ছোটবেলায় গরমের সময়ে যেসব সেরা পানীয়ে চুমুক দেওয়া হতো
Copyright Free Image Source : Pixabay
আমাদের ছোটবেলায় এত গরম কখনোই পড়তে দেখিনি । আর গরমের প্রায় পুরো সময়টুকুই আমাদের কাটতো গ্রামের বাড়িতে । আমাদের সময়ে গ্রীষ্মকালীন ছুটি থাকতো এক মাসের কিছু বেশি, কিন্তু আমরা দুই ভাই গ্রামে প্রায় দু'মাস কাটিয়ে তারপরে শহরে ফিরতাম । আমার বাবা-মা কেউই চাইতেন না যে আমরা গরমে ক্লাস করি । বাবা চাইতো গরমে কষ্ট করে ক্লাস না করে গ্রামের বাড়িতে সেই সময়টুকুতে অনেক বেশি বেশি পড়াশোনা করি । তো আমরা প্রথমটা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলতাম, অর্থাৎ, গরমের মাস দুই গ্রামের বাড়িতে কাটাতাম । আর দ্বিতীয় কথাটি এক ফুঁৎকার দিয়ে উড়িয়ে দিতাম । মাস দুই কোনোরকমে যেটুকু না পড়লেই নয় সেটুকু বাদে বাকি সময়টুকু খেলাধুলা আর মজায় কাটিয়ে দিতাম ।
এর আগের একটা লেখায় লিখেছিলাম গরমের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে কিভাবে আমাদের শৈশবের দিনগুলি কাটতো । আজ লিখবো গরমের সময়টাতে শৈশবে আমাদের কী কী পানীয়ের স্বাদ গ্রহণ করা হতো । গ্রীষ্মের কড়া গরমে একটা পানীয়ই বেশি পান করা হতো । আর তা হলো বিশুদ্ধ খাবার জল । আমাদের বাড়িতে একটা ডিপ টিউবওয়েল ছিল । তার জলের স্বাদ অসাধারণ ছিল । গরমের সময় গ্রামে আমরা সব সময় সুশীতল পানীয় জল পান করতাম । অথচ, আমাদের গ্রামে কিন্তু বিদ্যুৎ ছিল না সে সময় । তাহলে ঠান্ডা জল পেতাম কি করে ? উত্তর একদমই সহজ ।
আমাদের বাড়িতে যে গভীর নলকূপটি ছিল সেটি থেকে একদম বরফ ঠান্ডা জল উঠতো । তাই যখনই জল তেষ্টা পেতো এক ছুটে টিউবওয়েলে চলে যেতুম বড় একটা কাঁসার গ্লাস হাতে । পাম্প করে একদম বুক জুড়ানো শীতল জল তুলে গ্লাস ভরে পান করতুম । তখন এতো প্লাস্টিকের বোতল পাওয়া যেত না । আর কাঁসার গ্লাসে জল পান করা সব চাইতে স্বাস্থ্যকর । আমাদের গ্রামের বাড়িতে টিউবওয়েল থেকে জল এনে রান্নাঘরে তা মাটির অনেকগুলি কলসীতে সংরক্ষণ করা হতো । মাটির কলসীতে জল দীর্ঘক্ষণ ঠান্ডা শীতল থাকে ।
গরমের সময় আরেকটা পানীয় প্রায় প্রতিদিনই খাওয়া হতো । আর সেটা হলো মাঠা বা ঘোল । আমাদের বাড়িতে দৈনিক প্রচুর দুধ দোয়ানো হতো । যেহেতু আমাদের বাড়ির দুধ বিক্রি করা নিষেধ ছিল তাই অত দুধ কি করা হবে ? গাঁয়ের যে বাড়ির দরকার পড়তো আমাদের বাড়ি থেকে এসে নিয়ে যেত । বাকি দুধ তা প্রায় ৩০-৪০ লিটার তো হবেই, মন্থন করে মাখন তোলা হতো । সেই মাখন থেকে তৈরী হতো ঘী । দুধ থেকে মাখন তোলার পরে যেটা অবশিষ্ট পড়ে থাকে তার নামই হলো ঘোল । প্রতিদিন তা প্রায় ৩০-৪০ লিটার ঘোল হতো । এই ঘোল যতটুকু পারা যায় নিজেরা খেয়ে গাঁয়ের মানুষদের মাঝে বিলিয়ে দেওয়া হতো । বাদবাকি ঘোল ফেলে দেওয়া হতো ।
ননীসহ কিছু ঘোল নিয়ে তার সাথে বাড়ির গন্ধরাজ লেবু আর পাতিলেবু দুই রকমেরই লেবুর রস মেশানো হতো । গন্ধরাজ লেবুতে ভারী ভালো একটা গন্ধ হতো । এরপরে অনেকটা নুন আর হালকা একটু মিছরি গুঁড়ো মিশিয়ে প্রস্তুত করা হতো ঘোলের শরবত । আঃ বুক জুড়ানো সেই ননী মেশানো ঘোলের শরবতের মতো এত উঁচুদরের পানীয় আর এ জীবনে একটিও খেলাম না ।
