কলেজের ব্যস্ততা
নমস্কার বন্ধুরা, আশা করছি আপনারা সকলে সুস্থ আছেন। বিগত কিছুদিন ধরে ভীষণ পরিমাণে ব্যস্ত আছি। কারণে পোস্টের একটু গোলমাল হচ্ছে। যেমন গতকালকেও ভেবেছিলাম পোস্ট করতে পারব। কিন্তু সেটা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। আসলে আমার বিএড ট্রেনিংয়ের পরীক্ষা চলছে। প্রাক্টিকাম থেকে শুরু করে থিওরি পরীক্ষা সমস্ত কিছুই শুরু হয়ে গেছে। আর এ যে কি বিরক্তি কর, তা কেবল আমিই জানি। আসলে আমাদের এদিকে ডিসেম্বরের এই শীতের সময় সমস্ত কিছু ছুটি থাকে।স্কুল ও
কলেজেও পরীক্ষা হলে, সেটা নভেম্বরের শেষের দিকে শেষ হয়ে যায়। কিন্তু এই কলেজ বেপরোয়া ভাবে এই ডিসেম্বরে পরীক্ষা নিচ্ছে। এ কারণে শুধু আমি নই প্রত্যেকটি ছাত্র-ছাত্রী প্রচন্ড রেগে গেছে।
কিন্তু পরীক্ষা হবে যখন পরীক্ষা দিতেই হবে। আমাদের 11 তারিখ থেকে ১৪ তারিখের মধ্যে প্রাক্টিকাম পরীক্ষা হবে যেটা, সেখানে এক্সটার্নাল অর্থাৎ বাইরে থেকে প্রফেসর এসে আমাদের প্রাকটিকাল পরীক্ষা নেবে। আর তার আগেই আমাদের কলেজের স্যারেরা আর একবার পরীক্ষা নিয়ে নেবে। এ সমস্ত ঝামেলা মিটলে ১৪ তারিখের পর থেকে শুরু হয়ে যাবে থিওরি। কলেজের নোটিশ অনুযায়ী মোটামুটি সারা মাস জুড়ে এসব চলতে থাকবে। আমি সত্যি ভেবেছিলাম ডিসেম্বর মাস খুব ঘোরাঘুরি করব। অনেক মজা হবে। কিন্তু পুরো প্ল্যানে জল ঢেলে দিল এই পরীক্ষা।
ইউনিভার্সিটি আমাদের সমস্ত কিছু শুরু করতে বহু দেরি করেছে। আর এ কারণেই অবশেষে এসে তাড়াহুড়। পরের বছর আমাদের মাঝামাঝি সময়ে এই ট্রেনিং শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু যেভাবে প্রত্যেকটা পরীক্ষা দেরি হয়েছে পরের বছর এই ট্রেনিং শেষ হতে হতে ডিসেম্বর মাস পরে যাবে। সেকেন্ড সেমিস্টার তাই এত তাড়াহুড়ো করে ওরা পরীক্ষা নিয়ে নিল। আমরা কেউ ক্লাস করার সময় পাইনি। পূজোর ছুটি ছিল মোটামুটি এক মাস। তার আগে স্কুলের ট্রেনিং ছিল। এসব করতে করতেই দিন কখন বেরিয়ে গেল।
আর এসব কিছুর আগে আমাদের ফার্স্ট সেমিস্টারের পরীক্ষা হয়েছে, পরীক্ষা শেষ হয়েই পুজোতে ব্যস্ত সবাই। আমরা যদি জানতাম এই সময় পরীক্ষা হবে তাহলে অন্তত প্রাক্টিকাম গুলো আগে থেকে রেডি করতে পারতাম। খুব কম সময়ে অর্থাৎ বলা যেতে পারে চার-পাঁচ দিনের নোটিশে আমরা সবাই যে যার মত প্রাক্টিকাম করা শুরু করেছি।। সারাদিন রাত জেগে জেগে প্রাক্টিকাম করতে কি যে বিরক্ত লাগছে। এর সাথে রয়েছে স্যার ম্যাডামদের কড়াকড়ি। এরা খাতাতে কাটতে ভালো পারে। কোন কিছু লিখে নিয়ে গেলে এদের শান্তি হয় না। লাল কালি দিয়ে ফট করে কেটে দেয়।
এই যে আমাদের রাজ্য এত বছর ধরে স্কুলের কোন চাকরি নিচ্ছে না। তারপরেও প্রত্যেক বছর ছেলেমেয়েরা এই ট্রেনিংয়ে ভর্তি হচ্ছে। তাহলে এই ট্রেনিংটা এত কড়াকড়ি করার কোন মানে হয় না। অন্তত আমাদের চারিদিকে আরো পড়াশোনা থাকে আরও কাজ থাকে। সেগুলো কাকে বোঝাবো। সত্যি বলতে প্রথমে এই কলেজে আমি একদম ভর্তি হতে চাইনি। কারণ কলেজে ভর্তি হওয়ার আগেই জানতাম এই কলেজ বেশ কড়াকড়ি করে।
