নতুন প্রবীণদের নিয়ে আমার লেখা ছোট একটি গল্প - পর্ব ৩২

সহস্রাব্দী খুব আস্তে আস্তে বলল, এইত ভালো । আপনি? ভালো না । আপনাকে খুব মিস করছিলাম । তাই নাকি? হ্যাঁ। কেন? আপনি করেননি? জ্বি, না ৷ মিথ্যা বলছেন কেন? বলেছি বেশ করেছি। তাহলে স্বীকার করলেন যে মিথ্যা বলেছেন। তার মানে আপনি আমাকে মিস করেছেন এতদিন। সহস্রাব্দীকে কিছু না বলতে শুনে উৎপল আবার বলল, মিথ্যা বললেন কেন বলুন তো? কেন আবার? আপনার সাথে ঝগড়া করার জন্য। আমার সাথে কি আপনার শুধু ঝগড়া করতে ইচ্ছা করে? হ্যাঁ তাই তো করে। আমার দাদীমা কী বলেছিল মনে নেই? বেয়াই সম্প্রদায়ের ঝগড়া সবসময় বজায় রাখা উচিত । উৎপল হাসতে লাগল। দুজনে সেদিন আরো অনেক কথা বলল । যখন ফোন কাটলো তখন মধ্যরাত । ফোনটা কাটার পর সেদিন উৎপলের নম্বরটা সহস্রাব্দী তার ফোনে সেভ করে রাখল শতদল নাম দিয়ে। তারপর থেকে মাঝে মাঝেই উৎপল তাকে ফোন করতো। তবে সবদিন ফোনে সহস্রাব্দীকে পাওয়া যেতো না।

কারণ প্রায় দিনই সে শরীর অসুস্থ লাগার কারণে ফোন বন্ধ করে আগে আগে শুয়ে পড়তো। তবে যেদিন যেদিন তার একটু সুস্থ বোধ হতো সে ফোনটা হাতে নিয়ে বসে থাকতো স্ক্রিনে একটাবার শতদল নামটা ফুটে উঠার অপেক্ষায় ৷ এভাবে দিন যেতে লাগল। সহস্রাব্দীর ফার্স্ট ইয়ারের ফাইনাল পরীক্ষার আর বেশিদিন বাকি নাই । কিন্তু পরীক্ষার আগে আগেই তার শরীরটা অনেক বেশি খারাপ হয়ে গেল । এতদিন সব কিছু সয়ে সে বাড়ির কাজ, পড়াশোনা সব চালিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু এবার মনে হচ্ছে সব সহ্যক্ষমতাকে সব ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এবার বোধহয় ডাক্তার না দেখাইলেই নয়। ডাক্তার দেখাতে হলে বাড়ির সবাইকে আগে জানাতে হবে। এখনো কেউ কিছু জানে না ।

আর কারো জন্য অপেক্ষা করলে যে আপনাকে পাওয়া যাচ্ছিল না। কেবল তিতলি আপুর জন্য অপেক্ষা করলেই আপনাকে পাওয়া যাচ্ছিল। সহস্রাব্দীকে চুপ করে থাকতে দেখে উৎপল আবার বলল, আপনি শুধু ভাবছিলেন কিভাবে ওদের প্রেমটা করিয়ে দিবেন। আর আমি পুরোটা সময় শুধু আপনার কথাই ভাবছিলাম । কী বলছেন এসব? মুখে লাগাম দিন। সহস্রাব্দীর কণ্ঠে রাগ ছিল না। ছিল লজ্জামিশ্রিত ভয় । উৎপল আর কিছু না বলে শুধু মিষ্টি করে হাসল। সেদিন তাকে বিদায় দিয়ে চলে এলেও সহস্রাব্দীর মন থেকে তার স্মৃতি এতটুকুও ম্লান হল না। তারপর দিনের পর দিন কেটে যেতে লাগল। কিন্তু সহস্রাব্দীর কেবলই মনে হল গতকালই বোধহয় উৎপলের সাথে তার কথা হয়েছিল। গতকালই বোধহয় উৎপল জ্বর দেখার জন্য তার হাত ধরেছিল । ছুটি শেষ হয়ে গেলে সহস্রাব্দী আবার কলেজে যেতে শুরু করল । বান্ধবীদের সাথে আড্ডা দেয়ার ফাঁকে ফাঁকে উৎপলের কথা মনে পড়ে সে হেসে ওঠে।

বাড়ির বড়ো বারান্দাটায় গিয়ে দাঁড়ালে উৎপলের কথা মনে পড়ে তার লজ্জা লাগে। শতাব্দী বুবু চলে যাওয়ার কারণে বাড়িটা যখন ফাঁকা ফাঁকা লাগে তখন তার শ্বশুরকুল আর উৎপলের কথা মনে করে সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। আর যখন তার প্রচণ্ড শরীর খারাপ লাগে কিংবা গা কাঁপিয়ে জ্বর আসে তখন উৎপলের কথা মনে করে তার ভীষণ কষ্ট হয় । তার এই অপেক্ষার প্রহর কাটাতেই বোধহয় একদিন রাতে হঠাৎ তার বাটন ফোনে একটা অপরিচিত নম্বর থেকে কল এল। সে ফোনটা রিসিভ করে বলল, হ্যালো আসসালামু আলাইকুম । ওয়ালাইকুম আসসালাম। আমি পদ্মফুল বলছি। আপনি কি এক হাজার বছর? সহস্রাব্দীর ভিতর দিয়ে যেন বৈদ্যুতিক ঝলক বয়ে গেল। সে বিশ্বাসই করতে পারছে না। উৎপল তাকে ফোন করেছে! উৎপল! সত্যিই? ওপাশের মানুষটিকে চুপ করে থাকতে দেখে উৎপল বুঝল তার ধারণা সঠিক। সে খুশিমনে আবার বলল, কেমন আছেন?