শেষ বিকেলের মায়া - আমার লেখা ছোট একটি গল্প - পার্ট ০৩
চায়ের কাপটা টেবিলের উপর ঠুশ করে রেখে ফ্লোর কাঁপিয়ে নিজের রুমে ছুটল নীরা। গলা ফাটিয়ে কাঁদছে ঐশী। সপ্তাখানেক হবে, বেশ জ্বর। দ্রুত রুমে এসে নীরা আবিষ্কার করল তিনি কাঁথাও ভিজিয়ে রেখেছেন। ল্যাপটপে বুদ হয়ে আছে শাহেদ। একবারের জন্য ফিরে তাকানোর দরকারও বোধ করেনি। কাঁথা পালটাতে পালটাতে কয়েকবার কপালের চাদরে তিন চারটা ভাঁজ ফেলে তাকাল নীরা। ঐশীর চিৎকার ১৬০০hz অতিক্রম করার মতো। পাথর শাহেদ একটুও নড়ছে না। নীরা কোনোমতে কাঁথাটা নিচে ফেলে বাচ্চাকে কোলে তুলে নিল। আদুরে কণ্ঠে বার বার বলে চলল, ‘কেন কাঁদো! মা আসেনি বলে!! ও ও না না কাঁদে না মা। কাঁদে না। মা এসে পড়েছে।'
একই কথার লুপ ঘুরতে লাগল শাহেদের করোটির অন্ধকারে। ল্যাপটপ থেকে চোখ না সরিয়েই কিছুটা কর্কশ কণ্ঠে বলল, “নীরা! কাজ করছি আমি! পাশের রুমে যাও তো....' ঐশীর চিৎকারে কথা বাড়ানোর অবস্থায় নেই এখন নীরা। তাই পাশের রুমে এসে মেয়েটাকে একটু চুপ করানোর চেষ্টা করে চলেছে... সেই একই কথার বারে বারে উচ্চারণ! কথাগুলো সেতুর কানেও বাজতে লাগল। মিটমিট করে একটু চোখ খুলে কানের উপর বালিশ চেপে অন্য দিকে ফিরল বিরক্ত মুখে। সেতুর চোখে রাজ্যের ঘুম। সারা রাত কেঁদে দিনের ১০টা পর্যন্ত ঘুমানো ওর প্রায় তিন মাসের রুটিন হয়ে উঠেছে। ডিভোর্সের পর থেকে এই একটা কাজই সেতু খুব মনোযোগ দিয়ে করতে পারে। নীরাকে কিছুদিন সুনামগঞ্জ থাকতে হবে এনজিও-র কাজে। এ সময়ে ঐশীকে দেখে রাখার জন্যই সেতুকে ডেকে আনা। ভেবেছিল এক ঢিলে দুই পাখি মারা হবে। ঐশীকে দেখার মতো মানুষও পাওয়া যাবে, আর সাথে সেতুরও কিছু উপকার হবে, কিন্তু এখন
সন্তানের প্রতি বাবা-মায়ের অতি যত্ন, অতি আদর সন্তানকে টবের গাছে পরিণত করে। আমরা যদি এমন বাবা-মা হয়ে থাকি, তাহলে আমাদের ভেবে দেখা উচিৎ; আমরা কি আমাদের সন্তানদের ভালোবাসছি, নাকি তিলে তিলে তাদের ধ্বংস করে দিচ্ছি? তাই বাচ্চাদের ওদের ছোট ছোট কাজগুলো ওদের দিয়েই করিয়ে নিন। আম্মিকে দেখতাম আমার ছোট বোনরা যখন দুই-তিন বছরের ছিল, তখন থেকেই ওদের ঘর গুছাতে, কম্বল ভাঁজ করতে দিত। পুরো খাট জুড়ে কম্বল বিছিয়ে ওরা ছোট ছোট হাতে খুব খুশি হয়ে কাজ করত। কম্বলের এক কোণা উঠাতে গিয়ে পড়ে যেত; তাও আম্মি ওদেরই করতে দিতেন। ভাঁজ করা তো আর ঠিক হতো না। ভাঁজ করা কম্বলেরও এই কোণা সেই কোণা বের হয়ে থাকত। সেটার জন্যই আম্মি ওদের প্রশংসা করতেন। রাতে বাপ্পা আসলে কম্বল দেখিয়ে বলতেন, “দেখেছ আজকের কম্বল ভাঁজ করা কতটা সুন্দর হয়েছে! এটা ওরা ভাঁজ করেছে।' বাপ্পাও সেই এলোমেলো ভাঁজ করা কম্বল দেখে ওদের প্রশংসা করতেন। ইদানীং মায়েরা পারে না বাচ্চার খাবারটা পর্যন্ত চিবিয়ে মুখে ঢুকিয়ে দেয়। পারে না গিলে পর্যন্ত দেয়। স্টুডেন্টের বাসায় গিয়ে দেখি, তার মা তাকে পানি খাওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি শুরু করেছে। পিচ্ছি বলছে সে একবার খেয়েছে। এখন খাবে না। তবুও ভদ্রমহিলা মাতৃত্বের শাসন খাটিয়ে পানি খাওয়াবেনই।
নিজের বাচ্চাদের ‘টবের গাছ' বানাবেন না। এতে তো আপনিই আপনার সন্তানের ভীষণ ক্ষতি করে দিচ্ছেন। আপনি আপনার বাচ্চাদের অসাধারণ বাড়িতে রাখতে পারেন, পারেন মজার মজার খাবার খাওয়াতে, ইচ্ছে হলে পিয়ানো শিখাতে পারেন অথবা ক্যারাটে, কিংবা বড় স্ক্রিনে টিভি দেখাতে পারেন। কিন্তু যখন আপনি বাগানের ঘাস কাটছেন তখন তাদেরও বুঝতে দিন ঘাস কাটায় কেমন আনন্দ অথবা কেমন কষ্ট। খাওয়ার শেষে তাদের নিজেদের প্লেট নিজেদের ধুতে দিন। ভাই বোন সবাইকে এক সাথে মিলে ধুয়ে নিতে দিন। পানি নষ্ট করবে? বা সাবান? করতে দিন। এক দিন বা দুই দিন। তিন দিনের দিন ঠিকই কাজ করার পদ্ধতি শিখে যাবে। কেন আপনার আদরের সন্তানদের বাসার কাজ করতে দিবেন? আপনার কি কাজের লোক রাখার সামর্থ্য নেই?
This is very awesome story. keep it up.