নতুন প্রবীণদের নিয়ে আমার লেখা ছোট একটি গল্প - পর্ব ২৬
মিষ্টি করে তিনি তার ছোটো নাতনীকে ডাকলেন, দেদেভাই...। বলো দাদীমা । তুই ঠেক আচিস দেদেভাই? হ্যাঁ দাদীমা আমি ঠিক আছি। শরীরটে কদিন ধরেই খুব খারাপ লাগচে তাই না দেদেভাই? না দাদীমা । ডাক্তার দেখাবি না দেদেভাই? না ডাক্তার দেখানোর মতো কিছু হয়নি। ডাক্তার দেখাতে হলে বাবাকে জানাতে হবে। আমি চাই না বাবা কিছু জানুক । ঠেক আচে ঠেক আচে দেদেভাই। তুই শান্ত হয়ে চুপটি করে শুয়ে থাক । সহস্রাব্দী আর কিছু না বলে চোখ বন্ধ করল। তার মনে হচ্ছে তার শরীরটা ভেঙে আসছে। উঠে বসার এতটুকু জোর নেই তার শরীরে। তবে এখন উঠে বসে কাজও নেই। একটু ঘুমিয়ে নিলেই শরীরটা ভালো লাগবে । সহস্রাব্দী আষ্টেপৃষ্ঠে কাঁথাটা তার গায়ে জড়িয়ে নিল ।
সহস্রাব্দী যখন ঘুম থেকে উঠল তখন সন্ধ্যা। এত সময় ধরে সে দিনের বেলা কখনো ঘুমায় না। শরীরটার বোধহয় সত্যিই বড়ো কিছু হয়েছে। আজ আর সে কোনো পড়াশোনা করল না। না মন ভালো লাগছে, না শরীর। ক্লাসে অতগুলো মানুষের মধ্যে তার মাথা ঘুরে গেল। কী ভাবছে তার বান্ধবীরা? আর স্যার ম্যাডামরাই বা কী ভাবছে? চিন্তা করতে করতে সহস্রাব্দীর কাঁপুনি শুরু হলো। তার জ্বর আসছে। রাতের খাবার খেয়ে সে একটা জ্বরের ওষুধ খেয়ে বসে রইল জ্বর কমার অপেক্ষায়। খাটে বসে যখন সে গালে হাত দিয়ে একমনে আজকের সারাদিনের কথা চিন্তা করতে লাগল ঠিক সেই সময় তার ফোন বেজে উঠল। সহস্রাব্দী ফোনটা হাতে নিয়ে দেখল স্ক্রিনে শতদল নামটা ভাসছে। আজকে তাহলে অনেকদিন পর উৎপলের সাথে তার কথা হবে । সহস্রাব্দী ফোনটা ধরতেই ওপাশ থেকে উৎপল বলে উঠল, বাহ প্ৰায় সপ্তাহখানেক পর আপনাকে ফোনে পেলাম। সব ঠিকঠাক আছে তো? জ্বি সব ঠিকঠাক আছে। একটা ভালো খবর আর একটা খারাপ খবর আছে । কোনটা আগে শুনতে চান বলুন । উৎপল একটু চিন্তা করার ভান করে বলল, উমম.. আগে ভালো খবর ।
পারবি তুই? সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর তার উপর তোর অধিকার থাকবে তো? অধিকার আদায় করে নিতে হয় সহু। এই পাঁচ মাসে আমি নিজের জন্য যা আদায় করে নিতে পারিনি আগামী নয় মাসের মধ্যে আমার সন্তানের জন্য আমি সেটা আদায় করে নিবো। সহস্রাব্দী চুপ করে রইল। নীরবতা কাটিয়ে একসময় সে বলল, ছেলে হলে তোর শ্বশুরবাড়ির সবাই বেশি খুশি হবে তাই না, বু? শতাব্দী হেসে বলল, যদি ছেলে হয় আমি ওকে অনেক পড়াশোনা শেখাবো। মনুষ্যত্ব শেখাবো। সর্বোপরি সৎপথে পরিবারের দায়িত্ব নিতে শেখাবো। আর যদি মেয়ে হয়? আর যদি মেয়ে হয় আমি ওকে অনেক পড়াশোনা শেখাবো ।
মনুষ্যত্ব শেখাবো। নিজের একটা পরিচয় গড়ে তুলতে শেখাবো। আর শিখাবো নিজে স্বাবলম্বী হয়ে পরিবারের দায়িত্ব কীভাবে নিতে হয়। সহস্রাব্দী তার বুবুর দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। মনে মনে সে বলল, হে আল্লাহ, তোমার ডাকের আগে একটাবার মামণী ডাকটা যেন শুনে যেতে পারি! শতাব্দী কিছুদিন পরে শ্বশুরবাড়ি ফিরে গেলেও সহস্রাব্দী নিজের মন এতটুকু খারাপ হতে দিল না। অনেকদিন পর তার জীবনে একটা ভালো খবর এসেছে। আর বুবুর খুশিই তো তার খুশি। মনটা ভালো রাখার চেষ্টায় সে তার শরীর খারাপকে আরো চেপে রেখে দিল। তবে চাইলেই সবসময় সবকিছু চেপে রাখা যায় না। জুলাই মাসের এক বর্ষার দিনে ক্লাসে হঠাৎ করেই সে মাথা ঘুরে পড়ে গেলে বান্ধবীরা তাকে কলেজ থেকে বাড়িতে নিয়ে এল । বাড়িতে এখন মা আর দাদীমা ছাড়া কেউ নেই। তারা তাড়াতাড়ি করে প্রায় বেহুশ সহস্রাব্দীকে ভিতরের ঘরে বিশ্রামের জন্য নিয়ে গেল । সহস্রাব্দী এক গ্লাস পানিও খেতে চাইল না। তার একটাই কথা। বাবাকে যেন এসব কিছু না জানানো হয়। মা অনেক চেষ্টা করলেন তাকে গরম দুধ কিংবা চা খাওয়ানোর জন্য। সহস্রাব্দী কিছুতেই কিছু খেতে রাজী হল না । মা অপারগ হয়ে চলে গেলেন । শুধু দাদীমা বসে রইলেন তার কাছে ।
This post has been upvoted by @italygame witness curation trail
If you like our work and want to support us, please consider to approve our witness
Come and visit Italy Community
Hi @fxsajol,
my name is @ilnegro and I voted your post using steem-fanbase.com.
Come and visit Italy Community