তারার খবর
নমস্কার বন্ধুরা,
তারার মৃত্যু খবর আমরা যখন পাই,তখন বাস্তবে সেই তারার অবস্থা আমাদের কল্পনার থেকেও অনেক বেশি নাটকীয়—এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো,আমরা যা দেখি তা আসলে অতীত।এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাটা ধাপে ধাপে বুঝলে বিষয়টি পরিষ্কার হয়।
প্রথমত, আলো ভ্রমণের সীমা বুঝতে হবে।আলো প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৩ লক্ষ কিলোমিটার বেগে চলে,কিন্তু মহাকাশের দূরত্ব এত বিশাল যে তবুও আলো পৌঁছাতে বছর, হাজার বছর, এমনকি লক্ষ-কোটি বছর লেগে যায়।ফলে যে তারাটি ১,০০০ আলোকবর্ষ দূরে,তার আলো আজ আমাদের চোখে পৌঁছাচ্ছে মানে আমরা তাকে ১,০০০ বছর আগের অবস্থায় দেখছি।সুতরাং কোনো তারার “মৃত্যু” আমরা যখন আবিষ্কার করি,তখন বাস্তবে সেই ঘটনা বহু আগেই ঘটে গেছে।
দ্বিতীয়ত, তারার মৃত্যু আসলে কী—তা তার ভরের উপর নির্ভর করে।সূর্যের মতো মাঝারি ভরের তারা জ্বালানি (হাইড্রোজেন) ফুরিয়ে গেলে ধীরে ধীরে ফুলে উঠে লাল দানব (Red Giant) হয়,তারপর বাইরের স্তর ঝরিয়ে দিয়ে কেন্দ্রে একটি সাদা বামন (White Dwarf) রেখে যায়।এই প্রক্রিয়াটি লক্ষ লক্ষ বছর ধরে চলে।আমরা যখন তার “শেষ আলো” দেখি,তখন কেন্দ্রে থাকা বস্তুটি ইতিমধ্যেই নিস্তেজ, ঘন ও প্রায় মৃত অবস্থায় থাকে।
কিন্তু যদি তারাটি খুব বড় ভরের হয়,তাহলে তার মৃত্যু ঘটে সুপারনোভা বিস্ফোরণের মাধ্যমে।এই বিস্ফোরণ এত শক্তিশালী যে কয়েক সেকেন্ডে পুরো তারার কাঠামো ভেঙে পড়ে।বিস্ফোরণের পর কেন্দ্রে তৈরি হয় নিউট্রন তারা বা আরও বড় হলে ব্ল্যাক হোল।আমরা যে উজ্জ্বল আলো বা বিস্ফোরণ দেখি,সেটি আসলে সেই মৃত্যুর “শেষ চিৎকার”, যা হাজার বা লক্ষ বছর পরে আমাদের কাছে পৌঁছায়।তখন বাস্তবে সেখানে আর তারা নেই—শুধু ধ্বংসাবশেষ ও চরম ঘন বস্তু।
তৃতীয়ত, আমরা খবর পাওয়া পর্যন্ত তার অবস্থা কী হয়—এই প্রশ্নের উত্তরে বলা যায়, খবর পাওয়ার আগেই সেই তারা হয়তো সম্পূর্ণ অন্য রূপ নিয়েছে।কোনো ক্ষেত্রে সে ইতিমধ্যেই ঠান্ডা সাদা বামন,কোনো ক্ষেত্রে নিউট্রন তারা,আবার কোনো ক্ষেত্রে ব্ল্যাক হোল হয়ে আশেপাশের আলোও গ্রাস করছে।কিন্তু আমরা এখনো তার “মৃত্যুর আলো” দেখছি মাত্র।
চতুর্থত, এই কারণেই জ্যোতির্বিদ্যায় বলা হয়—মহাকাশ মানেই অতীতের সংগ্রহশালা।দূরের গ্যালাক্সি বা তারা মানে আমরা সময়ের জানালা দিয়ে তাকাচ্ছি।যত দূরে তাকাই, তত বেশি অতীতে ফিরে যাই। এমনও হতে পারে,আমরা আজ যে উজ্জ্বল তারাকে দেখছি,সে বাস্তবে আর অস্তিত্বেই নেই।
সবশেষে বলা যায়, তারার মৃত্যু খবর আমরা পাওয়ার সময় সেই তারা বাস্তবে আর “মৃত্যুপথে” থাকে না—তার মৃত্যু বহু আগেই সম্পন্ন হয়ে গেছে।আমরা কেবল সেই মৃত্যুর আলো, শক্তি ও ইতিহাসের দেরিতে পৌঁছানো বার্তাবাহককে দেখছি।তাই আকাশের প্রতিটি তারা আসলে শুধু আলো নয়, সময়ের একটি চিহ্ন।
VOTE @bangla.witness as witness

OR
| 250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |




Congratulations, your post has been upvoted by @nixiee with a 8.889550529092771 % upvote Vote may not be displayed on Steemit due to the current Steemit API issue, but there is a normal upvote record in the blockchain data, so don't worry.