আর একটা পানীয়ও প্রায় ডেইলি পান করা হতো । আর তা হলো ডাবের জল । আমাদের বাড়িতে প্রচুর নারিকেল গাছ ছিল । প্রচুর ডাব হতো সে সব গাছে । এক একটা ডাব যেমন বড় তেমনই মিষ্টি তার জল । এখনকার মতো নোনতা স্বাদের ডাব নয় সেগুলো । সুমিষ্ট ঠান্ডা ডাবের জলে শুধু তৃষ্ণাই নিবারণ হতো তা নয়, বুক-পেট অনেক্ষণ ঠান্ডা থাকতো ।
আরেকটা পানীয়ও মাঝেমধ্যে সন্ধ্যেবেলায় পড়ার টেবিলে পেতাম । সেটি হলো নিজেদের ক্ষেতের তরমুজের জুস । ক্ষেত থেকে খুব ভোরে একদম পাকা মিষ্টি দানাদার কয়েকটা তরমুজ কেটে এনে টিউবওয়েলের ঠান্ডা জলে ভিজিয়ে রাখা হতো । সন্ধ্যেবেলায় কেটে তাই দিয়ে জুস তৈরী করা হতো । আঃ সে কী স্বাদ তরমুজের স্মুদিতে ।
সন্ধ্যেবেলায় আরেকটা পানীয় ছিল বেলের শরবত । তবে ছোটবেলায় আমি বেলের শরবত তেমন একটা পছন্দ করতাম না । তাই খেতাম না ।
আমাদের বাড়িতে দুপুরবেলায় ও বিকেলে আরেকটা পানীয় খুব চলতো । সেটা হলো পাতি লেবু ও গন্ধরাজ লেবুর শরবত । পাতি লেবুতে রস হতো প্রচুর, কিন্তু গন্ধরাজ লেবুতে খুবই অল্প পরিমাণে রস পাওয়া যেত । তা সত্ত্বেও গন্ধরাজ লেবুর অসামান্য সুগন্ধের কারণে শরবতে এর রস দেওয়া হতো । চিনির বদলে মিছরির গুঁড়ো দেওয়া হতো এই শরবতে ।
আমাদের গ্রামে প্রচুর আখ হতো । তবে আখের রস খাওয়া হয়নি সেভাবে কোনোদিন ছোটবেলায় । প্রচুর আখ খেয়েছি তবে রস করে নয় । এখন দেখি শহরে, গ্রামে সব জায়গায় মেশিনে আখের রস করা হয় । আমাদের সময়ে গ্রামে এসব মেশিন ছিল না । তবে শহরে ছিল কিছু । তবে, খাওয়া হয়নি আখের রস । অস্বাস্থ্যকর বলে বাবার নিষেধ ছিল খাওয়া ।
------- ধন্যবাদ -------
পরিশিষ্ট
Account QR Code
VOTE @bangla.witness as witness
OR
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
দাদা মাটির কলসিতে গরমের সময় পানি রেখে দিলে খুবই ঠান্ডা থাকতো যেটা তৃপ্তি সহকারে খেতাম । ছোটবেলা আমিও কাঁসার গ্লাসে পানি খেয়েছি । আপনার পোস্ট পড়ে আজকে মনে পড়ল ভুলেই গিয়েছি যে ছোটবেলা কাঁসার গ্লাসে পানি খেতাম। সেটা এখন আর দেখতে পাই না । লেবুর শরবত যেটার মধ্যে মিশ্রি এবং ঘোল যেগুলো ভালোই খেয়েছি । বেলের শরবত আমাদের এখানে এখনো আখের গুড় দিয়ে খাওয়া হয় যেগুলো একদম অর্গানিক স্বাস্থ্যসম্মত খাবার। বর্তমান দোকানের রেডিমেড বিভিন্ন ধরনের টেস্টি জাতীয় খাবার শরবত খাওয়ার জন্য ব্যবহার করি। কলের পানি কি তৃপ্তি সহকারে মুখ লাগিয়ে খেতাম সবই এখন অতীত ভালো লাগলো পড়ে ।
Congratulations, your post has been upvoted by @upex with a 40.41% upvote. We invite you to continue producing quality content and join our Discord community here. Keep up the good work! #upex
Congratulations, your post has been upvoted by @nixiee with a 100 % upvote Vote may not be displayed on Steemit due to the current Steemit API issue, but there is a normal upvote record in the blockchain data, so don't worry.
