কুঞ্জবিহারীর নিকুঞ্জ - পর্ব ০২
copyright free image source pixabay
প্রথম পর্বের পর
দুই
এ হেন কুঞ্জবাবুর অনেক দিনের শখ একটা কুকুর পোষা । ঘিয়ে ভাজা নেড়ী কুত্তা নয়, দস্তুরমতো জাঁদরেল বিদেশী কুকুর । যেটা তাঁর সারাক্ষনের ছায়াসঙ্গী হবে । ইংরেজিতে কম্যান্ড করবেন, তাঁর কুকুর সেগুলো মুহূর্তের মধ্যে পালন করবে । কিন্তু সাধ থাকলেই যে সেটা পূরণ হবে এমন তো নয় । বাড়িতে তাঁর চাইতে আরো জাঁদরেল তাঁর বাপ নব্বই বছরের হরনাথবাবু আছেন । তাঁর ভয়ে কুঞ্জবাবু সব সময় তটস্থ থাকেন । তাঁর বাবার এখনো ধারণা কুঞ্জবাবু সেই ছোট্টটি আছেন । যখন তখন শাসন করা চাই ।
ভোর পাঁচটায় তাঁর নব্বই বছরের বুড়ো বাপ তাঁকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে প্রাতর্ভ্রমণে পাঠান । সাত সকালে নিমপাতা , কাঁচা হলুদ খেতে হয় এখনো । দুপুর বারোটার মধ্যে স্নানাহার সারতে হয় । সন্ধ্যা আহ্নিক একদিনও বাদ দেওয়ার জো নেই । আর রাত দশটার মধ্যে তো শুয়ে পড়তেই হয় । শুধু রোববারের দিন বুড়ো বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাড়ি থাকেন না । ঝিলের ধারে বুড়োদের একটা সান্ধ্য মজলিশ বসে, সেখানে কাটিয়ে আসেন ।তাই রবি বারটাতেই শুধুমাত্র কুঞ্জবাবু তাঁর আশ্চর্য আবিষ্কারগুলো প্রদর্শন করে থাকেন ।
কুঞ্জবাবুর নব্বই বছরের বুড়ো বাপ হরনাথ এখনো বেশ ফিট আছেন । দু'পাটি ভর্তি দাঁত নিয়ে বুড়ো এখনো পাঁঠার হাড় গুঁড়ো করেন । ষাট বছরের ছেলে কুঞ্জবাবুকে তিনি যথেষ্ঠ শাসনে রাখলেও নিজের নাতি পুতি গুলোকে বুড়ো চোখে হারান । কুঞ্জবাবুর তিন ছেলে আর তাঁদের ছেলেপুলেও রাও হরনাথের খুবই সেন্হধন্য, তাদের সব আবদার বুড়ো পালন করেনই করেন । কুঞ্জবাবুকে এতটা শাসনে রাখেন তার মানে এই নয় যে তাঁকে ভালোবাসেন না । খুবই বাসেন, আসলে খুব কম বয়সে কুঞ্জবাবু মাতৃহারা হন । সেই থেকে তাঁর বাবাই তাঁকে ছোট্টটি থেকে এতো বড়োটি করেছেন । তবে ছোটবেলার সেই শাসন করা এখনো ছাড়তে পারেননি । কুঞ্জবাবু খুবই বিরক্ত হন, কিন্তু তিনি তাঁর বাপকে যমের মতো ডরান । তাই মুখ বুজে সব কিছুই সহ্য করে থাকেন ।
হরনাথ বাবু মোটেও কুকুর, বেড়াল দেখতে পারেন না । তাঁর মতে কুকুর-বেড়াল ঘর দোর নোংরা করে খুব । তাই, সেই ছোট্টবেলা থেকে আজ অবধি এখনো তাঁর একটি কুকুর পোষার শখ পূরণ করতে পারেননি কুঞ্জবাবু । হরনাথ বাবু যেখানে গররাজি, সেখানে কুকুর পোষা সূর্য পশ্চিম দিকে ওঠার মতোই অসম্ভব ব্যাপার ।
