নিজের তোলা কিছু ন্যাচারাল ছবি এবং সাথে ৩ টি কবিতা

in #photos29 days ago

গর্জি উঠে গদাই ভূঁঞা, মোহন ভূঁঞার ভাজন' বেটা, যার লাঠিতে মামুদপুরের নীল কুঠিতে লাগল লেঠা। সব গার লোক এক হল আজ রূপার ছোট উঠান পরে, নাগ-নাগিনী আসল যেন সাপ খেলানো বাঁশীর স্বরে। রূপা তখন বেড়িয়ে তাদের বলল, “শোন ভাই সকলে, গাজনা চরের ধানের জমি আর আমাদের নাই দখলে।” বছির মামু বলছে খবর—মোল্লারা সব কালকে নাকি; আধেক জমির ধান কেটেছে, আধেক আজও রইছে বাকি। “মোদের খেতে ধান কেটেছে, কালকে যারা কাঁচির খোঁচায়; আজকে তাদের নাকের ডগা বাঁধতে হবে লাঠির আগায় । ” থামল রূপাই—ঠাটা যেমন মেঘের বুকে বাণ হানিয়া, নাগ-নাগিনীর ফণায় যেমন তুবড়ী বাঁশীর সুর হাঁকিয়া। গর্জে উঠে গাঁয়ের লোকে, লাটিম হেন ঘোড়ার লাঠি, রোহিত মাছের মতন চলে, লাফিয়ে ফাটায় পায়ের মাটি 1 রূপাই তাদের বেড়িয়ে বলে, “থাল বাজারে থাল বাজারে, থাল বাজারে সড়কি ঘুরা হারে লাঠি এক হাজারে। হারে লাঠি হারে কুঠার, গাছের ছ্যান' আর রাম-দা-ঘুরা, হাতের মাথায় যা পাস যেথায় তাই লয়ে আজ আয়রে তোরা ।” “আলী ! আলী ! আলী !! আলী !!!” রূপার যেন কণ্ঠ ফাটি, ইস্রাফিলের শিঙ্গা বাজে কাপ্‌ছে আকাশ কাপ্‌ছে মাটি । তারি সুরে সব লেঠেলে লাঠির পরে হানল লাঠি, “আলী-আলী” শব্দে তাদের আকাশ যেন ভাঙবে ফাটি।

IMG_6574.jpg

আগে আগে ছুটল রূপা – বৌ বৌ বৌ সড়কি ঘোরে, কাল সাপের ফণার মত বাবরী মাথায় চুল যে ওড়ে চল্ল পাছে হাজার লেঠেল “আলী-আলী” শব্দ করি, পায়ের ঘায়ে মাঠের ধুলো আকাশ বুঝি ফেলবে ভরি ! চল তারা মাঠ পেরিয়ে চল্ল তারা বিল ডিঙিয়ে কখন ছুটে কখন হেঁটে বুকে বুকে তাল ঠুকিয়ে । চল্ল যেমন ঝড়ের দাপে ঘোলাট মেঘের দল ছুটে যায়, বাও কুড়ানীর মতন তারা উড়িয়ে ধূলি পথ ভরি হায় ! দুপুর বেলা এল রূপাই গাজনা চরের মাঠের পরে, সঙ্গে এল হাজার লেঠেল সড়কি লাঠি হস্তে ধরে ! লম্ফে রূপা শূন্যে উঠি পড়ল কুঁদে মাটির পরে, থাকল খানিক মাঠের মাটি দন্ত দিয়ে কামড়ে ধরে। মাটির সাথে মুখ লাগায়ে, মাটির সাথে বুক লাগায়ে, “আলী ! আলী !!” শব্দ করি মাটি বুঝি দ্যায় ফাটায়ে । হাজার লেঠেল হুঙ্কারী কয় “আলী আলী হজরত আলী,” সুর শুনে তার বন-গেঁয়োদের কর্ণে বুঝি লাগল তালি ! তারাও সবে আসল জুটে দলে দলে ভীম পালোয়ান, “আলী আলী” শব্দে যেন পড়ল ভেঙে সকল গাখান ! সামনে চেয়ে দেখল রূপা সার বেঁধে সব আসছে তারা, ওপার মাঠের কোল ঘেঁষে কে বাকা তীরে দিচ্ছে নাড়া। রূপার দলে এগোয় যখন, তারা তখন পিছিয়ে চলে, তারা আবার এগিয়ে এলে এরাও হটে নানান কলে ।

তাল ঠুকিয়া ছুটল রূপাই, ছুটল পাছে হাজার লাঠি, “আলী-আলী – হজরত আলী” কণ্ঠ তাদের যায় যে ফাটি। তাল ঠুকিয়া পড়ল তারা বন-গেঁয়োদের দলের মাঝে, লাঠির আগায় লাগল লাঠি, লাঠির আগায় সড়কি বাজে। ‘মার মার মার’ হাঁকল রূপা, – 'মার মার মার' ঘুরায় লাঠি, ঘুরায় যেন তারি সাথে পায়ের তলে মাঠের মাটি। আজ যেন সে মৃত্যু-জনম ইহার অনেক উপরে উঠে, জীবনের এক সত্য মহান লাঠির আগায় নিচ্ছে লুটে ! মরণ যেন মুখোমুখি নাচছে তাহার নাচার তালে, মহাকালের বাজছে বিষাণ আজকে ধরার প্রলয় কালে । নাচে রূপা – নাচে রূপা—লোহুর গাঙে সিনান করি, মরণরে সে ফেলছে ছুঁড়ে রক্তমাখা হস্তে ধরি । নাচে রূপা – নাচে রূপা – মুখে তাহার অট্টহাসি, বক্ষে তাহার রক্ত নাচে, চক্ষে নাচে অগ্নিরাশি - হাড়ে হাড়ে নাচন তাহার, রোমে রোমে লাগছে নাচন কি যেন সে দেখেছে আজ, রুতে নারে তারি মাতন। বন-গেঁয়োরা পালিয়ে গেল, রূপার লোকও ফিরল বহু, রূপা তবু নাচছে, গায়ে তাজা-খুনের হাছে লোহু।

Sort:  

You've got a free upvote from witness fuli.
Peace & Love!

Coin Marketplace

STEEM 0.28
TRX 0.12
JST 0.033
BTC 61519.90
ETH 2995.96
USDT 1.00
SBD 3.45