গ্রামের টিউবওয়েল থেকে অনেক ঠান্ডা পানি বের হয় আর শীতের দিন গরম পানি বের হয়।খেতে ভালোই লাগে।আপনি দেখি ছোটবেলায় অনেক পানীয় খেয়েছেন,যদিও এমন টাটকা এবং মজার খাবার খাওয়ার মজাই আলাদা।গন্ধরাজ লেবুর শরবত আর টাটকা ডাব খাওয়া হয়েছে তবে নিজেদের বানানো ঘোল আর ক্ষেত থেকে উঠানো তরমুজ খাওয়া হয়নি আমরা তো খাই কয়েকদিন আগের পারা।তবে পানীয়গুলোর নাম পড়ে জিভে জল এসে পরেছে।ভালো লাগলো।ধন্যবাদ
This post has been upvoted by @italygame witness curation trail
If you like our work and want to support us, please consider to approve our witness
Come and visit Italy Community
Hi @rme,
my name is @ilnegro and I voted your post using steem-fanbase.com.
Come and visit Italy Community
দাদা আপনার ছোট বেলার গরমের সময়ের সাথে আমার ছোট বেলার গরমের সময়ের কিছু মিল রয়েছে। আমি ও ছোট বেলা গরমের সময়ে আমাদের বাসার টিউবয়েল থেকে একদম ঠান্ডা পানি বের করে খেয়েছিলাম। এছাড়া ও আপনি মাঠা বা ঘোল খেয়েছিলেন, এটা দেখে বেশ ভালো লাগলো আমার কাছে। আপনার বাসায় প্রচুর পরিমাণ দুধ থাকার কারণে প্রতিদিন মাঠা বা ঘোল খাওয়া হয়েছিল। তবে মজার বিষয় হলো আপনারা খাওয়ার পর অবশিষ্ট ঘোল পাড়ার মানুষের মাঝে বিলিয়ে দিয়েছিলেন। এটা শুনে বেশ ভালো লাগলো আমার কাছে।
এই কয়েকটা বছরই মনে হচ্ছে সবচেয়ে বেশি গরম পড়ছে। আগে এত গরম দেখা যেত না। ছোটবেলায় গরমের দিনগুলোতে গ্রামে তেমন থাকা হতো না। মাঝে মাঝে গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেলে যেতাম। গ্রামের টিউবলের পানি আসলেই খুব ঠান্ডা হয়। আর মাটির কলসি তে রাখলে আরো বেশি ঠান্ডা থাকে। ছোটবেলায় তো বেশ লোভনীয় পানীয় খেতেন গরমের সময়। মাঠা বা ঘোল কখনো খাওয়া হয়নি। প্রত্যেকটা পানীয় তো বেশ মজার।
বাপরে বাপ!! আপনার শৈশব সম্পর্কে যতই পড়ছি ততই ভালো লাগছে। এতো সব পানীয় খেতেন ছোটবেলায়! আমি তো ডাবের আর বেলের শরবতটাই বেশি খেতাম। আর আমাদের বাড়িতে যে গাভীটা ছিল সেটা দু চার লিটারের মতো দুধ দিতো। কিছু আমরা খেতাম আর কিছু বিক্রি করা হতো। আর টিউবওয়েলের ঠান্ডা পানীয় জল খেলা শেষে ছুটে এসে খেতাম। নিমিষেই যেন প্রাণ জুড়িয়ে যেত।