কিন্তু, বেশ অভাবনীয় ভাবে এক রবিবার কুঞ্জবাবুর এতো দিনের না পূরণ হওয়া শখটা হঠাৎই পূরণ হয়ে গেলো । প্রতি রোববারের মতো এদিনও কুঞ্জবাবু তাঁর নতুন আবিষ্কার দেখাতে ব্যস্ত, আর তাঁর পিতাশ্রী হরনাথ বাবু এদিকে ঝিলের ধারে তাঁর সান্ধ্য মজলিশে আসরখানা গরম করে তুলেছেন । হরনাথবাবুর মতো এতো বড় গুলবাজ লোক এই ভূভারতে আর এক জনও আছে কি না সন্দেহ । সেদিন তিনি সান্ধ্যকালীন আসর গরম করে তুলেছিলেন চীন-ভারত যুদ্ধ নিয়ে । তিনি একাই কি ভাবে ৫০০ সৈন্যের একটা চীনা রেজিমেন্টকে হঠিয়ে দিয়েছিলেন, সেই গুলটাই ঝাড়ছিলেন ।মজলিসের অন্যান্য সভ্যদের মুখ তখন সত্যি দেখার মতো । না পারছেন তাঁরা গিলতে, না পারছেন ওগরাতে । হরনাথবাবু একে বয়োজেষ্ঠ্যঃ, তায় জমিদারের রক্ত গায়ে, অগাধ সম্পত্তির মালিক, প্রাক্তন কর্ণেল আর সব চাইতে বড় কথা ভীষণই মেজাজি লোক । তাই তাঁর সব বড় বড় গুল সবাইকেই দিনের পর দিন বেমালুম হজম করে যেতে হয় ।
সেদিনও যথারীতি বিস্তর গুলটুল ঝেড়ে হরনাথবাবু যখন আসর ছেড়ে উঠলেন তখন অন্ধকার বেশ গাঢ় হয়ে এসেছে । সঙ্গে টর্চ আছে । হরনাথ বাবু অন্ধকারকে থোড়াই কেয়ার করেন । ঝিলের পশ্চিম দিকটাতে যেখানে একটা বহু প্রাচীন অশ্বথ গাছ আছে, অসংখ্য ঝুরি সাপের মতো নেমে এসেছে, বুনো কালকাসুন্দা, ভাঁট ফুল আর কিছু শ্যাওড়া গাছের জটলা আছে, সেখানে পৌঁছে হঠাৎই হরনাথবাবু একটা অস্ফুট শব্দ শুনতে পেয়ে থমকে গেলেন । জায়গাটা এমনিতেই দিনের বেলা অন্ধকার থাকে, আর এখন তো সন্ধ্যে উৎরে রাত নেমেছে, জমাটবাঁধা বিশাল অন্ধকার অশ্বথ গাছটার তলে ।
শব্দটা শুনতে পেয়ে অসমসাহসী হরনাথবাবু মোটেও ঘাবড়ালেন না । টর্চটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ফোকাস করলেন শব্দের উৎসের উপর । এক জোড়া সবুজ চোখ ঝিকিয়ে উঠলো টর্চের আলোয় । দু'পা এগিয়ে গিয়ে আরো ভালো করে ফোকাস করলেন । একটা কুকুর, কুচকুচে কালো রঙের কুকুর, শুয়ে আছে । শোওয়ার ভঙ্গি দেখে বুঝতে পারলেন, কুকুরটি আহত ।
আর দ্বিধা না করে দ্রুত কুকুরটির কাছে গেলেন হরনাথ বাবু । বিরাট একটা গ্রেট ডেন । কুচকুচে কালো, সুগঠিত পেশীবহুল শরীর । আকারে প্রায় একটা বাছুরের চাইতেও বড় । এত বড় কুকুর দেখলেই যে কারও অন্তরাত্মা শুকিয়ে যাবে, কিন্তু হরনাথবাবু অন্য ধাতুতে গড়া । বিন্দুমাত্র না ঘাবড়ে তিনি কুকুরটির শরীরে আঘাতের চিন্হ খুঁজতে লাগলেন । সবিস্ময়ে আবিষ্কার করলেন কুকুরটি গুলি খেয়েছে । গুলির ক্ষত গুলো পরীক্ষা করে তিনি রীতিমত আঁতকে উঠলেন ।
মোট চারটি গুলির আঘাত শরীরে । একটা শট গান, একটি রিভলভারের আর দুটি রাইফেলের । আর্মিতে ছিলেন হরনাথ বাবু । গুলির আঘাত তিনি খুব ভালোই চেনেন । কিন্তু এ কী !! একটা কুকুর মারতে একটি মাত্র পিস্তল বা রিভলভারের বুলেটই যথেষ্ঠ । অথচ শটগান আর রাইফেলের গুলি বেমালুম হজম করতে পারে পৃথিবীতে এমন কুকুর আছে কি ? এ কুকুরটা যতগুলো গুলি খেয়েছে ততগুলো গুলি কোনো হাতি খেলে সঙ্গে সঙ্গে মাটি নিতো । আশ্চর্য এর প্রাণ শক্তি । হতবাক হরনাথ বাবু ।
দাদা এই পর্বটি পড়ার পরে ,পরবর্তী পর্বটি পড়ার জন্য আর তর সইছে না। আজকের পর্বটি বেশ ইন্টারেস্টিং জায়গায় শেষ হয়েছে। গল্পটি বেশ রোমাঞ্চকর লেগেছে। দাদা পরবর্তী পর্বটির জন্য অপেক্ষায় রইলাম।
