মন্দিরে রহস্য

in আমার বাংলা ব্লগ14 days ago

নমস্কার বন্ধুরা,

পুরীর জগন্নাথ মন্দিরকে ঘিরে যে সব “বৈজ্ঞানিক রহস্য” বলা হয় সেগুলোর অনেকগুলোরই পেছনে আসলে আছে সূক্ষ্ম স্থাপত্যবিজ্ঞান,পরিবেশবিজ্ঞান আর মানুষের মানসিক অনুভূতি।ধর্মীয় বিশ্বাসকে অমান্য না করে, বিজ্ঞানী দৃষ্টিতে এগুলোকে ব্যাখ্যা করলে পুরো ব্যাপারটা আরও বিস্ময়কর মনে হয়।

17646251083482484220791284183329.png

Image created by OpenAI


১. প্রধান গম্বুজের ছায়া দেখা যায় না – আসলে কী হয়?

লোকজন বলে, জগন্নাথ মন্দিরের মূল গম্বুজের নাকি কোনো ছায়া পড়ে না।বাস্তবে যে কোনো বস্তু থেকেই ছায়া পড়ে, তবে এখানে কৌশলটা হলো স্থাপত্যের।মন্দিরের মূল গম্বুজ এত উঁচু এবং চারপাশের অংশ এমনভাবে সাজানো যে সূর্যের আলো যখন পড়ে, তখন গম্বুজের ছায়া মন্দিরের নিজের শরীরের ওপরই পড়ে, মাটিতে আলাদা করে আলাদা ছায়া চোখে পড়ে না।অনেক গবেষক ব্যাখ্যা করেছেন, গম্বুজের আকার, উচ্চতা আর মন্দির কমপ্লেক্সের অনুপাত মিলিয়ে একটা এমন জ্যামিতিক অবস্থা তৈরি হয়েছে, যাতে বাইরে থেকে দাঁড়িয়ে আপনি “আলাদা” ছায়া ধরতে পারেন না—এটাই রহস্যের বৈজ্ঞানিক দিক।


২. পতাকা সবসময় “উল্টো হাওয়ায়” উড়ে – বায়ুপ্রবাহের খেলা

আরেকটি জনপ্রিয় কথা, মন্দিরের চূড়ার পতাকা নাকি সবসময় বাতাসের উল্টো দিকে উড়ে। সাম্প্রতিক কিছু ইঞ্জিনিয়ারিং–স্টাডি বলছে, এত উঁচু ও বড় পাথরের কাঠামোর পেছনে একটা wake region তৈরি হয়—এটা এমন একটা এলাকা যেখানে বাতাসের স্বাভাবিক দিক ভেঙে গিয়ে ঘূর্ণি তৈরি হয়, বায়ু পিছন দিক থেকে ঘুরে আসে, যাকে বলে recirculation flow।ফলে নিচে দাঁড়িয়ে যে দিক থেকে হাওয়ার প্রবাহ আপনি অনুভব করছেন, পতাকা সেই দিকের বিপরীত দিকে নড়াচড়া করতে দেখা যায়।এটা অলৌকিক কিছু নয়, বরং টার্বুলেন্ট এয়ারফ্লো আর ফ্লুইড ডাইনামিক্সের কম্বিনেশন।


৩. সমুদ্রের হাওয়ার শব্দ মন্দিরের ভিতরে কম শোনা যায়

মন্দিরের ঠিক কাছে বঙ্গোপসাগর, কিন্তু বলা হয় মন্দিরের ভিতরে গেলে সমুদ্রের গর্জন যেন হারিয়ে যায় আর বাইরে আবার জোরে শোনা যায়। এর পিছনে আছে অ্যাকুস্টিক ডিজাইন

  • মন্দিরের চারদিকে উঁচু প্রাচীর (Meghanada Pacheri) ও ভিতরের আরেক বেষ্টনী (Kurma Bedha) দুটোই সাউন্ড–বাফার হিসেবে কাজ করে।* পাথরের পুরু দেয়াল ও বহু ছোট–ছোট গর্ত–খোপ সমুদ্রের সাউন্ডওয়েভের একটা বড় অংশ শোষণ বা বিচ্ছুরণ করে দেয়।

ফলে মন্দির চত্ত্বরে ঢুকলেই আপনি “relative silence” অনুভব করেন; আবার বাইরে খোলা জায়গায় বের হওয়া মাত্র সমুদ্রের গর্জন ফের প্রাধান্য পায়।


৪. “মহাপ্রসাদ” কখনো নষ্ট হয় না, সবসময় সমানভাবে ভাগ হয়

জগন্নাথ মন্দিরের অন্নপ্রসাদ বা মহাপ্রসাদ–এর আরেকটা বৈশিষ্ট্য, যত ভক্তই আসুক না কেন,নাকি কখনো কমও পড়ে না, বেশি থেকেও যায় না।ধর্মীয় দৃষ্টিতে এটা অলৌকিক মনে হলেও, এর পেছনে রয়েছে বহু শতাব্দীর অভিজ্ঞতা–ভিত্তিক সম্পূর্ণ এক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম

