবাসে সেটা মোটামুটি সব বাড়ির মানুষ জানতেন!

তাই, যে বাড়িতেই সেটা তৈরি হোক না কেনো, হয় থালা, বাটি বন্দী হয়ে সঠিক লক্ষ্যে পৌঁছে যেতো, নয়তো জানালায় অবস্থিত লম্বা লম্বা লোহার দন্ডায়মান গ্রিলের মাঝখান থেকে অর্ধেক মুখ বার করে কারোর মাধ্যমে সেই শিশুর বাড়িতে খবর পাঠিয়ে দেওয়া হতো, যেনো শিশুটিকে তার বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

IMG_20251029_184108.jpg

কোনো বাড়তি আয়োজন নয়, ছাপোষা বাঙালি পরিবার এবং খাবার, কিন্তু তারমধ্যে লুকিয়ে থাকা ভালবাসায় কোনো কর্পণ্যতা নজরে পড়ত না! নজরে পড়তো এক্ গাল হাসি আর আন্তরিকতা।

নিয়মের মধ্যে, শালীনতার মধ্যে, থেকেও একসাথে মিলেমিশে থাকা যায় একটা আস্ত পাড়ার সাথে সেটা যেনো কবে মুছে ফেলেছে এই আধুনিক সমাজ তথা প্রযুক্তি!

IMG_20251029_184050.jpgIMG_20251029_184032.jpg

এখন আমি আর আমার, ভাগ করে দেওয়া নেওয়ার চলন জানালা দিয়ে কবে যেনো পালিয়ে গেছে! এখন আর কেউ স্কুলে এক্ একটি সরঞ্জাম নিয়ে গিয়ে অদক্ষ হাতে টিফিনের সময় আলু কাবলি মাখে না!

স্কুল ফিরতি পথে একসাথে বিভিন্ন স্বাদের আচার খাওয়া উঠে গেছে, কারণ সবাই এখন স্কুল বাস কিংবা গাড়িতে করে বাড়ি ফেরে, তাই স্কুল গেট থেকে সোজা ওই গাড়িতে চালান করে শিশুদের বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয়!

যা চলে যায়, সেটাই অমূল্য তবে তারমধ্যে সবচাইতে অমূল্য বোধহয় শৈশব! আমার তো তাই মনে হয়, আর আপনাদের?

1000010907.gif

1000010906.gif

Sort:  
 last month 

আপনার লেখাটি পড়তে পড়তে যেন নিজের ছোটবেলায় ফিরে গিয়েছিলাম আরো একবার। আমরাও ছোট ছোট অ্যালুমিনিয়ামের ও মাটির হাড়ি -পাতিল ,থালা বাসন দিয়ে খেলতাম। আমাদের বাড়ির পাশেই পালপাড়া ছিল সেখানে বিভিন্ন ধরণের জিনিসপত্র ও খেলনা তৈরী হতো তারপরও বছর জুড়ে অপেক্ষা করতাম কবে রথের মেলা ,মাঘী পূর্ণিমা কিংবা পৌষ মেলার মতো আরো অনেক গুলো মেলার জন্য।
পাড়ার বাচ্চাদের সাথে রান্নাবাটি খেলতাম ,পুজোর প্রসাদ খেতাম শুধু তাই-ই না পুজোও করতাম অন্য বাচ্চাদের সাথে মিলে। কোনো বাড়িতে কিছু তৈরী হলে সেটার ভাগও পেতাম। এখনো বাবার বাড়ি গেলে পাশের বাড়ির কাকিমা পাঁচ তরকারী ,লুচি প্রভৃতি পাঠিয়ে দেন। ভাবলে খারাপ লাগে যে এই প্রজন্মের সাথেই হারিয়ে যাবে এই আন্তরিকতা। ধন্যবাদ আরো একবার ছেলেবেলায় ফেরত নেয়ার জন্য। ভালো থাকবেন সবসময়।

Loading...

Hello @sduttaskitchen! 👋
Congratulations!! Your post has been upvoted through steemcurator07. We support quality posts and comments throughout the platform. We encourage you to publish creative and quality content.

Format coment 3.png

Curated By: @walictd