আমার যা মনে হচ্ছে তা হলো হরমাথ বাবু খুব কঠোর মনের এবং গুল ঠিকি ই দেন।কিন্তু তিনি ভিতর থেকে খুব নরম।যেমনটা নারকেলের মতো, অর্থাৎ ভেতরে নরম, উপরে শক্ত। তা না হলে যা তিনি পছন্দ করতেন না তাকে বাঁচাতে কখনোই যেতেন না।
দাদা কাল থেকে অপেক্ষা করছিলাম আজকের পর্বের। জাস্ট জমে যাচ্ছে 😍😍😍
হরনাথ বাবু তার কুড়িয়ে পাওয়া কুকুরটির মাধ্যমে হয়তো তার ছেলের অনেক দিনের শখ পূরণ করতে সাহায্য করবে। আপনার লেখা গল্পটি পড়ে ধীরে ধীরে আগ্রহ আরো বেড়ে যাচ্ছে দাদা। আশাকরি এর পরের পর্বগুলো আরো বেশি জমজমাট হবে। সেই অপেক্ষায় রইলাম দাদা।গল্পটি আমার দিন দিন খুবই ভালো লেগেছে, এত সুন্দর গল্প শেয়ার করার জন্য আপনার প্রতি রইল অনেক ভালোবাসা দাদা।
গল্পের মোড় দেখছি অন্যদিকে ঘুরে যাচ্ছে। টান টান উত্তেজনায় পর্বটি শেষ হলো। পরবর্তী পর্বের জন্য আর তর সইছে না।
দাদার গল্প গুলো যত দিন যাই ততই ভালো লাগে। রহস্য ঘিরে ধরে। ভালো লাগলো দাদা অনেক।
দাদা খুবই ভালো লাগছে। হরনাথ বাবু কঠিন হলেও উনার ভেতর টা খুবই নরম বোঝাই যাচ্ছে। তা না হলে তিনি কুকুরটার কাছে এগিয়ে যেতেন না । তার মন নরম বিধায় জীবের প্রতি তার দয়া আছে।খুবই ভালো লাগছে।পরের পর্বের জন্য অপেক্ষায় থাকলাম দাদা।
চাপাবাজ বুড়ো হরনাথের, হটাৎ কুকুর প্রীতিই হয়ত, কুঞ্জের বিদেশি কুকুর পালার শখ তরান্বিত করতে পারে। চলুক গল্প, আছি সাথে, দেখি কি ঘটে ------
গল্পটি অনেক সুন্দর জানার আগ্রহ বেড়েই চলছে। এই ধরন হরনাথ বাবুর কথা যে নাকি কুকুরকে দেখতে পারে না,তিনি আবার কুকুরের গুলি খাওয়া দেখে মর্মাহত।দারুন একটা গল্প লেখার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
চমৎকারভাবে দ্বিতীয় পর্বটি আমাদের মাঝে তুলে ধরেছেন দাদা। এই পর্বটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো। কুঞ্জবাবুর বহু দিনের শখ ছিল কুকুর পোষার। কিন্তু হরনাথবাবুর ভয়ে তিনি কুকুর পুষতে ভয় পেতেন। কুঞ্জবাবু তার পিতাশ্রী হরনাথবাবুকে ভীষণ ভয় পেতেন। হরনাথ বাবু আহত কুকুরটিকে দেখে সাহায্যের জন্য এগিয়ে যায়। কুকুরের কাছে গিয়ে তার আহত হওয়ার রহস্য উদঘাটন করার চেষ্টা করে। অবশেষে হরনাথবাবু কুকুরের আহত হওয়ার রহস্য উদ্ঘাটন করেন। কুকুরটি চারটি গুলি খেয়ে আহত হয়েছিল। চারটি গুলি খাওয়ার পরেও সেই কুকুরটি এখনো বেঁচে রয়েছে এটা নিয়েই হরনাথ বাবুর মনে বিস্ময়ের সৃষ্টি হয়েছে। আশাকরি আগামী পর্বে জানতে পারবো হরনাথবাবু কুকুরটিকে পরবর্তীতে কি করলেন। আগামী পর্বের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় রইলাম দাদা।
দাদা শুভেচ্ছা নিবেন । দ্বিতীয় পর্ব টি পড়তে পড়তে যখন গল্পের মাঝ খানে চলে এসেছি এবং অশ্বথ গাছ এর বিবরন পড়ছিলাম তখন কিছুক্ষনের জন্য মনে হয় আমি ঐ অশ্বথ গাছ এর তলে চলে গেছিলাম কল্পনায়। এক কথায় জমে উঠেছে, অপেক্ষায় রইলাম পরের পর্বের জন্য। ভাল থাকবেন।