  • প্রতিদিন কী পরিমাণ ভক্ত আসছে, বছরের কোন মরশুম, কোন উৎসব—এসবের গড় হিসাব বহু প্রজন্মের রান্নাবান্না ও সেবকরা মনে রাখেন।
  • রান্না হয় মাটির হাঁড়িতে, “স্টিম স্ট্যাকিং” পদ্ধতিতে; উপর–নিচে হাঁড়ি সাজিয়ে একই আগুনে অনেক হাঁড়ি একসাথে সেদ্ধ করা হয়, ফলে জ্বালানি বাঁচে, তাপ নিয়ন্ত্রণ হয়, আর খাবার দীর্ঘক্ষণ গরম থাকে।

এগুলো ঠিকঠাক ব্যবস্থাপনা, পরিমিততা আর অভিজ্ঞতাজনিত “ডেটা সায়েন্স”; আমরা বাইরে থেকে দেখে একে অলৌকিক বলি।


৫. স্থাপত্যের কৌশল – Kalinga/Nagara স্টাইলের বিজ্ঞান

মন্দিরটি গড়া Kalinga স্থাপত্যশৈলীতে; উঁচু vimana/deula, সামনে jagamohana, natamandapa, bhogamandapa—সব মিলিয়ে পুরো কাঠামো একধরনের ইঞ্জিনিয়ারিং–মডেল। ([ClearIAS][4])

  • এত বড় পাথরের গম্বুজকে ভারবহন করতে ভেতরে জটিল interlocking stone system ব্যবহার হয়েছে, যেখানে চুন–সুরকি খুব সামান্য বা কোথাও নেই বললেই চলে—এটা pure compression ও জ্যামিতিক ব্যালান্সের উপর দাঁড়ানো কাঠামো।* সমুদ্র–হাওয়া আর লবণাক্ত আদ্রতা সহ্য করার জন্য পাথরের নির্বাচন, মোটা প্রাচীর, ড্রেনেজ–ডিজাইন সবই অত্যন্ত বৈজ্ঞানিক।

৬. নবকলেেবর ও কাঠের মূর্তি – জৈব পদার্থের দৃষ্টিতে

জগন্নাথ–বালভদ্র–সুভদ্রার মূর্তি পাথরের নয়, neem কাঠের তৈরি এবং নির্দিষ্ট সময় পরপর (১২ বা ১৯ বছরে) নবকলেেবর–এ পরিবর্তন করা হয়।কাঠ একটা জৈব পদার্থ—

  • সময়ের সাথে সাথে ভেতরে পোকা, আর্দ্রতা,ছত্রাক ইত্যাদিতে কাঠের গুণমান নষ্ট হয়।
  • নিয়মিত পরিবর্তনের ফলে কাঠের ক্ষয়, গন্ধ, দাগ–দোষ ইত্যাদি থেকে দেবমূর্তি সবসময় “fresh” ও পূজোপযোগী থাকে। ([Wikipedia][3])

ধর্মীয় ব্যাখ্যায় এটি দেবতাদের নতুন দেহ প্রাপ্তি; বিজ্ঞানের ভাষায় এটি অত্যন্ত যৌক্তিক maintenance protocol


৭. বৈজ্ঞানিক রহস্য আর মানুষের অনুভূতি – দুটোই সত্যি

পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের রহস্যগুলোকে শুধুই কুসংস্কার বলে উড়িয়ে দিলে ভুল হবে,আবার এগুলোকে একেবারে অলৌকিক বললেও বাস্তবের সৌন্দর্য কমে যায়।এখানে স্থাপত্য, বায়ুবিজ্ঞান, শব্দবিজ্ঞান, জৈব পদার্থ, ম্যানেজমেন্ট–সব মিলিয়ে একটা জটিল কিন্তু সুশৃঙ্খল বৈজ্ঞানিক ব্যাকগ্রাউন্ড আছে; সঙ্গে আছে হাজার বছরের বিশ্বাস, ভক্তি আর সংস্কৃতির স্তর।

ধর্ম মানুষের হৃদয়কে স্পর্শ করে, আর বিজ্ঞান আমাদের মস্তিষ্ককে; পুরীর জগন্নাথ মন্দির এই দুইয়ের সুন্দর মিলন—যেখানে একই ঘটনাকে আপনি যেমন ভক্তির চোখে “মিরাকল” দেখে অনুভব করতে পারেন, তেমনি জিজ্ঞাসু মন নিয়ে তার ভিতরের গাণিতিক–ভৌত কৌশলও বুঝতে পারেন।
VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png


Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png


ধন্যবাদ।সবাই ভালো থাকবেন।

BoC- linet.png
-cover copy.png

|| Community Page | Discord Group ||


Posted using SteemPro Mobile

1000158488.jpg

PUSS COIN:BUY/SELL

Sort:  

Congratulations @swagata21, your post was upvoted by @supportive.

Congratulations, your post has been upvoted by @nixiee with a 8.901442599368842 % upvote Vote may not be displayed on Steemit due to the current Steemit API issue, but there is a normal upvote record in the blockchain data, so don't worry.