অন্যান্য কলেজে যেমন প্রাক্টিকাম গুলোও দিয়ে দেয়, দেখে দেখে ঢুকলেই হয়ে যায়, এমনকি পরীক্ষার সময়তেও এরা দেখে দেখে টুকতে দেয়। কোন পড়াশোনা করতেই হয় না। এখন যা সময় এসেছে এই ট্রেনিং করার কোন মানেই হয় না। তাই অন্যান্য কলেজ একদম ছেলেমেয়েদের ছাড় দিয়ে দেয়। কিন্তু এই কলেজ যেমন টাকা নিচ্ছে, তেমন অত্যাধিক খাটিয়ে নিচ্ছে। আমাদের পশ্চিমবঙ্গে এই ট্রেনিং এর পেছনে একটা কলেজ এক এক রকম ভাবে চার্জ নেয়। আমি প্রাইভেট কলেজের কথাই বলছি। প্রাইভেট কলেজে এই কারণেই ভর্তি হওয়া, যাতে বেশি কলেজ না যেতে হয়, এবং সবদিক থেকে সুবিধা পাওয়া যায়। এদিকে কলেজগুলোতে মোটামুটি এক লাখ কিংবা তার ওপরে টাকা-পয়সা নেয়।
এত টাকা দেওয়ার পর এত কিছু সহ্য করা বিশাল চাপের। এর থেকে সরকারি কলেজে ভর্তি হওয়ায় ভালো ছিল। কিন্তু সরকারি কলেজে বেশি যাতায়াত করতে হয়। আর সেগুলো বাড়ি থেকে অনেক দূরে। তাই বুঝি এই কলেজে ভর্তি হয়েছিলাম। যাইহোক এখন প্রাকটিক আমার পরীক্ষা যাবে মাথা একদম ঠিক থাকছে না।। আর মোটামুটি এক দুই সপ্তাহ ধরে প্রায় প্রত্যেকদিন কলেজ যেতে হচ্ছে।।
তবে কলেজে গিয়ে, কলেজের ওয়েদারটা সত্যি খুব ভালো লাগে। আমাদের কলেজে একটা হলুদ রঙের ফুলের গাছ আছে। ফুলের নাম চন্দ্রপ্রভা। যদিও এই ফুলটি অনেকটা কল্কি ফুলের মতনই দেখতে। পাইপের মতন ফুলগুলি থোকা থোকা হয়ে গাছে এমনভাবে থাকে, সারা গাছ পুরো হলুদ দেখায়। যবে থেকে কলেজে যাচ্ছি পুজোর পর গাছটার দিকে সব থেকে বেশি চোখ যায়।। সুন্দর জিনিস দেখার জন্যই। তাই কলেজে গেলেই ওর দিকে বেশিক্ষণ পড়ে। খুব ইচ্ছা আছে ওকে নিয়ে একটা কবিতা লিখব। হলুদ মনি বলেও একটা ফুল হয়। কিন্তু কেন জানি নাই গাছটাকে দেখে আমার হলুদ মনি বলে ডাকতে ইচ্ছা করে।
কলেজের গল্প গুলো আর নিজের ব্যস্ততার কথা শেয়ার করতে করতে কলেজের কিছু ছবিও আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম। আজ এখানেই শেষ করছি। সকলে ভালো থাকবেন।
পোস্টটি পড়ে বোঝা যাচ্ছে, আপনার পড়াশোনার চাপ সত্যিই অনেক বেশি। তবে এই চাপের মধ্যেও যে সুন্দর মুহূর্তগুলো আপনি উপভোগ করছেন, যেমন চন্দ্রপ্রভা ফুলের সৌন্দর্য্য, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। জীবন সবসময় এমনই; চাপের মাঝেও যদি সৌন্দর্য দেখতে পারি, তাহলে তা আমাদের মনকে হালকা করে দেয়।
আপনার ফুল নিয়ে কবিতা লেখার ইচ্ছা খুব ভালো লেগেছে। পরীক্ষা শেষে নিশ্চয়ই আপনার কবিতাটি পড়ার সুযোগ পাব। পাশাপাশি আপনার এই ব্যস্ততায় যাতে সামান্য হলেও স্বস্তি পান, সেই আশা করি।
পরীক্ষার জন্য শুভকামনা রইল। আশা করছি, আপনি খুব ভালো করবেন এবং ভবিষ্যতে এই অভিজ্ঞতাগুলো সুন্দর স্মৃতি হিসেবে মনে রাখবেন। ভালো থাকুন।